post

শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি পাস ফাঁস ও সন্ত্রাস

২৪ এপ্রিল ২০১৪
Educationমেহেদী হাসান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখানো হয় শিক্ষা খাতকে। ব্যাপকভাবে জিপিএ ৫ পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাস করা এবং বিনামূল্যে বই বিতরণ করাকে তুলে ধরা হয় সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে। মিডিয়া ভাগ্যে থাকা শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসায় শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, বিরোধী দলের নেতারাও অনেক সময় পঞ্চমুখ থাকেন। শিক্ষামন্ত্রীর এক সময়ের রাজনৈতিক আদর্শের অনেক সতীর্থ এখন বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির প্রথম সারির নেতা। তারাও বেশ সতর্ক শিক্ষামন্ত্রীর বা শিক্ষা খাত নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে। আর গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ সাবেক বামপন্থীদের হাতে থাকায় শিক্ষামন্ত্রী আর শিক্ষা খাতের খবর যতটা গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হয়ে থাকে অন্য কোনো মন্ত্রীর ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যায় না। ফলে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে দেশের গত ৪২ বছরে সফল মন্ত্রী একজনই তিনি হচ্ছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ধরনের প্রচারণার কারণে শিক্ষা খাতে গত পাঁচ বছরে যে নৈরাজ্য চলছে তা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। মেধার বিস্ফোরণ বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশে মেধার বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় শুধু পাসের হার বাড়েনি। জিপিএ ৫ এবং গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকে পর্যায়ক্রমে পাসের হার বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৮৪। ২০১৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অন্য দিকে জিপিএ’র ভিত্তিতে প্রাথমিকে ফল প্রকাশ শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। সে বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন। ২০১৩ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন। আমাদের সন্তানেরা যদি ভালো ফল করে, মেধার বিকাশ ঘটে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! কিন্তু আসলে কি তা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, জিপিএ ৫ পাওয়া এই ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবেÑ ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০ ভাগই ফেল করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি ও বাংলায় ৩০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর ছিল ৮। এই দুই বিষয়ে ফেল করা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় শতাধিক। ২০১০ ও ২০১১ সালে এই ফেলের হার ছিল যথাক্রমে ৫২ ও ৬২ ভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর হলো ৪৮। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা জেএসসি, এসসসি বা এইচএসসিতে ভালো ফল করছে কিভাবে? তারা কি লেখাপড়া করছে না। অবশ্যই করছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা যাচ্ছে, আগে প্রশ্নপত্রে যে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকত এখন আর তা থাকছে না। আর শিক্ষকদের কাছে অলিখিত নির্দেশনা আছে যতটা সম্ভব ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দিতে হবে। পরীক্ষার খাতা দেখতে হবে উদারভাবে। ফলে বাড়ছে পাসের হার, বাড়ছে জিপিএ ৫। মন্ত্রী, শিক্ষার্থী বা অভিভাবক সবাই খুশি; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কিংবা বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে স্বর্ণ মর্যাদার জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রী ইংরেজিতে পেয়েছে ৩ বা ৪ নম্বর। এভাবে চলছে মেধার বিকাশ। ফাঁসের হিড়িক মেধাবীদের যখন এই অবস্থা তখন প্রতি বছরই ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ হলেই শিক্ষামন্ত্রী তা অস্বীকার করে এগুলো গুজব বা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন যে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে তার প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া গেছে। পদার্থবিদ্যার প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করছে। পরীক্ষার পর যথারীতি মিলে গেছে। সেই প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষাও হয়েছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই সরকারের আমলে শুধু স্কুল-কলেজ নয় সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিড়িক চলছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সংবাদপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেল সেগুলো এক করে দেখার পর সন্দেহ জাগছে পরীক্ষা দিয়ে কোথাও কোনো অর্জন করা সম্ভব কি না। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিসিএসের সব ক’টি পরীক্ষা (২৯ থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত), গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ, সমাজসেবা কর্মকর্তা, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, এনবিআর, সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকে কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছ। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থগিত করা হয়েছিল ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এবং অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। এত গেল চাকরির পরীক্ষা। শিক্ষামন্ত্রীর এখতিয়ারে থাকা ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার চিত্র আরো খারাপ। জেএসএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা থেকে সোনামণিদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নয়া দিগন্তসহ কয়েকটি পত্রিকায় জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় একবার পরীক্ষা স্থগিত করেছিলেন। পরে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটেছে; কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ছিল এগুলো গুজব অথবা কোনো শিক্ষক বা কোচিং সেন্টারের সাজেশন। কোচিং সেন্টারগুলো হয়তো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করছে, না হলে তাদের হাতে কিভাবে প্রশ্নপত্র চলে যাচ্ছে। উৎসব ছাড়া চলে না আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষ নানা ধরনের উৎসব আর দিবসের মধ্য দিয়ে একেকটি বছর পার করছে। চার দিকে খুন, গুম, অপহরণ, ভোট না দিয়েও নতুন সরকার গঠনের অস্বস্তির মধ্যেও মানুষের বিনোদনের অভাব নেই। এসব উৎসব আর দিবস থেকে শিশুরা বাদ যাবে তা তো হয় না। শাহবাগে ফাঁসির উৎসবেও শিশুরা হাজির হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী চালু করলেন বই উৎসব। ভালো উদ্যোগ; কিন্তু প্রচার-প্রচারণায় মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার প্রথম শিশুদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেছে। প্রাথমিকে বিনামূল্যের বই প্রদান শুরু হয় ৮০ সালের আগে থেকে। সেটি দেয়া হতো ইউনিসেফের সহায়তায় সীমিত আকারে। ’৮৭-৮৮ সাল থেকে ইউনিসেফের সাথে সরকারের অর্থায়নযুক্ত হয়ে প্রাথমিকে বিনামূল্যের বই প্রদান শুরু হয়। তখনো সীমিত আকারের ছিল। ’৯২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বিতীয় বছরেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে নতুন মন্ত্রণালয় চালু করার পর প্রাথমিকের সব শ্রেণীর সব বই সব ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইবেতদায়িতে (মাদরাসার প্রাথমিক স্তর) বিনামূল্যের পাঠ্যবই সীমিত আকারে দেয়া শুরু বিএনপি সরকারের আমলে। ২০০৪ সালে ইবতেদায়ির সব শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হয়। মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের বই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সেনাসমর্থিত সরকার। তার জন্য ২২০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। ২০১০ সালে মহাজোটের সরকার সেনাসমর্থিত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা খাতে দু’টি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা। দ্বিতীয়ত, শিশুদের স্কুলমুখী করতে শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করা। বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম তো ছিলই। অবশ্য বর্তমান সরকার মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় ও সরকারের সাফল্য। উৎসবের নামে এখন সব সাফল্য সরকারের অর্জন বলে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা আছে। বিএনপির নেতারা ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এতই মোহে আছেন পেছনে তাকানোর হুঁশ নেই। খালেদা জিয়ার নিজের উদ্যোগে শিক্ষা খাতে বড় ধরনের কাজ হয়েছে তা বলার মতো সময় নেই। কেউ যদি নিজের কথা নিজে না বলে অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ কী? সব সাফল্য হাইজ্যাক করার জন্য মন্ত্রীকে সাধুবাদ দিতেই হবে। সন্ত্রাসের উৎসব আগেই বলেছি আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর ও প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ এক রাজনৈতিক দল। উৎসব হবে আর আওয়াজ হবে না, গুলি ফুটবে না তা তো হয় না। ছাত্রলীগের তরুণেরা ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক অস্ত্রবাজিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলোকে আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করা হয়। এরপর নিজেদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে খুনোখুনিতে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যে বন্দুকবাজিতে নিহত হয় আবু বকর সিদ্দিক নামে এক মেধাবী ছাত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ্মা সেতুর চাঁদা তোলা নিয়ে ২০১২ সালের নিজেদের মধ্যে দ্ব›েদ্ব খুন হন আব্দুল্লাহ আল হাসান। এর আগে ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে খাবার টোকেন নিয়ে মারামারি করে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয় নাসিরুল্লাহ নাসিমকে। জাহাঙ্গীরনগর Education-01বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের নামে ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিজেদের মধ্যে এভাবে খুনোখুনিতে বিরক্ত হয়ে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরও চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুনোখুনি। সর্বশেষ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা সাদ বিন মমতাজ ছাত্রলীগের হাতেই নিহত হয়েছেন। এর আগে ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের গোলাগুলিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিশু নিহত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন, শিক্ষক লাঞ্ছনার বহু অভিযোগ উঠলেও মন্ত্রীর কান পর্যন্ত তা পৌঁছেনি। সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের পর মন্ত্রীর নীরবতা দেখে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে তার কোনো দায় নেই। তিনি শুধু শিশু-কিশোরদের মন্ত্রী। বড়দের নন। তরুণদের শিক্ষামন্ত্রী কে হবেন? প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিচ্ছেন না, শিক্ষামন্ত্রী নিচ্ছেন না। আর এই সুযোগে মহানন্দে খুনোখুনি চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষামন্ত্রীর নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ২০১২ সালের জুলাই মাসে সিলেট এম সি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। মন্ত্রী নিজে এই কলেজে লেখাপড়া করেছেন। পুড়ে যাওয়া ছাত্রাবাস দেখে মন্ত্রীর চোখে অশ্রæ চলে আসে। এ ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে! শিশুদের জন্য উৎসব আর তরুণদের জন্য অশ্রুপাত। পিছিয়ে নেই আওয়ামী শিক্ষকেরা ছাত্রলীগের দাপট আর সুযোগ দেখে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরাও বসে নেই। পদ পদবি নিয়ে নিজেরা মারমারিতে লিপ্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে উগ্র রাজনীতির অন্যতম প্রবক্তা এক শিক্ষক ভিসি হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি করে ফেলেছিলেন। ছাত্র-শিক্ষক একসাথে আন্দোলন করেও তারা কিছুই করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তার অফিস আর বাসা ঘেরাও করে রাখেন ছাত্র-শিক্ষকেরা, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে নানা দেনদরবারের পর পদত্যাগ করেন। এর আগে তিনি ছাত্রলীগের এক অংশকে লেলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। বিনিময়ে প্রতিশ্রæতি দেন খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন না। এর আগে বুয়েটের ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্র-শিক্ষকেরা দীর্ঘ দিন আন্দোলন করেছিলেন। বন্ধ ছিল বিশ্বমানের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। একপর্যায়ে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ক্লাসে ফিরে গেছেন; কিন্তু ভিসি সরে যাননি। এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা নয় দলবাজির মাধ্যমে চলছে শিক্ষক নিয়োগ। অনেক বিষয়ে প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের বেতন বাড়ানোর উদ্যেগ নেয়া হলে প্রতিবাদ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সাথে ছিল ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন আর আওয়ামী সিলমারা ভিসি দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। দলবাজির কারণে লেখাপড়া, গবেষণা, সৃজনশীলতা, ভিন্নমতের স্বাধীনতা বিদ্যাপীঠ থেকে হারিয়ে গেছে। আগেই বলেছি মন্ত্রী ভালোবাসেন শিশুদের। তাদের নিয়ে উৎসবে ব্যস্ত থাকলে ইমেজ বাড়ে। সহজেই সফল মন্ত্রী হওয়া যায়। কী দরকার প্রশ্ন ফাঁস, সন্ত্রাস কিংবা শিক্ষক রাজনীতির নোংরামিতে ঢোকা। যে যেভাবে চলছে চলুক। গোলাগুলিতে ছাত্র মারা গেলে কিংবা ভিসি হওয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে শিক্ষকেরা মারামারি করলে মন্ত্রীর কী আসে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির