post

বিশ্বপরিস্থিতি পরিবর্তনে প্রয়োজন মুসলিম যুবসমাজের ক্যারিয়ার গঠন#মোবারক হোসাইন

০৫ জুলাই ২০১৫
ইতিহাসের সকল কল্যাণ, সুন্দর আর ঐতিহ্যের রূপকার হচ্ছে তরুণসমাজ। তরুণরা অসাধারণ অনুপম সুন্দরের স্বপ্নদ্রষ্টা। এক অকল্পনীয় সাইক্লোনের নাম। তারা বাধার প্রাচীর তৈরি অথবা ভাঙনের হাতিয়ার। তারা এক প্রচন্ড বিস্ফোরণ, প্রতিবাদী সাহসী সত্তার আগ্নেয়গিরি। এক সসীম শক্তিধর যোদ্ধার নাম যুবসমাজ। কী তার পরিচয় মানবজীবনে কৈশোর-পরবর্তী বিশেষ অধ্যায়ের নাম যৌবন। বয়স ১৫ থেকে ৩০ কিংবা ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে তারাই তরুণ বা যুবক নামে অভিহিত। জাতিসংঘ সমীক্ষায় তরুণকে ২৫ বছরব্যাপী এক সুন্দর সময় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫ থেকে ৪০ এর মধ্যকার টগবগে ২৫টি বছরই তারণ্য বা যৌবনের প্রতিচ্ছবি। তবে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ ও অধিকাংশ রাষ্ট্র ১৫ থেকে ২৫ বছরের ১০ বছরকে তারুণ্য আর যৌবনের ফুটন্ত রূপ বলে মন্তব্য করেছে। বর্তমান পৃথিবীর ১৯২টি দেশের মধ্যে প্রায় ৫৭টি মুসলিম দেশ। ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৩০ কোটি মুসলিম। বাংলাদেশে প্রায় ১৪ কোটি মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি যুবক। সুতরাং এ হিসাবে পৃথিবীর প্রায় ৪০ কোটি মুসলমান যুবক। মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সর্বাধিক কর্মক্ষম সময়টি যৌবন। যে কোন আন্দোলনে যে কোন পটভূমি বিষয়ে সকল দেশে সকল ধর্মে যুবকের গুরুত্ব মর্যাদা অনেক বেশি। মহান আল্লাহ ও রাসূল সা: যৌবনের গুরুত্ব দিয়েছেন এভাবে- ‘যুবকের একটি ডাকে তিনি চল্লিশবার সাড়া দেন।’ অনুরূপভাবে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় রক্ত হচ্ছে যৌবনের রক্ত। হজরত ইউসুফ আ:, ইবরাহিম আ: ও ইসমাইল আ:-এর ঘটনা যুবকদের জন্য শিক্ষণীয়। হজরত আলী রা., খালিদ, তারিক, মুসা, মুয়াজ, সায়াদ বিন আবি ওয়াক্কাসের যৌবনের কাহিনী পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল নজির। মুসলিম যুবকদের রয়েছে হাজার বছরের সভ্যতা ও স্বাধীনতার ইতিহাস। আমেরিকা সভ্য হয়েছে মাত্র আড়াই শ’ বছর আগে, ইউরোপের কোন কোন অঞ্চল অতি সম্প্রতি। আর আমাদের বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড এর পথপ্রদর্শক। মুসলমান বরাবরই স্বাধীনচেতা, সংগ্রামী। কোন শাসক পারেননি উপমহাদেশকে পরাধীন রাখতে। ইংরেজ পারেনি দমিয়ে রাখতে। ঈসা খাঁ আমাদের গর্ব। তিতুমীর আমাদের অহঙ্কার, হাফেজ শরীয়তুল্লাহ আমাদের প্রেরণা। শাহজালাল, শাহপরাণ, শাহ মাখদুম, খান জাহান আমাদের উজ্জ্বল সাহসের প্রতীক। তাদের ঈমানীদৃপ্ত চেতনায় আমরা আনন্দিত, গর্বিত। তরুণের স্বপ্ন পৃথিবীর এত রূপ রস গন্ধ দেখার পর সবারই ইচ্ছে হয় অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। কবি যেমন বলেছিলেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ কিন্তু চাইলে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। কালের অমোঘ নিয়মে ‘জন্মিলে মরিতে হবে/কে কোথায় রয়েছে কবে’। এবং এটাই সত্য। তরুণ বেঁচে থাকার সাধ কারোই ফুরায় না। অনেকেই হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকেন। তাদের শারীরিক মৃত্যু হয়। কিন্তু থেকে যায় তার কর্মময় জীবন। হাজার বছর ধরে বাঁচতে পারে। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যায় শতকরা ৩০ জন যুবক। পৃথিবীতে মোট লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ কোটি। তা হলে যুবকের সংখ্যা ১৮০ কোটি প্রায়। এরাই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আগামী পৃথিবীর পরিচালনার দায়িত্ব তাদের কাঁধেই অর্পিত হবে। প্রৌঢ়ের প্রাজ্ঞতা, বৃদ্ধের পরামর্শ তরুণকে পথ দেখিেেছ, সাহস জুগিয়েছে কিন্তু কঠিন সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী আর গহিন জঙ্গল কেটে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ মাড়িয়ে, আকাশের নীলিমা ছাড়িয়ে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পথ রচনার কাজটি তরুণকেই করতে হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দশ বছরের প্রত্যয়দীপ্ত বালক আলীই পেরেছিলেন আবু জাহেল, আবু সুফিয়ানের রক্তচক্ষু ও বুদ্ধিবৃত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে নবী সা:-এর পাশে এসে দাঁড়াতে। ওহুদের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাফেরদের জয়ের নায়ক তরুণ সেনাপতি খালিদই পেরেছিলেন মুসলিম জাহানের সীমানাকে দিগন্ত বিস্তারিত করার জন্য একের পর এক রোম পারস্যের হৃদকম্পন সৃষ্টি করতে। জিব্রাল্টা পাড়ি দিয়ে তরুণ সেনানায়ক মুসা পেরেছিলেন স্পেনের বুকে চাঁদ-তারা খচিত ইসলামী নিশান উঁচিয়ে ধরতে। m মুসলিম যুবসমাজের প্রয়োজন কর্মজীবনের প্রস্তুতি এক.    দেশ ও জাতিকে গড়ার সংগ্রামে নিজকে আত্মনিয়োগ করা এ ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে মেধা, সুযোগ ও সামর্থ্যরে আলোকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই ভিত্তিতে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ‘বিন্দু বিন্দু জলে যেমনি সিন্ধু হয়’ তেমনি এ ধরনের হাজারো নিরলস ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম কাতারে এনে দাঁড় করাবে ইনশাআল্লাহ। দুই.    সমাজবিপ্লব সাধনের প্রত্যয়ে বিশ্বাসী সকলকে সমাজ পরিচালনার Key point--এ পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে এ ধরনের সৎ সাহসী কর্মীরাই দেশ ও জাতির উন্নতি করতে পারবে। তিন.    দক্ষতা (Skills)) অর্জন ছাত্রজীবনেই পরবর্তী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল দক্ষতা অর্জন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে পারদর্শিতাই যথেষ্ট নয়। এর বাইরে যেসব Skillsবর্তমান প্রতিযোগিতামুখর কর্মজীবনে টিকে থাকার জন্য দরকার তার কয়েকটি আমি তুলে ধরছি। Language skill ইংরেজিতে ভালো করা ছাড়া বর্তমান দুনিয়ায় এগোনো সম্ভব নয়। Carreer oriented skill যে profession বা career আপনি Chooseকরবেন ছাত্রজীবন থেকে সেসব  Career প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের সংস্পর্শে যেতে হবে। আরো বাস্তব পরামর্শ গ্রহণের জন্য। Computer skill- আধুনিক সমাজে চলার জন্য কম্পিউটারে দক্ষতা বিশেষত ইন্টারনেট ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। Expression skill- বা ভাব প্রকাশের যোগ্যতা সকল ক্ষেত্রের জন্য একটি মৌলিক যোগ্যতা। আমরা যা শিখি তা ভালো করে শিখতে হবে- যাতে শেখানো যায়। এ ক্ষেত্রে অল্প শব্দে এবং কম কথায় কোন বিষয়কে পরিপূর্ণভাবে, সহজ Articulated way তে ও আকর্ষণীয় রূপে, উপস্থাপন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। চার.    কর্মজীবনের শুরুতেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কাজ না করা। সরকারি বা বেসরকারি সধরহmain streamএর প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মজীবন শুরু করলে সমাজজীবন সম্পর্কে একটা Realistic এবং Complete ধারণা লাভ করা যাবে। সাথে সাথে বিচিত্র অভিজ্ঞতাও হবে। এ ধরনের বহুবিধ পরিপক্বতা নিয়ে কেউ পরবর্তীতে যখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তিনি সে প্রতিষ্ঠানকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে ভালোভাবে চালাতে পারবেন। যুব অবক্ষয় : প্রতিকার কোন পথে বর্তমান আমরা এক অবক্ষয়ী বিশ্বসভ্যতার বাসিন্দা। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার নিয়ন্ত্রণ ধর্মবিমুখ এক ধর্মনিরপেক্ষ বস্তুবাদী ও ভোগসর্বস্ব সমাজের সর্বশেষ পরিণতি অবক্ষয় এবং অবক্ষয়। অবক্ষয়ের শিকার বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ যুগ যবসমাজ। গোটা পথিবীর ভাঙা-গড়ার ইতিহাস রচনায় এদের রয়েছে এক অনস্বীকার্য ভূমিকা। এরাই সৃষ্টির কারিগর, ধ্বংসের প্রমিথিউস। বাংলাদেশের যুবকেরা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুবক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সংখ্যা অনুপাত দিন দিন বাড়ছে। সত্তর দশক থেকে নব্বই এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের যুবসমাজের জ্যামিতিক হারে অবস্থান হিসেব করলে দেখা যায় ৭১-১৯%, ৭৪-২০%, ৮১-২৪.৫% এবং ৯১-৩০.২০%। বর্তমানে বাংলাদেশের যুবকের সংখ্যা প্রায় ৩৬ মিলিয়ন। যাদের ২৬ মিলিয়ন বসবাস করে গ্রামে আর ১০ মিলিয়ন বসবাস করে শহরে। এ দেশের বেকার যুবকের সংখ্যা ১২ মিলিয়ন এবং অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২২ মিলিয়ন। অশিক্ষিত যুবকরা গ্রাম-শহর এবং শহর ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। যুবকদের ৭৮.২৫% দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তরুণ তুমি কী করবে ১. (Concrete desire)) সুদৃঢ় আকাক্সক্ষা : কোন পরিকল্পনা, তা যতই সুন্দর হোক না কেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় না যতক্ষণ না তার সাথে যোগ হবে সুদৃঢ় আকাক্সক্ষা। নবুওয়ত পাওয়ার পরপরই সিংহপুরুষ আবু তালিবও ঘাবড়ে গিয়ে ভাতিজা মুহাম্মদ (সা)কে বললেন, কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে একটি আপসরফা করে চলার জন্য। তখন আমাদের প্রিয় নবী কি ঘাবড়ে গেলেন? না, মোটেই না। বরং দ্বিগুণ তেজে বললেন, “ওরা আমার এক হাতে যদি চন্দ্র এবং আরেক হাতে সূর্যকেও এনে দেয় তবু আমার পথ থেকে আমি একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হবো না।” জীবনে এমন কঠিন অঙ্গীকার ছিল বলেই মক্কার সেই কিশোর রাখাল বালকটি বড় হয়ে সমগ্র জাহানের অধিপতি হয়েছিলেন। আমেরিকার সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যদি কেউ গভীরভাবে উকিল হওয়ার ইচ্ছা করে তবে অর্ধেক উকালতি পড়া হয়ে যায়, আর বাকি অর্ধেকটা তাকে বই পড়ে শিখতে হয়।” ঠিক তেমনি আটলান্টিকের ওপর দিয়ে সবার আগে উড়ে যাওয়া অ্যামেলিয়া আরহার্ট বলেছেন, “আমি আটলান্টিকের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিলাম কারণ আমি উড়তে ইচ্ছে করেছিলাম।” বিশ্ববিজয়ী এক অনন্য বীর জুলিয়াস সিজার বলতেন, অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না কারণ সে সাহস করে আকাশের মতো সুউচ্চ টার্গেট ঠিক করে সে দিকে তাকাতে পারে না। আল্লাহপাক কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, যারা সুদৃঢ়প্রত্যয়ী তারাই সফলকাম। একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট মানুষের সাধনা ও গতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এক কাঠুরিয়ার ছেলে সুদৃঢ় স্বপ্ন দেখেছিল সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে, সাধনার বলে তিনিই হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। ২. (Attitude)) মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি: আমরা আল্লাহর খলিফা, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমাদের শুধু শ্রেষ্ঠত্ব আর দায়িত্বই দেয়া হয়নি, সাথে দেয়া হয়েছে বিশাল ক্ষমতা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম জেমস বলেন, “আমাদের প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হলো এই যে মানুষ মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে তার জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শতকরা ৮৫টি ক্ষেত্রে প্রার্থীরা চাকরি পায় তাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, আর শতকরা ১৫টি ক্ষেত্রে পায় অনেক তথ্য ও সংখ্যা তত্ত্ব জানে এবং বেশ চালাকচতুর বলে। ইংরেজি ভাষায় ''attitude' শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। ব্যক্তিজীবনে, জীবিকার ক্ষেত্রে, প্রকৃত পক্ষে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই এই 'attitude' বা মনোভাবের বিশেষ গুরুত্ব আছে। মজার বিষয় ''attitude'-এর প্রতিটি লেটারের জন্য ক্রমিক নাম্বার দিলে দেখা যায় টোটাল ১০০ মার্কস। মনের ভেতরে যে শক্তি আছে পৃথিবীর কোনো ক্ষমতাই তার তুল্য নয়। এ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। ৩. (Repeated activity) সাধনা আর সাধনা : Industry is the mother of good luck. ছোটবেলায় পড়া এ কথাটি কি আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি না? জাপান বিশ্বে প্রায় ১ নম্বর শিল্পোন্নত দেশ কারণ জাতি হিসেবে তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী- এমনকি প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষ অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মারা যায়। মৃত্যুর কথা শুনে চমকে উঠলে। অথচ বাংলাদেশে হয়তোবা অলসতার কারণে কয়েক লাখ লোক মারা যায়। সুতরাং পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেছেন, “তিনি পরিশ্রমের ভেতর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।” রাসূল সা: স্বয়ং ৫৫ বছর বয়সে রমজানে সত্তর মাইল পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে বদর যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। বৈজ্ঞানিক টমাস এডিসন বলেছেন, “আমি সমস্ত জীবনে একদিনও কাজ করিনি।” অথচ তিনি প্রত্যহ ষোল থেকে আঠারো ঘণ্টা কাজ করেছেন আর যেহেতু গবেষণা ছিল তার কাছে তামাশা, খেলার মত সুতরাং তিনি পরিশ্রান্ত হননি। সম্রাট বাবর এক যুদ্ধের সময় ক্লান্ত হয়ে এক ভগ্ন অট্টালিকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, একটি পিপীলিকা দেয়ালে উঠতে গিয়ে ৫৯ বার অকৃতকার্য হয়ে ৬০ বারের বার কৃতকার্য হলো। এতে তার অদম্য উৎসাহ বৃদ্ধি পেল। ফলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হলেন। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজার সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে নিরাশ অন্তরে ঘুরছিলেন। একদিন তিনি দেখলেন, একটি মাকড়সা ৭ বার চেষ্টার পর দু’টি কড়িকাঠে সুতা জড়াতে সমর্থ হয়েছে। এতে তার হৃদয় অদম্য উৎসাহে ভরে উঠলো। তিনি পুনরায় যুদ্ধ করে সপ্তম বারের চেষ্টায় শত্রুর কবল থেকে স্বদেশকে উদ্ধার করেন। ৪. Esteem on time)) সময়ের মূল্য দেয়া সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিবস, মাস আর কিছু বছরের সমষ্টি হচ্ছে আমাদের জীবন। কর্মের তুলনায় জীবনের পরিধি খুবই কম। আর তাই সময় নষ্ট করা মানে জীবনকেই ধ্বংস করা। মূলত দুনিয়াতে তারাই সফলকাম হন যারা দিনের ২৪ ঘণ্টাকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি সেটি বাছাই করার ভেতরই সাফল্যের সোনার চাবিটি লুকানো। রাসূল সা:-এর সাহাবীদের সাথে পরস্পর দেখা হলে তারা একে অপরকে সূরা আসর শুনাতেন সময়ের গুরুত্ব সৃষ্টির জন্য। আর আমরা দেখা হলে কী করি? বিশাল চন্দ্র, সূর্যসহ প্রকৃতির সকল কিছু টাইম টেবিল মেনে চলে। আমাদের উচিত সূর্য চন্দ্রের মতোই ২৪ ঘণ্টার রুটিন মেনে চলা। আর সময় বাঁচানোর স্বার্থে একই সময় একাধিক কাজ করার অভ্যাস করা দরকার। আর এ প্রস্তুতি শুরু হোক আজ থেকেই, কারণ শেকসপিয়রের কথাটি মূল্যবান- “I waste time and now time wastes me. সব." এমনকি ডিকেন্স বলেছিলেন “বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।” সুতরাং আজ থেকেই শুরু হোক বিজয়ের অভিযাত্রা। প্যারাডাইজ লস্টের কবি, মহাকবি মিল্টন বলছেন, The childhood shows the man as morning shows the day. ৫. (ঊফঁপধঃরড়হ)- শিক্ষা ‘ইকরা’ (পড়)! এই মহাবিশ্বের মহান স্রষ্টা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইল আমিনের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোত্তম মানুষ হজরত মুহাম্মদ (সা)-এর কাছে সর্বপ্রথম এই শব্দটিই নাজিল করেন। মহানবী জ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, “জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর এবং নারীর জন্য ফরজ।” এর সময়সীমা সম্পর্কে বলেছেন, “তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন কর।” এর বিস্তৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন “...এর জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও।” পবিত্র কুরআনে নামাজের কথা বলা হয়েছে ৮২ বার অথচ জ্ঞানার্জনের কথা বলা হয়েছে ৯২ বার। আল কুরআনের ৬৩৩৬টি আয়াতের মধ্যে অন্তত ৭৫০টি আয়াত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক। নোবেল বিজয়ী লিও টলস্টয়কে বলা হয়েছিল জাতীয় উন্নয়নের জন্য আপনি যুবসমাজের প্রতি কিছু বলুন। তিনি বলেছিলেন আমার তিনটি পরামর্শ আছে : পড়, পড় এবং পড়। এটি যেন মহান আল্লাহর সেই প্রথম বাণী ‘পড় তোমার সে প্রভুর নামে’ এরই প্রতিফলন। ৬. (Religion & patriotism)- ধর্ম ও দেশপ্রেম বর্তমান সময়ে যে সকল দেশকে আমরা খুবই আধুনিক এবং উন্নত বলে জানি তারাও কিন্তু এ চরিত্রের অবক্ষয়ের কারণেই ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। আমেরিকান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুসারে হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক রোগী মাদক সম্পর্কিত সমস্যায় ভর্তি হয়। খেলাফতের যুগে চীনের এক গোয়েন্দা চীন সম্রাটের কাছে মুসলমানদের ব্যাপারে রিপোর্ট পেশ করেছিল- “এদের রাত কাটে জায়নামাজে কেঁদেকেটে, আর দিনের বেলার আকাশ অন্ধকার হয়ে যায় এদের ঘোড়ার খুরের দাপটে, উড়ন্ত ধুলায়; সুতরাং এদের কেউ পরাস্ত করতে পারবে না।’’ ঠিক এমনি যুদ্ধ বিজয়ের মতোই আত্মগঠনের সাফল্যের জন্যও দরকার আল্লাহর কাছে অবিরত প্রার্থনা। যেমন আল্লাহই শিখিয়েছেন দোয়া- “হে প্রভু আপনি আমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” আধুনিক বিজ্ঞানীরাও ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বিজ্ঞানীদের ভেতর সবচেয়ে বড় নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী অ্যালেঙ্গি কমরেখ পৃথিবীর সর্বাধিক প্রচারিত ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লেখেন, “প্রার্থনা একজন মানুষকে সবচেয়ে বড় শক্তি দান করতে পারে। এই শক্তি কাল্পনিক শক্তি নয় মাধ্যাকর্ষণের মতোই তা অত্যন্ত বাস্তব। ৭.patriotism (দেশাত্মবোধ) : এ প্রজন্মের সোনার টুকরা তরুণ-তরুণী ও কিশোর কিশোরীরা চরিত্রহীনতা, হীনমন্যতা, সন্ত্রাস, আর সর্বনাশা নেশার নীল মৃত্যুর ভয়ঙ্কর শিকারে পরিণত হচ্ছে এবং জাতিগতভাবে আমাদের অবস্থান উল্কার গতিতে হচ্ছে পশ্চাদগামী। তখন বুক ফেটে আর্তনাদ আকারে এ পরিণতির কারণ হিসেবে একটি উত্তরই বেরিয়ে আসে আর তা হচ্ছে “ঐতিহ্যের বিচ্যুতি ও দেশপ্রেমের অভাব ।” ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী মাত্র ১৭ জন ঘোড়সওয়ার সৈনিক নিয়ে বাংলার তৎকালীন রাজধানী নবদ্বীপ অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে আক্রমণ করেন। খিড়কি দরজা দিয়ে রাজা লক্ষণ সেন পলায়ন করেন। কেবল ইস্যুভিত্তিক আবেগসর্বস্ব সভা সমাবেশ এর কোনো সমাধা নয়, এর সমাধান নির্ভর করছে আমাদের সুচিন্তিত কর্মপন্থা গ্রহণের ওপর। লেখক : সাহিত্য সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির