post

নাস্তিকদের ছোবলে দেশের যুবসমাজ

০৭ নভেম্বর ২০১৩

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

[caption id="attachment_2045" align="alignleft" width="300"] গণ-জাগরণ মঞ্চে ইমামের পোশাক পরে ব্যাঙ্গাত্মক অভিনয় করছে[/caption]

শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের জীবনাচারকে বিশুদ্ধ ঈমান-আকিদার প্রশ্নে কোনোভাবেই সন্তোষজনক বলা না গেলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ধর্ম এখানকার জনজীবনে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। ধর্মপালনে শিথিলতা থাকলেও মানুষের মধ্যে ধর্মানুভূতি যথেষ্ট তীব্র। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুকৌশলে ধর্মহীনতা প্রসারের ব্যাপক চেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও প্রকাশ্যভাবে ধর্মদ্রোহিতা বা নাস্তিকতার কোনো স্থান কখনোই হয়নি। তাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, জনগণকে পক্ষে টানার জন্য অন্তত ভোটের সময় হলেও ধর্মের গুণগান করতে দেখা যায়। যে কারণে দাউদ হায়দার, আহমাদ শরীফ, তাসলিমা নাসরীন, হুমায়ুন আজাদের মতো গুটিকয় ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক যারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল, বাংলাদেশের গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে তাদের তো কোনো আশ্রয় হয়ইনি; বরং তাদের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত হয়েছে প্রবল ক্ষোভ ও ঘৃণাবোধ। এমনকি তাদের অনেককেই শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটায় জনসাধারণের নাগালের বাইরে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার জুড়ে যে এক শ্রেণীর নাস্তিক চক্র গড়ে উঠেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে সেখানে যে উদ্বেগজনক ও কুৎসিত অপপ্রচার শুরু করেছে, তা পূর্ববর্তী নাস্তিকদের সকল অপতৎরতাকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। এর কারণ হলো এদের অবস্থান সমাজে নয় বরং ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে, বাংলাদেশে এত বিরাট সংখ্যক নাস্তিক ঘাপটি মেরে আছে। অনেককেই বলতে শুনেছি, ব্লগে না এলে বাংলাদেশে যে এত নাস্তিক আছে, তা হয়তো জানতেই পারতাম না। অবশেষে ব্লগার রাজীব নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই নাস্তিক চক্রের ভয়াবহ অপতৎপরতা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ না পেলে, তারা হয়তো আরো অনেকদিন সাধারণ মানুষের অগোচরেই থেকে যেত। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ’১৩ রাজধানী ঢাকায় জনৈক নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দারের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে নাস্তিকতার যে ভয়াল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা সমগ্র দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। নাস্তিকতা যে কত নিকৃষ্ট হতে পারে, ধর্মহীনতা যে মানুষকে পশুত্বের ও নৈতিক অবক্ষয়ের কোন অতলে নিক্ষেপ করতে পারে, তথাকথিত ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার আড়ালে ইসলামবিদ্বেষের যে কী জঘন্যতম কুৎসিত অবয়ব লুকিয়ে আছে, তার এক বাস্তব প্রতিমূর্তি অত্যন্ত প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে এই চিত্রে। লক্ষণীয় যে, ইন্টারনেটে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে নাস্তিকতার প্রচার ও প্রসার বেশ জোরালোভাবে শুরু হলেও কোন এক অজানা কারণে গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। ফলে এ দেশে নাস্তিকতার এই ভয়ঙ্কর রূপটি জনসমাজে এক প্রকার অজ্ঞাতই ছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক চক্রটি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য সুদূরপ্রসারী মিশন গ্রহণ করে। এ মিশন যে বেশ সাফল্যের সাথেই এগিয়ে চলেছে রাজীব হায়দার গংদের এই ঘৃণ্যতম দুঃসাহসিক অপতৎপরতা তারই প্রমাণ বহন করে। এদের মরণ ছোবলের শিকার হয়ে শহুরে শিক্ষিত তরুণ সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজের দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে বিপজ্জনকভাবে বীতশ্রদ্ধভাব ও সংশয় পোষণ করা শুরু করেছে । পাঠকদের অনেকেরই প্রশ্ন, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগিং আসলে কী এবং ব্লগারদের মধ্যে নাস্তিকতার এত প্রসার কেন? মূলত ইংরেজি শব্দ ‘ব্লগ’ হলো ওয়েবলগ-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যাকে তুলনা করা যায় ব্যক্তিগত ডায়েরির সাথে। অন্যভাবে এগুলোকে উন্মুক্ত অনলাইন ম্যাগাজিনও বলা যায়। ইন্টারনেটে নিজস্ব ব্লগসাইট বানিয়ে দৈনন্দিন ডায়েরি লেখার মতো অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। এরূপ ব্যক্তিগত লেখালেখিকে একক ওয়েবসাইটে সমন্বিত করে একটি ভার্চুয়াল কমিউনিটি সৃষ্টি করা এবং সেখানে পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় কমিউনিটি ব্লগ। যিনি ব্লগে লেখালেখি করেন বা বিবিধ কন্টেন্ট পোস্ট করেন তাকে ‘ব্লগার’ বলে। এ সকল ব্লগে একাউন্ট খুলে লেখালেখির মাধ্যমে ব্লগের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মতের আদান-প্রদান করা যায় খুব নির্বিঘেœ। এ কারণে কমিউনিটি ব্লগগুলো খুব দ্রুতই তরুণ সমাজের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি ২০১০ সালে দেশে ইন্টারনেটে সর্বাধিক ব্যবহৃত শীর্ষ ১০টি ওয়েবসাইটের তালিকায় ৭টিই ছিল এই সকল ব্লগসাইট। বাংলাভাষায় সামাজিক ব্লগ হিসেবে ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ‘সামহয়্যার ইন ব্লগ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইন্টারনেটের প্রসার লাভ করার সাথে সাথে ব্লগিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে একে একে সৃষ্টি হয় নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সোনারবাংলা ব্লগের মতো জনপ্রিয় ব্লগগুলো। কখনো লেখালেখির অভ্যাস ছিল না, এমন বহু তরুণের লেখার হাতেখড়ি হয়েছে ব্লগের মাধ্যমে। যদিও ইদানীং ফেসবুক-টুইটারের দাপটে ব্লগসাইটের জনপ্রিয়তা বেশ কমে এসেছে। ব্লগগুলোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল, ব্লগ মডারেটরদের বেঁধে দেয়া সাধারণ কিছু নীতি মেনে স্বাধীনভাবে যে কোনো বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করা এবং অন্যের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছে দেয়ার অনন্য সুযোগ পাওয়া। নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্লগের এই অভূতপূর্ব স্বাধীনতার কোনো জুড়ি নেই। ফলে সরকারি বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে অবাধ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের এই উন্মুক্ত অঙ্গনটি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকদের জন্য মহা সুযোগ হয়ে ওঠে। যেহেতু এ দেশে সামাজিকভাবে ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের কোনো ঠাঁই নেই, তাই এই নিরাপদ (!) স্থানে এসে তারা কখনও স্বনামে কিংবা বেশির ভাগই বেনামে মনের সুখে নাস্তিকতার প্রচার ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর মওকা পেয়ে যায়। অন্য দিকে ‘উদারমনা’ নাস্তিক্যবাদী বিভিন্ন ব্লগ মডারেটররাও ‘মুক্তচিন্তা’ প্রকাশের নামে এদেরকে সাদরে ঠাঁই দিতে থাকে। এভাবেই ব্লগ হয়ে ওঠে নাস্তিকদের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ অভয়ারণ্য। স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগ ‘মুক্তমনা’র মডারেটর তা স্বীকার করে বলেছে, ‘গত কয়েক বছরে স্বচ্ছ চিন্তাচেতনা সম্পন্ন মুক্তমনা যুক্তিবাদীদের বিশাল উত্থান ঘটেছে বিভিন্ন ফোরামে এবং আলোচনাচক্রে, যা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমে সম্ভব ছিল না মোটেই।’ উল্লেখ্য যে, ব্লগিং মানেই কিন্তু নাস্তিকতা নয়। কেননা ব্লগীয় পরিমণ্ডলে স্বল্পসংখ্যক নাস্তিক গোষ্ঠীর বিপরীতে সুস্থ ও মননশীল চিন্তাধারার প্রচুর সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লেখকও রয়েছেন। বরং তাদের বিপরীতে নাস্তিকদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলা যায়। যারা নিজেদের মূল্যবান সময় ও মেধা ব্যয় করে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যেমন তৎপর রয়েছেন, তেমনি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল লড়াইয়ে তথা তাদের যুক্তি-কুযুক্তির শিকড় উপড়ে ফেলার যুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলেছেন। ব্লগে বিচরণশীল নাস্তিকেরা মূলত ৩ ভাগে বিভক্ত। ১. যারা ঘটনাক্রমে কিংবা পরিবেশগত কারণে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে এবং ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত কিছুটা সংযত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সুশীলতা প্রমাণে সচেষ্ট থাকে। এই শ্রেণীর ভদ্রবেশী নাস্তিকের সংখ্যা অবশ্য ব্লগে খুব নগণ্যই। ২. যারা প্রবল ধর্মবিদ্বেষী। এরা এমনই উগ্র যে, যেকোনো সুযোগে অত্যন্ত অশ্লীল ও ক্লেদাক্ত ভাষায় ধর্মকে আক্রমণ করে। কুরআনের আয়াতসমূহ, রাসূল (সা)-এর ব্যক্তিজীবন ও ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ অপবাদ আরোপ করা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করাই তাদের প্রধান কাজ। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জঘন্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা। তাদের চিন্তাধারা ও গালাগালির রূপ-প্রকৃতি এতটাই নিম্নরুচির যে তাদেরকে সাধারণভাবে মনুষ্যশ্রেণীভুক্ত ভাবতেই কষ্ট হয়। ব্লগে এই প্রকার ইতর শ্রেণীর নাস্তিকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ৩. যারা সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে না, নিজেদের নাস্তিকও বলে না। তবে ধর্মবিরোধী আলোচনায় নাস্তিকদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। তারা সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, সুশীল, উদারমনা ইত্যাদির ছদ্মাবরণে প্রকারান্তরে নাস্তিক্যবাদের সেবাদাস হিসেবেই কাজ করে। ব্লগে এই শ্রেণীর নাস্তিকের সংখ্যাও প্রচুর। তবে মজার ব্যাপার এই যে, নীতিগতভাবে সর্বধর্মবিরোধী হলেও কার্যক্ষেত্রে এসব নাস্তিকদের একমাত্র টার্গেট হলো ইসলাম। ইসলামই তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু। শোনা যায়, নাস্তিক ব্লগারদের অনেকেই না কি মূলত হিন্দু। যারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুসলিম নাম ব্যবহার করে এবং ইসলামকে হেয় করার চেষ্টা করে। মুক্ত সামাজিক ব্লগগুলোতে তাদের নীতি হলো, প্রথমে রাজাকার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাইনবোর্ড নিয়ে সাধারণ ব্লগারদের সহানুভূতি আদায় করা। অতঃপর সুযোগ মতো ধর্মবিদ্বেষের ছোবল মারা। এদের নিজস্ব কিছু ব্লগও রয়েছে। যেমন মুক্তমনা, আমার ব্লগ, ধর্মকারী, নবযুগ প্রভৃতি। যেখান থেকে তারা উগ্র ধর্মবিদ্বেষের এমনই বিষবাষ্প ছড়ায়, নোংরামি আর ঘৃণ্য মনোবৃত্তির এমন দুর্গন্ধময় প্রদর্শনী করে, যা কোন সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। বরং চাক্ষুষ না দেখলে তা বিশ্বাসই করা যায় না। অথচ ‘সোনারবাংলা’, ‘সদালাপ’, ‘বিডিটুডে’র মতো কতিপয় ইসলামপন্থী ব্লগ ছাড়া বাকি সমস্ত ব্লগই নীতিমালায় ‘ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানো নিষিদ্ধ’ লিখে রাখার পরও কম-বেশি এই শ্রেণীর নাস্তিকদের প্রোমোট করে আসছে। নিম্নে নাস্তিক চক্রের পরিচালিত প্রসিদ্ধ ব্লগ ‘ধর্মকারী’ থেকে তাদের উগ্র ইসলামবিদ্বেষের দু-একটি নমুনা দেয়া হলোÑ ‘ধর্মকারী’র হোম পেইজের চলমান সেøাগানে দেখা যায়, “আল্লাহ সর্বব্যাপী তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন।’ হোম পেজের ডানদিকে ব্লগের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- “ধর্মকারী যুক্তিমনস্কদের নির্মল বিনোদনের ব্লগ। বিতর্ক বা বাগি¦তণ্ডার স্থান নেই এখানে। এই ব্লগে ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে, ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে, অপদস্থ করা হবে, ব্যঙ্গ করা হবে। যেমন করা হয়ে থাকে সাহিত্য, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে।’’ এই স্লোগান ঝুলিয়ে রেখে ব্লগটির সর্বত্র অবর্ণনীয় নোংরামি সহকারে যাচ্ছেতাই ভাবে ইসলামকে অবমাননা করা হয়েছে। যেমন সম্প্রতি পোস্ট করা হয়েছে এমন কয়েকটি লেখার শিরোনাম ছিল এমনÑ ‘ইসলামী ইতরামি’, ‘নিঃসীম নূরানী অন্ধকারে’, ‘ধর্মাতুল কৌতুকিম’, ‘ইসলামে বর্বরতা’। শুধু তাই নয়, পবিত্র কুরআনের ভাষা অবিকল নকল করে ব্যঙ্গ প্যারোডি রচনা করা, হাদীসকে ‘হা-হা-হাদীছ’ বলে টিটকারীর মাধ্যমে যে জঘন্যতম বমন উদ্রেককারী বিকৃতরুচির লেখা তারা সেখানে স্থান দিয়েছে, তা জনস্বার্থে প্রকাশ করতে চাইলেও কোনো মতেই বিবেকে সায় দিচ্ছে না। সেখানে সাইডট্যাবে বিজ্ঞাপন আকারে সংযুক্ত করা হয়েছে ৭টি সচিত্র কমিক ই-বুক। ব্যঙ্গ করে যেসব বইকে বলা হয়েছে ‘ধর্মকারী কিতাব’। এর মধ্যে সবচেয়ে বীভৎস কমিক বইটি রচিত হয়েছে ‘হজরত মহাউন্মাদ ও কোরান-হাদিস রঙ্গ’ শিরোনাম দিয়ে। জনৈক আব্দুল্লাহ আজীজ রচিত ২৬ পৃষ্ঠার বইটিতে রাসূল (সা)-এর জীবনচরিত নিয়ে এত অশ্লীল কার্টুনচিত্র আর জঘন্য কোলাজ রচনা করা হয়েছে, যা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে স্বচক্ষে দেখা সম্ভব নয়। নরকের কীট, সাক্ষাৎ শয়তান এই কুলাঙ্গার কিভাবে এ দেশের মাটিতে বসে এমন একটি বই রচনার দুঃসাহস পেল, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। এই ব্লগে নিহত ব্লগার রাজীবও ‘থাবা বাবা’ ছদ্মনামে লিখত। ‘নূরানী চাপা শরীফ’ শিরোনামে সে এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা:)-সহ মুসলমানদের ঈদ উৎসব নিয়ে জঘন্যতম কটূক্তি ও কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখেছে, যা ইতোমধ্যে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারনেটে তথাকথিত প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী নাস্তিকদের এই নোংরা ও কদর্য অপপ্রচার যে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তারা চায় এ দেশকে পুরোপুরি ধর্মহীন সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করতে। আর এই ধর্মহীনতার মধ্যেই তারা খুঁজতে চায় বাঙালির নবজাগরণ (?)। বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখির সূতিকাগার খ্যাত ‘মুক্তমনা’র পরিচিতিতে লেখা হয়েছে- “মুক্তমনা’র মাধ্যমে আমরা একদল উদ্যমী স্বাপ্নিক দীর্ঘদিনের একটি অসমাপ্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে পরিচালনা করছি, যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছে ‘চেতনামুক্তির’ লড়াই। যার মাধ্যমে জনচেতনাকে পার্থিব সমাজমুখী (অর্থাৎ ধর্মহীন) করে তোলা সম্ভব....আজ ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বাস (ধর্ম) এবং যুক্তির সরাসরি সংঘাতের ভিত্তিতে যে সামাজিক আন্দোলন বিভিন্ন ফোরামে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে, মুক্তমনারা মনে করে তা প্রাচীনকালের ব্রাহ্মণ-চার্বাকদের লড়াইয়ের মতো বিশ্বাস ও যুক্তির দ্বন্দ্বেরই একটি বর্ধিত, অগ্রসর ও প্রায়োগিক রূপ। এ এক অভিনব সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যেন বাঙালির এক নবজাগরণ।” এই ব্লগের প্রধান কর্ণধার স্বঘোষিত নাস্তিক অভিজিৎ রায় হলো আমেরিকা প্রবাসী পিএইচডি ডিগ্রিধারী বর্ণবাদী হিন্দু। এই উগ্র ইসলামবিদ্বেষী বর্তমানে বাংলাদেশের নাস্তিকদের আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে তার রচনায় ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’, ‘ধর্ম ও নিধর্ম সংশয়’, ‘স্বতন্ত্র রচনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ ইত্যাদি উগ্র নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার বইসমূহ। এত গেল কেবল বাংলা ব্লগস্ফিয়ার। বর্তমানে ব্লগের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী, অবাধ ও স্বাধীন মুক্তমঞ্চ হিসেবে গড়ে উঠেছে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসমূহ। যেখানে প্রতিদিন বহু ইসলামীবিদ্বেষী বাংলা পেজ খোলা হচ্ছে। সেসব পেজে সমানে ছড়ানো হচ্ছে হিংসা ও ঘৃণার বিষাক্ত মন্ত্র। পবিত্র কুরআনের আয়াতের অনুকরণে ব্যঙ্গাত্মক প্যারোডি রচনা, রাসূল (সা)-কে গালিগালাজের সেসব দৃশ্য যাদের মধ্যে সামান্যতম ঈমানও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ না ঘটিয়ে পারবে না। শাহবাগ আন্দোলনে এই নাস্তিক ব্লগার গোষ্ঠীই প্রথম রাস্তায় নেমেছিল। ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ ছিল তাদের সাইনবোর্ড। কিন্তু অন্তরালে লুক্কায়িত ছিল ব্লগের ক্ষুদ্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এসে সমাজের বৃহত্তর অঙ্গনে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা এবং পরম কাক্সিক্ষত সেই নাস্তিক্যবাদী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ বপন করা। যার মাধ্যমে এ দেশের গণমানুষের মন ও মনন থেকে ধর্ম নামক অনুষঙ্গটির শেষ শিকড়টিও তারা উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল। ‘একাত্তরের চেতনা’র মুলো ঝুলিয়ে এবং ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তারা মীমাংসা করে ফেলতে চেয়েছিল এ দেশের জাতীয় চেতনা ও সংস্কৃতিতে ইসলাম নামক এই ‘আরবীয় ধর্মে’র (?) আর কোনো স্থান থাকবে কি না সেই প্রশ্নটিরও। এ কথা সত্য যে, এত কিছুর পরও বাংলাদেশে উঠতি নাস্তিকদের এই সীমাহীন দৌরাত্ম্য মূলত ইন্টারনেট অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে সমাজে প্রকাশ্যে নাস্তিকতার চর্চা করার মতো মেরুদণ্ড যে এদের নেই, তা শাহবাগ আন্দোলনের ব্যর্থতায় পরিষ্কার। কিন্তু তাতে কী? শিক্ষিত উঠতি তরুণ সমাজের হাতে ইন্টারনেট এখন অনেক সহজলভ্য। ফলে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে তারাই সর্বপ্রথম এই নাস্তিকদের অপপ্রচার ও মগজধোলাইয়ের শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে তরুণদের মস্তিষ্ক বিকৃত করার জন্য আরজ আলী মাতুববর, আহমাদ শরীফ, হুমায়ূন আজাদদের অনুসারীদের সংখ্যা এ দেশে নিতান্তই কম ছিল না। তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবতাবাদী কবি-সাহিত্যিকেরা এবং সেক্যুলার মিডিয়াগুলো এতদিন আড়ালে-আবডালে সংগোপনে সুকৌশলে নাস্তিকতা প্রচার করে আসছিল অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা ও মানবাধিকার প্রভৃতি সুরক্ষার জন্য কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ করে। কিন্তু বর্তমানের এই জঙ্গি সাইবার নাস্তিকেরা তাদের চেয়ে বহু গুণে ভয়ঙ্কর। যে দেশে দাউদ হায়দার, তাসলিমা নাসরীনদের ঠাঁই হয় না, সেই দেশে তাদের চেয়ে হাজার গুণ বর্বর এই উগ্র নাস্তিক গোষ্ঠী কিভাবে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে কি এর পেছনে কোনো মহলের বিশেষ মিশন কাজ করছে? ২০১১ সালে আমেরিকার ‘সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস’ আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়া কিভাবে ছড়ানো হচ্ছে তার ওপর ৬ মাসব্যাপী তদন্ত চালায়। অতঃপর Fear, Inc. The Roots of the Islamophobia Network in America শিরোনামে ১৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি গবেষণা রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্ট মতে, আমেরিকার ৭টি সংস্থা গত ১০ বছরে ৪২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে। যার একটি বড় অংশ ব্যয় করা হয় ইন্টারনেটে ইসলামবিদ্বেষী ম্যাটেরিয়াল সমৃদ্ধ করা এবং বিভিন্ন ফোরাম ও ব্লগের মাধ্যমে হিংসা ছড়ানোর কাজে। সুতরাং এ দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য এই নাস্তিক চক্রকে বিশেষ কোনো মহল পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কি না, তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা জরুরি। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ সরকার ‘সাইবার ক্রাইম’ বিষয়ক আইন করলেও সেখানে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন আছে কি না, বা থাকলেও তা কতটুকু কার্যকর, তা বোঝার উপায় নেই। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে একটি বিশেষ টিম গঠন করে বিটিআরসি। একই বছরের ২২ এপ্রিল থেকে [email protected]  ঠিকানায় সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণ করা শুরু হয়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারও কোনো কার্যকারিতা নেই। বর্তমানে রাজীব হত্যার পর বিটিআরসির আবারও কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দেশ ও জাতির সুরক্ষায় সরকার যদি এই চিহ্নিত নাস্তিক গোষ্ঠীর অপপ্রচার দমনে আন্তরিকভাবেই উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে, তবে তা হবে খুবই আশাব্যঞ্জক। একই সাথে ইন্টারনেট থেকে যুবসমাজের চরিত্রবিধ্বংসী যাবতীয় কন্টেন্ট ব্লক করে দেয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। পরিশেষে তরুণসমাজকে বলব, ইসলামবিদ্বেষী মহল দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে ধর্মহীন করার জন্য সুকৌশলে দিবা-রাত্রি পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এতদিন তারা আমাদেরকে সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়েছে। আজ তারা আর রাখ-ঢাক না করে সরাসরি মুসলিম জাতির মূল চেতনাকেন্দ্র পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সা)-কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। সুতরাং আর অপেক্ষার সময় নেই। এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য যেমন গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, ঠিক তেমনি এদের হাত থেকে সমাজকে বাঁচানোর জন্য এবং নিজেদের আমল-আকিদা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। ব্লগ ও ফেসবুকে অপপ্রচারের খপ্পরে পড়ে অথবা কৌতূহলবশত আরজ আলী মাতুববর কিংবা হাল আমলের নাস্তিককুল শিরোমণি ক্রিস্টোফার হিচেন্স, রিচার্ড ডকিন্সদের বইপত্র নাড়া-চাড়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থী তরুণরা যেন বিভ্রান্তির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে নাস্তিক্যবাদী ও মুখোশধারী কবি-সাহিত্যিকদের নষ্ট সাহিত্য অধ্যয়ন থেকে বিরত থাকতে হবে। আর অভিভাবকদেরও দায়িত্ব হবে কোনোরূপ শিথিলতা না দেখিয়ে তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই ইসলামী চেতনায় সমুন্নত করা। যেন জীবনের উষালগ্নে তারা কোনরূপ বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত না হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এই নাস্তিকদের ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়ার তাওফিক দান করুন এবং এদের কূটচাল থেকে এ দেশের মুসলিম সমাজকে হেফাজত করুন। আমিন! লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির