post

ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্য । উম্মে নাজিয়া

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যইসলাম এমন একটি ধর্ম যা সকল বিষয়ের সাথে আমাদের খাদ্য এবং পুষ্টির বিষয়েও শিক্ষা দেয়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) কিছু খাবার বিশেষ পছন্দ করতেন এবং সেগুলো মানুষের জন্য কল্যাণকর বলেছেন (বোখারি শরীফ, ভলিউম ৭, বই ৭১ নম্বর ৫৮২)। ইসলাম ধর্মে খুব ভারী এবং গুরুপাক খাবার খাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়নি, বরং সবসময় ফ্রেশ এবং হালকা খাবার খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে খুব পরিষ্কারভাবে খাবার সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, কারণ পাকস্থলী শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং কোনো গুরুপাক, বিষাক্ত খাবার কিংবা অতিরিক্ত খাবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হলে পাকস্থলীর ওপর অতিরিক্ত চাপ দেয়া হয় ফলে রাসায়নিকভাবে এবং ইলেকট্রিক্যালি ক্ষতিকর হয়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে হজমে গোলমাল হয়, মানসিকভাবে একজন অশান্ত থাকে এবং ধীরে ধীরে সে শক্তিহীন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার এনার্জি শূন্য হয়ে পড়ে।

হযরত আলী (রা) বলেছেন, যারা অতিরিক্ত খায় তারা নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তিনি আরো বলেছেন, খাবারের পাশে বসবে না তাতে তুমি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বে এবং পেটে ক্ষুধা রেখেই খাবারের স্থান ত্যাগ করতে হবে। খাবার খুব ভালোভাবে চিবাতে হবে।

খাবার পূর্বে হাত ধুয়ে ভিজা হাতে খাবার খাওয়া ইসলামের একটি শিক্ষা। আমরা খাবার পূর্বে হাত ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে থাকি যা স্বাস্থ্যকর নয়, কারণ ভিজা হাত তোয়ালে মুছলে তোয়ালেতে লেগে থাকা নেগেটিভ চার্জ, বাতাস থেকে অনেক জীবাণু হাতে লেগে যাবে এবং খাবারের সঙ্গে পেটে যাবে, মুসলমানরা তাদের ইবাদতের শুরুতে ওজু করে নেয় এবং ওজু করার পর তা মোছার প্রয়োজন নেই। খাবার পূর্বে সম্ভব হলে ওজু করে নেয়া ভালো। খাবার সময় মুখের শ্বাস ছোট হবে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে, অনেকে খুব বড় হাঁ করে বড় বড় শ্বাসে খায় এবং ভালোভাবে না চিবিয়ে গিলে খায় যা খুবই খারাপ। ভালো কোনো খাবার দেখলে লোভ করা ঠিক নয়। কোন লোভনীয় খাবার হারাম উপায়ে বা হারাম পয়সা দিয়ে তৈরি করলে যত পরিছন্ন করেই তৈরি করা হোক না কেন ঐ খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার সময় স্বর্ণ-রৌপ্যের প্লেট ব্যবহার নিষেধ। ইসলাম ধর্মে সোনা বা রূপার তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নবী (সা:) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি স্বর্ণ-রৌপ্যের তৈজসপত্র ব্যবহার করে তাহলে সে বেহেশতের ঘ্রাণ পাবে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যখাবার সময় : প্রত্যুষে খাবার খাওয়া এবং সারাদিন না খেয়ে দ্বিতীয়বার এশার নামাজের পর কিছু খাওয়া সুন্নাত। খুব গরম খাবার খাওয়া ঠিক নয়। ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এক সাথে খাবার খেতে বসলে অন্যের সামনের জিনিস হাত বাড়িয়ে নেয়া ঠিক নয়।

হাত এবং প্লেট পরিষ্কার করে মুছে খেতে হবে, হাড়ের সঙ্গে কিছু মাংস রেখে খাওয়া ছাড়তে হবে, একদম পরিষ্কার করে খাওয়া ঠিক নয়, কারণ, এ মাংসে জিনদের আহার রয়েছে। রুটি ছুরি দিয়ে কেটে খাওয়া ঠিক নয়। সন্ধ্যার পর কিছু না খেলে বার্ধক্য দ্রুত হয়, বৃদ্ধলোক ঘুমানোর আগে কিছু খেলে তার ঘুম ভালো হবে এবং তার শরীর এবং মন ভালো থাকবে। হযরত ইমাম হাসান (রা:) বলেছেন, খাবার সময় সকল মুসলিমের বারোটি বিষয়ে চিন্তা করতে হবে এর চারটি অবশ্যই পালনীয়, চারটি সুন্নাত এবং চারটি স্বভাব রয়েছে।

অবশ্যই পালনীয় (১) যা খাদ্য হিসেবে সামনে আসবে তা আমাদের আল্লাহই দেন (২) তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। (৩) বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করতে হবে (৪) শুকরিয়া জানাতে হবে খাবার শেষে।

সুন্নত (১) খাবার পূর্বে হাত ধুয়ে নিতে হবে (২) একজনের বাম পাশে বসতে হবে (৩) তিন আঙুল দিয়ে খাবার উঠাতে হবে (৪) আঙুল মুছে খেতে হবে।

স্বভাব বা ভদ্রতা সামনে যে খাবার আসবে তাই খাবে ছোট লোকমায় খাবে খাবার ভালোভাবে চিবাতে হবে খাবার সময় অন্যের মুখের দিকে তাকাবে না। কোন কিছুতে হেলান দিয়ে অথবা শুয়ে খাবার খাওয়া নিষেধ। দাস, কাজের মানুষের সঙ্গে একসাথে দস্তরখানা বসে খেতে হবে। টেবিলে কোন হারাম খাবার থাকলে সেখানে বসে খাওয়া যাবে না, অথবা যেসব মানুষ মুসলিমদের সম্পর্কে নিন্দা করে বেড়ায় অথবা এমন কাজ করে যা করা উচিত নয় সেই সব মানুষদের সঙ্গে বসে একত্রে খাবার খাওয়া ঠিক নয়। নবী (সা:) বলেছেন, বাম হাত দিয়ে খাবার খাবে না, যদি না ডান হাত অসুস্থ থাকে। বাম হাতে খাওয়া মাকরূহ, হেঁটে হেঁটে খাবার খাওয়া নিষেধ। খাবার পূর্বে জুতা মোজা খুলে খাওয়া ভালো, এত স্বস্তির সাথে খাওয়া হয়। খাবার এবং নামাজের সময় এক সাথে হলে খাবার সুন্দর করে ঢেকে রেখে নামাজ পড়ে পরে খাবার খেতে হবে। খাবার সময় অবশ্যই আল্লাহপাকের নাম স্মরণ করতে হবে। নবী (সা:) ইরশাদ করেছেন, যখনি দস্তরখানায় খাবার রাখা হয়, তখন হাজারখানেক ফেরেস্তা খাবারকে ঘিরে রাখে, যখন বিসমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়া শুরু হয়, তখন ফেরেস্তারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করতে থাকে এবং শয়তান তাদের সাথে খাবার খেতে পারে না এবং খাবারের পর যখন তারা আলহামদুলিল্লাহ বলে, আল্লাহ তাদের যে নিয়ামত দিয়ে আহার করালেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যদি কেউ খাবারের সময় বিসমিল্লাহ বলে না এবং খাবারের পর আলহামদুলিল্লাহ পড়ে না এবং খাবার খায় তখন ফেরেস্তারা দেখে এই লোকেরা আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করছে অথচ তারা তার নেয়ামতের শোকর করে না। তখন তারা খুবই অসন্তুষ্ট হয় এবং তাদের ত্যাগ করে এবং শয়তান তাদের খাবারে সঙ্গী হয়। বিসমিল্লাহ বলে খাবার না খেলে অনেক সময় পেট ব্যথা অনুভূত হয় তখন পুনরায় বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতে হয়। খাবার সময় অধিক কথা বলা নিষেধ, কারণ মনে করতে হবে খাদ্য আল্লাহর নিয়ামত, খাবার সময় আল্লাহর এই অতুল নেয়ামতের কথা স্মরণ করে শুকরিয়া জানানো উচিত। নবীজি কিছু খাবারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন নবীজি (সা:) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কিছু আজুয়া খেজুর খায় তাহলে সে সারাদিন এবং রাত পর্যন্ত বিষক্রিয়া বা জাদুটোনার ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকবে। পবিত্র আল কোরআনে বর্ণিত যখন হযরত মরিয়মের প্রসব বেদনা শুরু হয় তখন কষ্ট কমানোর জন্যÑ ‘তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড তোমার দিকে ঝাঁকি দাও-এটি তোমার ওপর পাকা তরতাজা খেজুর ফেলবে। তুমি এটি খাও পান কর এবং চক্ষু শীতল কর।’

খেজুর প্রসব বেদনার কষ্ট কমিয়ে দেয়। নবীজি আরো বলেছেন, খেজুর গাছ একজন মুসলিমের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি এই গাছটিকে বেহেশ্তি গাছ বলেছেন। যারা খুব ক্ষীণকায়, ওজন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন খেজুর তাদের জন্য মহৌষধ। হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, আমার মা আমার ওজন বৃদ্ধি করার জন্য তাজা খেজুর এবং শসা একসাথে খাবার পরামর্শ দিয়েছেন যতক্ষণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় না পৌঁছায়। (আবু দাউদ, ২৮, ৩৮৯৪) ইদানীং আমরা বাজারে কতই না আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখি ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যার অধিকাংশই অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং প্রচুর টাকার প্রয়োজন, অথচ খেজুরের মত উপাদেয় ফল খেয়েই আমরা সেটি করতে পারি। খেজুর খুবই পুষ্টিকর যার ফলে পবিত্র রমজান শরীফে খেজুর খেয়ে ইফতার করতে বলা হয়েছে। নবীজি (সা:) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ ইফতার করে তখন যেন সে খেজুর খায়। যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তখন যেন পানি দিয়ে ইফতার করে।

নবীজি (সা:) বলেছেন, প্রতিদিন সাতটি খেজুর খেলে হার্টের রোগ ভালো হবে। খেজুর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভালো করে, থাকলে খালি পেটে ১১টি খেজুর খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভালো হয়।

মধু: মধু হলো অন্য একটি উপকারী পানীয় যে প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র আল কোরআনে বর্ণনা করেছেন সূরা (নমল ৬৮-৬৯) নবীজি খাবারে মিষ্টি এবং মধু পছন্দ করতেন। দু’টি জিনিস ক্ষত সারায়, একটি মধু দ্বিতীয়টি আল কোরআন। (ইবনে মাজাহ ১, ৩১, ৩৪৫২) মধু পেটের পীড়ার জন্য অদ্বিতীয়। প্রতিদিন সকালে পর পর তিন দিন খালিপেটে মধু খেলে যে ঋতু পরিবর্তন জনিত সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকবে (ইবনে মাজাহ ১, ৩১, ৩৪৫২)। মধু দেহকে সুস্থ সবল করে এবং দুর্বলতা থেকে সুরক্ষা দেয়। ১. মধু শরীরকে সর্বক্ষণ কর্মক্ষম রাখবে ২. ঠাণ্ডা হাঁচি কাশি থেকে রক্ষা করবে। ৩. পেট এবং পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে। ৪. বাতজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করবে। ৫. নতুন রক্ত তৈরি করে। ৬. হার্টকে সুরক্ষা দেয় এবং নিরোগ রাখে।

জলপাই: পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি তিন এবং জয়তুনের শপথ করছি। নবী (সা:) বলেছেন, জয়তুনের তেল খাও এবং ইহা ব্যবহার কর, ইহা আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। (তিরমিজি শরীফ, ভলিউম ৩, বই ২৩, ১৮৫২)ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্য

স্বেতী রোগের ঔষধ ক্ষত রোগের ঔষধ: মুখে ক্ষত হলে জয়তুনের তেল ক্ষত স্থানে প্রলেপ দিতে হবে। এতে ক্ষত ভালো হয়। নবী (সা) বলেছেন, জয়তুনের তেল খাও এবং ইহা যেখানে প্রয়োজন সেখানে লাগাও। জয়তুনের তেল ৭০টি রোগ ভালো করে। তার একটি হলো স্বেতী রোগ। পিঠের ব্যথা, শরীরের ব্যথা জয়তুনের তেল দিয়ে ম্যাসেজ করলে ভালো বোধ হয়। দুধ: ঋতু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট রোগ ভালো করে। দুধ আর মধু একসঙ্গে পান করলে সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দুধ খুবই ভালো কিন্তু শুধু দুধ না খেয়ে তার সঙ্গে কিছু খেতে হবে। দুধ ওজন বৃদ্ধি করে এবং হাড় শক্তিশালী করে। হযরত আলী (রা:) বলেছেন, গরুর দুধ একটি ঔষধ। কালোজিরা: এটি ক্ষত সারায়। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী (সা:) বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগ ভালো করে। প্রত্যেক দিন ফজরের পর ১০টি থেকে ১৫টি কালোজিরা খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়। তবে গর্ভবতী মহিলা যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তাদের কালোজিরা খাওয়া উচিত নয়। শসা: শসা একটি উপকারী খাবার। নবীজি (সা) তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা খেতে পছন্দ করতেন। পুষ্টি বিজ্ঞানেও আমরা দেখি শসা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মাংস : রুটি (ছোলার ছাতু, চাল এবং শস্যদানা) মাংস, ঘি এবং অন্যান্য খাবার যা প্রাণী থেকে এসেছে, ভিনেগার এবং মিষ্টি। নবী (সা:) বলেছেন, প্রত্যেকের তাদের রুটির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, কারণ একটি রুটি তৈরি হতে বেহেশত থেকে অনেক ফেরেস্তা এবং পৃথিবীতে অনেক মানুষের পরিশ্রমের ফল। ছাতু নবীজির প্রিয় খাবার, ইমাম জাফর ছাদেক (রহ:) বলেছেন, কেউ যদি সকালে তিন চামচ ছাতু খায় তাহলে সে কালী এবং কলেরা রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। ছাতু খুব স্বাস্থ্যকর খাবার এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে, হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মহিলাদের ঋতু চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করে। মাংস: মাংস সম্পর্কে ইমাম আযম (রহ:) বলেছেন, মাংস শরীরের মাংস বৃদ্ধি করে, একাধারে কেউ যদি চল্লিশ দিন মাংস না খায় তাহলে তার শরীর পাতলা হয়ে যাবে এবং চল্লিশ দিন পর খেলে আবার তার শরীর আল্লাহপাক বৃদ্ধি করে দেবেন। মাংসের মধ্যে দুম্বা ও ভেড়ার মাংস সবচেয়ে ভালো, কেননা দুম্বাকে হযরত ইসমাইল (আ:) পরিবর্তে আল্লাহপাক কোরবানি হিসেবে কবুল করে নিয়েছিলেন। ছায়ায় মাংস শুকিয়ে সেই মাংস খাওয়া ঠিক নয়। নবী (সা:) বলেছেন, পেট ভরে খাবার খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকাও ভালো, আদম সন্তানদের জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। আমেরিকান ডায়াবেটিক সমিতির রিপোর্ট (মার্চ-১৯৮৩) বলেছেন, কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। নবীজি আরো বলেছেন, কম খাও তুমি ভালো থাকবে। খাবার গ্রহণ ৩৩% অথবা ৪৬% এর কম থাকলে চর্বি জমে না। ভরা পেট খেয়ে গোসল করা একটি খারাপ অভ্যাস। নবীজি (সা:) আরো বলেছেন, কিছু জিনিস না খেয়েও শরীর মোটা করে। ১. রেশমি বস্ত্র পরিধান করা (২) সুগন্ধ ব্যবহার করা (৩) লেবু পানি (বর্তমান কোল্ড ড্রিংঙ্কস) ব্যবহার করা। ২টি জিনিস সবসময় ভালো (১) কুসুম গরম পানি (২) ডালিম। ২টি জিনিস সব সময় খারাপ ১) শুকনা মাংস এবং ২) চিজ। দুধ দিয়ে মাংস রান্না নবীজির একটি প্রিয় খাবার। ঘুমানোর পূর্বে মিষ্টি খাওয়া ভালো। চিনিতে ক্ষত সারাতে পারে। ঘি বলদায়ক খাবার কিন্তু পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে ব্যক্তির জন্য ভালো নয়। হযরত আলী (রা:) বলেছেন আখরোট একটি ভালো খাবার শীতে কোন কিছুর সঙ্গে খেলে কিডনি ভালো রাখে এবং কফ সারায়। নবী (সা:) বলেছেন, ৭০ জন নবী ছোলার গুণাবলির কথা বলেছেন। মসুর ডাল হার্ট ভালো রাখে। কারো মুখে সাদা দাগ দেখা গেলে মাসকলাইয়ের ডাল খেতে বলা হয়েছে। ফল সম্পর্কে বলা হয়েছে পাঁচটি ফল বেহেশতি ফল ১) বেদানা ২) মেওয়া ৩) পি আপেল ৪) সাদা আঙ্গুর এবং ৫) তাজা খেজুর। নবী (সা:) বলেছেন, তোমরা লাউ খাও, লাউ ব্রেইন এবং বুদ্ধি বৃদ্ধি করে। নবীজি শসা লবণ দিয়ে খেতেন। নবীজি পেঁয়াজ খাবার উপকারিতা বলেছেন। এটি রোগ ভালো করে, কিন্তু পেঁয়াজে গন্ধ আছে তাই পেঁয়াজ খেয়ে মসজিদে গমন করতে নিষেধ করেছেন। নবী (সা) বলেছেন, মানুষের জন্য একটি বেহেশতি খাবার হলো মাংস। মাংসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো, পশুর পিঠের মাংস। গরুর দুধ পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে। এর চর্বিতে ঔষধিগুণ রয়েছে। গরুর মাংসে দুর্বলতা রোগ বৃদ্ধি করে। (বায়হাকি ১২) নবী (সা) বলেছেন, গরুর দুধ এবং এর চর্বি ভালো কিন্তু মাংস ভালো নয়। দুধ এবং এর চর্বিতে গুণ আছে কিন্তু মাংস রোগ বৃদ্ধি করে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে এ কথা প্রমাণিত গরুর মাংস হার্টের সমস্যা, প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি করে। নবী (সা) বলেছে, গরুর দুধ ক্ষয় পূরণ করে এর চর্বিতে ঔষধি গুণ আছে কিন্তু এর মাংসে অসুখ বৃদ্ধি হয়। হযরত আলী (রা:) বর্ণনা করেছেন মাংস খাও, এটি চামড়াকে ফর্সা করে। পাকস্থলী শক্তিশালী করে এবং আচরণ ভালো করে। নবী (সা:) বলেছেন মাংস খাও, মাংস শক্তিশালী করে।

ডিম: একজন আগন্তুক নবীজির কাছে এসে বললেন হে আল্লাহর নবী! আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি আমার দুর্বলতার কারণে, নবী (সা) বললেন, ডিম খাও। আধুনিক বিজ্ঞানে কি বলেÑ ডিম শক্তিদায়ক এবং ক্ষয় পূরণ করে।

লবণ: সবচেয়ে ভালো সিজনিং। নবী (সা:) বলেছেন, সবচেয়ে ভালো সিজনিং হলো লবণ। (ইবনে মাজাহ ভলি ১, বই ২৯, ৩৩১৫)

হযরত আলী বর্ণনা করেছেন, নবী (সা:) বলেছেন, যে লবণসহ খাবার শুরু করে, আল্লাহপাক তার ৭০ প্রকার অসুস্থতা দূর করবেন। সোডিয়াম ক্লোরাইড মানুষের শরীরের এনার্জি সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত। খাবারের পূর্বে এবং পরে সামান্য লবণ-খেলে হজম ভালো হয়। লবণ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, লবণ ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি ব্রেন থেকে হার্ট এবং মাংসে পৌঁছে দেয়, জিহবা থেকে লবণ হজমে সাহায্য করে এবং খাদ্য শোষণের হার বৃদ্ধি করে। নবী (সা:) মাছ এবং দই একসঙ্গে খেতেন না। মাছ খাবার পর দুধ এবং টক জাতীয় খাবার খেতেন না, মাছ এবং দুধ খাবারের সঙ্গে টক জাতীয় খাবার খেতেন না। তিনি একই খাবারে খুব গরম খাবার এবং খুব ঠাণ্ডা খাবার একসঙ্গে খেতেন না। বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন বর্ণের খাবার খাওয়া ভালো। আমরা যদি ফাস্ট ফুড খাই, এগুলি জমানো খাবার, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অনেক দ্রব্য এতে যোগ করা হয়, সংরক্ষিত খাবার মানুষকে মোটা করে পাকস্থলীর সমস্যা হয়, আলসার, ইলেকট্রিক্যালি এবং কেমিক্যালি অসুস্থ করে আমাদের পাকস্থলী। খাওয়ার সময় ধীরস্থিরভাবে খেতে হবে, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে যাতে এনজাইম ভালোভাবে নিঃসরণ হবে এবং খাদ্যবস্তু ভালোভাবে হজম হবে। কিয়ামতের দিন তিনটি বিষয় জিজ্ঞাসা করা হবে (১) সে কোন খাবার খেয়েছে (২) সে কিভাবে তা আয় করেছে (৩) পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য কোন হারাম পন্থায় অর্জন করেছে কি না। নবী (সা:) ইশরাদ করেছেন, কেউ যদি অতিরিক্ত খাবার খায় তাহলে তার মুখে সাদা সাদা দাগ পড়ে। ইমাম জাফর সাদিক (রহ:) বলেছেন, আল্লাহপাক ঐ সব লোকদের শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করেন না যাদের মধ্যে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে : যারা রাত জাগবে না অথচ সারাদিন ঘুমায়। অকারণে অত্যধিক হাসা হাসি করে। পেট ভরে খাবার পরও খাবার খায়। হযরত আলী (রা:) বর্ণনা করেছেন, একবার হযরত ইশা (আ:) এক গ্রামে গেলেন, সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া দেখতে পেলেন, কারণ ছিল মহিলার বয়স বেশি হওয়াতে তার চেহারা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ফলে স্বামী তাকে তালাক দিতে চাইছিল, নবী মহিলাকে বললেন, তুমি খাবার খুব কম খাবে তাহলে তোমার চেহারা সুন্দর হয়ে যাবে। খাদ্য জীবনের অপর নাম। খাদ্য মানুষকে যেমন বাঁচায় তেমনি অতি ভোজন কিংবা অস্বাস্থ্যকরভাবে খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে। নবীজি (সা:) বাস্তবে দেখিয়েছেন কিভাবে খাদ্য গ্রহণ করে একজন মানুষ সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে। তাই এ শিক্ষাপদ্ধতি আমাদের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির