post

যুদ্ধাপরাধ নয় কোরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌছে দেয়াই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ

০৯ অক্টোবর ২০১৪

মাসুদ সাঈদী

Chhatrasangbadআমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। আমার দাদা মরহুম মাওলানা ইউসুফ সাঈদী (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের একজন শৈল্পিক বক্তা ও পীর। আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী নিজ গ্রামে বাবার নির্মিত মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। এর পর তিনি ছারছিনা মাদরাসা, বাড়ৈইখালী দারুস সুন্নাত আলীয়া মাদরাসা এবং খুলনা আলীয়া মাদরাসায় অধ্যায়ন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মাদরাসা শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন বিষয় ও তত্ত্বের ওপর গবেষণা কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন মতাদর্শ ও ভাষার ওপর বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা করেন। আল্লামা সাঈদী দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে, কোরআনের খাদেম হিসেবে তার জীবন শুরু করেন ১৯৬৩ সাল থেকে। তিনি একটি চরম উত্তপ্ত সময়ে আল-কোরআনের বিপ্লবী আহবান নিয়ে আভির্ভূত হয়েছিলেন। তখন থেকে আজ অবধি কোরআনের শ্বাশ্বত আহবান প্রতিটি মানুষের অন্তরের গভীরে পৌছাচ্ছেন অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে, দুর্গম কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরআনের যে কালজয়ী তাফসীর পেশ ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তা নিঃসন্দেহে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশাল সংযোজন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি মাত্র নন। তিনি স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহুমাত্রিক পরিবেশ। দেশে-বিদেশে তাঁকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে লক্ষ লক্ষ জনতার মিলন মেলা। জাতি-ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সুবিশাল জনগোষ্ঠির কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা তুলনাহীন। ইসলামী অঙ্গনে তিনি নন্দিত নায়ক। শৌর্যের প্রতিক। আল্লামা সাঈদীর তাফসীর মাহফিলের বিপুল জনপ্রিয়তা দেখেই বোঝা যায় এর মাধ্যমে অগণিত মুক্তি পাগল মানুষকে আলোড়িত করা সম্ভব, অতœসচেতন করা সম্ভব, ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত করা সম্ভব, সমাজ সংস্কার সম্ভব, মহাবিপ্লব সম্ভব। এ কাজটিরই অগ্রদূত হচ্ছেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আল্লামা সাঈদী দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অলেখ বন্ধন তিনি সৃষ্টি করেছেন দেশের মাটি ও মানুষের সাথে আপন মহিমায়। কথার ধুম্রজাল তিনি সৃষ্টি করেন না। যা বলেন স্পষ্টই বলেন। তিনি যেমন ইসলামের সুন্দর বিশ্লেষণ থাকেন তেমনি ভাবে বাস্তব জীবনেও তা আমল করেন। তাঁর অবস্থানকে অস্বচ্ছ না রেখে উজ্জ্বল করে তোলেন তিনি। সর্বক্ষেত্রে সত্য ন্যায়ের পক্ষেই তাঁর সুষ্পষ্ট অবস্থান।  চরম ক্ষতি স্বীকার মেনে নেয়ার ক্ষমতা আছে তাঁর। তাই তিনি পিছু হটেন না। জেল-জুলুম-ফাঁসি কিংবা অপবাদের ভয়, জান-মাল হানির আশংকা তাঁর কাছে তুচ্ছ বলে গন মানুষের কাছে তিনি বড় বেশী প্রিয় ও আস্থাভাজন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ ও জাতীয় কল্যাণে তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে ১৯৭৯ সালে যোগ দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে দেশ, জাতি ও ইসলামী আন্দোলনের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকার পঞ্চাশের অধিক দেশ সফর করে অগণিত মানুষের সম্মুখে কুরআনের তাফসীর পেশ করেছেন। কুরআনের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তার সিডি, ডিভিডি, ভিডিও সহ অডিও ক্যাসেট সমগ্র পৃথিবীতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর ৭টি মহাদেশের অর্ধশতাধিক দেশ ভ্রমন করে আল্লামা সাঈদী মানুষকে কোরআনের দাওয়াত দিয়েছেন। রাজধানী ওয়াশিংটনসহ আমেরিকার ২২টি অঙ্গরাজ্যে আল্লামা সাঈদী তাফসীর মাহফিল করেছেন। ইউরোপে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনসহ গ্রেটবৃটেনের প্রায় সবগুলো শহরে তিনি বিগত চল্লিশ বছর ধরে মাহফিল করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশে তিনি সফর করেছেন। এভাবে দক্ষিণ গোলার্ধের অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে, উত্তর গোলার্ধের কানাডার টরেন্টো ও মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটিসহ পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশের অন্তত অর্ধশত দেশে তিনি মাহফিল করেছেন। মুসলিম উম্মাহর খেদমতে বিশেষ অবদানের জন্য এ যাবত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে অসংখ্য পদক লাভ করেছেন আল্লামা সাঈদী। এর মধ্যে আগষ্ট ১৯৯১ সালে পেনসিলভিনিয়া ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে ইসলামিক সার্কেল অব নথ আমেরিকা কর্তৃক ‘আল্লামা’ খেতাব ও জুলাই ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড মুসলিম ডে প্যারেড’ সম্মেলনে ‘গ্র্যান্ড মার্শাল’ পদকপ্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য। আল্লামা সাঈদী সর্বপ্রথম হজ্জ পালন করেন ১৯৭৩ সালে। এরপর তিনি ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে সালে সৌদি বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজের আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজ্জ পালন করেন। ২০০৯ সালেও তিনি সৌদি বাদশা আব্দুলাহ বিন আব্দুল আজিজের আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজ্জ পালন করেন। এছাড়া রাবেতা আলম আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি ৫ বারসহ অসংখ্যবার হজ্জ পালন করেছেন এবং ৯০ দশক থেকে জালিম সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি প্রত্যেক রামাদান মাসেই পবিত্র হারাম শরীফে ইতেকাফ পালন করেন। ১৯৯১ সনে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মক্কা শরীফে একটি মিমাংসা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের চারশত স্কলারদের দাওয়াত দেয়া হয়। সৌদী বাদশাহ উক্ত বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আল্লামা সাঈদীকে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে উপস্থিত রেখেছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উৎযাপন উপলক্ষ্যে ইমাম খোমেনী কর্তৃক তেহরানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেন আল্লামা সাঈদী। ২০০৮ সালে আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম এর আমন্ত্রনে প্রধান অতিথি হয়ে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ঈদ গ্রাউন্ডে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন এ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন। আল্লামা সাঈদী পবিত্র কুরআনের তাফসীর ‘তাফসীরে সাঈদী’ ২০০০ পৃষ্টায় চার খন্ড রচনা করেছেন। এ ছাড়াও ফিকহুল হাদীস, আল কুরআন ও বিজ্ঞান, ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইসলামের রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে ইসলাম সহ নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত তাঁর ৭২টি গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আমেরিকা ও ইংল্যান্ড থেকে তাঁর ৫টি বই ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ নয় কোরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌছে দেয়াই যার অপরাধ রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য বা জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মূল পরিচয় নয়। জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে তাঁর পরিচয় তিনি পবিত্র কোরআনের খাদেম, মুফাসসীরে কোরআন। ২০০৬ এর ৭ই আগস্ট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার ৪৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, ‘পৃথিবীর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলা ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যিনি গত ৪০ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের কালের একজন বড় মাপের কোরআনের পন্ডিত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।’ ‘শুধু বাংলাভাষা বা বাংলাদেশের কথাই বা বলি কেনো, আমাদের ইতিহাসে খুব কম মানব সন্তানই সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে অবস্থান করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। এদিক থেকৈ গোটা বিশ্ব পরিমন্ডলে আল্লামা সাঈদী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মাঠে ময়দানে, পত্র পত্রিকায়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে, রেডিও টেলিভিশনে এক সুদীর্ঘকাল ধরে সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করার ক্ষেত্রেও আল্লামা সাঈদীর বিকল্প কোনো ব্যক্তি আজকের মুসলিম বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ।’ লন্ডনের সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখাটি আরো দীর্ঘ। আমার এ লেখাটি দীর্ঘায়িত হবে তাই ঐ পত্রিকার উদ্ধৃতি এখানে আর আমি উল্লেখ করছিনা।’ আল্লামা সাঈদীর পবিত্র কোরআনের খেদমতের সাক্ষী ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের সবুজ শ্যামল এই বাংলাদেশ। তিনি চট্টগ্রামস্থ প্যারেড ময়দানে প্রতি বছর দীর্ঘ ৫ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ৩৪ বছর যাবৎ, সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রসা মাঠে ৩ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ৩১ বছর, ঢাকার কমলাপুর মাঠ থেকে পল্টন ময়দানে ৩ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ৩৩ বছর, রাজশাহীতে ৩ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ৩০ বছর, খুলনাতে সার্কিট হাউস ময়দানে ২ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ৩০ বছর, পিরোজপুরে ২ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ২৯ বছর, পাবনার আলীয়া মাদরাসা মাঠে তাফসীর করেছেন ৩৫ বছর, বগুড়ায় ৩ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ২৮ বছর, বরিশালে ২ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ২৯ বছর, কুমিল্লায় ২ দিন ব্যাপী তাফসীর করেছেন ২৮ বছর। এ ছাড়াও বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা-উপজেলা-থানা বা এমন কোন জনপদ নেই যেখানে তিনি মাহফিল করেননি। এই শতকে কোনো একজন কোরআনের তাফসীরকারকের বিনা বিরতিতে এসব মাহফিলের অনুষ্ঠান এবং এর উপস্থিতি শুধু বিস্ময়করই নয় অনেকটা অবিশ্বাস্যও বটে। তাঁর বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক, তথ্য নির্ভর আকর্ষণীয় আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর মাহফিলে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে নারী-পুররুষ, তরুণ-তরুণী, জাতি-ধর্ম দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার অগণিত মানুষ। আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে শুধু মুসলমানগণই অংশ গ্রহণ করে না, অসংখ্য অমুসলিম নারী পুরুষ তাঁর মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে ইসলাম কবুল করেন। দেশে-বিদেশে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক অমুসলিম আল্লামা সাঈদীর হাতে ইসলাম কবুল করেছেন। কুরআনের মুফাস্সিরে পাশাপাশি তিনি দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদও। তিনি এ দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পরপর দু’বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে পিরোজপুর-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন । অসততা, দুর্নীতি, চাতুর্য আর মিথ্যা আশ্বাস বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনের স্বাভাবিক চিত্র হলেও এক্ষেত্রে আল্লামা সাঈদী সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা থাকলে যে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব; রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি তা করে দেখিয়েছেন। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শুধুমাত্র ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মেয়াদে তার নিজ এলাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তিনি পিরোজপুরে এমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজ করেছেন যার জন্য তাকে আধুনিক পিরোজপুরের রূপকার বলা হয়। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিশ্বনন্দিত ও জনপ্রিয় এই মানুষটির চরিত্র হনন ও তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় মেতে উঠে। বিশ্বব্যাপি তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং তাঁকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে আওয়ামী লীগ তাকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করে। আওয়ামী সরকার মনে করে, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাদের চরম পরাজয়ের পিছনে দেশব্যাপি বিভিন্ন জনসভায় আল্লামা সাঈদীর রাখা বক্তব্যের গভীর প্রভাব রয়েছে। ঐ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চারিতার্থ করতে আওয়ামী সরকার মানব ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার করে আল্লামা সাঈদীর উপর তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে আজীবন কারাদন্ডে দন্তিত করেছে। যেভাবে গ্রেফতার! আওয়ামী মহাজোটের অংশীদার, মাজার পূজারীদের সংগঠন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী সরকারের ইন্ধনে ২০১০ সালের ২১ মার্চ কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। মামলায় তিনি আসামী করেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ঢাকা মহনগর জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি আ স ম ইয়াহিয়া। এ জাতির দুর্ভাগ্য, যে মানুষটি সারাটি জীবন কোরআনের দাওয়াত সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন, নবী করীম (সাঃ) এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য যিনি নিজের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে দ্বীনের রাহে বিলিয়ে দিয়েছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবায় নিজেকে নিঃশেষ করেছেন, যিনি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, কোরআনের খাদেম সেই মানুষটিকেই ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তাঁর বিশ্বব্যপি জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একজন মাজার পূজারীকে দিয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য রাখার হাস্যকর ও কাল্পনিক মামলা দিয়ে ২৯ জুন ২০১০ তারিখে তার শহীদবাগস্থ নিজ বাসভবন থেকে আসরের নামাজের পর বিকাল ৪:৪৫ মিনিটের দিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্বে পুলিশ তার বাসভবন ও এর আশপাশের এলাকা সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলে। গ্রেফতারের সময় আল্লামা সাঈদী তাঁর ৯৬ বছর বয়স্ক মায়ের পাশে ছিলেন। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আল্লামা সাঈদী দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এরপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি পুলিশের সাথে গাড়িতে ওঠেন। পুলিশ আল্লামা সাঈদীকে মাগরিবের নামাজের কিছু আগে ৩৬ মিন্টু রোডস্থ ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সরকারের যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যগণ শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত এ আলেমকে গ্রেফতার করতে এসেছিলেন, তাদের সমগ্র মুখমন্ডলে ফুটে উঠেছিলো মর্মযন্ত্রণার হাহাকার। চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে জালিম সরকারের আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদের সকল তৎপরতায় ছন্দপতন ঘটছিলো। উল্লেখ্য, আল্লামা সাঈদীকে ইতোপূর্বে আরো একবার কারা বরন করতে হয়েছিলো। সেদিনটি ছিলো ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই। তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বর্তমান স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। খুলনার একটি তাফসীর মাহফিল শেষে রাতে ঘরে ফেরার পথে সাদা পোষাকের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে খুলনা থানায় নিয়ে যায়। গ্রেফতারের পর আল্লামা সাঈদী প্রায় ২ মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকাবস্থায় ছিলেন। কাকতালীয়ভাবে আল্লামা সাঈদীকে প্রথম দফায় গ্রেফতারের দিনটির সাথে দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারের দিনটির মিল রয়েছে। সেবার গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই আর এবার গ্রেফতার হলেন ২০১০ সালের ২৯ জুন। সেবার গ্রেফতার হয়েছিলেন পিতার হাতে আর এবার গ্রেফতার হলেন কন্যার হাতে। ৭৫ সালে তার অপরাধ ছিল তিনি কেন তার বক্তব্যে সমাজে প্রচলিত অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন, কেন তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন, কেন তিনি ধর্ম নিরেপেক্ষতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। আর ২০১০ সালে তার অপরাধ হল ‘যুদ্ধাপরাধ’। দেশের বুকে দেশ ও জাতিসত্তা বিরোধী আধিপত্যবাদী শক্তির পদচারণা নিষ্কন্টক করার ঘৃণ্য প্রয়োজনে আল্লামা সাঈদীর মতো বলিষ্ঠ কণ্ঠকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে দুশমনরা নানা ধরনের হাস্যকর নাটকের অবতারণা করলো। গ্রেফতারের দিনই রাতের অন্ধকারে দুশমনরা আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার পাহাড় জমিয়ে তুললো। সকাল হতে না হতেই তারা পৃথিবীখ্যাত মুফাসসির আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কল্পনাপ্রসূত ১৩টি মামলা দায়ের করলো। রাজধানী ঢাকা মহানগরীর রমনা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ২টি, উত্তরা মডেল থানায় ১টি, পল্টন মডেল থানায় ৩টি, শেরেবাংলা নগর থানায় ১টি, কদমতলী থানায় ১টি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলা ১টি, রাজশাহীর মতিহার থানায় ১টি এবং এনবিআর এর পক্ষ থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা ১টি। অপরদিকে পিরোজপুরে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থের প্রলোভন ও ভীতি প্রদর্শন করে ২টি কল্পিত যুদ্ধাপরাধের মামলাও দায়ের করলো আওয়ামী সরকার। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি সূচনা লগ্ন থেকেই অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, শোষণ, হত্যা-ধর্ষণ, বোমাবাজি-সন্ত্রাস, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, জ্বালাও-পোড়াও, সাম্প্রদায়িকতা, নগ্নতা-অশ্লীলতা তথা সকল প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে নিজের প্রাণ বাজি রেখে সমগ্র পৃথিবীতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইনসাফের বাণী উচ্চকিত করছেন, তাঁরই বিরুদ্ধে লুটতরাজ, হত্যা, বোমাবাজি, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও, অরাজকতা ইত্যাদি হাস্যকর অভিযোগে মামলা দায়ের করলো আওয়ামী সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে হাস্যকর মামলাই দায়ের করা হলো না, কল্পিত এসব মামলাকে উপলক্ষ্য বানিয়ে পবিত্র কুরআনের এ মহান মুফাসসিরকে টানা ৪১ দিন পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অকল্পনীয় নির্যাতনের মুখোমুখিও করেছে ইসলাম ও মুসলিম চেতনার দুশমন ক্ষমতাসীন সরকার যা বাংলাদেশ কেনো পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লামা সাঈদীর মতো বিশ্বখ্যাত এবং জাতীয় পর্যায়ের কোন নেতার একটানা এতো দীর্ঘ দিনের রিমান্ড নজিরবিহীন।    (চলবে) লেখক : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে এবং চেয়ারম্যান, জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ, পিরোজপুর

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির