post

স ম্পা দ কী য়

০৬ জুলাই ২০২০

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর নৃশংসতম গণহত্যা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে চরম দুর্দশার কালোমেঘ নামে। তখন থেকে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর লক্ষ শহীদের রক্তবন্যার মাধ্যমে অর্জিত ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয়। কোটি মানুষের আর্তনাদের অশ্রুর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামক রাষ্ট্রটি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গিয়ে আমরা পেয়েছি ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’। আজ আমরা অর্ধশত বছর ধরে নিজ মাতৃভূমিতে স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করছি। কিন্তু আমরা কি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হতে পেরেছি? নাকি এখনো বাঁধা পড়ে আছি দাসত্বের শৃঙ্খলে? প্রশ্ন থেকেই যায়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা- আমাদের মৌলিক অধিকার। আজও আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো যথাযথ আদায় করতে পারছি না। আমাদের নেই কোনো চিন্তার স্বাধীনতা, নেই বাকস্বাধীনতা। আমরা হারিয়েছি ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা। বাংলাদেশের সর্বত্র আজ শ্রেণীবৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অথচ শোষণ-বৈষম্যহীন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য। এখনো ব্যক্তিস্বার্থ এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, দেশের স্বার্থ; দেশের মানুষের স্বার্থ এখানে গৌণ। স্বাধীনতা আমাদের এই শিক্ষা দেয় না। এই অবস্থা দূরীকরণে তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন ও বৈষম্য দূরীকরণে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নাগরিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে, দেশকে ভালোবেসে স্বাধীনতার প্রকৃত লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

১১ মার্চ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহীদ দিবস। শহীদি ময়দান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মতিহারের সবুজ চত্বরে ১৯৮২ সালের এই দিনে ইসলামবিরোধী শক্তির আঘাতে প্রাণ হারান আমাদের প্রিয়ভাই শহীদ শাব্বির, হামিদ, আইয়ুব ও জব্বার। শহীদদের রক্ত কোনোদিন বৃথা যায় না। সেদিনের নৃশংসতা, আহতদের আহাজারি আর আর্তচিৎকার এবং শহীদদের রক্ত প্রতিটি শিবিরকর্মীর প্রাণে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিবিরকর্মীরা ভাইহারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েনি। তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। তারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকেও অকাতরে বিলিয়ে দেয়ার দীপ্তশপথ গ্রহণ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা এখন চরমে। ইউরোপের এই সঙ্কটে একদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে ন্যাটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে কোনো অভিযান চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ব্যবস্থার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপ আবারও একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা একটি নতুন সঙ্কট। অবস্থা যাইহোক কোনোভাবেই সঙ্ঘাত কাম্য নয়। ইউক্রেনে বসবাসকারী তুরস্ক বংশোদ্ভূত সংখ্যালঘু মুসলিম তাতার গোষ্ঠীর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরা এইসব রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যেন নিরীহ লোকজনের জন্য ভোগান্তি বয়ে না আনে সেজন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আওয়াজ তোলা দরকার।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা অন্তত এক হাজার কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলা ও একই অনুপাতে অবকাঠামো না বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে উচ্চশিক্ষাকে প্রয়োজন ও দক্ষতাভিত্তিক করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- দাবি কর্তৃপক্ষের। দেশে শিক্ষাব্যবস্থার চরম অবনতির মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত দেশের আপামর জনগণের জন্য ক্ষতিকর। কারণ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে ভর্তির আশায় যে প্রস্তুতি নেওয়া হয় সেটিও জ্ঞানের ভুবনকে শাণিত করে। হঠাৎ করে এই রকম একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা এখন চরম হতাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলির এই খেসারত দিতে হবে সম্ভাবনাময়ী তরুণদের। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সমাজে এখন নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। এই মুহূর্তে লেখাপড়ার উন্নতির জন্য বরাদ্দ ভর্তুকি দিয়ে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া ছিল জরুরি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির