post

বিবেকের বন্দী কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার ভাষাসৈনিক মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম

০৭ মার্চ ২০১২
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম অহিংসবাদী ও সংগ্রামী নারী অং সান সুচি প্রায় পনের বছরের বন্দিজীবনের কালো অধ্যায় পেরিয়ে মুক্ত আলোয় ফিরেছেন। গত ২১ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ১৫ বছরই কাটিয়েছেন কারাগারে আর গৃহবন্দী হিসেবে। এ সময় তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। হারিয়েছেন স্বামী ড. মাইকেল এরিসকে। নেলসন ম্যান্ডেলার পর এটাই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রাজবন্দীর মুক্তি। অ্যালান ক্লেমেন্টসের সাথে আলাপচারিতা ‘দ্য ভয়েস অব হোপ’ গ্রন্থে সাংবাদিক অ্যা ক্লে অং সান সুচিকে রাজনৈতিক পলিসির স্থিরতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, জনগণকে বোকা বানানো যাবে না, বোকা ভাবাও উচিত নয়। ১৯৮৯ সালে আমি একবার ইনবলী হ্রদ এলাকায় গিয়েছিলাম, সেখানে একজন ভিক্ষু আমাকে একটা গল্প বলেছিলেন। গল্পটি হলো- ‘উ-পো সেইন বার্মিজ থিয়েটার ট্রুপ... এর একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী। উ-পো সেইন এর ট্রুপে একজন কমেডিয়ান ছিলেন, যিনি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বলতেন দেখুন উ-পো সেইন, এখানে যেসব দর্শক আছেন তারা কেউই আপনার মত এত সুন্দর নাচতে জানেন না। কিন্তু আপনি যদি নাচে কোন ভুল করেন তাহলে দর্শকেরা যে কেউ-ই তা ধরতে পারবেন। তো এই কথাটা রাজনীতির ক্ষেত্রেও সত্য। রাজনীতির প্রতি জনগণের বিতৃষ্ণা থাকতে পারে, রাজনীতি সম্পর্কে তারা উদাসীন হতে পারে কিন্তু আপনি যদি ভুল কোনো পদক্ষেপ নেন তাহলে তারা তা বুঝতে পারবে, আপনি অস্থির।’ পৃথিবীর ইতিহাসে অস্থির আর জনগণকে বোকা বানানো র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ সম্ভবত শীর্ষে। আমাদের রাজনীতিবিদেরা কত অস্থির আর কত ডিগবাজি খেলেন জনগণের সাথে, তার নমুনা পরীক্ষার জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। বর্তমান আলোচিত কেয়ারটেকার ইস্যু-ই যথেষ্ট। দেশের রাজনীতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি নিয়ে। কিন্তু এই অস্থিরতার জন্য দায়ী জনগণ, না নেতৃত্ব? বাংলাদেশে সবাই জানে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির রূপকার ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। একদা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে তুমুল আন্দোলন করেছিল জামায়াতকে সাথে নিয়ে। হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি আর জনগণের অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সে দাবি আদায় করে বিএনপির কাছ থেকে। দুনিয়াতে সেই পদ্ধতির যথেষ্ট সুনাম হচ্ছে দেখে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদম্ভে দাবি করেছিলেন, তিনিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তা। তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও রাষ্ট্রের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিকে কটূক্তি করে বলেছিলেন, ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নাই।’ বর্তমানে দেশে দিন বদলের হাওয়া লেগে, দুই নেত্রী-ই বোল পাল্টিয়ে ফেলেছেন। সবকিছু উল্টো হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে গলা টিপে হত্যা করেছে আর বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। হায়রে পৃথিবী! হায়রে রাজনীতি! হায়রে দুর্ভাগা জনগণ! আর জামায়াত আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করে কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি আগেও আনলো,  এখনও আন্দোলন করছে বিএনপির সাথে। রাজনীতির সরলীকরণ হচ্ছে যে কারণে খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার সরকার দিতে বাধ্য হয়েছেন ঠিক একই কারণে শেখ হাসিনাকেও তা মানতে হবে, নাম যাই হোক না কেন। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গোলাম আযম দূরদর্শিতার এক মূর্তপ্রতীক তাতে সন্দেহ নেই। আর এই ঐতিহাসিক নজির প্রত্যক্ষ করেছে সারা দুনিয়া। ব্যক্তিকে দমিয়ে রাখা যায়, বিকৃত করা যায়, কিন্তু চিরতরে মুছে ফেলা যায় না। অধ্যাপক গোলাম আযম তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আল-জাজিরা এই মহান নেতাকে নিয়ে রিপোর্ট করলে এবং জাতিসংঘের বিশ্বনেতৃবৃন্দের জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য কাটা ঘায়ে লবণ ছিটার মতো। অনেকের যেন সহ্য-ই হয় না। আওয়ামী লীগের তা যতই অসহ্য হোক না কেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত একটি বাস্তবতা, এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ আছে কি? কিন্তু জাতি ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা দেখেছে সম্প্রতি। যেদিন অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে নিলেন সেদিন নেত্রী খালেদা জিয়া গোলাম আযমের বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রেসিডেন্টের দরবার হলে ঢুকেছেন! শুধু তাই নয়। অধ্যাপক গোলাম আযম কখনও এমপি, মন্ত্রী কিছুই হননিÑ সুযোগ থাকার পরও। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভিনব এবং নির্যাতিত ব্যক্তি অধ্যাপক গোলাম আযম। ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি, চাওয়া-পাওয়া বৃহত্তর স্বার্থে তার ত্যাগ এমন বহু বাস্তবতা এখন দৃশ্যের অন্তরালে। যিনি ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতাসীন সকলের অপবাদের দায়ভার কাঁধে পড়েছে। যিনি দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে সব সময় ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু তার বিনিময়ে সব সরকার থেকে উপহার পেয়েছেন কারাবরণ। বিশ্বজুড়ে তার অসম্ভব খ্যাতি, তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কৌতূহলের শেষ নেই তবে বাস্তবতা হচ্ছে সব সময়ই ঐতিহাসিক সত্য বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে, তার আত্মনির্মাণ এবং বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু এখন বাস্তবতা এবং সমকালীন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ আজ স্বীকৃত। অবশ্য আমাদের দেশে এখন এগুলো খুবই স্বাভাবিক। যে দেশে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মেজর জলিল, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আর কর্নেল অলিকে আওয়ামী লীগ রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধী বলতে দ্বিধা করে না, সেখানে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভাগ্যে কারাগার অতি নগণ্যই মনে করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বাকশালীরা। আজ বিবেকের বন্দী কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার ভাষাসৈনিক মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম। ১১ জানুয়ারি ২০১২ কারাগারে যাওয়ার আগে জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘১৯৮০-এর দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। সকল আন্দোলনকারী দলের লিয়াজোঁ কমিটি একত্রে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করতো। তখন তো কোনো দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সহযোগিতা প্রার্থনা করে আমার নিকট ধরনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু সাহেব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ সাহেবের মাধ্যমে আমাকে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তখনও তো আওয়ামী লীগের মনে হয়নি যে, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী! পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের আবদার নিয়ে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখনও তো তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিল না। এরপর এমন কী ঘটলো যে আওয়ামী লীগ ও কতক বাম দল জামায়াতকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিয়ে জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য জেহাদে নামলেন? এরূপ দু’ মুখো নীতি কোনো সুস্থ রাজনীতির পরিচয় বহন করে না। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয়ী হয় আর বিএনপি ১৯৭টি আসন পায়। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলসমূহের শতকরা ২০ ভাগ ভোট একতরফা বিএনপি পাওয়ায় এসব ভোট থেকে বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ মাত্র পাঁচ হাজার থেকে বিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে বহু আসন হারায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার কারণ হিসেবে বুঝতে পেরেছিল যে, জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করতে না পারলে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিজয়ের কোনো আশা নেই। এ উপলব্ধি থেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর অপবাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রচারাভিযান চালায়। যাদেরকে এক সময় ‘কলাবরেটর’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল তাদেরকেই এখন আওয়ামী লীগ ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বিচার করতে চাচ্ছে। ২০০১ সালের পূর্বে কখনো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি।’ অধ্যাপক গোলাম আযম একজন সৎ, ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন, খ্যাতিমান অহিংস রাজনৈতিক নেতা আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই মেধাবী চৌকস ও অভাবনীয় নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন ক্ষণজন্মা মানুষটি ১৯২২ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা থেকে পাস করেন। স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সম্পৃক্ত হন ছাত্র আন্দোলনের সাথে। ১৯৪৭-৪৮ ও ’৪৮-৪৯ সালে পরপর দুই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়ে পাকিস্তান সরকার দ্বারা কারা নির্যাতিত হন। এই মহান নেতা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শেখ মুজিব কর্তৃক ’৬৬ সালের ছয় দফা দাবি তৈরিতে অংশ নেয়া ২১ সদস্যের অন্যতম। ১৯৫৪ সালে যোগদান করেন জামায়াতে ইসলামীতে এবং প্রত্যক্ষভাবে শুরু করেন রাজনৈতিক জীবন। অখণ্ড পাকিস্তানে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কপ (ঈঙচ- ঈড়সনরহবফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ চধৎঃু), পিডিএম (চউগ- চধশরংঃধহ উবসড়পৎধঃরপ গড়াবসবহঃ), ডাক (উঅঈ- উবসড়পৎধঃরপ অপঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব) ইত্যাদি আন্দোলনে জনাব শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য সকল দলের নেতাদের সাথে অংশগ্রহণ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৪ সালেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম একটি আন্দোলন, একটি জাগরণ, একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম। একটি চেতনা ও বিশ্বাসের গগনজোয়ারী বিশ্বাসের কণ্ঠস্বর। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কেয়ারটেকার সরকার ফর্মুলার রূপকার। মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ের একটি সম্ভাবনাময় দেশগড়ার চেতনার অগ্রপথিক। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার অন্যায়ভাবে তার জন্মগত নাগরিকত্ব অধিকার হরণ করলেও পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রায়ে নাগরিক অধিকার ফিরে পান এবং তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এখন নতুন করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আবার সেই একই অভিযোগের অবতারণা করা হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ৩০ বছর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে থেকে সর্বশেষ স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারী পদ ও ক্ষমতার প্রতি নির্লোভ একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক গোলাম আযম। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক স্মরণীয় ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। এ প্রবীণ মজলুম জননেতা ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণপুরুষ। আজ জীবন সন্ধিক্ষণে এ সংগ্রামী নেতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারের শিকার। ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যার কালো পর্দার আড়ালে তার স্বর্ণোজ্জ্বল অনেক অবদানকে ঢেকে রাখার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে নিরন্তরভাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রফেসর গোলাম আযম সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র উত্তরণে ’৯০ এ তার কেয়ারটেকারপদ্বতি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির দিশা। জাতির জীবনে প্রফেসর গোলাম আযম এক জীবন্ত কিংবদন্তি। অধ্যাপক গোলাম আযম বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত একটি আওয়াজ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যে সংগ্রাম শুরু হয়, তার সাথে তিনি প্রথম থেকেই প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে তাকে হাজতবাসসহ শত সহস্র নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা যখন বুঝতে পারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলা ভাষাকে নির্বাসনে পাঠানোর যে আয়োজন করছে, তা বাস্তবায়িত হলে বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কার্যত অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। এমন এক প্রেক্ষাপটে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে এই সাহসী বীরপুরুষ প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। এই দিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালিত হয়। হরতাল সফল করতে অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর জিএস হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করে, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে পিকেটিংয়ের জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অবস্থান নেন। হরতালে পিকেটিংয়ের সময় তাকেসহ ১০-১২ জনকে তেজগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ বিক্ষোভের মূলে ছিল প্রধানত ছাত্ররা। ভাষার দাবিতে প্রথম গণবিক্ষোভ, ধর্মঘট বা হরতাল এবং ১১ মার্চ ঐতিহাসিক মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে। (সূত্র : সোনার বাংলা) অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তাকে ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি সংবলিত একটি ঐতিহাসিক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ স্মারকলিপি প্রণয়নের দায়িত্ব ছিল তৎকালীন ছাত্রনেতা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি (পরবর্তীতে বিচারপতি) আব্দুর রহমান চৌধুরীর ওপর। স্মারকলিপিটি ডাকসুর কাউকে দিয়ে পেশ করার ব্যাপারে চারটি হলের ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ ঐকমত্যে পৌঁছেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন অরবিন্দু বোস। তিনি যেহেতু হিন্দু তাই তাকে দিয়ে পাঠ করালে সরকার বিষয়টিকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করতে পারে। এই দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাকসুর জিএস অর্থাৎ আমার ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথাটি ছিল শেষের দিকে। এর আগে প্রাদেশিকতায় আমরা বিশ্বাস করি না এমনভাবে আঞ্চলিকতার নিন্দার কথা বলা ছিল এ প্যারাটি পডার সময় ছাত্রছাত্রীরা তুমুল করতালি দেয়। করতালি শেষে আমার কানে এলো লিয়াকত আলীর স্ত্রী রানা লিয়াকত তার স্বামীকে বলছেন, ‘ল্যাংগুয়েজকে বারে মে সাফ বাতা দেনা।’ তার কথা শোনার পর আমি লেট মি রিপিট দিস বলে আবার ভাষার দাবি সংবলিত প্যারাটি পড়লাম। আবার মুহুর্মুহু করতালি শুরু হলো। আমি এবার করতালির জন্য একটু বেশি সময় দিলাম। আমি লিয়াকত আলী খান এবং রানা লিয়াকত আলী খানের খুব কাছে বসেছিলাম। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে নেননি তিনি। আমি মনে মনে স্থির করলাম বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য তিনি তার বক্তব্যে করলে আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ করে স্লোগান দেব। কিন্তু তিনি খুব ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে উপস্থিতির মনোভাব উপলব্ধি করে বিষয়টি চেপে গেলেন। তার মনে ক্ষোভ থাকলেও এমনকি তার স্ত্রী অনুরোধ করার পরও ভাষার প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না। শুধু বক্তব্যের একপর্যায়ে ক্ষোভের সাথে বলেন, ইফ ইট ইস নট প্রোভিনসিয়ালিজম, দেন হোয়াট ইস প্রোভেনসিয়ালিজম? তার এ কথাগুলো শুনে আমরা মনে করেছিলাম তিনি হয়তো ভাষার ব্যাপারে আরও কিছু বলবেন। কিন্তু না তিনি এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। আমার আর স্লোগান দেয়া হলো না।’ ১৯৫২ সালে পল্টন ময়দানের এক জনসভায় খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে করা সাত দফা চুক্তির তোয়াক্কা না করে ঘোষণা করলেন বাংলা নয় উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে কায়েদে আযমের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করার পরই শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্বের ১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে। এ দেশের মানুষ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ কোটিরও বেশি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। এ বিশাল অর্জন একান্তই আমাদের। বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডের অধিবাসীদের। বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত ভাষার জন্য জীবন দেয়ার ইতিহাস আমরাই কায়েম করতে সক্ষম হয়েছি। আবার বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত আমরাই প্রথম যারা ৯০ বছর বয়স্ক ভাষাসৈনিককে কারাগারে আবদ্ধ করে রেখেছি। ১১ জানুয়ারি ২০১২ কারাগারে যাওয়ার পূর্বে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, ২০১১ সালের নভেম্বরে আমার ৮৯ বছর পূর্ণ হয়ে গেল। বার্ধক্যে রোগের অন্ত থাকে না। আমার ডান পায়ে সায়াটিকা ও বাম হাঁটুতে আর্থরাইটিস। এর জন্য দু’বেলা এমন কতক ব্যায়াম করতে হয়, যা অন্য কারো সাহায্য ছাড়া করা যায় না। একা চলাফেরা করতে পারি না। ডান হাতে ক্র্যাচে ভর দিয়ে বাম হাত একজনের কাঁধে রেখে মসজিদে যেতে হয়। তাই অত্যাবশ্যক না হলে কোথাও যাই না। ব্লাডপ্রেসারসহ নানা অসুখের কারণে রোজ নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এ অবস্থায়ও সরকার ৯০ বছর বয়সে আমাকে জেলে নিচ্ছে। আমি জীবনে চারবার জেলে গিয়েছি। জেল বা মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। শহীদ হওয়ার জযবা নিয়েই ইসলামী আন্দোলনে শরিক হয়েছি। মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিলে শহীদ হওয়ার মর্যাদা পাবো ইনশাআল্লাহ। এবার বার্ধক্যে ও অসুস্থতা নিয়ে বন্দিজীবন কেমন করে কাটবে সে ব্যাপারে মহান মাবুদের ওপর ভরসা করে আছি। আমি জেল, জুলুম, নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুকেও ভয় পাই না। মৃত্যু অত্যন্ত স্বাভাবিক, অনিবার্য। একদিন সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাক্বদির বিশ্বাস করি। আরও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই হয় না এবং তিনি যা করেন তা বান্দাহর কল্যাণের জন্যই করেন। সুতরাং, আমি আমার মৃত্যু নিয়ে সামান্যও শঙ্কিত নই। আমি নিশ্চিত, আমি এ দেশের মানুষের অকল্যাণের জন্য কোনো কাজ কোনোদিনই করিনি। নিরপেক্ষ তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো, এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারাও জানেন যে, আমি দোষী নই- এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে যে রকম প্রহসনের বিচার হচ্ছে তেমন হলে তো আর কোনো বক্তব্য থাকে না। আমার দীর্ঘ ৫০ বছরের কর্মজীবনে সারাদেশে ব্যাপক সফর করেছি। জনগণের মধ্যেই বিচরণ করেছি। উন্নত নৈতিক চরিত্রে ভূষিত হওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে তা কখনো জনগণ বিশ্বাস করবে না। আমাকে ফাঁসি দিলেও জনগণ আমাকে আল্লাহর সৈনিক হিসেবেই গণ্য করবে, ইনশাআল্লাহ।’ প্রিয়পাঠকবৃন্দ, সবমিলিয়ে আজ আমাদের মাঝে এমন এক গোলাম আযম উপস্থিত যার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি, ক্ষমা, মহানুভবতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য এবং সহনশীলতার মতো যাবতীয় মহৎ গুণাবলির বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে কালোত্তীর্ণ। নির্যাতিত-নিপীড়িত, নিষ্পেষিত জনতার অধিকার এবং মর্যাদাবোধ সম্পর্কে এক আবহ তৈরি করতে সাহায্য করেছে, যার উদাহরণ নিকট অতীতে বিরল, একবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ইসলাম, জাতিগত অধিকার এবং সচেতনতা, পারস্পরিক মর্যাদাবোধ নিয়ে বিশ্ব যখন চরম সঙ্কটের মোকাবেলা করছে, ঠিক তেমনি একটি মুহূর্তে নিজের কর্মমহানুভবতার মাধ্যমে সমহিমায় নিজেকে এমনই এক প্রতীকে রূপায়িত করেছেন ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। আর ছোট একটি ঘটনা দিয়ে ইতি টানছি- দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ তাকে সাজিয়েছে অন্যরকম এক মানুষ হিসেবে। এই রকম একটি মজার ঘটনা- লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে পার্লামেন্টের প্রাচীনতম অংশে সংবর্ধনা। এটি কারো জীবনে দুইবার দেখা বড়ই ভাগ্যোর ব্যাপার। ১৯৬০ সালে-এ জেনারেল ডি গল এর। আর ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার। তবে সংবর্ধনার সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল দর্শকসারির অনেক রাজনীতিকই অতীতে তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করতেন। কখনোই তার দেশের নেতৃত্বে আসা উচিত নয় বলে মনে করতেন। পার্লামেন্টের অনেক রক্ষণশীল সদস্য ম্যান্ডেলাকে একজন সন্ত্রাসী মনে করতেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেডি থ্যাচার, যিনি সামনের সারির কাছাকাছি বসেছিলেন। নয় বছর আগে তিনি বলেছিলে যে, কেউ যদি ভেবে থাকে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গঠন করতে পারবে তবে সে এক অন্ধকার অলীক রাজ্যে বাস করছে। আর এখন সেই অন্ধকার অলীক রাজ্য স্বয়ং লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে এসে ভর করেছে।’ (সূত্র : এনথনি স্যাম্পসন ম্যান্ডেলা) বাংলাদেশেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তাইবা কে জানে? বাংলার বুকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক এখন ইসলামের পতাকাতলে সমবেত। যারা চিরদিন গোলাম আযমের কথা মনে রাখবে, চিরদিন ভালোবাসবে, সম্মান করতে থাকবে নিজের গরজে। আপনাকে এই শ্রদ্ধা পেতে রাষ্ট্রের কোনো আইনের প্রয়োজন পড়বে না। আপনার লিখনি অনাগত যুবকদের জন্য হবে নতুন পথের দিশা এবং ঘটবে নব উত্থান। আপনি দীর্ঘজীবি হোন সত্য পথে চলার অনুসারীদের কাছে। আপনি যে ভাষার জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন সে মাসেও আপনি বন্দী। এটি আমাদের ব্যর্থতা, জাতির জন্য লজ্জাজনক। শেষ বয়সে যখন অনেকের সহযোগিতায় নামাজ, খাওয়া আর নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারার কথা তখন আপনি একাকী নিভৃতে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে আছেন! বাথরুমে পড়ে পায়ের চামড়া উঠে যাওয়ার খবর এবং প্রতিনিয়ত আপনার কষ্টের খবর কাঁদায় দেশ-বিদেশে আপনার অনেক ভক্ত ও অনুরক্তকে। আমরা সকলে আপনার মুক্তির অপেক্ষায়... লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির