post

রাসূলের (সা) যুগে কাব্যচর্চা

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২
মোশাররফ হোসেন খান সাহিত্যের একটি প্রাচীনতম শাখা বা অধ্যায় কবিতা। এর উৎপত্তির সময়কাল নির্ণয় করা অসম্ভব ব্যাপার। আজও কোন গবেষক সঠিকভাবে কবিতা রচনার প্রাথমিক কাল নির্ণয় করতে সক্ষম হননি। ধারণা করা হয় প্রাথমিকভাবে কবিতাই মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। পয়ার বলি আর শের বলিÑ যাই বলি না কেন সেটাই ছিলো উচ্চারিত প্রথম পঙ্ক্তি। এ জন্যই কবিতাকে বলা হয় মৌলিক। সাহিত্যের মধ্যে কবিতাই একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম। সর্বকালে, সর্বযুগে, সর্বস্তরে কবিতাই কেবল উচ্চারিত হয়ে আসছে। বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী কবিতাই কেবল সদা চলিষ্ণু। আবহমান কাল থেকে এভাবেই কবিতা বহমান এবং চলমান। মানুষের মুখে তাই আজও ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হয় বেদনা-বিষাদে কেবল কবিতাই। কবিতা অমর, অজেয় ও অন্তহীন কালের সাক্ষী। কবিতা বহু রকমের হতে পারে। হতে পারে বহু ধারার। আদি ও প্রাচীনকালের কবিতা অতিক্রান্ত হয়েছে। অতিক্রান্ত হয়েছে মধ্যযুগের কবিতাও। এসেছে আধুনিককাল। আধুনিক কালে এবং আগেও কবিতা বহু ধারায় বিন্যস্ত ছিলো। এর মধ্যে একটি ধারা হলো ইসলামী ধারা। আজকের এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্যও তাই। আধুনিক কালে ইসলামী সাহিত্য কথাটি বেশ জোরেশোরে সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। এ সাহিত্যের উৎপত্তি সাম্প্রতিককালে নয়। আবার অতি প্রাচীনকালেও নয়। বরং মক্কায় ইসলামী দাওয়াতের সাথে এর চলা শুরু। তারপর ইসলামী দাওয়াতের সাথে তার নতুন আবাসভূমি মদিনায় গেছে। ইসলামী দাওয়াতের সাথে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আরবভূমি পেরিয়ে পারস্য ও স্পেনে পৌঁছেছে। এই ভ্রমণে সে ইসলামী দাওয়াতের উজ্জ্বল দিনসমূহ এবং তমসাচ্ছন্ন রাতগুলোতে তার সাথে অতিবাহিত করেছে। এ সময় সে ইসলামী দাওয়াতের গৌরবময় কর্মকাণ্ড ধারণ করেছে, শত্র“র বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যূহ রচনা করেছে এবং তার চারণভূমি সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছে। এ হচ্ছে সেই সব সাহিত্যকর্ম যা কবি ও সাহিত্যিকগণ ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, তার মৌলনীতি শক্তিশালীকরণ এবং তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বলেছেন বা সৃষ্টি করেছেন। আমরা জানি মক্কায় ইসলামী দাওয়াতের সূচনা হয়। স্বাভাবিকভাবে ইসলামী সাহিত্যের সূচনাও সেখানে হয়েছে। ধরে নেয়া যায় হেরাগুহায় প্রথম অহি নাজিলের ঘটনা ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা সংবলিত রাসূলুল্লাহর (সা) হাদিসটি, যাকে ‘হাদিসুল গার’ বলা হয়, সেটাকেই ইসলামী সাহিত্যের প্রথম নমুনা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। তেমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে রাসূল (সা) তাঁর গোত্রের নিকটজনদের সমবেত করে তাদের সামনে ইসলামের মর্মকথা তুলে ধরে প্রথম যে ভাষণ দেন সেটিও ইসলামী সাহিত্যের প্রথম নমুনার মধ্যে পড়ে। মক্কায় রাসূলুল্লাহর (সা) ইসলামী দাওয়াতের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে তৎকালীন আরবি সাহিত্যের অন্যতম শাখা খুতবার (বক্তৃতা-ভাষণ) সাহায্য নেন। তখনও তিনি সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা কবিতার সাহায্য পাননি। মক্কার শক্তিশালী জাহেলি কবিরা তাঁর বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমে গেলেও তখনও পর্যন্ত কোন মুসলিম কবি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আরবি কবিতার ইতিহাস সে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। ইমরুল কায়েসের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাঁর কবিখ্যাতি সর্বজনবিদিত। ‘সাবায়া মুয়ালাকা’র কথাও আজ পর্যন্ত আমরা ভুলতে পারিনি। জাহেলি যুগে যেসব কবিতা রচিত হয়েছে তার কথাও ভোলার নয়। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সে সবই জ্বল জ্বল করছে। রাসূল (সা) নবুওয়তপ্রাপ্ত হলেন। শুরু হলো আলোকিত যুগের সূচনা। এ সময়ে জাহেলি যুগের কবিরা রাসূলকে (সা) নানাভাবে ব্যঙ্গবিদ্রƒপমূলক কবিতা রচনার মাধ্যমে উৎপীড়িত করা শুরু করলো। সে সকল কবিতা ছিলো তরবারির ধারের চেয়েও তীক্ষè। তাদের কবিতায় রাসূল (সা) আহত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেইভাবে জবাব দেবার মতো তখনও তিনি কোনো কবিকে পাননি। এক সময় রাসূলুল্লাহ (সা) মদিনায় গেলেন। এ সময়ে ইসলামী দাওয়াতের জন্য তিনি কবিদের সেবার প্রয়োজন বোধ করলেন। কবিদের প্রতি তাদের কাব্য প্রতিভা ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করার আহবান জানালেন। দ্রুত যাঁরা এই আহবানে সাড়া দিলেন তারা ছিলেন মাত্র তিনজন। তাঁদের নেতা ছিলেন কবি হাস্সান ইবন ছাবিত (রা)। হযরত হাস্সানের নেতৃত্বে সেদিন একদল কবি মক্কার কবিদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই দলটির কয়েকজন হলেন, আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা, কাব ইবন মালিক, আলি ইবন আবি তালিব, সুওয়ায়েদ ইবন আস-সামিত, সারমা ইবন আনাস, আবু সারমা ইবন কায়স, খুবায়ছ ইবন আদী ইবন আবদুল্লাহ, আমর ইবন আল-জামুহ, আল-হুবাব ইবন আল-মুনযির, নাবিগা আল জাদি, আন-নামির ইবন তাওলাব, খানসা ও আরও অনেকে। সেদিন তাঁরা ইসলামের সেবায় এক অসামান্য অবদান রাখেন। পালন করেন এক দুঃসাহসী ভূমিকা। ভাবা যায়, স্বয়ং রাসূলের (সা) নেতৃত্বে ও প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় একদল সাহাবী কবি ইসলামের খেদমতে কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করলেন এবং রেখে গেলেন এক স্বর্ণ যুগ! যা আজকের দিনেও মডেল হিসেবে আমাদের সমাজে গৃহীত হতে পারে, এবং হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় বটে। মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামী সাহিত্যের যে যাত্রা শুরু হয়, তা ইসলামী দাওয়াতের সাথে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের যে কোন ভাষার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের কবি-সাহিত্যিকরা তাদের প্রতিভাকে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। এভাবে ইসলামী সাহিত্যও আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইসলামের অব্যবহিত-পূর্ব আরবের ভাষা ও সাহিত্যের দারুণ উন্নতি ঘটেছিল। তখন লিখিত গদ্য না থাকলেও মৌখিক গদ্য : বক্তৃতা-ভাষণ ও গল্প-কাহিনীর ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। সেকালের অসংখ্য বাগ্মী মানুষের নাম ও তাদের বক্তৃতা আরবি সাহিত্য ভাণ্ডারে সংরক্ষিত দেখা যায়। আর জাহিলি আরবদের কাব্যচর্চার খ্যাতি তো বিশ্বব্যাপী। মোট কথা ভাষা-সাহিত্যের সমঝদার অসংখ্য লোকের জন্ম তখন আরবে হয়েছিল। তা না হলে আল-কুরআনের মতো এমন উন্নত ভাব ও ভাষাশৈলীর গ্রন্থ তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হতো না। আরবি ভাষায় ইসলামী সাহিত্যের সূচনা যাঁরা করেছিলেন তাঁদের অনেকে জাহিলি যুগেও খ্যাতিমান কবি ও বাগ্মী ছিলেন। যেমন : কাব ইবন যুহায়র, হাস্সান ইবন ছাবিত, লাবিদ ইবন রাবিআ (রা) প্রমুখ। ইসলাম গ্রহণের পরও তাঁরা দীর্ঘ দিন সাহিত্য চর্চা করেছেন। আবার অনেকের সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল ইসলামের অভ্যুদয়ের পর। তাঁদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আরবি ভাষায় তখন ইসলামী সাহিত্য এক শক্তিশালী জোয়ার রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। ভাবতেও অবাক লাগে, রাসূলুল্লাহর (সা) আহবানে সাড়া দিয়ে সাহাবায়ে কিরাম কিভাবে সাহিত্য ও কবিতাচর্চায় মনোযোগী হয়েছেন এবং কিভাবে তার মাধ্যমে তাঁরা ইসলামের সেবা করেছেন! আমরা দেখেছি, সাহাবায়ে কিরাম ভাষা, সাহিত্য ও কবিতাচর্চা, শেখা ও শেখানোর প্রতি অত্যধিক তাকিদ দিয়েছেন। আধুনিক কালে ইসলামের অনেক কিছুর মত এ অধ্যায়টির ওপরও ধুলোবালি পড়ে আমাদের নিকট অস্পষ্ট হয়ে গেছে বটে, কিন্তু একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। অবশ্য আজকের দিনে পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যায়, দীনদার মুসলমান বলে পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাহিত্য ও কবিতাচর্চার প্রতি এক ধরনের অনীহা। ভাবটি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এ কাজ যেন দীনদারির পরিপন্থী। তাই সময় এসেছে, বিষয়টি পঠন-পাঠনের এবং তার ওপর জমা হওয়া ধুলোবালি পরিষ্কার করে প্রকৃত সত্যকে বের করে আনার। সেইসাথে ইসলামী নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক হওয়া প্রয়োজন। দুই. ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে আরবদের রচিত কবিতাসমূহ ইতিহাস ও সাহিত্যের গ্রন্থে আজো বিদ্যমান। সংখ্যার দিক দিয়ে যা নিতান্ত কম নয়। সে যুগের প্রতিটি ঘটনার সাথে জড়িত অসংখ্য কবিতা আমরা দেখতে পাই। এমন কোন ছোট-বড় ঘটনা নেই যার সাথে জড়িয়ে কোন কবিতা পাওয়া যাবে না। ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ তাঁর ‘আসহাবে রাসূলের কাব্য প্রতিভা’ গ্রন্থে  সেই সময়ের কাব্যচর্চার চমৎকার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আবির্ভাব ও তাঁর ইসলামের দাওয়াত ছিলো সে সময়ের বৃহত্তম ঘটনা। এ দাওয়াত তাদেরকে অস্ত্রধারণে বাধ্য করে। আরববাসী মুমিন ও মুশরিক-এ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যাঁরা সত্যিকারভাবে ঈমান এনেছিলেন এবং যারা তাদের প্রাচীন পৌত্তলিক ধর্মের পক্ষে প্রতিরোধ খাড়া করে আল্লাহর পথের প্রতিবন্ধক হয়েছিলোÑ এদের উভয়ের কার্যাবলির বর্ণনা সে যুগের কবিতায় রয়েছে। অবশেষে আরব উপত্যকায় ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। তবে আবু বকরের (রা) খিলাফতকালে কোন কোন গ্রোত্র ইসলাম পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেল। আরব উপদ্বীপে আবারো যুদ্ধের দাবানল প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। এসব যুদ্ধের চিত্রও সমসাময়িক কবিদের কবিতায় সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। এরপর এলো ধারাবাহিক বিজয়। আরবরা ইসলামের মশাল হাতে নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মুখে তাদের জিহাদের সঙ্গীত উচ্চারিত হতো। হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ড, আলী, তালহা, যুবায়র ও আয়িশার (রা) যুদ্ধ এবং আলী-মুআবিয়ার সংঘর্ষÑপ্রতিটি ক্ষেত্রেই কবিরা উচ্চকিত হয়ে ওঠেন। কবিতার ভাষায় তারা সোচ্চারিত হন। এ ছাড়া এ যুগে বহু কবি কেবলমাত্র বিশেষ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নয়; বরং নিজ ব্যক্তিসত্তা ও গোত্রকে কেন্দ্র করেও ইসলামের আলোকে কাব্য চর্চা করেছেন। এ যুগে কবিতার গতি স্তব্ধ হয়নি বা পিছিয়েও পড়েনি। আর এমনটি হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক। কারণ, এ যুগের প্রায় সকল অধিবাসীই তাদের জীবনের বিরাট একটি অংশ জাহেলি যুগে অতিবাহিত করে। তাদের ভাষাগত জড়তাও কেটে গিয়েছিলো। আর কবিতার মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তা ও আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। ইসলামের আলোক প্রাপ্তির পরও তারা তাদের অভ্যাস অনুযায়ী কবিতা চর্চা করতে থাকে। একদিনের জন্যও তাদের এ ধারা বন্ধ হয়েছে, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া মুশকিল। কিতাবুল আগানী, তারিখে তাবারি, সিরাতে ইবনে হিশাম, আল-ইসাবাহ, আল-ইসতিআব বা এ ধরনের তৎকালীন ইতিহাস ও সাহিত্যের গ্রন্থ পাঠ করলে এ কথার যথার্থতা প্রমাণিত হয়। এসব গ্রন্থ পাঠে মনে হবে, সে সময়ের প্রতিটি জিহ্বা থেকে যেন কবিতার ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এ সকল কবির কিছু কবিতা মুফাদ্দাল আদ-দাব্বী এবং আসমাঈ তাঁদের গ্রন্থে সঙ্কলন করেছেন। আর ইবনে কুতায়বা তাঁর আশশির ওয়াশ শুআরা এবং ইবন সাল্লাম তাঁর তাবাকাতু ফুহুলিশ শুআরা গ্রন্থে এ যুগের শ্রেষ্ঠতম কবিদের জীবনী আলোচনা করেছেন। আরবি সাহিত্যের উল্লিখিত উৎসগুলো পাঠ করলে প্রতীয়মান হয়, ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে আরবদের কবিতাচর্চায় কোন অংশেই ভাটা পড়েনি; বরং তা যথেষ্ট উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করে। আর যারা বলে থাকেন, ইসলামের আবির্ভাবে কবিতার স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো বা এর ধারা দুর্বল হয়ে পড়েছিলো, তাদের এ দাবি সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। রাসূলুল্লাহ (সা) কবিতার আসরে নিজে কবিতা শুনেছেন এবং কবিদেরকে তাদের সৃষ্টির স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিদানও দিয়েছেন। আমরা জানি, মদিনার তিনজন কবি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান এবং মক্কার মুশরিক কবিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাচীর খাড়া করেন। এরা ছিলেন হাস্সান ইবন সাবিত, কাব ইবন মালিক এবং আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের শেষ দু’টি বছর, যা মূলত প্রতিনিধি আগমনের বছর হিসেবে খ্যাত, আগত প্রতিটি প্রতিনিধিদলের সাথে তাদের বাগ্মী বক্তা ও কবিরা থাকতেন। বক্তারা আলোচনা করতেন আর কবিরা কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বক্তা ও কবিগণ তাদের জবাব দিতেন। এটা একটি বিরল ইতিহাস। আজকের জন্যও এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। হতে পারে অনুসরণযোগ্য। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবদের নিকট কবিতার গুরুত্ব কমে গিয়েছিলো এবং তারা কাব্যচর্চা পরিত্যাগ করেছিলোÑএমন ধারণা যারা পোষণ করেন, তারা বলে থাকেন, কবিদের বিরুদ্ধে কুরআনের আক্রমণাত্মক ভূমিকার ফলেই এমনটি হয়েছিলো। কুরআন বলছেÑ‘বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে থাকে। তুমি কি দেখতে পাও না, তারা প্রতিটি উপত্যকায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়? তাঁরা বাস্তবে যা করে না তাই-ই মুখে বলে বেড়ায়। তবে যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে অতিমাত্রায় তৎপর রয়েছে এবং অত্যাচারিত হলে নিজেদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে তাদের সম্বন্ধেÑএ কথা প্রয়োজ্য নয়।’ এ আয়াতে কবিদের সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উপলব্ধির জন্যে আমাদের সামনে তৎকালীন আরব সমাজে কবিদের প্রভাব ও কার্যাবলির একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র থাকা প্রয়োজন। আরবে কবি একজন সেনাপতি, বিজেতা ও শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। কোন কবি শুধু তাঁর ভাষার মাধ্যমে গোত্রের পর গোত্রকে ধ্বংস ও নামবিহীন করে দিতে পারতেন। অনুরূপভাবে কোন নাম-পরিচয়বিহীন একটি গোত্রকে মাত্র একজন কবিই খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিতেন। এ জন্যই যখন কোন পরিবারে কোন কবির জন্ম হতো তখন সকল গোত্র থেকে অভিনন্দনবাণী আসতে থাকতো; নিমন্ত্রণ দেয়া হতো, স্ত্রীলোকেরা সমবেত হয়ে অভিনন্দন গীতি গেয়ে শুনাতো এবং কোরবানি দেয়া হতো। আরবে কাব্য ছিলো এক মহাশক্তি। কবির একটি পঙ্ক্তিও বিফল হতো না। আমর ইবন কুলসুমের এক কবিতা তাগলাব গোত্রকে দু’শ বছর পর্যন্ত মর্যাদা ও বীরত্বের নেশায় বিভোর রাখে। সিফফিনের যুদ্ধে লায়লাতুল হারীরের দিনে আমির মুআবিয়া হযরত আলীর সম্মুখ থেকে পালানোর জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়েছিলেন, কিন্তু কয়েকটি পঙ্ক্তি তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসূলুল্লাহর (সা) বিরুদ্ধে কাফিররা যে বারবার মদিনা আক্রমণ করতো, তার মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ কবিরাই সংঘটিত করেন। জাহেলি যুগের কবিরাও ছিলো সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। সাধারণ লোক সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে তাদের আদেশ-উপদেশ মেনে চলতো। এ কবিদের অনেকে গোত্রে গোত্রে কলহ-বিবাদ, ঝগড়া-ফাসাদ জিইয়ে রাখতো। তারা গর্ব অথবা কুৎসা করে কবিতা রচনা করতো। এতে গোত্রের লোকদের মধ্যে যুদ্ধের স্পৃহা প্রবল হতো। তারা মদ, জুয়া ও অশালীন আচার-আচরণের প্রশংসায় কবিতা রচনা করতো। এভাবে মানব চরিত্রের অবনতিতে তাদের কবিতার বিশেষ অবদান ছিলো। তখন পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও কবিদের এসব ইসলাম-বিরোধী কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন। মানবকল্যাণই যে মহাগ্রন্থ ও মহামানবের মুখ্য ব্রত তাঁরা এ ধরনের ভাব-বিলাসী ও অসংযমী কবি ও তাদের কবিতা অপছন্দ করবেন এটা স্বাভাবিক কথা। উল্লিখিত আয়াত দ্বারাই প্রমাণ হয় কুরআন সেই সব মুশরিক কবিদের নিন্দা ও সমালোচনা করেছে যারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুৎসা করে কবিতা রচনা করতো এবং তাঁর ইসলামী দাওয়াতের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সমগ্র কাব্য সাহিত্য এর উদ্দেশ্য নয়; বরং যে কবিতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পীড়া দিয়েছে কেবলমাত্র তারই সমালোচনা করা হয়েছে। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা কাব ইবন মালিক এবং হাস্সান ইবন সাবিত রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে কাঁদতে কাঁদতে উপস্থিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কবিদের সম্বন্ধে এ আয়াত নাযিল হয়েছে এবং আমরা কবি। তিনি উত্তর দিলেন, সম্পূর্ণ আয়াত পড়। ঈমানদার, নেককারদেরকে বলা হয়নি। তখন তাঁরা নিশ্চিত হলেন। একই উদ্দেশ্যে রাসূলে কারীম (সা) বলেন, ‘তোমাদের কারো পেটে কবিতা থাকার চাইতে সে পেটে পুঁজ পরিপূর্ণ হয়ে তা পচে যাওয়া অনেক উত্তম।’ আয়িশা (রা) হাদিসটি শুনে বলেছিলেন : হুজুর (সা) কবিতা দ্বারা ঐ সমস্ত কবিতা বুঝিয়েছেন যেগুলোতে তাঁর কুৎসা বর্ণিত হয়েছে। অশালীন, অশ্লীল এবং ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী সকল কবিতাই এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত ধরা যায়। পবিত্র কুরআনের অন্য একটি আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর শানে বলা হয়েছেÑ ‘আমরা তাঁকে কবিতা রচনা শিক্ষা দিইনি এবং এরূপ কাজ তাঁর জন্য শোভনীয় নয়।’ রাসূল (সা) কবি ছিলেন না। তবুও আরবের মুশরিকরা তাঁর ওপর নাজিলকৃত কুরআনের বাণী শ্রবণ করে তাঁকে কবি বলে আখ্যায়িত করতে থাকে। মহান আল্লাহ এ আয়াতে শুধুমাত্র প্রতিবাদ করেছেন। কাব্যচর্চার বৈধতা-অবৈধতার কোন ঘোষণা এখানে নেই। তাছাড়া নবী তো প্রত্যাদেশ বাহক। তৎকালীন আরবে কবি সম্বন্ধে যে ধারণা প্রচলিত ছিলো, তার সাথে নবুওয়তের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তাই কবিতা রচনা তাঁর পক্ষে সমীচীন নয়। অপর দিকে রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও কবিতা শুনতে ভালোবাসতেন। তিনি একটি সুন্দর কবিতার আবৃত্তি শুনে মন্তব্য করেন, কোন কোন বাগ্মিতায় জাদু রয়েছে। আর কোন কবিতায় রয়েছে জ্ঞান বা হিকমতের কথা। একদা শারিদ ছাকাফি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বাহনের পেছনে আরোহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর কাছে উমিয়্যার কবিতা শুনতে চাইলেন। তিনি আবৃত্তি করছিলেন, আর রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে আরো শোনাতে বলছিলেন। তিনি সেদিন মোট একশটি শ্লোক শুনেছিলেন। এ কথা সকলের জানা, কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরাত করেন। এর পর পরই এ শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একদিকে ছিলো মক্কার কুরাইশ ও তাদের সহযোগী অন্যান্য আরব গোত্র। আর অপর দিকে ছিলেন নির্যাতিত রাসূল (সা) ও মদিনার আনসার ও মুহাজিরগণ। এ যুদ্ধের অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের পাশাপাশি উভয়পক্ষের কবিরা কবিতার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ইসলাম-পূর্ব যুগে কুরাইশ গোত্রে উল্লেখযোগ্য কোন কবি না থাকলেও ইসলামের সাথে সংঘর্ষের যুগে তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান, আবদুল্লাহ ইবন আয-যিবারী, দারার ইবন খাত্তাব আল ফিহরী, আবু ইজ্জাহ আল-জামহি, হুবাইরাহ মাখযুমী প্রমুখ কবি প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। তারা সকলে ইসলাম-বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা তাদের কবিতার দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা), আনসার ও মুহাজিরদের গোত্র, ব্যক্তিচরিত্র ও ইসলামের নিন্দা ও কুৎসা বর্ণনা করতে থাকে। এটা মদিনাবাসীদের জন্য কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুসলমানদের কুৎসা রচনা করতো শুধু এ কারণে নয়, তারা তাদের রচিত কবিতা দ্বারা অন্যান্য আরব গোত্রে ইসলামের প্রচারকার্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো, এ জন্যও। একদিন অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) মদিনার আনসারদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘যারা হাতিয়ার দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করছে, জিহ্বা দ্বারা সাহায্য করতে কে তাদেরকে বাধা দিয়েছে?’ এ কথা শুনে হযরত হাস্সান ইবন সাবিত বলেন, ‘আমি এর জন্য প্রস্তুত। রাসূলুল্লাহ (সা) কবিকে বললেন, আমিও তো কুরাইশ বংশের। তুমি কিভাবে তাদের নিন্দা করবে? উত্তরে তিনি বললেন, মথিত আটা থেকে চুল যেভাবে বের করে আনা হয় আমি তদ্রƒপ আপনাকে বের করে আনবো’। হযরত হাস্সান ইবন সাবিতের জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর স্থাপন করা হয়। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর কবিতা শুনে বলতেন, আমার পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ রুহুল কুদ্দুসকে দিয়ে তার সাহায্য করো। আর রাসূল (সা) তাঁকে এ কথাও বলেন যে, তুমি আবু বকরের নিকট গিয়ে কুরাইশদের দোষ-ত্র“টি ও দুর্বল দিকগুলো জেনে নাও। এ সম্পর্কে আবু বকরই অধিক জ্ঞানী। সত্যিই সেদিন হাস্সান এ কাজের উপযুক্ত ছিলেন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, ‘তার এ কবিতা তাদের জন্য তীরের আঘাতের চেয়েও তীব্রতর।’ এসব কারণেই তিনি সঙ্গতভাবেই শাইরুর রাসূল বা রাসূলের কবি নামে খ্যাতি লাভ করেছেন। এ কবিতার সংঘর্ষে অপর যে দু’জন কবি তাঁকে সাহায্য করেন, তাঁরা হলেন, কাব ইবন মালিক ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। জাহেলি ও ইসলামী যুগের বিশিষ্ট কবি কাব ইবন যুহাইর। তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইসলাম ও ইসলামের নবীর নিন্দামূলক কবিতা রচনা করে রাসূলের বিরাগভাজন হন। রাসূল (সা) তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন। সে ব্যক্তিই যখন ইসলাম গ্রহণ করে মদিনায় এলেন এবং তার বিখ্যাত কাসিদা বানত সুআদ আবৃত্তি করে রাসূলকে (সা) শোনান, তখন রাসূল (সা) তাঁকে শুধু ক্ষমাই করেননি; বরং খুশির আতিশয্যে তার সৃষ্টির প্রতিদান স্বরূপ নিজ দেহের চাদরটি পর্যন্ত তাকে উপহার দেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশে নাদর ইবন হারিসকে হত্যা করা হয়। এরপর তার কন্যা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সমীপে উপস্থিত হয়ে একটি মর্মস্পর্শী কবিতা আবৃত্তি করে। তা শুনে রাসূল (সা) বলেন, যদি এ কবিতা নাদরের হত্যার পূর্বে শুনতাম তাহলে তাকে হত্যা করতাম না। তুফাইল ইবন আমর আদ-দাওসী রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং বলেন, আমি একজন কবি, আমার কিছু কবিতা শুনুন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে তার কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন। অতঃপর তিনি একটি দীর্ঘ কবিতা পাঠ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ধৈর্যসহকারে তা শোনেন। এটা ছিলো রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে কবি ও কবিতার অবস্থা। তিনি নিজে কবি ছিলেন না। তবে তিনি কবিতা শুনেছেন, কবিদেরকে উৎসাহ এবং যথাযথ মর্যাদা দিয়েছেন। তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইনতিকালের পর তাঁর সুযোগ্য খলিফাগণ ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালনাভার গ্রহণ করেন। খোলাফায় রাশেদার আমলে কুরআন ও সুন্নাহর নীতির আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হতো। এ যুগেও কবিতাচর্চায় তেমন কোন ভাটা পড়েনি। খোলাফায়ে রাশেদীন সর্বদাই কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীরা তো অনেক সময় মসজিদে নববীতে কবিতা আবৃত্তির আসর জমাতেন। হযরত আবু বকরের যুগে রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অস্ত্রধারী সৈনিকদের পাশাপাশি উভয়পক্ষ থেকে অসংখ্য কবি এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজ নিজ পক্ষের শৌর্য-বীর্যের বর্ণনা ও শত্র“র উদ্দেশ্যে নিন্দামূলক কবিতা রচনা করেন। আবু বকর (রা) নিজেও একজন কাব্যরসিক ব্যক্তি ছিলেন। সে যুগের সমালোচনা সাহিত্যের ইতিহাস পাঠ করলে তাঁকে একজন সর্বশ্রেষ্ঠ সমালোচক রূপে দেখতে পাওয়া যায়। তিনি কবি নাবিগাকে সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মনে করতেন এবং বলতেন তার কবিতা শিল্পকুশলতা ও ছন্দমাধুর্যে সর্বোৎকৃষ্ট এবং সর্বাপেক্ষা বেশি সাবলীল। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা) সম্পর্কে তো প্রসিদ্ধি আছেÑকোন প্রতিনিধি দল তাঁর কাছে এলে তিনি তাদের কবিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। তারা তাদের কবিদের কিছু কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতো এবং নিজেও কোন কোন সময় সে সব কবিতার কিছু অংশ আবৃত্তি করতেন। বসরার শাসনকর্তা আবু মুসা আশআরীকে তিনি নির্দেশ দেন, তুমি তোমার ওখানকার লোকদেরকে কবিতা শেখার নির্দেশ দাও। কারণ, কবিতার মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বংশ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। তিনি আরো বলতেনÑ “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাঁতার ও তীরন্দাযী শেখাও। আর তাদেরকে নির্দেশ দাও, তারা যেন ঘোড়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তাদেরকে সুন্দর সুন্দর কবিতা বলে শোনাও।” তিনি কবিতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে আরো বলতেনÑ “কবিতা আরবদের সবচেয়ে ভালো ও বিশুদ্ধ কথা। এর দ্বারা রাগ প্রশমিত হয়, উত্তেজনা দমিত হয়, কোন সম্প্রদায় তাদের মজলিস-মাহফিলে যথাযথ আসন করে নিতে পারে এবং কোন প্রার্থী কিছু পেতে পারে।” তিনি আরো বলতেনÑ ‘কবিতা হলো কোন জাতির এমনই এক জ্ঞানভাণ্ডার যার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন জ্ঞান নেই।’ কবিতার প্রশংসায় তিনি আরো বলতেনÑ ‘মানুষের উত্তম শিল্প হলো কবিতা। সে তার প্রয়োজনে তা উপস্থাপন করতে পারে, তার দ্বারা সে মহানুভব ব্যক্তিকে বিগলিত করতে পারে এবং ইতর প্রকৃতির মানুষের অন্তর আকৃষ্ট করতে পারে।’ ইবনে সাল্লাম আল-জুমাহি বলেন, ‘তিনি যে কোন ধরনের ঘটনা বা ব্যাপারের সম্মুখীন হলেই সে সম্পর্কে কবিতার দু-একটি পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দিতেন।’ আরবি সমালোচনা সাহিত্যের ইতিহাসে হযরত উমারকে সে যুগের একজন সর্বশ্রেষ্ট কাব্য-সমালোচক হিসেবে গণ্য করা হতো। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি শুধু রুচির ভিত্তিতে কারো সমালোচনা না করে সঙ্গে সঙ্গে তার কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি কবি যুহাইরকে সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মনে করতেন। শুধু এ সিদ্ধান্ত দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সঙ্গে সঙ্গে তার কারণও বিশ্লেষণ করেন। যুহাইর সম্পর্কে তিনি বলতেনÑ ‘তিনি এক কথার মধ্যে আরেক কথা গুলিয়ে ফেলতেন না। জংলী ও অশোভন কথাও এড়িয়ে চলতেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান গুণেরই তিনি প্রশংসা করেছেন। কোন রকম অতিরঞ্জিত করেননি।’ আয়োশ বলেন : হযরত উমর ইবন খাত্তাব ছিলেন কবিতা সম্পর্কে সকলের থেকে বিজ্ঞ। তিনি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা সমবেত হয়ে কবিতা ও কবিদের সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং কার কোন কবিতা সর্বোৎকৃষ্ট সে সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতেন। হযরত উমরের (রা) শাহাদাতের পর যথাক্রমে হযরত উসমান ও আলী (রা) তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হন। তাঁরা তাঁদের শাসনকার্যে উমরের নীতিই অনুসরণ করেন। তাঁদের যুগেও কবিরা ইসলামী নীতিমালার গণ্ডিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন। এ যুগেও অসংখ্য কবির সন্ধান পাওয়া যায়। হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সে যুগের কবি-সমাজকেও প্রভাবিত করে। অসংখ্য সাহাবী কবি এ ঘটনা স্মরণ করে কবিতা রচনা করেছেন, উসমানের হত্যাকাণ্ডে মরসিয়া গেয়েছেন, হত্যাকারীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার। সে যুগের আরব কবিদের মধ্যে তিনিও একজন শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। দিওয়ানে আলী নামক কাব্য সঙ্কলন গ্রন্থটি আজো তাঁর কাব্য-প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এ দিওয়ানের সব ক’টি কবিতা হযরত আলীর নয়। তবে অন্যান্য আরব কবিদের অসংখ্য কবিতার ন্যায় তাঁরও বহু কবিতা যে রক্ষিত হয়নি, এ কথাও সত্য। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনে তাঁর অবদান এ ভাষা যতদিন বেঁচে থাকবে, মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনিই সর্বপ্রথম আরবি ব্যাকরণের মূল সূত্র উদ্ভাবন করেন এবং আরবি শব্দরাজিকে ইসম, ফেল এবং হরফÑ এ তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন। তাঁর হত্যাকাণ্ডকে উপলক্ষ করে সে যুগের অসংখ্য কবি কবিতা রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন আরবি সাহিত্যের একজন সমঝদার সমালোচক। কেবলমাত্র সাহিত্যিক-সৌন্দর্য ও ভাষার অভিনবত্বের কারণে তিনি জাহেলি যুগের ভোগবাদী কবি ইমরুল কায়সকে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মনে করতেন। রাসূলুল্লাহর (সা) খলিফারা ছাড়াও অন্যান্য সাহাবীরাও কবিতা চর্চা করতেন। নিজেরা কবিতা শিখতেন ও অন্যদেরকে কবিতা শিখতে নির্দেশ দিতেন। হযরত আয়িশা (রা) বলেন : তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে কবিতা শিক্ষা দেবে। এর কারণস্বরূপ তিনি বলেন, ‘এতে তাদের ভাষার আড়ষ্টতা দূর হয়ে সহজ সাবলীল হবে। আবু বকর, উমর, উসমান এবং আলী-এ চার খলিফার প্রত্যেকেই কবি ছিলেন। বিখ্যাত তাবিঈ সাঈদ ইবন আল-মুসায়্যিব (রহ) বলেনÑ ‘আবু বকর (রা) কবি ছিলেন। উমর (রা) কবি ছিলেন। আর আলী (রা) ছিলেন তিনজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি।’ কোন এক যুদ্ধ সম্পর্কে আবু বকরের (রা) একটি বীরত্বব্যঞ্জক কাসিদা বর্ণিত হয়েছে। উমর (রা) ও উসমানের (রা) কিছু জ্ঞানগর্ব শ্লোকও বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত দেখা যায়। আর আলীর (রা) তো একটি দিওয়ানই আছে। এমনকি রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদের এমন কাউকেও পাওয়া মুশকিল যিনি কোন কবিতা রচনা করেননি, অথবা কখনো কবিতা আবৃত্তি করেননি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খাদেম প্রখ্যাত সাহাবী আনাস (রা) বলেনÑ ‘রাসূলুল্লাহ (সা) যখন আমাদের এখানে আসেন তখন আনসারদের প্রতিটি গৃহেই কবিতা পাঠ হতো।’ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন : পবিত্র কুরআন পাঠ করে যদি কোথাও বুঝতে না পার তাহলে তার অর্থ আরবদের কবিতার মাঝে অনুসন্ধান করো। উমর (রা) কুরআনের আয়াতের অর্থ বুঝতে কবিতার শরণাপন্ন হতেন। একবার তিনি মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে সূরা আন-নাহলের ৪৭তম আয়াত পাঠ করেন। তারপর উপস্থিত সাহাবায়ে কিরামের নিকট আয়াতে উল্লিখিত শব্দটির অর্থ জানতে চান। সাহাবায়ে কিরাম সকলে চুপ থাকলেন। তখন হুযাইল গোত্রের এক বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বললো : হে আমিরুল মুমিনিন! এটা আমাদের উপভাষা। আর এর অর্থ অল্প অল্প নেয়া। উমর (রা) বৃদ্ধের নিকট জানতে চাইলেন, আরবরা কি তাদের কবিতা থেকে অর্থ জানতে পারে? অর্থাৎ আরব কবিরা কি তাদের কবিতায় এ অর্থে শব্দটি প্রয়োগ করেছেন? বৃদ্ধ বললেন, হ্যাঁ, আমাদের কবি আবু কাবির আল হুযালী তার উষ্ট্রীর বর্ণনা দিতে গিয়ে একটি শ্লোকে এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তারপর বৃদ্ধ শ্লোকটি আবৃত্তি করে শোনান। উমর (রা) তখন বলেন : তোমরা তোমাদের দিওয়ান সংরক্ষণ করে রাখো, তাহলে তোমরা আর গোমরাহ হবে না। একবার যিয়াদ তাঁর এক ছেলেকে আমির মুআবিয়ার (রা) নিকট পাঠালেন। মুআবিয়া (রা) জ্ঞান-গরিমা পরীক্ষার জন্য তাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। দেখলেন, ছেলেটির সব বিষয়ে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি আছে। সবশেষে তিনি তাকে কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন বললেন। এবার ছেলেটি অক্ষমতা প্রকাশ করলো। তখন মুআবিয়া (রা) যিয়াদকে লিখলেন : তুমি তোমার ছেলেকে কবিতা শেখাওনি কেন? আল্লাহর কসম! কবিতা শিখলে সে অবাধ্য থাকলে বাধ্য হবে, কৃপণ থাকলে দাতা হবে এবং ভীরু থাকলে সাহসী হয়ে যুদ্ধে যাবে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস তাবিই আশ-শাবীর (রহ) কবিতার জ্ঞান তাঁর হাদিসের জ্ঞানের চেয়ে মোটেও কম ছিল না। তিনি বলতেন, আমি যদি ইচ্ছা করি লাগাতার এক মাস কোন পুনরাবৃত্তি ছাড়াই মুখস্থ কবিতা আবৃত্তি করবো, তা করতে পারি। ইসলামের পঞ্চম খলিফা হযরত উমর ইবন আবদুল আযিযের স্ত্রী ছিলেন একজন বিশিষ্ট আরব কবি। ইবাদাত ও খিলাফতের কাজে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে বেশি সঙ্গ দিতে পারতেন না। তাই তিনি স্বামীর প্রতি অভিযোগের সুরে যে কবিতাটি রচনা করেছিলেন তা অতি চমকপ্রদ। এমনিভাবে আমরা দেখতে পাই মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদদের অনেকেই কাব্যচর্চা করতেন এবং এটাকে নিন্দনীয় কাজও মনে করতেন না। স্পেনের জাহেরি ফেকা শাস্ত্রের ইমাম ইবন হাযাম ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর সাহিত্য তত্ত্বেও গ্রন্থ তাওকুল হামামাহ আজো সারা বিশ্বের সাহিত্য তাত্ত্বিকদের নিকট নন্দিত। ইসলাম চেয়েছে মানুষের কথা, কাজ ও চিন্তাকে একই খাতে প্রবাহিত করতে। এ উদ্দেশ্যে ইসলাম কাব্যক্ষেত্রেও একটি মূলনীতি পেশ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদিসে জানা যায়, কবিতা সুসামঞ্জস্য কথামালা। যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ তা সুন্দর আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয়েছে, তাতে মঙ্গল নেই। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কবিতা কথার মতই। ভালো কথা যেমন সুন্দর, ভালো কবিতাও তেমনি সুন্দর। আর মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতই মন্দ। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) জাহেলি যুগের কবি উমাইয়া ইবন আবিস সুলতের কিছু পঙ্ক্তি শুনে বলেছিলেন, ‘তার কবিতা ঈমান এনেছে, কিন্তু তার হৃদয় কুফরকেই আঁকড়ে ধরেছে।’ জাহেলি যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি তারাফার একটি চরণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সামনে আবৃত্তি করা হলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন : এতো নবীদের কথা। পঙক্তিটি ছিলো এরূপÑ ‘আজ তুমি যা অবগত নও, কালের চক্রে তোমার কাছে তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর তোমাকে এমন ব্যক্তি খবর পরিবেশন করবে যারা তাদের ভ্রমণে কোন পাথেয় সঙ্গে নেয়নি।’ এসব দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝা যায় ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও সর্বজনীন সত্যের আলোকে যে কেউ কবিতা রচনা করলে তা হবে সত্যিকার ইসলামী কবিতা। অপরপক্ষে ইসলামী ভাবধারা বিরোধী কবিতা হবে জাহেলি কবিতা। তা সে কবি যে কোন যুগ বা কালের ও যে কোনো ধর্মেরই হোক না কেন। সে কবিতা বাস্তববাদিতা, প্রতীক-ধর্মিতা, সমাজবাদিতা, ক্লাসিক বা রোমান্টিক যে কোন নাম বা পদ্ধতিতেই হোক না কেন ইসলামী পদ্ধতির সাথে তার কোন মিল নেই। তিন. রাসূলের (সা) যুগে শিল্পসাহিত্যের এক স্বর্ণকাল ছিলো। রাসূল (সা) নিজে কাব্যচর্চা না করলেও কাব্যশিল্পের প্রতি তাঁর ছিলো গভীর অনুরাগ। তিনি কবিতা ও কবিদের প্রত্যক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। কবিদেরকে পুরস্কৃত করেছেন। করেছেন তাদেরকে সম্মানিত। উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সাহস জুগিয়েছেন সমানভাবে। আজকের প্রেক্ষাপটে কবিদের প্রতি রাসূলের (সা) এই সীমাহীন সম্মাননা এক বিরাট-বিশাল দৃষ্টান্ত হতে পারে। হতে পারে অনুসরণযোগ্য। সেটাই বাঞ্ছনীয় বটে। কিন্তু আমরা আজকের দিনে এর বিপরীতটাই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে। বেদনার বিষয় বটে। যারা আজকের দিনে কাব্যকুশলতায় এগিয়ে গেছেন নিজস্ব প্রেরণায়Ñতাঁরাও নানাভাবে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, তিরস্কৃত এবং নানাভাবে উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত। এক কথায় সার্বিক দিক দিয়ে জুলুমের শিকার কবিরাই। পুরস্কার ও সম্মাননা তো দূরে থাক, সব ধরনের সুবিধা থেকে তাঁরাই প্রথমত বঞ্চিত। লজ্জা ও কষ্টের বিষয় বটে। যারা ইসলামী আন্দোলনের জন্য কবিতার ক্ষেত্রে, ইসলামী সাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন তারাই অবহেলিত অনেক বেশি। ভাবা যায়! ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের এদিকে আশু সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। অন্তত রাসূলকে (সা) ভালোবেসে হলেও এদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আমাদের কবিদেরকে যথাযথ প্রাপ্য ও সম্মাননা, যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়াÑএটা তাঁদের প্রতি করুণা করা নয়। বরং রাসূলের (সা) সুন্নতরই একটি বৃহৎ অংশ। আমরা যেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিই। তাহলে আমাদের ইসলামী আন্দোলনের কবিগণ সৃষ্টিশীলতায় আরও অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবেন। আর সেটা হবে ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনেক বড় খেদমত। আমরা ইসলামী সাহিত্যের বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা যেমন প্রত্যাশা করি, তেমনিভাবে ইসলামী আন্দোলনের জন্য যারা ইসলামী সাহিত্য রচনায় নিজেদেরকে ব্যাপৃত রেখেছেন তাঁদের দিকেও সমানভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই। সর্বোপরি রাসূলের (সা) সুন্নতকেই সমুন্নত ও সমুজ্জ্বল রাখার প্রত্যাশা করি। তাহলে ইসলামী সাহিত্য এ দেশে যেমন বেগবান হবে, তেমনই ইসলামী আন্দোলনও বিশেষভাবে উপকৃত হবে। আমাদের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন-সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিক-এটাই কামনা করছি। লেখক : কবি ও সম্পাদক, নতুন কলম ও নতুন কিশোরকণ্ঠ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির