post

অগণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতায় ক্ষমতায় আরোহণ করাই ছিল আওয়ামী লীগের লগি

বৈঠার তাণ্ডবের আসল লক্ষ্য

১৫ অক্টোবর ২০১১
এ টি এম আজহারুল ইসলাম ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়- এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানতে চাই? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যে অমানবিক ও বর্বর ঘটনা ঘটানো হয়েছিল তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সেই দিনের লোমহর্ষক, অমানবিক ও বর্বর ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কোন ভাষা নেই। সেদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখল সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা লগি- বৈঠা, লোহার রড, পিস্তলসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা হত্যা করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ জন সম্ভাবনাময় কৃতী ছাত্র নেতাকর্মীকে এবং আহত করেছিল এক হাজারের অধিক লোককে। তারা জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদেরকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। উপরন্তু তারা নিহতদের লাশের ওপর উল্লাস-নৃত্য করে বর্বরতার এক জঘন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ দেশের ইতিহাসে অতীতে আর কখনো এ ধরনের নৃশংস ও অমানবিক বর্বর ঘটনা সংঘটিত হতে দেখা যায়নি। সে দিনের ঘটনা মধ্যযুগীয় আদিম বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। কোন সভ্য মানুষের সমাজে ঐ ধরনের নৃশংস ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। ঐ ঘটনার দ্বারা আওয়ামী লীগের পৈশাচিকতাই প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবরের ফলশ্র“তিতেই ১/১১-এর সৃষ্টি বলে মনে করেন কি? আপনার দৃষ্টিতে এর নেপথ্যের কারণ কী হতে পারে? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : আমরা মনে করি আওয়ামী মহাজোট পরিকল্পিতভাবেই ২৮ অক্টোবর নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছিল। এ ঘটনা ঘটিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে অগণতান্ত্রিক শাসনের পথ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করে অগণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতায় ক্ষমতায় আরোহণ করাই ছিল আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের আসল লক্ষ্য। সে দিনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এখন বিনা দ্বিধায়ই বলা যেতে পারে যে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার ফলশ্র“তিই ১/১১ সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ ঘটনার ফলেই জে. মইন ও ফখরুদ্দীনের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল এবং তারা গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে নিজেরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এ ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের বিদেশী মুরুব্বিদের হাতও ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই মুরুব্বিদের স্বার্থই এখন চরিতার্থ করে চলেছে। বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানোই তাদের আসল লক্ষ্য। ছাত্র সংবাদ : বর্তমান সরকার পল্টনের ঘটনার হত্যাকারীদের রক্ষায় মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে কি আপনি মনে করেন? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : আজ প্রমাণিত হয়েছে যে, ২৮ অক্টোবর পল্টনে সংঘটিত নৃশংস ঘটনার আসল নায়ক আওয়ামী মহাজোট নেতৃবৃন্দ। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল। ঐ ঘটনার নায়কেরা তাদের দলেরই লোক, কাজেই যাদের ব্যবহার করে ঘটনা ঘটিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের রক্ষা করবে এটাইতো স্বাভাবিক। আওয়ামী মহাজোট তাদের দলের সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা তুলে নিয়েছে। তারা সেই মামলা তুলে নিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে। তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিয়ে দুঃশাসনের যে কুদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার কোন নজির এ দেশে নেই। ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবর পল্টনের ঘটনার হত্যাকারীদের বিচার না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন কি? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : দেশবাসী মনে করে যে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার বিচার না হওয়ার ফলেই দেশে সন্ত্রাসীরা নতুন উদ্যমে রাজনৈতিক হত্যা, সন্ত্রাস, গুম ইত্যাদি অপকর্ম সংঘটিত করছে। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে অপরাধ বেড়ে  গেছে। আমরা মনে করি ঐ ঘটনার নায়কদের প্রশ্রয় দিয়ে সরকার মূলত গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সমাধি রচনা করেছে। যারা নিজ দলের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে এ ধরনের নৃশংস ও অমানবিক ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে এবং খুনিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিয়ে হত্যার রাজনীতিকে উৎসাহিত করে তাদের নিকট থেকে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন আশা করা বাতুলতা মাত্র। সকলেই জানেন যে, একটি অন্যায় ঘটনাকে প্রশ্রয় দিয়ে মূলত আরো অন্যায়কে উৎসাহ দেয়া হয়। আওয়ামী মহাজোট সরকার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিয়ে হত্যার রাজনীতিকেই উৎসাহিত করলো। ছাত্র সংবাদ : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে কোন গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন কি? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : ১/১১-এর পরে মানুষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে তেমন কোন গুণগত পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান সরকারকে কোনভাবেই গণতান্ত্রিক সরকার ভাবা যায় না। দেশবাসী মনে করে বর্তমানে দেশে এক জঘন্যতম স্বৈরশাসন চলছে। আমি মনে করি গণতন্ত্রের লেবাসে দেশে বর্তমানে একদলীয় স্বৈরশাসন চলছে। সংবিধান পরিবর্তন করে দেশের জনগণের ওপর গণতন্ত্রের আবরণে একদলীয় স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পথ সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ করে দিয়েছে। দেশে অঘোষিতভাবে একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন চলছে। জাতীয় সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এক ব্যক্তির স্বৈরশাসনের কাছে দেশবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। ছাত্র সংবাদ : ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না হয় সে জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে এ সরকারকে আগে আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে। তারপর ঐ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার করতে হবে। সেই সাথে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে হবে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র সংবাদ : নিহতদের পরিবারের জন্য আপনার সান্ত্বনা কী? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস তারা যদি তাদের সন্তানদের হত্যার বিচার এ দুনিয়ায় নাও পান তবে রোজহাশরে আল্লাহর আদালতে তারা অবশ্যই বিচার পাবেন। সেদিন যারা নিহত হয়েছেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আল্লাহ জীবিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর চাইতে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে? আখিরাতের সাফল্যই আমাদের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছাত্র সংবাদ : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ২৮ অক্টোবরের ঘটনা থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে? এ টি এম আজহারুল ইসলাম : ২৮ অক্টোবরের ঘটনার মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আল্লাহর দ্বীনের আন্দোলনের সৈনিক। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে। তারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। যারা আল্লাহর পথে তার দ্বীনের জন্য শহীদ হন তারাই সৌভাগ্যবান। মুসলমানেরা বিশ্বাস করে থাকে যে, জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। আল্লাহ যাদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন তাদের জীবন সার্থক। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সবাইকে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। তাদের অন্তরে দুনিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার বাসনার চাইতে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার বাসনা সর্বদাই পোষণ করতে হবে এবং এ জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির