post

পরামর্শ সভার অধিবেশন পরিচালনা ও উন্নতমানের বক্তৃতা

ভাষণ

০৬ জুলাই ২০১১

এ.কে.এম. নাজির আহমদ

পরামর্শ ইসলামী সংগঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আন্দোলনের পলিসি নির্ধারণ, বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেট অনুমোদন এবং উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে পরামর্শ সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

  • সভাপতি পরামর্শ সভার অধিবেশন আহ্বান করবেন।
  • সভাপতি অধিবেশনের এজেন্ডা তৈরি করবেন।
  • কোন সদস্য কোন বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলে তিনি তা পূর্বাহ্নে সভাপতিকে জানাবেন। সভাপতি কনভিনস্ড হলে তা এজেন্ডাভুক্ত করে নেবেন।
  • নির্ধারিত সময়ে অধিবেশন শুরু হবে।
  • আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের হামদ, আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করে এবং কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে সভাপতি অধিবেশন উদ্বোধন করবেন।
  • সাধারণ অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্যের পর সভাপতির নির্দেশে সেক্রেটারি অথবা অন্য কেউ বিগত অধিবেশনের কার্যবিবরণী পাঠ করবেন।

জরুরি অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্যের পর বিগত অধিবেশনের কার্যবিবরণী পেশ না করেই সরাসরি আলোচ্য বিষয়ে চলে যাবেন।

পরবর্তী সাধারণ অধিবেশনে বিগত সাধারণ অধিবেশন এবং জরুরি অধিবেশনের কার্যবিবরণী পেশ করবেন।

  • সভাপতি মৌখিকভাবে (প্রয়োজনে লিখিতভাবে) অনুবর্তন প্রতিবেদন (ফলো আপ রিপোর্ট) প্রদান করবেন।
  • সভাপতি এজেন্ডা অনুযায়ী অধিবেশনের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
  • অধিবেশন চলাকালে যদি কোন জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে এবং তা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দাবি করে, তাহলে সভাপতি অন্য আইটেমের আলোচনা স্থগিত রেখে উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সদস্যদের পরামর্শ      আহ্বান করবেন।
  • হাত তুলে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাঁর অনুমতি নিয়ে, সদস্যগণ একে একে তাঁদের বক্তব্য পেশ করবেন।
  • প্রত্যেক সদস্য শুধু সভাপতিকে সম্বোধন করে বক্তব্য রাখবেন।
  • প্রত্যেক সদস্যকে মনে রাখতে হবে, পরামর্শ দেয়া আর ডিক্টেট করতে চাওয়া এক কথা নয়।
  • প্রত্যেক সদস্য সতর্ক থাকবেন যাতে আল কুরআন, আস্ সুন্নাহ এবং ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্যবিরোধী কোন কথা এসে না যায়।
  • প্রত্যেক সদস্য দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর মত ব্যক্ত করবেন।
  • প্রত্যেক সদস্য অপর সদস্যের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনবেন।
  • অপর সদস্যের অধিকতর যুক্তিপূর্ণ অভিমতের পক্ষে নিজের অভিমত কুরবানি করবেন।
  • সদস্যদের আলোচনার ভাষা মার্জিত ও শালীন হতে হবে।
  • সদস্যগণ একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাষা প্রয়োগ করবেন না।
  • সভাপতি ধৈর্যসহকারে সদস্যদের বক্তব্য শুনবেন। তবে মাঝে মধ্যে সদস্যদের উদ্দেশে প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবেন।
  • কোন সদস্য আলোচ্য বিষয়বহির্ভূত বক্তব্য রাখতে থাকলে, অপর কোন সদস্য পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপন করতে পারবেন। সভাপতি তখন নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যের প্রতি আহ্বান জানাবেন।
  • কোন সদস্য অপ্রাসঙ্গিক কোন বক্তব্য দিতে গেলে সভাপতি তাঁকে থামিয়ে দেবেন।
  • সভাপতি কিছু বলতে শুরু করলে বক্তৃতারত সদস্য বক্তৃতা বন্ধ করে বসে পড়বেন।
  • কোন অবস্থাতেই অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করা যাবে না।
  • সকল সদস্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের দিকে এগোবার চেষ্টা করবেন।
  • যদি দেখা যায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে না, দ্বিতীয় রাউন্ড আলোচনার সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সভাপতি অধিকাংশ সদস্যের অভিমতকেই সিদ্ধান্তের ভিত্তি বানাবেন।
  • কোন বিষয়ে সকল সদস্য একমত হয়ে গেলেও সেটি একটি অভিমত মাত্র। সভাপতি কর্তৃক রুলিং দেয়ার পরই সেই অভিমত সিদ্ধান্তের রূপ লাভ করে।
  • কোন বিষয়ে সদস্যগণ সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলে সভাপতি কোন একটি মতের পক্ষে কাস্টিং ভোট প্রদান করে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।

তবে আলোচ্য বিষয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন না থাকলে সভাপতি বিষয়টি পরামর্শ সভার পরবর্তী অধিবেশনের জন্য defer করতে পারবেন।

  • আলোচনাকালে ভিন্ন মত ব্যক্ত করলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে যাওয়ার পর সকল সদস্য সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যই মাঠে ময়দানে ভূমিকা পালন করবেন।
  • অধিবেশনের প্রসিডিংস পরামর্শ সভার বাইরে যাবে না। বাইরে যাবে শুধু সিদ্ধান্ত।
  • এজেন্ডাভুক্ত বিষয়গুলো আলোচিত হয়ে যাওয়ার পর সভাপতি আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের শুকরিয়া আদায় করবেন এবং সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।

উন্নতমানের বক্তৃতা-ভাষণ

ইসলামের জীবনদর্শন ও জীবনবিধান সম্পর্কে সঠিক ধারণার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে ইসলামী সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে বিভিন্ন ফোরামে বক্তৃতা-ভাষণ দিতে হয়।

বক্তৃতা-ভাষণকে আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য কিছু নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। যেমন -

  • বক্তা আল্লাহর হামদ এবং আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সালাত ও সালাম দ্বারা বক্তৃতা শুরু করবেন।
  • ফোরাম সম্পর্কে সচেতন থেকে সঠিক পদ্ধতিতে সম্বোধন করবেন।
  • নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পয়েন্টভিত্তিক বক্তব্য পেশ করবেন।
  • যত বেশি সম্ভব আল কুরআনের আয়াত ও আল হাদিস উদ্ধৃত করবেন।
  • আল কুরআনের আয়াত ও আল হাদিস শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করবেন।
  • মাউদু হাদিস ব্যবহার করবেন না।
  • কোন তথ্য উদ্ধৃত করতে হলে অবশ্যই নির্ভুল তথ্য উদ্ধৃত করবেন।
  • সুন্দর সুন্দর যুক্তি ব্যবহার করে বক্তব্যকে সমৃদ্ধ করবেন।
  • শ্রোতাদেরকে হাসানোর জন্য বানোয়াট কথা বলবেন না। (লোকদেরকে হাসানোর জন্য বানোয়াট কথা বলতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।)
  • শ্রোতাদের আবেগ নয়, বুদ্ধিবৃত্তিকে নাড়া দেয়ার প্রয়াস চালাবেন।
  • নেতিবাচক কথাকে নয়, ইতিবাচক কথাকে প্রাধান্য দেবেন।
  • শ্রোতাদের সমঝ শক্তির মান অনুযায়ী শব্দ চয়ন করবেন।
  • সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটাবেন না।
  • যেই শব্দের সঠিক অর্থ জানা নেই তা ব্যবহার করবেন না।
  • দ্রুত ও অস্পষ্টভাবে নয়, ধীরে সুস্থে ও স্পষ্টভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
  • বক্তৃতার বিষয়ের গণ্ডি অতিক্রম করবেন না।
  • অশোভন শব্দ উচ্চারণ করবেন না।
  • উসকানিমূলক কথা বলবেন না।
  • আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করবেন না।
  • অল্প কথায় বেশি ভাব প্রকাশের প্রয়াস চালাবেন। অর্থাৎ সারগর্ভ ও নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা-ভাষণ প্রদান করবেন।
  • আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের হামদ উচ্চারণ করে বক্তৃতা সমাপ্ত করবেন।

উল্লেখ্য যে speech অর্থ বক্তৃতা। যিনি বক্তৃতা করেন তিনি হচ্ছেন speaker.

demagogy অর্থ গলাবাজির রাজনীতি। ‘যেই রাজনৈতিক নেতা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের বদলে আবেগ উদ্দীপ্ত করে জনসাধারণকে খেপানোর চেষ্টা করেন’, তাঁকে বলা হয় demagogue.

সন্দেহ নেই, ইসলামী সংগঠনের একজন নেতার demagogue হওয়া সাজে না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির