post

সরকারের দুর্নীতি অপকর্ম চাপা পড়ে যাচ্ছে

১৮ আগস্ট ২০১৩

তাইমুর রশীদ চাপা পড়ে যাচ্ছে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো। হারিয়ে যাচ্ছে লাগামহীন দুর্নীতি, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোও। বিডিআর বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থতা, কুইক রেন্টাল দুর্নীতি, রানা প্লাজা ধস, শেয়ারবাজার লুটপাট, আল্লামা সাঈদীর রায়-পরবর্তী সময়ে সারা দেশে সরকারি দল বিজিবি পুলিশের গণহত্যা, গণগ্রেফতার, গণনির্যাতন, মতিঝিলে অপারেশন ফ্লাশ আউটের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে জিকির ও নামাজরত আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে হত্যা, নারী নির্যাতন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির খবরগুলোও চাপা পড়ে যাচ্ছে। সরকারসংশ্লিষ্ট লোকজনের ধারণা ছিল শাহবাগিদের আন্দোলনে তাদের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও অপকর্ম চাপা পড়ে যাবে, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ সেটি প্রত্যাখান করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কথিত শাহবাগ আন্দোলন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর ইসলাম ও রাসূল (সা) অবমাননার প্রতিবাদে সারা দেশে তৌহিদি জনতা ফুঁসে ওঠে। ঢাকা অবরোধ ও অবরোধ-পরবর্তী মহাসমাবেশ করে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ যোগ দেন ওই অবরোধ সমাবেশে। রাতের অন্ধকারে বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে দিয়ে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সারা দেশের মানুষ যখন এসব ইস্যু নিয়ে কথা বলছে, ওই সময় সরকার সামনে নিয়ে আসে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন। চারটিতেই ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীদের ভরাডুবির পর আসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেখানে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কাজে লাগায় প্রশাসনকেও। কিন্তু জনতার রায়ে সেখানেও পরাজিত হয় সরকারি দলের প্রার্থী। ওই নির্বাচনের পর রোজা চলে আসায় বিরোধী দলীয় জোট বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এখন তাদের আন্দোলন প্রেসব্রিফিং আর ইফতার মাহফিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে বিরোধী জোট ঈদের পরে তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি দল চেষ্টা করছে ঘর গোছানোর। বর্তমান সরকারের আমলে যেসব বড় বড় দুর্নীতি ও ব্যর্থতা দেখা গেছে, তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে, সরকারের প্রভাবশালীদের দুর্নীতির কারণে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, প্রায় ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট, রেলওয়ের ‘কালোবিড়াল’ কেলেঙ্কারি, মাল্টিলেবেল মার্কেটিংয়ের নামে এমএলএম ও ইউনিপে টু ইউ কেলেঙ্কারি, সরকারি ব্যাংকগুলোকে শূন্য করে হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ব্লগে ইসলাম ও নবী করিম (সা)-কে অবমাননা এবং এর প্রতিবাদকারীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুম, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট, গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ, গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি সামাল দিতে ব্যর্থতা, দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল, তেল-নুনসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমান্ত হত্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, তিতাসসহ বাংলাদেশের নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে ভারতকে করিডোর দেয়া, ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়ে রাখা, রাজধানী ঢাকাকে দিখণ্ডিত করা, নরসিংদীর জনপ্রিয় চেয়ারম্যান লোকমান হত্যাকাণ্ড, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এম ইউ আহমদের মৃত্যু, সানাহ উল্লাহ নূর বাবু হত্যাকাণ্ড, আড়িয়ল বিল ট্র্যাজেডি, মধ্যপ্রাচ্য থেকে জনশক্তি ফিরে আসার মাধ্যমে শ্রমবাজারে ধস নামানো, নৌ ও স্থল দুর্ঘটনা রোধে ব্যর্থতা, চট্টগ্রামে ব্রিজের গার্ডার ভেঙে মানুষের মৃত্যুসহ হাজারো ব্যর্থতা ও অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু সামনে এনে ওইসব ব্যর্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি : বিশ্বজুড়ে তরুণ, যুবক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও চাকরিজীবীসহ সবার কাছেই নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান শেয়ারবাজার। বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির পর ২০১০ ও ২০১১ সালে আবার ভয়াবহ শেয়ার কেলেঙ্কারি হয়েছে। সরকার নানা ধরনের স্লোগান ব্যবহার করে সবাইকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়েছে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাভের আশায় বহু মানুষ নিজের জায়গা-জমি ভিটেমাটি বিক্রি করে যাবতীয় সঞ্চয়ের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু সেই পুঁজিবাজার বিপর্যয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসে গেছে প্রায় ৩৫ বিনিয়োগকারী। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর ভয়াবহ ধসের মধ্য দিয়ে যে পতনের সূচনা হয়েছিল, ২০১১ সালের বছরজুড়ে সেই ধারা অব্যাহত ছিল এবং এখনও রয়েছে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর শেয়ারের সূচক সর্বোচ্চ ৮৯১৮ ছিল। সেটা ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সর্বনিম্ন ৩৬১৬-তে নেমে আসে। এখনো শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি। বর্তমানে শেয়ারের সূচক ৪১৪৭-এর ঘরে অবস্থান করছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কমতে কমতে স্মরণকালের সর্বনিম্ন তলানিতে চলে গেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক পতন ছিল না। এই পতন ঘটানো হয়েছে কারসাজির মাধ্যমে। এসব কারসাজি তদন্তে আওয়ামী ঘরানার অর্থনীতিবিদ ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সরকার কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিও তাদের রিপোর্টে কারসাজির সঙ্গে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন রাঘব-বোয়ালের নাম প্রকাশ করেছে। সরকার সেই ইব্রাহিম খালেদ কমিটির রিপোর্টও বাস্তবায়ন করেনি। ফলে কোনোভাবেই আর ঘুরে দাঁড়ায়নি শেয়ারবাজার। দেশের অর্থমন্ত্রী ও অর্থউপদেষ্টার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বিনিয়োগকারীদের ‘ফটকাকারবারি’, ‘বিনিয়োগকারীদের দুঃখ আমাদের ব্যথিত করে না’ বলে উপহাস করেছেন। কারসাজিতে নিঃস্ব ও বিক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু সরকারের নির্দেশে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের রাস্তা থেকে তুলে দেয়। সর্বস্বাস্ত হওয়ার যন্ত্রণা সইতে না পেরে এবং টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশাময় জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছেন। কুইক রেন্টালে কুইক দুর্নীতি : মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের পরিবর্তে সেগুলো অবহেলা ও অযতেœ ফেলে রাখে। রাষ্ট্রীয় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সংস্কারের উদ্যোগ না নিয়ে কুইক লুটপাটের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, নেতা ও ঘনিষ্ঠদের তিনটি রেন্টাল ও ১৭টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো ধরনের দরপত্র আহবান বা কোনো নিয়ম-নীতিরও কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বর্তমান মহাজোট সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট ৩৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। মূলত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যই এ বিশাল ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ৩৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সরকার অন্তত ২৮ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ওই টাকা দিয়ে সরকার আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ফান্ড গঠন করেছে। সরকার পিডিবির নিজস্ব ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে উচ্চমূল্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার মোটা অঙ্কের কমিশন আছে। এ কারণেই পিডিবির কর্মকর্তারাও এখন তাদের নিজেদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ভাড়াভিত্তিক ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দেশে লুটপাট করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পরিত্যক্ত বাতিল মেশিন এনে সরকারদলীয় লোকজন এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। পুরনো মেশিন হওয়ার কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ কিনছে। ফলে মাত্র তিন বছরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ভর্তুকি ও লুটপাটের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যার সিংহভাগ অর্থই সরকার আত্মসাৎ করেছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উত্পাদনব্যয় প্রতি ইউনিট ১ টাকা ৮০ পয়সা হলেও রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৬ টাকা করে। ডাকাতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার বিদ্যুৎ খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নির্বাচনী ফান্ড জোগাড় করছে। বিদ্যু খাতের উন্নতি না হলেও সরকারের ডাকাতি ও লুটপাট এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাওহীদি জনতার ওপর গুলি ও হত্যা : ব্লগে ইসলাম ও রাসূল (সা)-এর অবমাননা, সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের তাওহীদি জনতার ওপর হামলায় ২০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, বগুড়া, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাবনা, সিলেট, ঝিনাইদ, কুমিল্লা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এসব তাওহীদি জনতার ওপর র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি গুলি চালায়। বহু জেলায় পুলিশের সঙ্গে অংশ নেয় সরকারদলীয় ক্যাডাররা। প্রথম দিকে শাহবাগ আন্দোলন দিয়ে, পরে হেফাজতে ইসলামের ক্র্যাকডাউনের মধ্য দিয়ে সরকার এসব ইস্যুকে ধামাপাচা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ছাইচাপা আগুনের মতো এসব হত্যাকাণ্ডে মানুষের মনে ক্ষোভ ফুঁসে উঠছে। হেফাজতে ইসলামের ওপর গুলি : ব্লগে ইসলাম ও রাসূল (সা)-এর অবমাননার প্রতিবাদে ১৩ দফা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে দেশের কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠনগুলো। তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতায় দেশের সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে সমর্থন জোগায় এসব আন্দোলনে। বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় মহাসমাবেশ ও ঢাকা ঘেরাও এবং লংমার্চ কর্মসূচি পালন করে। ওইসব কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয় এসব কর্মসূচিতে। সর্বশেষ গত ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ করে। অবরোধ শেষে বিকালে তারা পুলিশের অনুমতি নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করে। মহাসমাবেশ গণঅবস্থানে রূপ নিলে সরকার রাতের আঁধারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হামলা চালায় নিরীহ নিরস্ত্র জিকিররত আলেমদের ওপর। ওই হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ স্বীকার করেছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, তাদের আড়াই হাজার নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টে দাবি করেছে, ৫ মে’র সমাবেশে তারা দু’শতাধিক নিহত ব্যক্তির নাম সংগ্রহ করতে পেরেছে। ডজন ডজন মামলা দেয়া হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চলানো হয়। বোমা ও গুলির মুখে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে তুলে দেয়ার পর মামলা নির্যাতন এবং গ্রেফতারের বিষয়টি দারুণভাবে মর্মাহত করেছে সারাদেশের মানুষকে। মানুষের মধ্যে এখনো ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। কিন্তু এই ইস্যুটিও একরকম চাপা পড়ে গেছে। পিলখানা ট্র্যাজেডি : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্ম হয়। বিডিআর জওয়ানরা বিদ্রোহ করার পর সেটি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে বর্বর ঘাতকের তপ্ত বুলেটে সেদিন নিহত হয়েছিলেন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন। এই পিলখানা ট্র্যাজেডি ঘটনার আগে সংশ্লিষ্টরা সরকারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রমাণ পরবর্তীতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে। পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, পোশাক ও মনোগ্রাম বদল করা হয়েছে। বিদ্রোহ-পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক জওয়ানের। বিদ্রোহের বিচারে সাজা দেয়া হয়েছে কয়েক হাজার জওয়ানকে। বিডিআর বিদ্রোহের পর হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। দুর্নীতিতে ডুবেছে পদ্মা সেতু : বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ব্যয় ধরা হয় ২৯১ কোটি মার্কিন ডলার। পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য সরকার বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবির সঙ্গে চুক্তি করে। ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহজশর্তে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬১ কোটি ডলার, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার এবং জাইকা ৪০ কোটি ডলার এবং বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক মাত্র সাত মাসের মাথায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর অপর দাতা সংস্থাগুলোও তাদের ঋণ দেয়ার বিষয়টি স্থগিত করে। সরকার বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে নাকে খত দিয়ে আবার দেনদরবার শুরু করে। প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। কিন্তু তাদের তদন্তে দুই দফায় মূল অভিযুক্ত সৈয়দ আবুল হোসেনকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যানেল অব এক্সপার্টের সদস্যের মাধ্যমে তদন্ত পর্যবেক্ষণ করে। প্যানেল দুদকের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে দুদকের সঙ্গে আলোচনা ভেঙে দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে। প্যানেলের মূল বক্তব্য ছিল, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি করা। কিন্তু সেটি না করায় একপর্যায়ে চূড়ান্তভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। সর্বশেষ সরকারের কাছে দেয়া বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রতিবেদনেও পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির জন্য সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারের আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেশীয় অর্থায়ন, মালয়েশিয়ার অর্থায়ন, চীনের অর্থায়ন নিয়েও নানান গল্প শুনিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ উত্থাপনের পর থেকে ঘটনার পরম্পরায় সরকারের জন্য ‘কলঙ্কতিলক’ তৈরি করেছে এই পদ্মা সেতু প্রকল্প। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : সাভারের যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিনাকাধীন রানা প্লাজা ভবন ধসে নিখোঁজ হয় দেড় হাজারের বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক। বাংলাদেশের শিল্পকারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী ছিল ওই যুবলীগ নেতা রানা। আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার পরও পরদিন হরতালবিরোধী মিছিল করানোর জন্য সাড়ে তিন হাজার গার্মেন্ট কর্মীকে ওই ভবনে জড়ো করা হয়েছিল। ভবনটি ধসে পড়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিখোঁজ হয়। যাদের মধ্যে ১২৬৫ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও তাজরিন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক খাতের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে, যা এই শিল্পের জন্য বড় ধরনের অশনি সঙ্কেত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। রেলওয়ের কালো বিড়াল কেলেঙ্কারি : প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছিলেন, রেলওয়ের কালো বিড়াল খুঁজে বের করবেন। কিন্তু ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল রাতে সেই সুরঞ্জিতের কপালেই ‘কালো বিড়াল’ তকমা যুক্ত হয়। ওই রাতে তার এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক আলী আজম ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৭৯৯২ নম্বর গাড়িটি নিয়ে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে প্রবেশ করেন। গাড়িতে ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ের নিরাপত্তা কমানড্যান্ট এনামুল। ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৭০ লাখ টাকা, যে টাকা রেলওয়েতে জনবল নিয়োগের কমিশন হিসেবে মন্ত্রী সুরঞ্জিতের বাসায় যাচ্ছিল বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। গাড়িচালক আলী আজম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই টাকা ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পদে ৬০০ জনবল নিয়োগে সুরঞ্জিতের জন্য নির্ধারিত ১০ কোটি টাকা ঘুষের অংশ। এর আগেও কয়েক দফা টাকা নিয়ে ওই বাসায় গিয়েছেন আলী আজম। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় ৫ কোটি টাকা দিয়ে বিটিআরসি থেকে সুরঞ্জিতপুত্র সৌমেন সেনগুপ্তের আইসিএক্স লাইসেন্স নেয়ার খবর। ইউসুফ আলী মৃধা, এনামুল ও ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। কিন্তু পার পেয়ে গেছেন সুরঞ্জিত ও তার পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত। হলমার্ক কেলেঙ্কারি : দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ আত্মসাৎ কেলেঙ্কারি করেছে সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপ। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ম্যানেজার গোপালগঞ্জের কেএম আজিজুর রহমানের মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতির সবচেয়ে বড় কলঙ্ক স্থাপন করে হলমার্ক গ্রুপ। সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্ক ও তার কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে নাম আসে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীসহ অনেকের। সেই হলমার্ক নিয়ে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এখনও কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু শাহবাগের ডামাডোলে সেই হলমার্ক কেলেঙ্কারিও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। ডেসটিনি, ইউনিপে টু ও যুবক কেলেঙ্করি : লাখ লাখ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমএলএম কোম্পানিগুলো। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেসটিনি গ্রুপ, ইউনিপে টু ইউ ও যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি যুবক। ডেসটিনি কেলেঙ্কারিতে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এখন মামলা দুটির তদন্ত করছে। কিন্তু উদ্ধার হয়নি ওইসব অর্থ। অর্থ ফেরত পায়নি বিনিয়োগকারীরাও। ইউনিপে টু ইউ ও যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি যুবকে অর্থ বিনিয়োগকারীরাও ফেরত পাননি তাদের অর্থ। এছাড়াও সরকারের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় শতাধিক এমএলএম কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড : গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু সেই ঘটনার এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। মামলার আজও কোনো অগ্রগতি নেই। গ্রেফতার হয়নি খুনিরা। নানা নটাকীয়তা চলছে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে। চলছে সাংবাদিক সমাজের আন্দোলন। শাহবাগের ডামাডোলে এই হত্যাকাণ্ডের খবরও চাপা পড়ে যাচ্ছে। ইলিয়াস আলী গুম : গত বছরের ১৭ এপ্রিল হঠাৎ করেই গুম হয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। এ ঘটনায় প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। কিন্তু এখনও তার ও তার গাড়ি চালকের কোনো হদিস মিলেনি। এ ঘটনায় সরকার লোক দেখানো অনেক অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু সফলতা মেলেনি। ওই গুমের নেপথ্যে কারা রয়েছে, আদৌ তার হদিস মিলেনি। এছাড়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের আল মুকাদ্দাস, ওয়ালীউল্লাহ, মাসুমসহ গুম হয়েছেন আরো কয়েকজন নেতা ওকর্মী। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড : বিগত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে পুরনো ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ছাত্রশিবির কর্মী মনে করে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ড দেখে সারা দেশের মানুষ শিউরে ওঠে। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত সরকার বিশ্বজিৎ হত্যায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার করেছে। সেই বিশ্বজিৎ হত্যার নৃশসংসতাও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। ঢাকাকে দুই ভাগ : বর্তমান সরকারের আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ঢাকাকে দুই ভাগ করা। সর্বস্তরের মানুষের প্রবল বিরোধিতার মুখে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর মাত্র চার মিনিটে বিল পাস করে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগ করে ক্ষমতাসীন সরকার। কাঁটাতারে ফেলানী ও সীমান্ত হত্যা : বর্তমান সরকার ভারতবান্ধব হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাদের আমলজুড়েই সীমান্তে চলছে একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিশেষ করে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপর সীমান্তের ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ফেলানী খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা ও কাঁটাতারে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা ছাড়াও সীমান্ত হত্যার সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিগুলোও হারিয়ে যেতে বসেছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার : মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে সামনে এনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকার কথিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মার্ধমে বিচারের নামে প্রহসন চালিয়ে একের পর এক জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাথে যাদের ন্যূনতম কোনো সংযোগ ছিল না এবং কেউ কেউ তখন দেশেও ছিলেন না, আর দেশে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেইÑ তাদেরকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বিতর্কিত রায় প্রদান করে চলেছে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির রায় প্রদানের বিরুদ্ধে জনতা যেভাবে ফুঁসে ওঠে তাতে কয়েকদিনে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে নিহত হন প্রায় দুইশত জন মানুষ। লোকমান হত্যাকাণ্ড : বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর খুন হন নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন (৪২)। হত্যাকাণ্ডে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাউদ্দিন ওরফে বাচ্চুসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু এরই মধ্যে আসামিরা জামিন পেয়ে গেছেন। এখন সেই হত্যাকাণ্ডের কথাও কেউ বলেন না। জ্বালানি তেল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : বর্তমান সরকার কয়েক দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়, বেড়েছে দ্রব্যমূল্য, বেড়েছে পরিবহনভাড়া ও বাড়িভাড়া। ফলে জনজীবনে এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। এসবও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে শাহবাগের আন্দোলনের আবরণে। চালের দামে রেকর্ড : বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এসব নিয়ে কেউ কথা বলছে না। চিকন ও মোটা দু’ধরনের চালের দামই বেড়েছে। সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যাকাণ্ড : ২০১০ সালের ৮ আক্টোবর নাটোরের বনপাড়াবাজারে রাস্তায় ২৮ অক্টোবরের লগিবৈঠার স্টাইলে প্রকাশ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কুপিয়ে ও পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাহউল্লাহ নূর বাবুকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তারা বাবুর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ২৭ আসামির সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডও চাপা পড়ে গেছে। এম ইউ আহমেদের মৃত্যু : একজন বিতর্কিত বিচারপতির ইশারায় পুলিশের নির্মম নির্যাতনে ২০১১ সালের ২৬ আগস্ট নিহত হন হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদ। এই হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পার হয়েছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডও চাপা পড়ে গেছে। নিরাপত্তাহীন গার্মেন্ট ও তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি : এই সরকারের সময়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ী তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজিডেতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে ১৩০ জনের বেশি নিরীহ গার্মেন্ট শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৫৩ জনকে দাফন করা হয়েছে বেওয়ারিশ হিসেবে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের স্মার্ট ফ্যাশনে আগুনে পুড়ে মরেছে ৭ জন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টে আগুন ও অস্থিরতায় শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে। তাদের ওপর পুলিশ গুলি, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি ও শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টিও আড়ালে পড়ে গেছে। শ্রমবাজার ও জনশক্তি রফতানিতে ধস : কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে দলবেঁধে শূন্যহাতে ফিরে আসছে বাংলাদেশী শ্রমিকরা। সরকারি তত্পরতার অভাবে নতুন শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে না। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতটিও হুমকির মুখে। এছাড়া দেশজুড়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, হত্যা, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুগুলো থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তাই সাধারণ জনতাকে এখনই জেগে ওঠার সময় এসেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির