post

মিসরে সেকুলারিস্টদের স্বার্থে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত

১৯ আগস্ট ২০১৩

ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসর। নীলনদ আর পিরামিড তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে ইসলাম মিসরের একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে আসছে। আমর ইবন আল-আসের নেতৃত্বে মুসলিম সেনাদল মিসর জয় করে। উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে মিসর ছিলো মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীন। অনেক উত্থান পতন, আর বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে দিয়ে রচিত মিসরের  ইতিহাস। মিসরে ১৮৫০-১৯৫২ পর্যন্ত রাজতন্ত্র, ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন, ১৯৫৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত গামাল আবদুল নাসেরের একদলীয় শাসন, ১৯৭৭-২০১২ সাল স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ৩০ বছরের এই স্বৈরশাসকের পতন হয় ২০১১ সালে। অনেক রক্তপাত আর শহীদের রক্তের মিনিময়ে দীর্ঘ ৮৪ বছর পর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা লাভ করে মুসলিম ব্রাদারহুড, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড. মুরসি। অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে ইখওয়ান আজকে এ পর্যায়ে এসে উপনিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সংগঠনটি মিসর ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও প্রভাব বিস্তার লাভ করে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে দলটির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। মাত্র দু’বছরের মধ্যে পঁচিশ লক্ষ কর্মী বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বৈরাচারী সরকার আরো ভীত হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইখওয়ান সর্বাত্মকভাবে আরবদের সহযোগিতা করে। এক দিকে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধিতা, অপর দিকে আরব ও ফিলিস্তিনের স্বার্থের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কারণে ইখওয়ান আরব বিশ্বে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নানা মিথ্যা অভিযোগে অনেকবার সংগঠনটিকে বেআইনি ঘোষণা করে মিসরের স্বৈরাচারী সরকারগুলো। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত এক বন্দুবধারীর গুলিতে হত্যা করা হয় হাসান আল বান্নাকে। ১৯৪৫ সালে গামাল আব্দুল নাসেরের ওপর আক্রমণের অভিযোগ এনে দলটি নিষিদ্ধ করা হয়। হাজার হাজার ইখওয়ানের নেতাকর্মীকে জেলে পুরা হয়। এর থেকে বাদ যাননি সাইয়েদ কুতুবও। গ্রেফতার করে তার হাতে পায়ে শিকল পরানো, মারপিট আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে কামড়িয়ে বেড়াতো হতো। রাতে তালাবদ্ধ আর দিনের বেলা তাঁকে রীতিমত প্যারেড করানো, মাথায় খুব গরম এবং ঠাণ্ডা পানি ঢালা ছিলো হিংস্রতার জঘন্যতম রূপ। এভাবেই চলতে থাকে ইখয়ানের নেতা-কমী আর মহিলাদের ওপর অমানবিক ও পৈশাচিক জুলুম-নির্যাতন। বিশ হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় সাত’শ ছিলেন মহিলা। কিন্তু কোন কিছুই তাদের দমাতে পারেনি। সাইয়েদ কুতুব ও অন্যান্য আসামী ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালের দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আসামীদের কোনো কথার প্রতিই কান দেননি। ১৯৬৬ সালের আগস্ট মাসে সাইয়েদ কুতুব ও তার দু’জন সাথীকে সামরিক ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার কোন কিছুর প্রতি তোয়াক্কা না করে ২৫ আগস্ট ১৯৬৬ সালে ঐ দণ্ডাদেশ কার্যকর করে। ইখওয়ানের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সাইয়েদ কুতুব শুধু ইসলামের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কাছে নয়, গোটা বিশ্বে ইসলাম বিষয়ে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮১ সালে ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে বিক্ষুব্ধ সৈনিকের হাতে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত প্রাণ হারানোর পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে যে জরুরি অবস্থা তিনি জারি করেছিলেন তা ৩০ বছর ধরে চলে। ইখওয়ানের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে হোসনি মোবারকের দমনমূলক কর্মকাণ্ড পশ্চিমা দেশগুলো পুরোপুরি অবগত ছিল। গণতান্ত্রিক অধিকারহরণ কিংবা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কখনো পশ্চিমারা মোবারকের সরকারের সমালোচনা বা চাপ প্রয়োগ করেনি। বরং তারা ইসলামপন্থী দলটির ওপর নির্যাতন কে সমর্থন জুগিয়েছে। আজও জনগণের ভোটে নির্বাচিত ড. মুরসির সরকারকে অত্যন্ত অন্যায় ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পশ্চিমারা তাদের প্রতিবাদ আর উদ্বেগের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রাখবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তেলসমৃদ্ধ মধ্যপাচ্যে যে আরব বসন্তের সূচনা হয়েছে, তা ইতোমধ্যে তিউনিসিয়াসহ আশপাশের সকল রাষ্ট্রগুলোতে ইখওয়ানের আদর্শে বিশ্বাসীদের বিজয় পশ্চিমাদের মৈৗলবাদ ভীতির আশংকাকে আরো ঘনীভূত করছে এবং করবে। মিসরে ইখওয়ান বা মুসলিম ব্রাদারহুড মানুষের হৃদয়ের সংগঠন। বিগত মোবারক পতন আন্দোলনে ইখওয়ান কর্মীদের তৎপরতা ও আত্মত্যাগ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাছাড়া নির্বাচনের আগে  নতুন একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম (ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি) ও ইশতেহারের নীতিমালা সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ, নারী ও অমুসলিমদের অধিকার ইত্যাদির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ ও কপটিক খ্রিস্টানদের সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপন, জনগণের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত করেছে। আর এই সব পজেটিভ ম্যাসেজই পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় ইখওয়ানের সংসদ সদস্য ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণ ড. মুরসিকেও নির্বাচিত করেছে। কিন্তু মাত্র একবছর সময় পার না হতেই মাত্র চার দিনের রাজপথে সেকুলারিস্টদের আন্দোলন অজুহাত দেখিয়ে জনগণের সেই কাক্সিক্ষত নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা কতটুকু বৈধ!! কিন্তু আমরা গনতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের মধ্যে উদ্বেগ ছাড়া আর কোন পদক্ষেপ দেখিনি। অবশ্য পশ্চিমাদের নিকট এর বেশি প্রত্যাশা করাটাও বেমানান। কারণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার মৌলবাদীদের জন্য নয়। এই জন্য হেনরি কেসিন্জার একবার বলেছিল- ‘আমরা মুসলমানদের সকল কর্মকাণ্ড সহ্য করলেও মৌলবাদীদের কোন রাষ্ট্রে ক্ষমতায়নকে মেনে নেবো না। তা যতই গণতান্ত্রিক পন্থায় হোক না কেন। ড. মুরসির বিদায়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা, প্রতিক্রিয়া আব্যাহত। মুরসির দল মুসলিম বাদ্রারহুডের নেতা-কর্মী, সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো এখন রাজপথে জীবনবাজি রেখে লড়াই করছে শান্তিপূর্ণভাবে। তারা যতটুকু ক্ষুদ্ধ তার প্রতিবাদে সহিংসতা নয়, বরং রাজপথে অবস্থান আর শাহাদাতের নজরানা পেশের মধ্যে দিয়ে তার  প্রতিবাদ করছে এখনো। সামনে কী হবে তা এখনো বলার সময় আসেনি। ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন মিসরের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। তবে এই মুহূর্ত পর্যন্ত এতটুকু বলা যায় জনগণ বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুৎ করার ব্যাপারে যেগুলোকে অজুহাত হিসেবে পেশ করা হয় তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য!!। মুরসির ব্যর্থতা-বেকারত্ম দূর, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে না পারা। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য এক বছর সময়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুৎ করার কোন মানদণ্ড হতে পারে কি? তাই যদি হয় ক্ষমতায় থাকার মানদণ্ড, তাহলে আমাদের দেশে শেখ হাসিনার সরকার পাহাড় সমান ব্যর্থতার দায়ে কত আগে বিদায় নেয়া দরকার ছিল? আসলে ড. মুরসির বিদায়, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল আর সেকুলারিস্টদের আন্দোলন, এবং ইসরাইল, আমেরিকার স্বার্থ একই সুত্রে গাঁথা। কারণ ড. মুরসি নির্বাচিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তার হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে অনেক গড়িমসি করেছে। পশ্চিমারা ও সেনাবাহিনী সেকুলারিস্টদের ক্ষমতায় বসাতে প্রথম থেকেই ছিল মরিয়া। মূলত জনগণের চাপে সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে ড. মুরসিকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে সত্য, কিন্তু যে কোন সময় সেনাবাহিনী ইখওয়ানের এবং মুরসির ওপর ছোবল মারতে পারে এই সন্দেহ ছিল শুরু থেকেই প্রবল। তাছড়া সেনাবাহিনীর সাথে পার্লামেন্ট পুনরায় আহবান করা নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে প্রথম থেকেই। নতুন সংবিধান রচনা ও সেনাবাহিনী নিজেদের বাজেট নির্ধারণ যুদ্ধ ঘোষণা ও সেনাবাাহিনী পরিচালনার কর্তৃত্ব পুরোপুরিভাবে তাদের হাতে রেখে দিয়েছে। সাংবিধানিক আদালতকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নতুন  অনেক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইসরাইল ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন সরকারের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ইসরাইলের পর মিসরের সেনাবাহিনী সর্বাধিক মার্কিন সাহায্য পেয়ে থাকে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা না রাখা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ হামাসের সাথে ব্রাদারহুডের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। মুরসি শপথ গ্রহণের পর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্য বলেছিলেন-‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’ ড. মুরসির এই ঘোষণাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ইসরাইল ও আমেরিকা। ইউরোপ আমেরিকা সবাই ড. মুরসিকে অভিনন্দন জানালেও তাদের প্রত্যেকেই মুসলিম ব্রাদারহুডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজানা নয়। তাছাড়া ইসরাইলের জন্য হুমকি এমন কোনো কিছুকেই আমেরিকা বরদাশত করবে না। নির্বাচনী রায়কে পাশ্চাত্যের শাসক ও নীতি নির্ধারকেরা প্রথমেই চায়নি। যেহেতু  নির্বাচনে তাদের তাঁবেদার গোষ্ঠী বিজয় লাভ করতে পারেনি, তাই বসে থাকেনি সেকুলারিস্টরা। সে চিত্রইি ফুটে উঠেছে ২০১২ সালের ২৭ জুন তারিখে লন্ডনের ‘দি ইভেনিং স্টান্ডার্ড’ নামক একটি দৈনিকে প্রকাশিত ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মি. টনি  লেখা এক প্রবন্ধে। মি: ব্লেয়ারের মনোভাব বিশ্ব মোড়লদের চিন্তার একটি প্রতিচ্ছবি এতে সন্দেহ নেই। উক্ত প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, One thing, however, is for sure. It has huge consequences for us in the West. This is not just about oil and energy. .. But the security issues alone, arising out of this upheaval, are momentous.. অথ্যাৎ ‘একটি বিষয় অতি সুনিশ্চিত। পাশ্চাত্যে আমাদের জন্য (মধ্যপ্রাচ্যের এ বিপ্লব) বিশাল প্রভাব ফেলবে। সেটি শুধু তেল বা জ্বালানির ক্ষেত্রে নয়। শুধুমাত্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই এ বিপ্লব-উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলাফলটি হবে অতি ব্যাপক।’ এর মাধ্যমে টনি ব্লেয়ার ও তার পাশ্চাত্যের মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যের বিপ্লবে নিরপেক্ষ নন। মিসরে তাদেরও একটি ঘনিষ্ট মিত্র রয়েছে। তাদের পরাজয়ে তিনি যে দুঃখী এবং তাদেরকে একাকী ছেড়ে দেয়া যে পাশ্চাত্যের জন্য ঠিক হবে না সে পরামর্শটিও তিনি দিয়েছেন খুব খোলামেলাভাবে।। তিনি লিখেছেন, “Remember that in Egypt, yes, the Muslim Brotherhood won a majority. But the outcome was close. There are a lot of worried liberal-minded people there who believe in more secular democracy as we do in the West. They should not be forgotten.Ó অথ্যাৎ ‘স্মরণ করুন যে, মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু ফলাফলটি অতি কাছাকাছির। সেখানে রয়েছে উদার মনের বহু মানুষ যারা সেকুলার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে যেমনটি আমরা পাশ্চাত্যে বিশ্বাস করি। তাদেরকে ভুলে থাকা যাবে না।’ টনি ব্লেয়ার লিখেছেন, But it must now reinforce the idea that democracy is a way of thinking, not just of voting.  অথ্যাৎ ‘এ ধারণাটিকে অবশ্যই বলিষ্ঠ করতে হবে যে গণতন্ত্রের অর্থ শুধু ভোটদান নয় বরং চিন্তা-চেতনার একটি ধরণ।’ মিসরের ব্যাপারে পশ্চিমাদের মনোভাব জনার জন্য আর কোন বয়ান দেয়ার দরকার আছে কি? আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মুসলামদের ক্ষেত্রে পশ্চিমারা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিতকে আদৌ ইনসাফের রায় মনে করে কি?। সমসাময়িক পৃথিবীতে তার প্রমাণ দুরূহ। আলজেরিয়ায় মুসলিম স্যালভেশান ফ্রন্ট্রের বিজয়ের পরও ক্ষমতার কেন্দ্রে তাদের আসীন হতে দেয়া হয়নি। মিসরের ক্ষেত্রেও কি একই নীতি কার্যকর?  মুসলিম বাদ্রারহুডের  বিজয় শোষিত, বঞ্চিত আর অবহেলিত গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেক্যুলারিস্টদের ষড়যন্ত্র কূটকৌশল আর সেনাবাহিনীর অ-গণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে সোনালী সূর্য অস্তমিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আঘাত হেনেছে এতে সন্দেহ নেই। তবে  মুসলিম বাদ্রারহুডের উচিত হবে সব কিছুকে ষড়যন্ত্র দিয়ে বিবেচনা না করে নিজেদের ভুল নির্নয় ও আগামীর কর্মপরিল্পনা নির্ধারণ করে বীরের মত এগিয়ে যাওয়া। এরিমধ্যে দিয়ে অস্তমিত সূর্য আবার উদিত হবে। সেটি দেখার অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে সারা পৃথিবীর সত্যপন্থীরা।

লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির