post

আরব বসন্ত

ইউনুছ আব্দুদ্দাইয়ান

২০ মে ২০২২
(গত সংখ্যার পর) আবার কোথাও কোথাও নিজেদের স্বার্থেই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় যারা বিজয়ী হবে বলে ধারণা করা হয় তাদের সাথে যেমনিভাবে সম্পর্ক রাখে তেমনিভাবে তলে তলে বিরোধী পক্ষের দাবি দাওয়ার সাথে সুর মিলিয়ে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে। মিশরে যখন এই কথা পরিষ্কার হয়েছে যে, হোসনি মোবারকের পতন অবশ্যম্ভাবী আর মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয় অনিবার্য তখন তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। হোসনি মোবারকের সময় আমেরিকা গোপনে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যোগাযোগ রাখতো। এই বিষয়টি হোসনি মোবারকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর একবার সে আমেরিকার সাংবাদিক Mary Ann Weaver এর কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, Your government is in contact with these terrorists from Muslim Brotherhood. This has all been done very secretly, without our knowledge at first. আবার মুসলিম ব্রাদারহুড বিজয় লাভ করার পর যেন তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে না পারে তার জন্য সকল ধরনের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করে। দেশে কৃত্রিমভাবে বিদ্যুৎসংকট তৈরি করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জ্বালানি তেল যেসকল পরিবহনে করে আনা হতো তা মরুভূমিতে ফেলে দিতো। এই প্রসঙ্গে Bessma Momani যথার্থই মন্তব্য করেন: The day after Morsi was removed from power, Egypt’s fuel shortages were no more, its electricity supply went uninterrupted and traffic police suddenly went back to work. বামপন্থী, সেক্যুলারিস্ট ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় সালাফিদের সঙ্গে আঁতাত করে সামরিক বাহিনী যখন ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন বাহ্যিকভাবে গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করে। তারা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে এত বেশি অন্ধ যে দেশের জনমত কী তার তোয়াক্কা করে না। তাদের স্বার্থে যদি কোন শাসককে ক্ষমতায় রাখতে হয় তারা তাকে নানা কৌশলে ক্ষমতায় রাখবে। যেমন মিশরে আনোয়ার সাদাত ও হোসনি মোবারকের প্রতি জনসমর্থন না থাকার পরও তারা উভয়কে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রেখেছে। আবার কাউকে যদি দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হয় তাহলে তারা প্রয়োজনে দুর্ঘটনার নাটক মঞ্চস্থ করতেও কার্পণ্য করে না। যেমন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হককে বহনকারী বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং উক্ত বিমানে আমেরিকার একজন রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমেরকিার পলিসি সকল দেশ ও সকল ইসলামী সংগঠনের জন্য এক ধরনের নয়। জর্ডানের ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট এবং মরক্কোর ইসলামপন্থী জাস্টিস এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাথে আমেরিকার চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। তুরুস্কে জাস্টিস ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপির) সাথেও তারা বাধ্য হয়ে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইরাকেও মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতাসীন দলের সাথে কোয়ালিশন সরকারের রয়েছে এবং আমেরিকা তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদ বিরোধী জোটে মুসলিম ব্রাদারহুডের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাপারে ওয়াকিফহাল। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সম্পর্কে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত নেতিবাচক। আবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তারা মডারেট ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনা করে। মূলত সোভিয়েট ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে স্নায়ুযুদ্ধ (Cold War) চলাকালীন আমেরিকা তার বলয় শক্তিশালী করার পলিসি গ্রহণ করে। তাই তারা আফগানিস্তানে সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তালেবান এবং আল-কায়েদাকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে। বিভিন্ন মুসলিম দেশে সোভিয়েট ইউনিয়নপন্থী শাসকগোষ্ঠীকে হটানোর জন্য ইসলামপন্থীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার নীতি গ্রহণ করে। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের প্রচার-প্রচারণা আমেরিকা তাদের জন্য ইতিবাচক মনে করতো। আমেরিকা চাইতো ইসলামপন্থীদের ব্যবহার করে সোভিয়েট ইউনিয়নের শক্তি খর্ব করতে। কিন্তু সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা ইসলামকে তার মূল প্রতিবন্ধক মনে করে। এই কারণে দেখা যায় যে, ১৯৯২ সালের ১১ই জানুয়ারি আলজেরিয়াতে ইসলামপন্থীদের বিজয় আমেরিকা মেনে নিতে পারেনি। তাই সামরিক বাহিনী দিয়ে উক্ত নির্বাচন বানচাল করে এবং এর ফলে দেশে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। আমেরিকা বিভিন্ন দেশের ইসলামী সংগঠনসমূহের সাথে যোগাযোগ রাখে নানা উদ্দেশ্যে। উক্ত দেশে ইসলামপন্থীদের শক্তি ও সমর্থন কতটুকু রয়েছে এবং নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অ্যাসেসমেন্ট করা এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করে নানা তথ্য সংগ্রহ করে যা তাদের পলিসি নির্ধারণে জরুরি। এই জন্য মাঝে মধ্যে ইসলামপন্থী নেতৃবৃন্দকে তারা আমেরিকাতেও অফিসিয়াল দাওয়াত দেয়। কিন্তু ৯/১১ এর পর আমেরিকা ইসলামপন্থীদের সাথে অফিসিয়াল যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। উক্ত উদ্যোগের মূল টার্গেট ছিল Reintroducing the Brotherhood to the West. এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় জামাল আবদুন নাসের থেকে হোসনি মোবারক পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কিভাবে মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর নির্যাতন চালিয়ে মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হয়। মুসলিম ব্রাদারহুডকে টেরোরিস্ট সংগঠন হিসাবে আখ্যা দেয়ার প্রচেষ্টার বিরুেদ্ধ তথ্য ও যুক্তি তুলে ধরা হয়। আর ব্রাদারহুড সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ভীতি দূর করার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডের নায়েবে মুর্শিদে আম ইঞ্জিনিয়ার খায়রাত আশ-শাতের দি গার্ডিয়ানে No Need to be afraid of us শীর্ষক কলাম লিখেন। এ থেকে পরিষ্কার যে, পাশ্চাত্যের সাথে দূরত্ব কমাতে ইসলামপন্থীরাও প্রচেষ্টা চালায়। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে পাশ্চাত্যের সাথে ইসলামী আন্দোলনের সম্পর্ক কেমন হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিশরে হোসনি মোবারকের পদত্যাগের পর পাশ্চাত্যের নেতাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম কায়রো সফর করেন। ক্যামেরন মূলত মিশরে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সূচনায় সহযোগিতার উদ্দেশ্যে কায়রো সফরে গেলেও মিশরের প্রধান রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে কোনো মিটিং করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু কিছুদিন পরেই ব্রিটেনের পলিসিতে পরিবর্তন আসে। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে কনস্যাল জেনারেল Marie –Louise Archer এর নেতৃত্বে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল মিশর সফর করেন এবং আলেকজান্দ্রিয়ায় ইখওয়ানের নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং করেন। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের রিলেশনস কো-অর্ডিনেটর Martin Herting এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, “যুক্তরাজ্য মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে পলিটিক্যাল ডায়ালগ করতে আন্তরিক।’’ এই বিষয়ে Martyn Frampton & Shiraj Maher কর্তৃক রচিত Between ‘Engagement and Values-Led Approach: Britain and the Muslim Brotherhood from 9/11 to the Arab Spring শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়। ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সও মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Alian Juppeমন্তব্য করেন যে,the France previously had misled by Arab governments about the true nature of the group. এমনি এক প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের ইংরেজি ওয়েবসাইট ইখওয়ান ওয়েবে ঘোষণা করে যে, MB welcomes dialogue with the west without any preconditions. উক্ত ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৭ই মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ঘোষণা করে যে, EU ready to expand dialogue with Muslim Brotherhoodএরপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ফরেন অ্যাফেয়ার্স এবং সিকিউরিটি পলিসি সংক্রান্ত স্পোকসম্যানBaroness Ashton মুসলিম ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং করেন। তাঁকে এই ব্যাপারে সাংবদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেন, The EU was open to dialogue with anyone who is interested in democracy. তার কিছু দিন পর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মুসলিম ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। মূলত আরব বসন্তের অনেক আগেই ২০০৮ সালে ব্রিটেনেরInstitute for Public Policy Research (IPPR) এই উপসংহারে উপনীত হয় যে, MB is a critical element of the Egyptian political landscape and the group proved themselves to be sophisticated and responsible political actors (who) should also be considered as potential partners in processes in the regional political development. Perhaps more appropriate to view the groups political beliefs as being based on universal values that are cloaked in an Islamic idiom. IPPR এর উক্ত রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, The Western governments must be more willing to engage with the Brotherhood on the basis of what it says and how it acts, rather than treating it as inflexible and dogmatic religious organisation with which there can be no common ground. অনুরূপভাবে Alex Glannie তাঁর রিপোর্টে Urged western policy makers to rethink their political strategy for engaging with Islamist parties and movements. They should be more proactive in creating channels for serious and sustainable dialogue with Islamists. জম বন্ধ করতে হলে ডায়ালগের কোনো বিকল্প নেই। তবে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের সম্পর্কের বিষয়ে পাশ্চাত্যের নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে। তারা তাদের ভাষায় কথিত “মডারেট ইসলাম’’ এজেন্ডা প্রমোট করার জন্য অনেক অর্থ বরাদ্দ দেয়। ২০০৮-৯ সালে এফসিও এর পক্ষ থেকে ১২৭৭৪০ পাউন্ড শুধুমাত্র মডারেট ইসলাম প্রমোট করার জন্য এবং ২২০৮৫৩ পাউন্ড প্রজেকে্িটং ব্রিটিশ ইসলাম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দেয়া হয়। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ গোটা পাশ্চাত্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা বাহ্যিকভাবে মিশরে ড. মুরসিকে অবৈধভাবে উৎখাতকে সমর্থন করেনি, অপরদিকে জেনারেল সিসির গণহত্যার বিরুদ্ধে কয়েকটি বিবৃতির মধ্যেই তাদের বক্তব্য সীমাবদ্ধ ছিল। আমেরিকা কর্তৃক মিশরে সামরিক সাহায্য বন্ধের জন্য কয়েক দফা পত্রিকায় তাদের বিবৃতি আসলেও বাস্তবে তারা এই ধরনের কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাদের ভূমিকা শুধু দ্বিমুখী নয় বরং বহুমুখী। তারা মুখে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করলেও মূলত ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী সরকার যত পদক্ষেপই গ্রহণ করুক না কেন এই ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে না হলেও তাদের গোপন মৌনসম্মতি রয়েছে বলে অনেকই মনে করেন। আরব বসন্তের পর ইসলামপন্থীদের বিজয় ও ইসরাইলের গাত্রদাহ আরব বসন্তের শুরুতে পশ্চিমা বিশ্ব বাহ্যিকভাবে স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন দান করলেও ইসরাইল Wait and See নীতি অবলম্বন করে। Bendetta Berti, তাঁরIsrael and the Arab Spring: Understanding Attitude and Responses to the New Middle East, শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, Israeli Defense Forces (IDF) এর প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল গবি আশকেনাজি এই বলে মন্তব্য করেন যে, The unrest could threat to Israel ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড, হামাস ও হিজবুল্লাহর শক্তি বিশেষভাবে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আবির্ভাবকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। মুহাম্মদ মুরাহেব ২০১১ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারিArab Centre for Research and Policy Studies কর্তৃক প্রকাশিত Why is Israel Worried About Tunisian Revolution শীর্ষক প্রবন্ধে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মূলত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে ইসলামপন্থী আন-নাহদা পার্টির বিজয় তাদের শঙ্কার কারণ ছিল। তাই ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আরব বসন্ত সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন যে,the chances are that an Islamist Wave will Wash over the Arab Countries, an Anti West, anti liberal, anti Israel and ultimately an anti democratic Wave. অবশ্য আননাহদা পার্টির বিজয়ের পর তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনসেফ মারযুকি ও প্রধানমন্ত্রী হামাদী জাবালি (বেন আলির সময় তাঁর ১৭ বছর কারাদন্ড হয়েছিল) আল-কায়েদা কর্তৃক সেনাগগে হামলার নিন্দা জানান। একইভাবে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে হামাস নেতা ও ফিলিস্তিনের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়্যার তিউনিশিয়া সফরের সময় কতিপয় সালাফি পন্থী তাকে অভ্যর্থনা জানানোর সময়, ‘ইয়াহুদি নিধনের যে শ্লোগান দেয়’ তারও নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই ধরনের শ্লোগান ইসলাম সমর্থন করে না এবং এটা আননাহদার নীতিবিরোধী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আননাহদা কর্তৃক হামাস নেতাকে আমন্ত্রণ জানানোকে ইসরাইল সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। কেননা তারা ফিলিস্তিনে সেক্যুলারপন্থী ফাতাহর রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে হামাসের আবির্ভাব মেনে নিতে পারেনি। যদিও তিউনিশিয়ার বামপন্থীরাও ইসরাইলের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখার বিরোধী। তবুও ইসরাইল মনে করে যে ইসলামপন্থীরা অধিক ইসরাইল বিরোধী। মূলত আরব বসন্ত (Arab Spring) এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভাষায় পলিটিক্যাল ইসলামের যে বিজয় সূচনা হয় তাতে ইসরাইল অত্যন্ত শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়টি প্রচার করে ইসলামী শক্তির অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করে। তারা জর্ডান ও সিরিয়া বর্ডার নিয়েও চিন্তিত ছিল। তাদের দৃষ্টিতে সিরিয়ার স্বৈরশাসক আসাদ ইসলামী শক্তির ক্ষমতাসীন হবার চেয়ে অনেক ভালো। তাই ইসরাইলে যখন বিতর্ক হয় তারা আসাদকে সমর্থন করবে না বিরোধী দলকে সমর্থন করবে। তখন ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির আইয়্যুব কারা স্পষ্টতই বলেছে, “ÒI prefere political extremism of Asad over religious extremism. We do not want religious extremism on the border ইসরাইল এর জন্য বাশার আল-আসাদ পূর্ণভাবে প্রশান্তির কারণ ছিল না। কেননা বাশারের সাথে ইরানের সখ্য রয়েছে। তারপরও বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখা তাদের কাছে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতারোহণের চেয়ে উত্তম মনে হয়। তাই ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আসাদ বা তার বিরোধী জোটের কারো প্রতি সমর্থন ব্যক্ত না করে বলেন, অহু ধহংবিৎ ও রিষষ মরাবAny answer I will give you would not be a good one. তবে ২০১১ সালের শেষ দিকে আসাদের যখন পতন অবস্থা ছিল তখন ইসরাইল আসাদের কঠোর সমালোচনা করে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের মার্চ মাসে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী Avigdor Lieberman সিরিয়ায় রেড ক্রসের মাধ্যমে মানবিক সাহায্য প্রেরণের কথা ঘোষণা করে বলেন, Even though Israel can not intervene events occurring in a country with which it does not have diplomatic relations, it is nevertheless our moral duty to extend humanatirian aid and inspire the world to put an end to the slaughter. তিউনিশিয়ার মতো মিশরে হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হলে ইসরাইল শঙ্কিত হয়ে পড়ে। Ian Black তাঁর ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত Egypt Protest Unrest: Israel Fears Unrest May Threaten Peace Treaty শীর্ষক প্রবন্ধে এই সম্পর্কে আলোচনা করেন। কারণ ইসরাইল মনে করে এর মাধ্যমে তেহরানের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যে বৃদ্ধি পাবে। তাই হোসনি মোবারকের পদত্যাগের পরদিনই ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াহুদ বারাক মিশরের তদানীন্তন Chief of the Supreme Council of the Armed Forces (SCAF)ফিল্ড মার্শাল হোসেন তানতাবির সাথে মিশর-ইসরাইল-গাজা বর্ডার ইস্যুসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন। সেই সময় গাজা থেকে মিশরমুখী অধিকাংশ টানেল বন্ধ ছিল। যদিও হোসনি মোবারক জনসেন্টিমেন্টের প্রতি খেয়াল রেখে চলার কারণে তার শাসনামলেও ইসরাইলের সাথে মিশরের সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল কিন্তু ইসরাইলের নিকট ইসলামী শক্তির চেয়ে সেক্যুলার শক্তি ক্ষমতায় থাকাই শ্রেয় ছিল। বিশেষভাবে মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের মধ্যকার আন্তরিক সম্পর্ক ইসরাইল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আর ঐতিহাসিকভাবে ইখওয়ানুল মুসলিমমুন(Muslim Brotherhood)ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনমনীয় ভূমিকা পালন করে। অবশ্য ১৯৭৯ সালে মিশর ও ইসরাইলের মাঝে অনুষ্ঠিত শান্তিচুক্তির ব্যাপারে মুসলিম ব্রাদারহুডের বক্তব্য ছিল এই, We (Egypt) are a party ( to the treaty) and we will be harmed, so it is our right to review the matter. যদিও মুসলিম ব্রাদারহুড কর্তৃক ইসরাইল-মিশর চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়নি এবং এই বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব থেকেও তারা সরে আসে তবুও তারা কিছু টার্ম রিভিউ করার যে কথা বলেছে তাতে ইসরাইল সন্তুষ্ট হতে পারেনি। মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী সালাফি পন্থী আন-নুর পার্টিও ইসরাইল-মিশর চুক্তি বাতিলের কোন দাবি দেয়নি। তারপরও ইসরাইল কর্তৃক মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয়কে হুমকি হিসাবে দেখা হয়। এর অন্যতম কারণ ছিল, ইরানের সাথে সম্ভাব্য সম্পর্ক ও হামাসের পৃষ্ঠপোষকতা। এটা ঠিক যে, মুসলিম ব্রাদারহুড ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে। তাই দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আহমদ নিজাদ কায়রো সফর করেন। কেননা ১৯৭৯ সালে ইরানে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব সাধন হলে মিশরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়। মিশরে ড. মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হবার পর আবার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হামাসের সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের সম্পর্ক ইসরাইলের শঙ্কার কারণ হলেও ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ইসরাইল-হামাস চুক্তির পেছনে উক্ত সম্পর্ক ইতিবাচক ফলাফল দেয়। তবে ড. মুরসি নির্বাচিত হবার পর গাজা থেকে মিশর অভিমুখী বন্ধ টানেলগুলো খুলে দেয়া হয়। এর ফলে গাজায় খাদ্যদ্রবসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানো সহজ হয়। কিন্তু ইসরাইল চায়নি উক্ত টানেলগুলো চালু হউক তাই ড. মুরসিকে ৩রা জুলাই ২০১৩ ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করার পর জেনারেল সিসি টানেলগুলো শুধু বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং অনেক টানেল ধ্বংস করে দেয়। উপরোক্ত আলোচনার নির্যাস এই যে, আরব বসন্তের মাধ্যমে তিউনিশিয়া, মিশর, জর্ডান, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী শক্তির যে উত্থান দেখা দেয় তা ইসরাইল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা আরব বসন্তের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিবর্তনের সূচনা হয় তার পরিবর্তে সেক্যুলারপন্থী মুসলিম শাসকদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসাতে বা রাখতে নানা কৌশল গ্রহণ করে। আর এই ক্ষেত্রে তাদের সাথে পাশ্চাত্যের সেক্যুলারিস্টদের কোথাও প্রত্যক্ষ আর কোথাও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে। আরব বসন্ত-উত্তর মুসলিম বিশ্ব ২০১১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে লিরিয়াতে আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় আন্দোলন শুরু হয়। প্রায় চল্লিশ বছর আগে জাতীয়তাবাদের শ্লোগান দিয়ে গাদ্দাফি তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন হন। একইভাবে গাদ্দাফির স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের জন্য আন্দোলন শুরু হলে এক পর্যায়ে তা রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। যুবকরাই উক্ত আন্দোলন সূচনা করে। সাংবাদিক Jon Lee Anderson এর ভাষায় “the hard core of the fighters has been the shabab—the young people whose protests in mid-February sparked the uprising অবশ্য এর পেছনে ইউরোপ-আমেরিকার সমর্থন ছিল। গাদ্দাফির পতনের পর ২০১২ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা ভালো করে। এরপর কয়েকবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কিন্তু এখনও শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। আঞ্চলিক বিভিন্ন শক্তির মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে। এই কারণে কারো কারো মন্তব্য হচ্ছে, Arabs are more tribal than national পৃথিবীর এক সময়ের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র বর্তমানে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কারণ লিবিয়া তেল ও গ্যাস নির্ভরশীল দেশ। গৃহযুদ্ধের আগে প্রতিদিন ১.৮ মিলিয়ন ব্যারল তেল রফতানি করতো। কিন্তু যুদ্ধের ফলে তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সম্পদ ধ্বংস হয় বা স্বার্থান্বেষী মহলের কব্জায় চলে যায়। ২০১১ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ছোট ছোট প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে সিরিয়ায় আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় আন্দোলন শুরু হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে ছাত্ররা রাজপথে নেমে এসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করার পর সরকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক নামিয়ে দেয় এবং শুরু হয় হত্যা, নির্যাতন ও গণগ্রেফতার। এক পর্যায়ে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্যান্য সংগঠন এর সমন্বয়ে Syrian National Council গঠন করা হয় এবং শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। পত্রিকার ভাষ্যমতে, "Since the beginning of anti-government protests in March 2011, Syrian authorities have subjected tens of thousands of people to arbitrary arrests, unlawful detentions, enforced disappearances, ill-treatment and torture using an extensive network of detention facilities, an archipelago of torture centers, scattered throughout Syria ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১১.৫% নিহত বা আহত হয়েছে আর ৪৫% দেশ ছাড়তে হয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় চার লাখ সত্তর হাজার। উক্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, Syria’s national wealth, infrastructure and institutions have been “almost obliterated” by the “catastrophic impact” of nearly five years of conflict, a new report has found. Fatalities caused by war, directly and indirectly, amount to 470,000, according to the Syrian Centre for Policy Research (SCPR)– a far higher total than the figure of 250,000 used by the United Nations until it stopped collecting statistics 18 months ago. (https://www.theguardian.com/world/2016/feb/11/report-on-syria-conflict-finds-115-of-population-killed-or-injured ) জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান যুদ্ধ বিরতির উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়। ইউরোপ-আমেরিকা বাশার আল আসাদের উৎখাতে বিভিন্ন সময় নানা হুমকি দিলেও কার্যকর কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। সিরিয়া সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও ক্ষমতাসীন সরকার শিয়া মতাবলম্বী। যার কারণে ইরান ও হিজবুল্লাহ বাশার আল আসাদের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দেয়। অতি সম্প্রতি রাশিয়া বাশার আল আসাদের পক্ষে সামরিক আক্রমণ চালালে আলেপ্পো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সমুদ্রে সিরিয় শিশু আইলানের ছবি দেখে সারা দুনিয়া জুড়ে মানুষের মনে ব্যাপক নাড়া দেয়। বাশার আল-আসাদ সম্পর্কে ইউরোপ-আমেরিকার বক্তব্যও দিন দিন নরম হয়ে আসছে। ২৬ শে জানুয়ারি ২০১৭ গার্ডিয়ানে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঘোষণা করেন, The UK accepts that Bashar al-Assad should be allowed to run for re-election in the event of a peace settlement in Syria, Boris Johnson has said, in a dramatic reversal of the British policy stretching back to the early days of the civil war that the president must go. আরব বসন্তের পর বাহরাইন ও ইয়েমেনে হাজারো জনতা রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কিন্তু সরকার দমন পীড়ন চালিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে ইয়েমেনের সাথে সৌদি আরবের চলমান যুদ্ধের ফলে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৬ই মে অরাজনৈতিক হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকায় শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে আরব বসন্তের মতো কোনো রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হলেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। যদিও উক্ত রাতে গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৯-৩০ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে রোড মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি ঘোষণার পর কারো কারো ধারণা ছিল হয়তবা সকারের পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু উক্ত মার্চের প্রতি জনতার সমর্থন থাকলেও তা গণবিক্ষোভে পরিণত হয়নি। ফলে সরকার ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচন করে। যদিও উক্ত নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় সকলে এটাকে ভোটারবিহীন নির্বাচন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এই সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে তা নিয়ে শুরুতে সরকারের ভিতরই শঙ্কা ছিল। তবে বর্তমানে উক্ত শঙ্কা তেমন নেই। বিশেষভাবে ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিরোধী দলের আন্দোলন কোনো সফলতা ছাড়া সমাপ্ত হবার পর কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়। আরব বসন্তের পর দেখা যায় যে, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী শাসকরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা জনতার আন্দোলনকে দমানোর জন্য বর্বরতা চালায়। এই ক্ষেত্রে ইয়েমেন ও বাহরাইনের অবস্থা উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও আরব বসন্তের প্রভাব পড়ে। কেউ কেউ এশিয়া বসন্ত নামে একটা কিছু এশিয়াতে হবে বলে মন্তব্য করলেও মূলত সেই ধরনের কোনো গণআন্দোলন এশিয়াতে দেখা যায়নি। পাকিস্তানে আরব বসন্তের সময় পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারে থাকলেও ২০১৩ সালে নেওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে মুসলিম লিগ সরকার গঠন করে। কিন্তু ক্ষমতার এই পটপরিবর্তন ছিল গণতান্ত্রিকভাবে অনুুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে। মালয়েশিয়াতে ড. আনোয়ার ইবরাহিমের নেতৃত্বে বিরোধী দল আন্দোলন করলেও গণবিপ্লব সাধিত হয়নি। আর ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে আনোয়ার ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন জোট বিজয় লাভ করবে বলে ধারণা করা হলেও মূলত ক্ষমতাসীন উমনুই ক্ষমতায় ফিরে আসে। যদিও বিরোধী জোট নির্বাচনে কারচুপির অভিযাগ তুলেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাহাথির মোহাম্মদও বিরোধী জোটের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং অতি সম্প্রতি আনোয়ার ইবরাহিমের বাসায় গিয়ে আনোয়ার পতœীর সাথে দেখা করেছেন। আরব বসন্ত গোটা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ায় এক নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে। শুরুতে এটাকে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা হিসেবে দেখা হলেও আরব বসন্তের ফলে তিউনিশিয়া, মিশর, মরক্কোসহ কয়েকটি দেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর বিজয় সৌদি আরবসহ অধিকাংশ আরব দেশগুলোর রাজা-বাদশাহরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেননি। তাঁরা আরব বসন্তকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে শুরু করেন। মিশর, তিউনিশিয়া, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশে মুসলিম ব্রাদারহুড বা তার সমচিন্তা ধারার ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো যেন ক্ষমতায় থাকতে না পারে এই জন্য সেই সকল দেশে সেক্যুলারপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থায়ন করে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী সরকারের পতন আন্দোলনকে ভেতরে ভেতরে পৃষ্ঠপোষকতা করে। মজার বিষয় হচ্ছে সৌদি আরবপন্থী সালাফি কিছু ইসলামী দলও ইসলামপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে শুরু করে। তারা ইসলামপন্থী সরকারকে ইসলামী শরিয়াহ বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করে। ব্রাদারহুডের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক রয়েছে এইভাবে প্রচারণা চালিয়ে মূলত ইসলামপন্থী সরকারকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক নয় বলে প্রচারণা চালায়। অপরদিকে বামপন্থী এবং সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ দেয় যে, ইসলামপন্থী ব্রাদারহুড সরকার খ্রিষ্টানসহ মাইনরিটি এবং মহিলাদের অধিকার রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না। তারা মিশরের নতুন সংবিধানকে একটি ইসলামী সংবিধান হিসাবে আখ্যা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রচার প্রপাগান্ডা চালায়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মিশরে ড. মুরসিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক উৎখাত করার পরপরই বিচারপতি আদিল মনসুরকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর তার শপথ অনুষ্ঠানে বামপন্থী-সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সালাফিপন্থী ইসলামী দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আর সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব শাসকরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য ঘোষণা করেন। অথচ ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড যখন সরকার পরিচালনা করছিল তখন মিশরের আর্থিক পুনর্গঠনে তাঁরা কোনো সাহায্য করাতো দূরের কথা বরং মিশরে তেল, খাদ্যদ্রব্যসহ জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি করে জনমনে নেতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টিতে তাদেরও ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আমেরিকা ও ব্রিটেন মুসলিম ব্রাদারহুডকে টেরোরিস্ট সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত না করলেও সৌদি আরবই প্রথম দেশ যে মুসলিম ব্রাদারহুডকে বাদশাহ আবদুল্লাহর সময় টেরোরিস্ট হিসাবে ঘোষণা করে। অবশ্য বাদশাহ সালমান তা বাতিল করেন এবং হামাস ও ইখওয়ান নেতৃবৃন্দকে রাজকীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাদশাহ ফয়সাল জীবিত থাকাকালীন তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। মিশরের তৎকালীন প্রেসিডন্ট জামাল আবদুন নাসের কর্তৃক ‘সাইয়েদ কুতুবের বিচার নাটক মঞ্চস্থ শেষে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার আগে উক্ত ফাঁসি মওকুফ করার জন্য বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন বাদশাহ ফয়সাল। যদিও নাসের উক্ত সুপারিশ অগ্রাহ্য করে সাইয়েদ কুতুবের ফাঁসি কার্যকর করে। এখানে আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে সৌদি আরবের এহেন নীতি অনেকেই সমর্থন না করলেও কেউ প্রকাশ্যে নিন্দা জানাবার সাহস দেখায়নি। ভারতের নদওয়াতুল উলামার আল্লামা সুল্য়ামান নদভী সৌদি আরবের উক্ত নীতির প্রতিবাদে সৌদি আরব থেকে ভারতে একটি প্রতিনিধিদল গেলে তাদের সাথে তিনি দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। মুসলিম ব্রাদারহুডসহ মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামপন্থ’ীদের সম্পর্কে সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বশেষ ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে। ইসরাইল মূলত ফিলিস্তিনের ওপর বিশেষভাবে গাজায় বর্বর হামলা চালায়। এই যুদ্ধে শিশু, নারীসহ দুই সহ¯্রাধিক মানুষ মারা যায়। কিন্তু অনেকেই এই যুদ্ধকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ না বলে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ হিসেবে দেখে। এই যুদ্ধে হামাসই বিজয়ী হয়েছে বলে সমর বিশ্লেষকদের অনেকেরই অভিমত। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সৌদি শাসকদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তারা হামাসকে দমন করার জন্য মিশরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়। যার কারণে ইসরাইলের হামলার এক মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে। অবশেষে বাদশাহর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হলেও এতে ইসরাইলকে সরাসরি নিন্দা জানানো হয়নি বরং কথাবার্তা এবং বক্তব্যের টোন ছিল হামাস বিরোধী। আর মিশরতো গাজা থেকে মিশর অভিমুখী টানেলগুলো বন্ধ করে দিয়ে প্রকারান্তরে গোটা গাজাকে এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করে। সৌদি আরবের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন একই সুরে কথা বলে। এই ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ভূমিকা পালন করে কাতার। মূলত কাতার নিজেকে মুসলিম ব্রাদারহুডের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বীকার না করলেও হামাস প্রধান খালেদ মিশেল ও ড. ইউসুফ আল কারযভিসহ মুসলিম ব্রাদারহুড, হামাসসহ ইসলামী আন্দোলনের অনেক নেতৃবৃন্দের কাতারে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। উপরন্তু আল-জাজিরার ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই সৌদি আরবের সাথে কাতারের সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত নষ্ট হয়ে পড়ে। অবশ্য ইসরাইলের সাথে হামাসের যুদ্ধ বিরতি স্বাক্ষরের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতার সফর করে সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন। ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে সৌদি আরবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শক্তিই তাদের ভয় ও শঙ্কার কারণ। তাই তারা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। খাদেমুল হারামাইন হিসেবে তাদের এই ভূমিকা অনেক সেক্যুলার মুসলিমের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তারা ইখওয়ান সম্পর্কে কঠোর নীতি গ্রহণ করলেও জামায়াতে ইসলামী বিশেষভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে কঠোর নয় আবার বাদশাহ ফয়সালের মতো পৃষ্ঠপোষকও নয়। তুরস্কের একেপি কখনও ইসলামপন্থী হিসেবে দাবি করেনি। ড. নাজিবুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন সায়াদাত পার্টি থেকে বের হয়ে এরদোগান-গুল-দাউদউগুলোর নেতৃত্বে ২০০১ সালে তুরস্কে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গঠন করার পর প্রায় দেড় যুগ ধরে তারা ক্ষমতায় এবং তুরস্কের সেক্যুলার সংবিধানের অধীনেই দেশ শাসন করছে। তারা ইসলামী সংবিধান রচনা বা শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে পর্যায়ক্রমে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, পার্লামেন্টে হিজাব পরিধান করে ঢুকার অনুমোদন দেয়াসহ তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে তুরস্কের বর্তমান সরকারকেও ইসলামপন্থী সরকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষভাবে মিশর, বাংলাদেশ ও গাজা ইস্যুতে এরদোগান সরাসরি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইখওয়ানুল মুসলিমুন ও হামাসের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এমনকি বাংলাদেশ সরকার জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কার্যকর করার আগের দিন এরদোগান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উক্ত ফাঁসি কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়ে ফোন করেন। মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ড. মুরসিকে তিনি এখনও মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে মনে করেন এবং জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ সিসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে তাঁর এখনও আপত্তি রয়েছে তাই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে ভোজসভায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে একই টেবিলে সিসির জন্য আসন রাখায় এরদোগান তাদের সাথে বসতে অস্বীকার করেন। এরদোগান একইভাবে ইসলামী দুনিয়ায় মুসলমানদের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তবে সৌদি আরবের সাথে এরদোগানের সম্পর্ক বাদশাহ আবদুল্লাহর সময় মধুর ছিল না। তুরস্কে ফতহুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বাধীন গুলেন মুভমেন্টসহ সালাফিরা সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় এরদোগানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি এবং তাকে উৎখাতে পাশ্চাত্যের সাথে এক সাথ হয়ে ভূমিকা পালন করে। তবে বাদশাহ সালমানের সময় উভয়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওআইসির সম্মেলনে বাদশাহ সালমান যান এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগানও পরবর্তীতে সৌদি আরব সফর করেন। তুরস্ক সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী সামরিক জোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তুরস্ক একমাত্র মুসলিম দেশ যার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ সকলেই মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে সরব। তুরস্কের এই ভূমিকা অনেকেরই সহ্য হয় না। তাই ২০১৬ সালের জুলাই মাসসহ বিভিন্ন সময় প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হত্যা চেষ্টা চালানো হয় এবং ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার সাথে দেশ-বিদেশের অনেক ষড়যন্ত্রকারীরা সম্পৃক্ত ছিল। আল্লাহর রহমত, এরদোগানের সময়োচিত নেতৃত্ব এবং জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে তা বানচাল হয়। তবে চক্রান্তের অন্ত নেই। আরব বসন্তের পর দেখা যায় যে, ইসলামপন্থীদের জন্য পাশ্চ্যাত্যের শাসকরা যতটা না বাধার সৃষ্টি করে এর চেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতিপরায়ণ ক্ষমতালিপ্সু স্বৈরাচারী মুসলিম শাসকরা। আর এসব দুর্নীতিপরায়ণ স্বৈরাচারী শাসকদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য পাশ্চাত্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। এতে তাদের ডাবল লাভ। একদিকে ইসলামী আদর্শের সত্যিকার বাহক যারা তাদেরকে মুসলিম শাসকদের মাধ্যমেই দমন করা সম্ভব হচ্ছে। অপরদিকে ইসলামপন্থীরা বা দেশপ্রেমিক শক্তি এইজন্য পাশ্চাত্যকে দোষারোপ না করে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের শাসকদের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লবিং ফার্ম নিয়োগ করায় তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে। বাদি-বিবাদি সকলেই তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। আর মুসলিম শাসকগণ গাদ্দাফি ও সাদ্দাম হোসাইনের পরিণতি দেখার পরও তাদের নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে কিংবা ইসলামপন্থীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে দ্বিধা করছে না। এমতাবস্থায়, মুসলমানদেরকে মুসলিম শাসক ও ইসলামপন্থীদেরকে তাদের করণীয় ও কৌশল সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার মানসিকতা রাখতে হবে এবং মুসলমানদেরকে নিজেদের আসল শত্রু ও মিত্রকে তা বুঝতে হবে। আর পাশ্চাত্যের সকলের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে বক্তব্য দেয়ার পরিবর্তে পাশ্চাত্যে যারা মানবতা ও মানবাধিকারের পক্ষে ভূমিকা পালন করছেন তাদের সাথে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করে কমন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। আশার দিক হচ্ছে, পাশ্চাত্যের চিন্তাশীলরা সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। অতি সম্প্রতি আমেরিকার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলব্রাইট বলেছেন, ‘‘আমেরিকাতে মুসলমানদেরকে নাম রেজিস্ট্রি করতে হলে আমি আমার নামও মুসলমান হিসেবে রেজিস্ট্রি করাব।” নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র বলেছেন, ‘‘ইমিগ্র্যান্টদেরকে যদি আমেরিকা ছাড়তে বলা হয় তাহলে আমাকে প্রথম আমেরিকা থেকে তাড়াতে হবে।” অতএব, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, পাশ্চাত্যের সাধারণ মানুষসহ বিরাট একটি অংশ পাশ্চাত্যের বর্তমান পলিসিতে খুশি নন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির