post

কুরআনের আলোয় জীবন গড়া সময়ের অনিবার্য দাবি

০৮ মে ২০১১
বিদায় হজের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন এবং অন্যটি আমার সুন্নাহ অর্থাৎ হাদিস।” ইসলাম শাশ্বত, মানুষের জন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে দেয়া একমাত্র জীবনবিধান। আর কুরআন হচ্ছে সেই জীবনবিধান বাস্তবায়নের উপকরণ তথা পথ। তথাপি মানবতার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) উপর নাজিল হওয়ার পর থেকেই এই কুরআনের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কিন্তু কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই পারেনি কুরআনের একটি আয়াত বা শব্দকে পরিবর্তন করতে। কেননা, আল্লাহ স্বয়ং এই ঐশীগ্রন্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ কুরআন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, যা লাওহে মাহফুযে (সংরক্ষিত ফলকে) সংরক্ষিত আছে।” (সূরা বুরুজ : ২২) যুগে যুগে সত্যের তথা ইসলামের বিরোধীরা নানাভাবে চেষ্টা করেছে নিজেদের আধিপত্য দুনিয়ার বুকে কায়েম করতে। এজন্য বেছে নিয়েছে সত্যের পতাকাবাহীদেরকে হত্যা-গুম-জখম এবং তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর কারাগারের অন্ধকারে অন্তরীণ রাখার মতো নির্মমতার পথ। তারা কুরআন শিক্ষালাভের কথা বলে রাসূলের (সা) সাহাবাদের (রা) নিজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ করেছে দীনের মুজাহিদ ৭০ জন কুরআনে হাফেজকে। কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর মহান কাজে রত থাকার কারণে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলতে হয়েছে মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের নেতৃবৃন্দকে। গত শতাব্দীতেই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীকে (রহ) ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এই বাংলাদেশেই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যাম্পাসে আঘাতের পর আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আবদুল মালেককে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতা তো সমগ্র বিশ্ব অবলোকন করেছে। কিন্তু কুরআনের প্রেমিকরা কখনও বাতিলের এইসব নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডে ভীত হননি, শঙ্কিত হননি - বরং নতুন উদ্যমে, নতুন শক্তিতে বুক বেধে, বাতিলের পাহাড়সম ভাধাকে টপকে, সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কুরআনের হুকুমাত কায়েমের পথে দৃঢ় অবিচল আছেন। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৮৫ সালের ১১ মে একটি ঐতিহাসিক ও প্রেরণার দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে কুরআনের মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণ আর বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫ জন স্কুল ছাত্রসহ কৃষক ও রিকশাচালক। ভারতের হাইকোর্টে দায়ের করা কুরআন বাজেয়াপ্তের মামলার বিরুদ্ধে কুরআনের মর্যাদা রক্ষার মিছিলে অংশ নিয়ে ঈমানের সর্বোচ্চ নজরানা পেশ করেছিলেন তাঁরা এবং আল্লাহর কাছে একান্ত গ্রহণীয় মৃত্যুই বরণ করেছিলেন। আর ওই ৫ জন কিশোর শহীদ ছিলেন বাংলাদেশে তরুণ ছাত্রসমাজের মুক্তির দিশারী, জাতির আশা-আকাক্সক্ষার কাণ্ডারী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। দিনটি তাই ‘কুরআন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। আর মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুরআন প্রেমীদের এই আন্দোলনের কারণেই কুরআনের অবমাননামূলক মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। আজ আবার নতুন করে কুরআনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ঈমান-আকিদাকে উপেক্ষা করে কথিত নারী নীতির নামে কুরআন বিরোধী নীতিমালা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তৌহিদি জনতা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গেলে বাতিলশক্তি তাদের চিরায়ত পন্থাই অবলম্বন করছে। আলেম-ওলামাদের সাথে বেয়াদবীর চরম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তারা। রাজপথে পিটিয়ে ও প্রকাশ্যে গুলি করে শহীদ করেছে দু’জন মাদ্রাসা ছাত্রকে। তবুও এতটুকু পিছু হটে আসেনি কুরআনের সৈনিকরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে সঠিক শিক্ষা নেয়া উচিত। অত্যাচার-নির্যাতন আর মানবতাকে শৃঙ্খলিত করে অন্যায়ভাবে যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না, এটা বোধকরি সরকারের না জানার কথা নয়। যাঁরা তাঁদের জীবনটাই আল্লাহপাকের শাশ্বত বিধান কায়েমের আন্দোলনের পথে অতিবাহিত করছেন, কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছেন - সেই সব আলেমে দীনকে কারান্তরে অন্তরীণ রেখে এদেশের মাটিতে কুরআন বিরোধী আইন বাস্তবায়নের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে, তাদের সে আশা কখনও পূর্ণ হবে না। তাই যথাশীঘ্র সম্ভব মিথ্যা মামলায় আটককৃত কুরআনের আন্দোলনের সকল নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে এবং কুরআন বিরোধী কোনো আইন বাস্তবায়নের চিন্তা বাদ দিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করার মহান ব্রত সরকারকে নিতে হবে এবং কুরআনের আলোকে সমাজ পরিচালনার শপথ নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই অনিবার্য ধ্বংস থেকে বাংলাদেশ তথা এদেশের জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার তাওফীক দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির