post

শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের উপাখ্যান

০২ ডিসেম্বর ২০১৩

ড. ফিরোজ মাহবুব কামাল| লগ্ন স্বৈরাচার নির্মূলের বাংলাদেশ আজ চরম রাজনৈতীক সঙ্কটে। দেশ আজ রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের মুখে। সঙ্কটের মূল কারণ, গদি ছাড়তে রাজি নন হাসিনা। মেয়াদ শেষ হলেও প্রধানমন্ত্রীর গদিটি তার চাই। হাসিনা চায় না, একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক এবং সবাই একই সমতলে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাক। হাসিনার এ কৌশলটি গোপন নয়, দুর্বোধ্যও নয়। তিনি চান, নিজ তদারকিতে নির্বাচন দিয়ে নিজের স্বৈরশাসনের মেয়াদকে আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়ে নিতে। সেটি যেমন বিরোধী দল বুঝে। তেমনি সাধারণ জনগণও বুঝে। স্বৈরাচারী সরকারকে যে নির্বাচনে পরাজয় করা যায় না সেটিও জনগণ বুঝে। জনগণ সেটি বুঝেছে স্বৈরাচারী এরশাদের ১১ বছরের শাসন থেকে। এরশাদ নির্বাচন দিলেও সেটি ছিল তার স্বৈরশাসনের মেয়াদ বাড়নোর কৌশল। সমগ্র প্রশাসন ময়দানে নামতো তাকে বিজয়ী করার কাজে। ভোট জালিয়াতি তখন একটি প্রশাসনিক শিল্পে পরিণত হয়েছিল। তার মত ধিকৃত দুর্বৃত্তকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র রাজপথেই। হাসিনার বিরুদ্ধেও বিকল্প পথ নাই। তাকেও পরাজিত করতে হবে রাজপথেই। আর সে লক্ষ্যেই ১৮ দলীয় জোট লাগাতার তিন দিনের হরতালের ডাক দিয়েছে। ইতোমধ্যে পথে পুলিশের গুলিতে চারিদিকে লাশ পড়া শুরু হয়েছে। ২৫ অক্টোবর ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা মারা গেছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে। যখন নিরীহ জনগণের লাশ পড়া শুরু হয় তখন আহত জনগণ যে বসে বসে আঙুল চুষবে না তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? তারই আলামত ২৬ অক্টোবর প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি নেতা, মন্ত্রী, আদালতের বিচারক, সরকারি মিডিয়াকর্মীদের লক্ষ্য করে হাতবোমা ও ককটেল ছোড়া শুরু হয়েছে। সেগুলো তো এখন তাদের ঘরের দরজার বাইরে পড়ছে। কিন্তু ঝড় তো এভাবেই শুরু হয়। প্রচণ্ড ঝড়ে প্রথমে গাছের পাতা পড়ে, পরে গাছও পড়া শুরু হয়। জনগণ গত প্রায় পাঁচটি বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসন অতি কষ্ট করে সইছে। এখন তারা মুক্তির দিন গুনছে। স্বৈরাচার থেকে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছে বহুদিন থেকে। এখন সেটিরই চরম অবস্থা। সে আন্দোলনের মুখে হাসিনার কুরসি ইতোমধ্যেই দারুণভাবে হেলে পড়েছে। জনগণ জানে সে হেলা পড়া কুরসির গায়ে শক্ত ধাক্কা দিলে সে ধাক্কা সহ্যের সামর্থ্য শেখ হাসিনার নেই। তাই স্বৈরশাসন থেকে আশু মুক্তি নিয়ে জনগণ অত্যন্ত আশান্বিত। সে আশা নিয়েই দীর্ঘ ৫টি বছর জনগণ আওয়ামী দুঃশাসনকে অতি কষ্টে সহ্য সয়েছে। মানুষ তো আশা নিয়েই বাঁচে। আসন্ন সে মুক্তির পথে নতুন কোনো বাধা এলে সেটি যে জনগণকে দারুণভাবে ক্ষিপ্ত করবে সেটিও সুনিশ্চিত। কারণ জনগণ প্রচণ্ডভাবে আহত। সেটি যেমন দৈহিক ও অর্থনৈতিক ভাবে তেমনি মানসিক ভাবে। এ অবস্থা থেকে জনগণ ত্বরিত মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার দেশের আহত জনগণকে সহজে মুক্তি দিতে রাজি নয়। বরং জনগণের ক্ষতে তারা মরিচ লাগানোর আয়োজন করছে। হাসিনা ও তার সহযোগীদের মনে ঢুকেছে প্রচণ্ড জনভীতি। কারণ, জনগণের বিরুদ্ধে তাদের কৃত অপরাধগুলো অন্যরা যা জানে তার চেয়ে বেশি জানে হাসিনা ও তার সহচরেরা। এমন এক জনভীতির কারণেই চোর-ডাকাতেরা দিনের আলোয় রাস্তায় নামে না। স্বৈরাচারী সরকারও তেমনি গদি থেকে নামতে চায় না। প্রচণ্ড জনভীতির কারণেই হাসিনার লক্ষ্য, যেকোনো ভাবে হোক নিজের স্বৈর দুঃশাসনকে দীর্ঘায়িত করা। তার আস্ফালন প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেই তিনি নির্বাচন করবেন এবং আবারো নির্বাচিত হবেন। এ অবস্থান থেকে তিনি এক চুল নড়তে রাজি নয়- সে ঘোষণাটিও তিনি বার বার দিয়েছেন। তিনি বলে থাকেন, দেশের জন্য তিনি তার পিতার ন্যায় সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি। কিন্তু এটি যে নিরেট মিথ্যাচার সেটি বুঝতে কি বেশি বিদ্যা-বুদ্ধি লাগে? মুজিব কি চাইতেন, জনগণ কি সেটি ভুলে গেছে? ইতিহাস আজও তার সাক্ষী। শেখ মুজিব কোন অবস্থাতেই ক্ষমতা ছাড়তে চাননি। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে লাশ হয়ে কবরে যাওয়ার কারণে। আজীবন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মোহই মুজিবকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত করেছিল। স্বৈরাচারী খায়েশ পূরণে তিনি সংবিধানে সংশোধনী এনেছিলেন এবং গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশালী শাসনের প্রবর্তন করেছিলেন। কাটাছেঁড়া করা সে সংবিধানকে মুজিবও পবিত্র বলতেন এবং নিজের বাকশালী স্বৈরশাসনকে চালু রাখার স্বার্থে সে সংবিধানের পবিত্রতার দোহাইও দিতেন। মুজিবের সে ধোঁকাবাজির পথ ধরেছেন শেখ হাসিনা। হাসিনাও জনসভার বক্তৃতায় বার বার সবকিছু ত্যাগের কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর পদটি কখনোই ছাড়তে রাজি নন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনটিও তিনি ছাড়তে রাজি হননি। বরং সেটি নিজ নামে লিখে নেয়ার ষড়যন্ত্রও করেছিলেন। জনগণ কি সেসব ভুলে গেছে? নির্বাচনী ফলাফলের ওপর দখলদারি বজায় রাখার স্বার্থেই তিনি রিলিফখোর এক বিচারপতিকে দিয়ে পছন্দমতো রায় আদায় করে নিয়েছেন এবং সে রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানে ১৫তম সংশোধন এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বিলুপ্ত করেছেন। এখন সে কাটাছেঁড়া সংবিধানকে আবার পবিত্র বলছেন। সেটি যে শুধু নিজের ক্ষমতায় থাকাটি নিরাপদ করার স্বার্থে তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? এ সঙ্কট হাসিনার সৃষ্টি বাংলাদেশের আজকের সঙ্কট মূলত হাসিনার সৃষ্টি। এ সঙ্কট সৃষ্টির জন্যই তিনি সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী এনেছেন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছেন। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এক আন্দোলনের ফসল হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। খোদ হাসিনা এর জন্য ১৭৩ দিনের হরতাল দিয়েছেন। সে আন্দোলনের সাথে শরিক ছিল তার নেতৃত্বধীন ১৪ দল। এমন একটি সর্বদল স্বীকৃত প্রথাকে বিলুপ্ত করলে দেশবাসী যে পুনরায় আন্দোলনে নামবে সেটি তিনি কি জানতেন না? আর না জানলে এত অল্প বুদ্ধি ও দূরদৃষ্টি নিয়ে তিনি ১৬ কোটি মানুষের দেশে রাজনীতি করেন কী করে? সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী এনে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি করা হলো সেটি যে স্রেফ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র সেটি কি জনগণ বুঝে না? অতিশয় বেকুব স্বৈরাচারী শাসকেরাও নিজেদেরকে খুবই বুদ্ধিমান মনে করে। এবং বোকা মনে করে জনগণকে। তাদের ধারণা, সংবিধানকে পবিত্র ও তার বিধানকে অলঙ্ঘনীয় বললে জনগণ মাথা নত করে সেটি মেনে নেবে। কিন্তু জনগণ তো জানে, বাংলাদেশের সংবিধানকে সবচেয়ে পদদলিত করেছে শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মতামত প্রকাশ করা, দল করা ও দলের নামে সভা-সমিতি করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব শুধু দেশ শাসন করা নয়, জনগণের সে মৌলিক অধিকারটিকে পাহারা দেয়া। সংবিধানের ইজ্জত তো এভাবেই রক্ষা পায়। কিন্তু মুজিব বা হাসিনা এ দু’জনের কেউ কি জনগণকে সে মৌল অধিকারটি দিয়েছে? বাংলাদেশের মাটিতে মুজিব কোন বিরোধী দলকেই বরদাশত করেননি। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মুজিব জেলে তুলেছেন। বন্দী সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার পর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার’ বলে উল্লাসও করেছেন। তার আমলে দল ছিল মাত্র একটিই, সেটি ছিল মুজিবের নিজ দল বাকশাল। সকল বিরোধীদলীয় পত্রিকাকে তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। মুজিবের কন্যা হাসিনাও পিতার সে স্বৈরাচারী পথ ধরেছেন। হাসিনা নিষিদ্ধ করেছেন আমার দেশ। বন্ধ করে দিয়েছেন দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। বহু সাংবাদিক তার আমলে যেমন নিহত হয়েছেন তেমনি কারারুদ্ধও হয়েছেন। মুজিবের আমলে ইসলামী পুস্তকের প্রকাশনা ছিল অপরাধ। সেটি হাসিনার আমলেও। হাসিনা তো গৃহে গৃহে ইসলামী বই-পুস্তক বিশেষ করে জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করতে র‌্যাব ও পুলিশ নামিয়েছে। শেখ মুজিব যেমন কোন ইসলামী দলকে রাজনীতিতে নামতে দেননি, হাসিনা তেমনি ময়দানে নামতে দিচ্ছে না জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম। এসব দলের হাজার হাজার কর্মীকে হাসিনা গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বছরের পর আটক রেখেছে। সংবিধান অবমাননাকারী এমন এক নেত্রী যখন সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষার বাহানাটি খাড়া করে তখন কি জনগণ সেটি মেনে নেয়? এটি যে নিছক ধোঁকাবাজি সেটি বুঝতে কি জনগণ ভুল করে? পৌত্তলিকতার ন্যায় আদিম অজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরোহিতগণ নিজেদের হাতে গড়া মাটির মূর্তিগুলোকেও পবিত্র ও পূজনীয় বলে আখ্যায়িত করে। তেমনি দশা হাসিনা বা মুজিবের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসকদেরও। নিজেদের স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার গরজে নিজেদের দ্বারা পদদলিত সংবিধানকেও তারা পবিত্র বলে। হাসিনা নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন দীর্ঘদিনের আশাটি হঠাৎ মাঠে মারা পড়লে গভীর হতাশা নেমে আসে। সে হতাশায় মানুষ তখন চরমপন্থা গ্রহণ করে। অনেকে আত্মহত্যাও করে। অনেকে প্রচণ্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। রাজনীতিবিদদের কাজ তো জনগণের আশা পূরণের পথ দেখানো, সেটিকে হত্যা করা নয়। অথচ শেখ হাসিনা আজ জনগণের মনের সে স্পর্শকাতর ক্ষেত্রটিতেই হানা দিয়েছেন। মানুষকে আশাহত করে মুজিবও বাঁচেনি। মুজিব বাংলার মানুষের স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি করেছেন, কিন্তু কখনোই সেগুলো পূরণ হতে দেননি। তিনি আট আনা সের চাল খাওয়ানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন গণতন্ত্রের ও সোনার বাংলার। কিন্তু ডেকে এনেছেন ভারতের গোলামির অভিশাপ। উপহার দিয়েছেন নির্মম দুর্ভিক্ষ। গণতন্ত্রের বদলে দিয়েছেন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার। মুজিবের সর্বশেষ অপরাধটি হলো, সরকার পরিবর্তনের সকল শান্তিপূর্ণ পথকে তিনি রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তার নিজের জন্য একটি মাত্র পথই খোলা রেখেছিলেন এবং সেটি ছিল সহিংস পথে কবরে যাওয়ার পথ। অবশেষে সে পথেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। মুজিবের অন্ধ অনুসারী হাসিনাও তার পিতার সে স্বৈরাচারী পথটিই ধরেছেন। তিনি আঘাত হেনে চলেছেন জনগণের আশার ভুবনে। জনগণের এতদিনের লালিত আশাকে চুরমার করার চেষ্টা হওয়াতে জনগণও যে অতিশয় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে তার আলামত ইতোমধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। এতে আঘাত পড়বে যে শুধু শেখ হাসিনার সরকারের ওপর তা নয়, বরং হামলা হবে তার সমর্থকদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পত্রপত্রিকার ওপরও। কারণ রাজার গায়ে হাত পড়ার আগে তো ময়দানে লাশ পড়ে তার অনুগত সেপাইদের। সরকার বুঝতে ভুল করছে যে, বিদায়ী সরকারের পক্ষে কিছু বেকুব ছাড়া কোনো বুদ্ধিমান সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ লাঠি ধরে না। তখন তারা সরকারের স্বার্থ ছেড়ে নিজেদের স্বার্থ দেখে। তারা জানে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা কোটি কোটি টাকা কামাই করে নিয়েছে। সে অর্থ নিয়ে তারা অন্য দেশে রাজার হালে থাকতে পারবে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের তো নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে হবে বাংলাদেশে। চাকরি করতে হবে জনগণের চোখের সামনে। বিদায়ী সরকারের পক্ষে লাঠি ধরার কারণে তাদের চাকরিতে যে হাত পড়বে সেটিও তারা জানে। এমন একটি স্বার্থ চেতনার কারণেও সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শুরু হয় বিদায়ী সরকারের প্রতি সক্রিয় অসহযোগিতা। সে অসহযোগিতার কারণেই লিবিয়ার গাদ্দাফি, আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ বা রোমানিয়ার চেশস্কির ন্যায় দুর্বৃত্ত সরকারেরা পালানোরও রাস্তা পায়নি। ভিয়েতনাম থেকে মার্কিনিদের পালাতে হয়েছে দূতাবাসের ছাদের ওপর থেকে হেলিকপ্টারযোগে। বুদ্ধিমান স্বৈরাচারীরা তাই ইরানের শাহের মতো আগে ভাগে দেশ ছাড়ে। এরূপ এক ক্রান্তিলগ্নে যারা হাসিনা সরকারের পক্ষে লাঠি ধরবে ও প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করবে তারা মূলত কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মচারী নয়, দেশপ্রেমিকও নয়। বরং সরকারি কর্মচারীর পোশাকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বা শত্রুদেশের এজেন্ট। শুরু হয়েছে বিদেশীদের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে যতই রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে ততই বাড়ছে বিদেশী ষড়যন্ত্র। এখন বিদেশীরা ব্যস্ত নিজেদের ঘরে ফসল তোলায়। তারা চায় তাদের কাক্সিক্ষত গোলাম ব্যক্তিটিকে ক্ষমতায় রাখতে। সে লক্ষ্যেই তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস্টার মজিনা গিয়েছিলেন দিল্লিতে। তিনি দরবার করেছেন ভারতীয় কর্তাব্যক্তিদের সাথে। অপর দিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা চায় নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থাৎ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাও জানিয়েছেন সেটিকে তিনিও সমর্থন করেন। এ সবই পত্রিকার খবর। অপর দিকে কলকাতার আনন্দবাজার গল্প ফেঁদেছে, বিএনপি নেতা জনাব তারেক জিয়া নাকি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভারত সরকার নাকি তা নিয়ে বড়ই চিন্তিত। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ যে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রয়ের এজেন্টদের দ্বারা প্লাবিত সে খবরটি কি আনন্দবাজারের জানে না? ভারতের দুশ্চিন্তা, হাসিনার পতন হলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থীদের ঘাঁটিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশ শতকরা ৯১% ভাগ মুসলমানের দেশ। আর মুসলমান থাকলে ইসলাম থাকবে তাতে ভারতের আপত্তির কী থাকতে পারে? ভারতে যদি মৌলবাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে তবে ইসলামী মৌলবাদীরা বাংলাদেশে কেন ক্ষমতায় আসবে না? ভারতীয় নেতাদের ইসলামভীতি এবং সে সাথে আইএসআই ভীতি এতটাই প্রবল যে বাংলাদেশের বুকে ইসলামী দলের কর্মী বা আওয়ামী লীগ বিরোধী কোনো নেতাকে ভারতীয় নেতারা আইএসআইয়ের লোক ভিন্ন অন্য কিছু ভাবতে পারে না। এমনকি সেটি ভারতের অভ্যন্তরে বসবাসরত মুসলমানদের বেলায়ও। সম্প্রতি মোজাফফর নগরসহ উত্তর প্রদেশের বহু জেলায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হলো। হাজার মুসলিম পরিবার এখনও নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেনি। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভারত সরকার এ পর্যন্তু সে এলাকায় মুসলিম নিধনকারী কোনো অপরাধীকেই খুঁজে পায়নি। যেন এত বড় হত্যাকাণ্ড কোন স্থানীয় অপরাধী ছাড়াই সংঘটিত হয়েছে। অপরাধী তখনও খুঁজে পায়নি যখন দিনে-দুপুরে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখের সামনে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলো। এই হলো ভারতীয় মানস। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অপরাধী খুঁজে পেয়েছেন এবং সেটি ভারতে নয় বরং ভারতের বাইরে। তার মতে সে অপরাধীট হলো পাকিস্তানি আইএসআই। সম্প্রতি রাহুল গান্ধী এক সভায় বলেছেন, আইএসআইয়ের লোক মোজাফ্ফর নগরের মুসলিম পরিবারের সাথে যোগযোগ রেখেছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ যে কতটা প্রবল এ হলো তার প্রমাণ। যে বিদেশী শক্তিগুলো আওয়ামী লীগকে একটি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ বছর আগে ক্ষমতায় এনেছিল তারাই এখন ময়দানে নেমেছে। সে বিদেশীদের মধ্যে ছিল ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন। এরাই যেন বাংলাদেশের কিং মেকার, বাংলাদেশের জনগণ নয়। তারা যে আওয়ামী লীগের পক্ষ নেবে তার কারণ তো সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর বর্বরতার মধ্য দিয়ে বিদেশীদের কাছে প্রমাণ করেছে রক্তেমাংসে তারা বাংলাদেশের হলেও চিন্তা- চেতনায় তারা তাদেরই লোক। এ বিদেশী কোয়ালিশনটিও চায়, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরণ প্রতিহত করা। সেটি গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে হলেও। এসব ইসলাম দুশমন সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে গণতন্ত্রের মূল্য সামান্যই। তাই মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে হটিয়ে সামরিক জান্তাদের সমর্থন দিতে তাদের বিবেকে দংশন হয়নি। তাদের একই রূপ নীতি দেখা গেছে ইরানে, আলজেরিয়া ও ফিলিস্তিনে। ইরানে স্বৈরাচারী শাহের অপসারণ যেমন তাদের পছন্দ হয়নি, তেমনি আলজেরিয়া ও ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়ও তাদের পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশে ইসলাম রুখতে যাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা যুদ্ধ করতে চায় তারা আর কেউ নয়, তারা হলো ইসলামের শত্রুপক্ষ ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। বিদেশের এ দাসগণ সে কাজের জন্য প্রস্তুতও। মার্কিন দূত মজিনা দিল্লি থেকে ফিরেছেন। এখন দিল্লি যাচ্ছেন এরশাদ ও দীপু মনি। এরা যে বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশ ভিন্ন অন্য কিছু ভাবে না এ হলো তার প্রমাণ। এদের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে কতটা বিপন্ন সেটি বুঝে ওঠা কি এতটাই কঠিন? আওয়ামী রাজনীতির মূল রোগটি হলো, তারা বিদেশী প্রভুনির্ভর। দেশের রাজনীতিতে বিদেশী প্রভুদের ডেকে আনাই তাদের স্বভাব। একাত্তরে বাংলাদেশের রাজনীতি তাই আর বাংলাদেশে থাকেনি, সেটি চলে গেছে দিল্লিতে। তেমনি এবারও সে একই খেলাই শুরু হয়েছে। তাদের রাজনীতি তাই শুধু যে গণতন্ত্র বিপন্ন হয় তা নয়, দেশের স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়। মুজিব আমলে তো সেটিই হয়েছিল। বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক জনগণের ঘাড়ে এ মুহূর্তে তাই বিশাল দায়ভার। সেটি শুধু জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা নয়, দেশের স্বাধীনতা রক্ষাও। যে গণজাগরণ আজ শুরু হয়েছে, এখন সবার দায়িত্ব হলো সেটিকে চূড়ান্ত বিজয় অবধি অব্যাহত রাখা। লড়াইয়ের এখনই সময়। স্বাধীনতার শত্রু নির্মূলের এখনই মোক্ষম সুযোগ। তবে এ লড়াই শুধু হাসিনার অপসারণ নিয়ে নয়, বরং বিদেশের সেবাদাসদের শিকড় নির্মূল। নইলে তারা বার বার ফিরে আসবে এবং বিপদ বাড়াবে। এ কাজ শুধু বিএনপি, জামায়াত-শিবির বা হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের নয়, প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের। এটি শুধু রাজনীতির সংগ্রাম নয়, বরং পবিত্র জিহাদ। জোটবদ্ধ শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে এ জিহাদে একতার গুরুত্ব সর্বাধিক। সতর্ক থাকতে হবে, ঘাটে এসে লড়াইয়ের এ তরী যেন ডুবে না যায়। সেটি হলে শত্রু শিবিরে প্রচণ্ড উৎসব শুরু হবে এবং ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে বাংলাদেশের বুকে। এতে বহুকালের জন্য বিপন্ন হবে ইসলাম, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির