post

প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য এবং উৎসর্গিত দেশপ্রেম

শফিউল আলম প্রধান

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আমি বারবার বলেছি, আজকে আরো প্রত্যয় ও বিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই, কালো ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর ঘটনাপ্রবাহ ছিল রাষ্ট্রবিরোধী নীলনকশার পূর্বাভাস। সেদিন অনেকেই এ ঘটনাকে নিছক ভিন্ন মতাবলম্বীদের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে দেখতে চেয়েছে। পলাশীতে যেমন আমরা একজন নবাবের পরাজয় দেখেছি, শেষ যেটা অস্তমিত স্বাধীনতায় শেষ হয়েছে। একটা জাতি, ধর্ম ও স্বাতন্ত্র্যতার বিরুদ্ধে এক সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই ২৮ অক্টোবরের ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়। এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে মাতৃভূমির প্রতি উৎসর্গিত কিছু তরুণই শাহাদাত বরণ করে নাই বরং আমার অস্তিত্বকে গ্রাস করা হয়েছে। ২০১২ এর ২৮ অক্টোবরের পথ ধরেই দ্রুত ধেয়ে আসা ওয়ান-ইলেভেন ছিল পলাশীর প্রাক্কালে কাশীমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি। আজ ঐতিহাসিকভাবে এটা সত্য ওয়ান-ইলেভেনের সুড়ঙ্গপথে হিন্দুস্তানের বস্তাভর্তি টাকায় মহাজোট সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হলো। তারপর মহাজোট সরকারের ইতিহাস ভিনদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ইতিহাস। পলাশী ট্র্যাজেডির পটভূমিতে নতুন নবাব মীর জাফরের সাথে হাসিনা সরকারের কী অপরূপ সাদৃশ্য! ভিনদেশীদের এজেন্ডা ৩টি। দেশকে নেতা, মেধা ও সেনাশূন্য রাষ্ট্রে পরিণত করা। সুতরাং গদিতে বসার ৪০ দিনের মাথায় পিলখানা ট্র্যাজেডি সংঘটিত হলো। ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারসহ বিডিআরকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। সীমান্ত আমাদের প্রতিদিন জানিয়ে দিচ্ছে আমরা আজ কতটা অসহায় ও প্রতিরক্ষাহীন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা না-ই বা বললাম। চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী, ওয়ালিউল্লাহ, আল মোকাদ্দেসের গুম হওয়ার কাহিনী দেশকে নেতাশূন্য করারই পূর্বাভাস। এই মুহূর্তে যখন জাতীয় ঐক্য জরুরি তখন ৪১ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষÑ এ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চক্রান্ত কেন? মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে বিষয়টিকে চিরতরে মীমাংসা করেছেন আজ মুজিবতনয়া শেখ হাসিনা এ ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠলেন কেন? অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অভিজ্ঞ মননশীল বরেণ্য নেতাদর বিচার প্রহসনের নামে ফাঁসিতে ঝোলানোর এ নির্মম প্রয়াস কেন? আবার একই উত্তরÑ দেশকে নেতাশূন্য করে দাও। কারণ রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে জাতি যেন পথের দিশা ও দিকনির্দেশনা না পায়। মহাজোটকে জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার পর বুয়েট, ঢাকা, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ কার্যত সকল সচল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অচল করে দেয়া হয়েছে। কোন বিরোধী মতাবলম্বী ছাত্রনেতা-কর্মীকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ মুক্তবুদ্ধির এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই ইতিহাস নির্মাণ হয়েছিল। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ’৭৪-৭৫ আওয়ামী বাকশালবিরোধী সংগ্রাম, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামÑ এই একই এজেন্ডা দেশকে মেধাশূন্য করা। এ নীলনকশার আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ অবরুদ্ধ ও হানাদারকবলিত। এই পটভূমিতে সঙ্গত কারণেই জনমনে শঙ্কিত জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আজ কোন পথে? সাধারণভাবে যদি আমরা দেখি, চারদিকে নিñিদ্র অন্ধকার। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ, আমার বিশ্বাস এই অন্ধকার কাটিয়ে আমরা আলোর দিগন্তে পা রাখবোই। আমাদের দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, আজকের লড়াই নিছক ক্ষমতা দখলের লড়াই নয়, কষ্টার্জিত আজাদি রক্ষার লড়াই। সামনে শুধু শেখ হাসিনা ও মহাজোটকে দেখলেই হবে না, এর নেপথ্যের শক্তি, শক্তিধর আধিপত্যবাদী ভারত, সা¤্রাজ্যবাদকে দেখতে হবে। এরা আমাদের আজাদিরই দুশমন নয়, এরা ধর্মবিদ্বেষীও। দিল্লির কালো থাবা জাতির হৃদপিন্ডকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। সুতরাং এবারের লড়াইটা ভিন্নমাতৃক। এ জন্য প্রয়োজন বিভাজন নয়, সীসাঢালা জাতীয় ঐক্য এবং উৎসর্গিত প্রচন্ড দেশপ্রেম। এখানে আমি প্রাসঙ্গিকভাবেই বলতে চাই, সময়ের দাবি ছাত্রঐক্য। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সকল বিরোধী ছাত্রসংগঠনের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। ইতিহাস সাক্ষী, ছাত্ররা যখনই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছে, তখনই আমরা বিজয়কে নিশ্চিত করতে পেরেছি। ছাত্র ও যুবসমাজের প্রতি আমার হৃদয়স্পর্শী আবেদন- গোলামির জিঞ্জির পরতে না চাইলে এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলুন। সামনের দিনগুলোকে কে কিভাবে দেখছেন আমি জানি না। আমার মনে হয় সময়োচিত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে ২৮ অক্টোবরের ট্র্যাজেডির চাইতেও ভয়ঙ্কর পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হয় গোলামি, না হয় আজাদি-এর মাঝখানে এখন আর কোনো দেয়াল নেই। লেখক : চেয়ারম্যান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির