post

জ্ঞানীদের দৃষ্টিতে বিশ্বনবী (সা)

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
শফিউল আহমাদ

পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাকরুণা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সূরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্য রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম পাঠাও।” এ থেকে বোঝা যায় মহানবী (সা) মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় উপহার। নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে অভ্যস্ত কোনো অমুসলিম প-িতও কখনও বিশ্বনবীর (সা) অতুলব্যক্তিত্বের অনন্য প্রভাব, মহত্তম মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর কথা অস্বীকার করতে সক্ষম নন। কারণ, মানব সভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ পর্যায়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা)-এর অতুলনীয় মহত্ত্ব ও গুণের ছাপ স্পষ্ট। সূরা আহজাবের ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সংযোগস্থলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ৫ জন ঐশী প্রেরিতপুরুষ বা রাসূল আবির্ভূত হয়েছেন যাঁরা রাসূলদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় বা “উলুল আয্থম” হিসেবে খ্যাত। তাঁরা সবাই নানা পদ্ধতিতে একই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন মানবজাতির কাছে এবং তাদের লক্ষ্যও ছিল অভিন্ন। তাঁদের বক্তব্যে ছিল এক আল্লাহর প্রশংসা এবং জুলুম ও অজ্ঞতার আঁধারে ছেয়ে যাওয়া বিশ্বে ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা। প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও বন্যার পর যখন হজরত নূহ (আ)-এর কিশতি জুদি পাহাড়ে নোঙর করে তখন এই মহান রাসূল ও তাঁর অল্পসংখ্যক অনুসারী বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার তথা মানবজাতির নতুন সভ্যতার ইতিহাস গড়ার কাজ শুরু করেন। হজরত নুহ (আ)-এর পর বাবেল অঞ্চলে একত্ববাদ ও এক আল্লাহর ইবাদতের আহ্বান জানিয়েছেন হজরত ইবরাহিম (আ)। এরপর হজরত মূসা (আ) তাঁর অলৌকিক লাঠি নিয়ে নিজ জাতিকে রক্তপিপাসু ও খোদাদ্রোহী সম্রাট ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য তৎপর হন। ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত এবং জনগণকে নিজের দাস করতে চেয়েছিল। এরপর এলেন হজরত ঈসা (আ)। তিনি দাসের মালিক ও ক্রন্দনরত বঞ্চিত বা দুর্বলদের মধ্যে শোনালেন মহান আল্লাহর অশেষ দয়ার বাণী এবং দিয়েছেন সর্বশেষ রাসূল (সা)-এর আবির্ভাবের সুসংবাদ। এরপর বিশ্বের জাতিগুলো যখন নানা ধরনের মনগড়া খোদা বা মূর্তির পূজা করছিল এবং অজ্ঞতা, উদাসীনতা ও কুসংস্কার সর্বত্র জেঁকে বসে তখন মক্কা শহরে ইসলামের চির-উজ্জ্বল মশাল নিয়ে আবির্ভূত হন বিশ্বনবী (সা)। তিনি মানবীয় মর্যাদা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে উপহার দেন সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বোত্তম বক্তব্য। এভাবে তিনি মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষকের অক্ষয় আসনে সমাসীন হন। বিশ্বনবীর (সা) মধ্যে সব নবী-রাসূল ও আউলিয়ার গুণের সমাবেশ ঘটেছে, তিনি উচ্চতর সেইসব গুণাবলির পরিপূর্ণ ও পরিপক্ব সংস্করণÑ যেসব গুণ যুগে যুগে নবী-রাসূল ও আউলিয়ার মধ্যে দেখা গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হজরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির ভাষায়, “যখন মহানবীর (সা) পবিত্র নাম মুখে আনি, এর অর্থ যেন হজরত ইবরাহিম (আ), হজরত নূহ (আ), হজরত মুসা (আ), হজরত ঈসা (আ), হজরত লোকমান (আ) এবং সব সালেহ বা সত ও খ্যাতনামা মহৎ ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব বিশ্বনবীর (সা) মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমন্বিত, প্রতিফলিত ও প্রকাশিত হয়েছে।” আজকের এই সভ্যতার যুগে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং যুক্তি ও সত্যের অন্ধ-বিদ্বেষী মহলগুলো ঐশীধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা এ লক্ষ্যে নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে ও ষড়যন্ত্র করছে। ২০০৬ সালে এ ধরনেরই এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আওতায় ডেনমার্কের ‘জিইল্যান্ড-পস্টেন’ নামে একটি দৈনিক বিশ্বনবীর (সা) প্রতি অবমাননাকর কিছু কার্টুন ছাপে। ২০১১ সালে উগ্রবাদী মার্কিন পাদরি টেরি জোন্স পবিত্র কুরআন পোড়ানোর হুমকি দিয়ে ধর্ম-অবমাননার আরো এক জঘন্য নজির প্রতিষ্ঠা করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বনবীর (সা) প্রতি অবমাননাকর ছায়াছবি নির্মাণ ঐশী-ধর্মগুলোসহ ইসলামী ও উন্নত নৈতিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে এইসব অন্ধ ও অশুভ চক্রের ক্রুসেড অব্যাহত রাখার জোর অপচেষ্টাই তুলে ধরছে। অবশ্য বিশ্বনবীর (সা) পবিত্র চেহারা এত বেশি উন্নত, সুন্দর ও পছন্দনীয় গুণাবলিতে ভরপুর যে এইসব অন্ধ ও গোঁড়া চক্রের অবমাননায় তাঁর চির-উজ্জ্বল চেহারা বা সম্মানের বিন্দুমাত্র হানি ঘটবে না। যাদের মধ্যে জ্ঞানের বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই এবং যারা অজ্ঞতা ও অন্ধ-বিদ্বেষের দাস কেবল তারাই এই মহামানবকে নিয়ে ঠাট্টা ও উপহাস করতে পারেন। আর ইতিহাসই এর জ্বলন্ত সাক্ষী। প্রামাণ্য ছায়াছবি নির্মাতা আব্বাস লা-জাওয়ার্দি কিছুকাল আগে ‘কোন্ স্বাধীনতা’ শীর্ষক একটি ছায়াছবি নির্মাণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো সফর করেছিলেন। তিনি নিরাপত্তা প্রহরীদের কড়াকড়ি সত্ত্বেও কুখ্যাত পাদরি টেরি জোন্স ও ডেনমার্কের কার্টুনিস্ট কুর্ট ওয়েস্টগার্ডের সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হন। তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি কুরআন পড়েছেন? তারা দু’জনই উত্তর দেয় যে, কখনও তারা এই মহাগ্রন্থ পড়েনি এবং কুরআন না পড়েই তারা মহানবী (সা) ও কুরআন-অবমাননার পদক্ষেপ নিয়েছে। অধ্যাপক হরপ্রাসাদ শাস্ত্রী পিএইচডি বলেছেন, ‘যখন ইউরোপ কুরুচি ও মূর্খতার গভীর গহ্বরে নিমজ্জিত ছিল, যখন ইউরোপীয় রাজধানীতে ডাইনি সন্দেহ করে নারীদের জীবন্ত পোড়ান হত, জ্ঞানার্জনকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো, তখন মুসলমানেরা স্পেনের প্রতিটি গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও শিক্ষা বিলি করছিল।’ স্যার উইলিয়াম মূর বলেছেন, ‘সর্বশ্রেণীর ঐতিহাসিকরা একবাক্যে হজরত মুহাম্মদের যৌবনকালীন স্বভাবের শিষ্টতা ও আচার ব্যবহারের পবিত্রতা স্বীকার করেছেন। এরকম গুণাবলি সে সময় মক্কাবাসীর মাঝে বিরল ছিল। এই সরল প্রকৃতির যুবকের সুন্দর চরিত্র, সদাচরণ তার স্বদেশবাসীর প্রশংসা অর্জন করে এবং তিনি সর্বসম্মতিক্রমে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী উপাধি পান।’ বাসওয়ার্থ স্মিথ বলেছেন, ‘হজরত মুহাম্মদ একাধারে সিজারের মত শাসনতন্ত্রের শীর্ষভাগে ছিলেন আবার পোপের মত ধর্ম মন্দিরের উচ্চ আসনেও সমাসীন ছিলেন। কিন্তু তাঁর পোপের মত জাঁকজমক ও সিজারের মত সেনাবল ছিল না। বেতনভোগী সেনা, দেহরক্ষী সেনা, রাজকীয় প্রাসাদ ও নির্ধারিত রাজস্ব ছাড়া স্বর্গীয় অধিকারবলে রাজত্ব দাবি করার একমাত্র দাবিদার কেবল হযরত মুহাম্মাদই। কারণ ক্ষমতার উপকরণ ও আশ্রয় ছাড়াই তিনি সব ধরনের ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।’ জন ডেভেনপোর্ট বলেছেন, ‘ইসলাম কখনো অন্য কোন ধর্মমতে হস্তক্ষেপ করেনি। কখনো ধর্মের জন্য নির্যাতন, ধর্মমত বিরোধীদের দ-ের ব্যবস্থা কিংবা দীক্ষা ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করেনি। ইসলাম তার মত বা বক্তব্য জগতের সবার সামনে তুলে ধরেছে কিন্তু কখনো কাউকে তাঁর মত গ্রহণে বাধ্য করেননি। ইসলাম আশপাশের দেশগুলোতে তৎকালে প্রচলিত শিশুহত্যা ও আরবের দাসত্ব প্রথা তিরোহিত করেছে। ইসলাম কেবল এর অনুসারীদের ওপরই নয়, বাহুবলে বিজিত সবার ওপরই সমভাবে নিরপেক্ষ বিচার স্থাপন করেছে।’ তাইতো কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না (সূরা সাবা : ২৮) পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাকরুণা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি।” সূর্য যেমন বিশ্বকে আলোকিত করে তেমনি নবী-রাসূলরা আলোকিত করেন মানুষের মন, চিন্তা ও আচরণ। মানব-সভ্যতা মূলত তাদের মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতার দিকে। মানব সভ্যতার বিকাশ, সমৃদ্ধি ও মানুষের জ্ঞানগত উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা)-এর রেখে যাওয়া আলোকিত ঐশী-শিক্ষা। তাঁর মহতী ও আলোকিত শিক্ষার গুণে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বেদুইন এবং রুক্ষ প্রকৃতির আরব জাতি সভ্য, উদার, দয়ালু ও শিক্ষানুরাগী জাতিতে পরিণত হয়। কোনো এক যুদ্ধে একদল আহত মুসলমান পিপাসা-কাতর অবস্থায় মাটিতে পড়েছিল। কোনো এক মুজাহিদ আহত সহযোদ্ধাদের জন্য পানি নিয়ে এলে প্রত্যেকেই পানি পান করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই পানি অন্য কোনো আহত ভাইকে দিতে বলে। ফলে তাদের সবাই তৃষ্ণার্ত অবস্থায় শহীদ হন। ইসলাম জ্ঞানচর্চার ওপর অশেষ গুরুত্ব দেয়ায় মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছিল। ইসলামের সেই সোনালি সভ্যতা নির্মাণে ইরানের মুসলিম জ্ঞানী-গুণীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপও মুসলিম বিজয়ের সুবাদে উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকিত কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশ্বনবী (সা)-এর আলোকিত শিক্ষায় ও পবিত্র কুরআনে জ্ঞান শিক্ষার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপের কারণেই ওই সোনালি সভ্যতা গড়া সম্ভব হয়েছিল। অথচ মানবতার মুক্তির দূত ও মানবীয় চরিত্রের সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর অবমাননার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে যুগে যুগে। কিন্তু অজ্ঞতা ও অন্ধকারের শক্তিগুলোর শত বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বে বিশ্বনবীর (সা) খ্যাতি ও মর্যাদা দিনকে দিন বাড়ছে এবং তাঁর চির-উজ্জ্বল গুণগুলোর প্রভাবও মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি নিরপেক্ষ অমুসলিম বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞ ও প-িতরাও একবাক্যে বিশ্বনবীর (সা) অতুল মহত্ত্বের কথা দ্বিধাহীনভাবে ও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন যুগে যুগে। ঊনবিংশ শতকের বিশিষ্ট জার্মান লেখক, কবি ও রাজনীতিবিদ গ্যাটে বিশ্বনবীর (সা) অসাধারণ নানা সাফল্য ও মর্যাদার প্রাচুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমরা ইউরোপীয়রা আমাদের সব ধ্যান-ধারণা নিয়েও এখনও সেইসব বিষয় অর্জন করতে পারিনি যা অর্জন করেছেন মুহাম্মদ এবং কেউই তাঁকে কখনও অতিক্রম করতে পারবে না। আমি ইতিহাসে অনুকরণীয় মানুষের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত খুঁজতে গিয়ে এ ক্ষেত্রে কেবল নবী মুহাম্মদকেই খুঁজে পেয়েছি; আর এভাবেই সত্য অবশ্যই বিজয়ী হবে ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে, কারণ, মুহাম্মদ সারা বিশ্বকে বশ করেছেন স্বর্গীয় বা ঐশী একত্ববাদের বাণীর মাধ্যমে।’ পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট খ্রিস্টান ঐতিহাসিক আর এফ বুদলি বিশ্বনবীর (সা) প্রতি একদল ব্যক্তির নানা অপবাদের নিন্দা জানিয়ে ‘মুহাম্মাদ (সা)-এর জীবনী’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘এটা বর্তমান যুগের অন্যতম অদ্ভুত ব্যাপার যে কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই বিশ্বের একদল মানুষ মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে একই ধরনের কিছু নেতিবাচক সন্দেহ পোষণ করছেন। অথচ মুহাম্মদ (সা)-এর জীবন খুবই স্পষ্টও স্বচ্ছ। আমি মুহাম্মদ (সা)-কে নিয়ে লিখিত একটি বই পড়েছি যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য লেখা হয়েছে। লেখক বইটির বেশ কিছু পৃষ্ঠায় অযৌক্তিক ও অন্যায্য বক্তব্য রেখে সেই পৃষ্ঠাগুলোকে কালিমা লিপ্ত করেছেন। অথচ তিনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কী ব্যাখ্যা দেবেন যে এমন একজন মানুষ কিভাবে মানুষের উন্নতির জন্য এমন উন্নত ও কার্যকর বিধান আনতে পেরেছেন? কিভাবে তিনি একদল মানুষকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করতে পেরেছেন যে তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই এমন বিশাল ও গৌরবময় ইসলামী সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপের সুবাদেই বড় বড় জাতিগুলোকে এই সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়?’ পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক আর এফ বুদলি আরো বলেছেন, ‘মরুচারী আরবদেরকে অনুগত করা ছিল মুহাম্মদ (সা)-এর বড় ধরনের সাফল্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাঁর এই সাফল্যকে সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনাগুলোর সমতুল্য বলা যায়। তিনি এইসব গোত্র ও জাতির মধ্যে বিস্ময়কর একতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনী নিয়ে চিন্তা করতে গেলে মানুষ তাঁর প্রজ্ঞা বা দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে অভিভূত হয় এবং তারা মুহাম্মদ (সা)-কে এমন এক জীবন্ত মানুষ বলে মনে করেন যাঁর মৃত্যু হবে না কোনো যুগেই ।’ ব্রিটেনের বিখ্যাত ঐতিহাসিক থমাস কার্লাইল মুহাম্মদ (সা)-এর পবিত্রতা সম্পর্কে একদল গোঁড়া বা অন্ধ-বিদ্বেষী ব্যক্তির অবমাননাকে তাদের যুক্তির দুর্বলতার ফসল বলে মনে করেন। কার্লাইল বলেছেন, ‘আজকের যুগের সভ্য মানুষের জন্য এটা খুব বড় রকমের বিচ্যুতি যে, মুহাম্মদ (সা) প্রতারক ছিলেনÑ এমন কথা বিশ্বাস করা। এ ধরনের লজ্জাজনক ও অর্থহীন কথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সময় হয়েছে আজ। কারণ, তিনি যে বাণী ও ধর্ম এনেছেন তা শত শত বছর ধরে অত্যুজ্জ্বল প্রদীপের মত আলো বিকিরণ করছে। আমার প্রিয় ভায়েরা! আপনাদের কেউ কি কখনও দেখেছেন একজন মিথ্যাবাদী এমন পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম গড়তে এবং তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। স্রষ্টার শপথ করে বলছি এ ধরনের অভিযোগ খুবই অদ্ভুত। কারণ, একজন অজ্ঞ ব্যক্তি একটি ঘর নির্মাণেরই ক্ষমতা রাখেন না। আর এমন ব্যক্তি কিভাবে ইসলামের মতো একটি ধর্ম মানব সমাজের কাছে উপহার দিতে পারেন?’ কার্লাইল আরো লিখেছেন, ‘এটা খুবই বড় ধরনের সমস্যা ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার যে বিশ্বের জাতিগুলো যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার ওপর ভর না করেই এ ধরনের বোকামিপূর্ণ অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন! আমি বলব, এটা অসম্ভব যে এই মহান ব্যক্তি তথা মুহাম্মদ (সা) অবাস্তব কোনো কথা বলেছেন। তাঁর জীবন ইতিহাস থেকেই জানা যায় তিনি যৌবনকালেই জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ছিলেন। মুহাম্মদের (সা) জীবনের ভিত্তি ও তাঁর সব কাজ এবং পছন্দনীয় গুণগুলো সত্য ও পবিত্রতা-ভিত্তিক। আপনারা তাঁর বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করুন, তাতে কি ঐশীবাণী ও অলৌকিকতা দেখা যায় না? এই মানুষ অস্তিত্বের অসীম উৎস (তথা আল্লাহর কাছ) থেকে মানুষের জন্য বাণী বয়ে এনেছেন। মহান আল্লাহই এই মহান ব্যক্তিকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিখিয়েছেন।’ লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির