post

উচ্চশিক্ষা ভাবনা : প্রাসঙ্গিক কথা

২৬ মার্চ ২০১৪
higher Educationমো: জিল্লুর রহমান (গত সংখ্যার পর) বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা অবকাঠামোগতভাবে দৃশ্যমান উন্নতি করলেও গুণগতভাবে এর মান ক্রমশ নি¤œমুখী এ কথা এখন সর্বত্রই আলোচিত একটি বিষয়। গুণগত মান নিশ্চিত করার বিষয়টি আড়াল করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রচারের উপলক্ষে অধিকমাত্রায় সনদ বিতরণের যে আয়োজন তা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য এক অন্ধকারময় ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত বহন করে। আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছরেও আমরা একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও এর সফল বাস্তবায়নে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। যেখানে একটি জাতি তার আদর্শ, কৃষ্টি ও দেশপ্রেম সবকিছুই অর্জন করে তার শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে, সেখানে বারবার শিক্ষা কমিশন গঠন করেও এর প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে আমাদের অনেকটা-ই পশ্চাৎপদ জাতিতে পরিণত করেছে। সবশেষ বিগত সরকারের সময়ে প্রণীত ও প্রয়োগকৃত শিক্ষাব্যবস্থা দেশের শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করেছে যা মূলত এ দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা ও চেতনার বিপরীতে কমিউনিস্ট ভাবধারায় প্রণীত হয়েছে। নানাভাবে বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সনদ বিতরণের উদগ্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বঞ্চিত বিশাল সংখ্যা তৈরির মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধিতে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এ কথা সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান আসনসংখ্যার বিপরীতে যে বিশাল অস্বাভাবিক সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর ভিড় যা রীতিমতো ভীতিকর। এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত তথ্য বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করবে। ২০১৩ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে শতকরা ৮৯ ভাগ পাস করে যেখানে পাসকৃত ছাত্রের সংখ্যা ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৭ শত ৭৮ জন এর মধ্যে এচঅ ৫ (অ+) সংখ্যা ৯১ হাজার ২ শত ২৬ জন। অপর দিকে ২০১৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসকৃত ছাত্রের সংখ্যা ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন যার মধ্যে এচঅ ৫ (অ+) সংখ্যা ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র মতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী যেখানে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে (মেডিক্যাল, প্রকৌশল ও কৃষিসহ) প্রথমবর্ষে ভর্তির আসনসংখ্যা ৩৯ হাজার ৩৮০ সেখানে প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসিতে এচঅ ৫ (অ+) প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী সংখ্যা যথাক্রমে ৯১ হাজার ২ শত ২৬ জন ও ৫৮ হাজার ১ শত ৯৭ জন। বিগত বছরে ভর্তির সুযোগবঞ্চিত এ সংখ্যাও প্রায় ১৫ হাজারের কিছু কম বেশি। লক্ষণীয় বিষয় হলো প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার এচঅ ৫ (অ+) প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তির সুযোগই পাচ্ছে না অথচ এর বাইরেও লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই প্রতিযোগিতায় সম্পৃক্ত। সামগ্রিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় এবারের ভর্তি বছরে (২০১৩) মোট পাসকৃত (৭৪৪৮৯১) ছাত্রছাত্রীর মাত্র ৫% এবং এচঅ ৫ (অ+) প্রাপ্ত সংখ্যার ৫১% পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (৩৯৩৮০ জন), ৩৩% জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (২৪৭১৪৫ জন), সামর্থ্যবান পরিবার থেকে ১৫% বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (১১১৯৪৪ জন) ভর্তির সুযোগ পেয়েছে যা মোট ছাত্রছাত্রীর প্রায় ৫৫%। অবশিষ্ট (৩৪৬৪২২ জন) প্রায় ৪৫%, (যা বিগত বছরের ভর্তি হতে না পারা সংখ্যা বাদে) ভর্তির সুযোগ হারিয়ে আগামী ভর্তি বছরের অপেক্ষায়। যে ছাত্রটি তার সর্বশেষ দু’টি পরীক্ষার উভয়টিতে অথবা একটিতে এচঅ ৫ বা এর কাছাকাছি নম্বর পেয়েও কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হলো তার অবস্থান এই সমাজে কোথায় হবে তা একবারের জন্যও ভেবে দেখেছেন কি আমাদের নীতিনির্ধারকগণ। বাজারে চাহিদার বিপরীতে যদি যে কোন উৎপাদন দ্বিগুণ বা তিন গুণ হয় তাহলে সেই উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কমে যাবে অথবা বিক্রি করতে না পেরে অবহেলা বা অযতনে তা নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। অতি সহজ সমীকরণ কেন আমাদের তথাকথিত উর্বর মস্তিষ্কসমূহ ধরতে পারলো না তা সত্যিই দুঃখজনক। যেখানে সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আসনসংখ্যা ৪ লক্ষের কাছাকাছি সেখানে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পর প্রায় অর্ধেক অংশ কিভাবে তাদের শিক্ষাজীবন চলমান রাখবে তা কি ভাবা উচিত ছিল না? এ কথা এখন অহরহ শোনা যায় যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শিক্ষা education-021 copyবোর্ড থেকে উত্তরপত্র মূল্যায়নকারীদের এই মর্মে বার্তা দেয়া হয় যেন সর্বক্ষেত্রে উদার মানসিকতা নিয়ে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য, সহসা যেন কেউ অকৃতকার্য না হয়। এ যেন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থারই ছায়া। এক সময় সবাই রাশিয়ায় যেত এই জন্য যে সেখানে গেলেই একটা সনদ অবশ্যই মিলবে। এখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যাদের ডিগ্রি রাশিয়া থেকে তাদেরকে রাশান ডিগ্রিধারী (সস্তা) বলে বাঁকা চোখে দেখা হয়। মোদ্দা কথা হলো শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ যেমন প্রত্যেকের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে আবার যার যার স্বীয় যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়নও তার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। যেনতেনভাবে পার পাইয়ে দেয়ার মানসিকতা একটি ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের জন্য বেকারত্বের বোঝা বাড়িয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এই ভয়াবহ চিত্র শুধুমাত্র নীতিনির্ধারক নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের কিছু মানুষের জনগণের বা দেশের স্বার্থ ও ভবিষ্যতের তোয়াক্কা না করে একেবারেই হীন আদর্শ, সঙ্কীর্ণ মানসিকতা, সস্তা জনপ্রিয়তা বা রাজনৈতিক স্টান্টবাজির অসুস্থ চর্চারই বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হতে হলে সেই জাতির শিক্ষিত সমাজ কখনো সংখ্যার বিবেচনায় মূল্যায়িত হতে পারে না বরং গুণগত মানের বিবেচনায় মূল্যায়িত হয়। তথাপিও কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে সমস্ত ভাগ্যবান সম্ভাবনাময় যুবক এক বুক আশা ও গর্ব নিয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখছে তারাই কি সুন্দর স্বাভাবিক ও নির্মল শিক্ষার পরিবেশ আদৌ পাচ্ছে, না আমাদের উচ্চ শিক্ষাঙ্গন অসুস্থ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে সেটাই এখন মৌলিক প্রশ্ন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া সা¤প্রতিক বছরগুলোতে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে সকল অপকর্মের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এবং যার খেসারত দিতে হচ্ছে এ দেশের লক্ষ লক্ষ নিরীহ ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের। চার বছরের অনার্স শেষ হতে কখনো প্রায় ছয়-সাত বছর লেগে যাচ্ছে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক এবং নন-অ্যাকাডেমিক চিত্র এতটাই নাজুক পর্যায়ে গেছে তা বর্ণনা করা সত্যি কঠিন। বেসরকারি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সনদ বিক্রির অভিযোগ ইউজিসি শত চেষ্টা করেও তা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্য দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে নীরব দুর্বৃত্তায়ন। অনেকেই মহান পেশা হিসেবে শিক্ষকতায় এসেও মানসম্মান নিয়ে চলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। সর্বক্ষেত্রে হীন দলীয় বিবেচনা বা নোংরা রাজনৈতিক বৃত্তাবলয়ে শিক্ষকদের মানমর্যাদা রক্ষা করা দূরের কথা নিজেদের ন্যূনতম সুস্থ মানসিকতা নিয়ে অবস্থান করাও দুষ্কর। যেখানে শিক্ষকদের জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের চর্চায় সদা নিয়োজিত থাকার কথা, সেখানে অনিয়ন্ত্রিত ছাত্ররাজনীতির বেপরোয়া রূপ এবং মেধার পরিবর্তে অতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষকদের অতি দলীয় মানসিকতা উচ্চশিক্ষার অঙ্গনকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে উগ্র দলীয় বিবেচনায় এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়। একটি জাতির ভবিষ্যৎ দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক তৈরির স্থান যদি এভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তবে এ জাতির ভবিষ্যৎ কোথায়। অন্তত মৌলিক কিছু যায়গা রাজনৈতিক চর্চার বাইরে রাখা দরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় আর যাই হোক না কেন শিক্ষা, চিকিৎসাসহ কিছু মৌলিক বিষয় না আনার মধ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ কল্যাণ নিহিত। এসব বিবেচনায় সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা কোথাও আছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়াও কম বেতন এবং অতি রাজনৈতিক চর্চার কারণে এখন মেধাবী অনেকেই এই মহান পেশায় আসতে বিমুখ। যেখানে পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তানে আমাদের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেতনসহ শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো, সেখানে এই অবস্থায় ক্লাসের সব থেকে মেধাবী ছাত্রটি কেন আসবে শিক্ষকতায় এই প্রশ্নটি অবান্তর নয়। আবার মেধাবী হওয়ার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় মেধাকে প্রকাশ্যে পাশ কাটিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়াও এই পেশায় অনীহার অন্যতম কারণ যা গত কয়েক বছর ধরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিষযটির ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ক্লাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার পরও শুধু তার কোন এক আত্মীয় বিপরীত ধারার রাজনীতি করার অভিযোগে তার যত ভালো রেজাল্টই থাকুক না কেন নির্বাচন বোর্ডে প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমেই তাকে বঞ্চিত করা হয়। তার আত্মীয় বিপরীত ধারার রাজনীতি করা-ই নাকি তার বড় অযোগ্যতা। এ ক্ষেত্রে পছন্দের দলীয় প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য স্বায়ত্তশাসনের নামে যেভাবে ইচ্ছা আইন পরিবর্তন করা হয়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতার পরিবর্তে মূল্যায়ন করা হয় দলীয় পরিচয় অথবা বাবা মা আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় অথবা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। যে ছাত্রটির যোগ্যতাকে অবজ্ঞা করে কেবলমাত্র রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রচুর অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলো সে কি কখনো নৈতিকভাবে শক্ত হয়ে তার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াতে পারবে? তাকে যদি চাকরি দিতেই হয় তাহলে যোগ্যতা অনুযায়ী দাফতরিক অন্য কোন পদেও দেয়া যেত। স্পর্শকাতর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির সাথে তামাশা না করলেই কি নয়? দুঃখজনকভাবে এই সমস্ত কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে আমাদের স্বনামধন্য কোনো কোনো অধ্যাপকমণ্ডলী দ্বারা। মাঝে মাঝে অনুভব করতে কষ্ট হয় এই ভেবে যে এই সমস্ত বড় বড় ডিগ্রিধারী অধ্যাপকগণ কি তাদের ন্যূনতম বিবেকবোধও বিকিয়ে দিয়েছেন? রুঢ় বাস্তবতা হলো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে উপাচার্য হতে শুরু করে দলীয় শিক্ষক কর্মকর্তা সবাই মরিয়া হয়ে কখনো ইচ্ছায় আবার কখনো অনিচ্ছা সত্তে¡ও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এর মূল কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে সকল নিয়োগ প্রচ্ছন্নভাবে আবার কখনো কখনো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অথবা ছাত্র নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ছাত্রনামধারী অছাত্রদের বেপরোয়া দখলদারিত্ব সর্বক্ষেত্রে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শত নেতিবাচক ঘটনার পরও আশাবাদী হওয়ার অনেকগুলো কারণও আছে। এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ফলাফল করার পরও যারা নানা বঞ্চনার শিকার হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে গেছেন তাদের বড় একটি অংশ স্ব স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। নতুন নতুন আবিষ্কারের মুখ্য গবেষক হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা শুধুমাত্র অতি সঙ্কীর্ণ দলীয় চিন্তার ঊর্ধ্ব ওঠে সেই সমস্ত মেধাবীদের দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। এটা খুবই স্বাভাবিক যেখানে মেধার মূল্যায়ন নেই সেখানে মেধাবী জন্ম নেয় না, আর এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এই সোনার দেশটিই মেধাশূন্য হয়ে মেধাহীন লুটেরাদের হাতে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই সমস্ত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে আগামী দিনের মেধাবী নেতৃত্ব তৈরির কারখানা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন দল-মত নির্বিশেষে একটা জাতীয় ঐকমত্য, যেখানে ছাত্ররাজনীতি মেধাহীন পেশিশক্তিনির্ভর না হয়ে মেধা ও আদর্শিক বলয়ে ছাত্রসমাজের মৌলিক সমস্যা সমাধানে আবর্তিত হবে, শিক্ষকসমাজ সঙ্কীর্ণ দলীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে ওঠে শুধু জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণে ব্যস্ত থাকবে, সর্বোপরি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু। লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির