post

২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর একটি কালো অধ্যায়। এই রকম লোমহর্ষক আর ন্যক্কারজনক ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। আওয়ামী হায়েনাদের সেই বর্বরোচিত নিষ্ঠুরতা গোটা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছিল। বিশ্ববাসী ধিক্কার জানিয়েছেন তাদের এই অপকর্মে। আওয়ামী লীগের সেই হত্যাকান্ড জাহিলিয়াত যুগকেও হার মানায়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এটিই প্রমাণ করেছে যে তারা মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী নয়, রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে সেদিন তারা অমানুষের কাজই করেছিল। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। পরদিন ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী সমাবেশের আয়োজন করে। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশস্থলে অবস্থান করছিল। জামায়াতের সমাবেশ শুরু হওয়ার পূর্বেই সকালের দিকে লগি-বৈঠা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। ২০০৬ সালের এই দিনে এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে নারকীয় উল্লাস চালানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সেদিন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর যে পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। লগি, বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা হামলা চালিয়ে যেভাবে মানুষ খুন করা হয়েছে তা মনে হলে আজও শিউরে ওঠে সভ্য সমাজের মানুষ। সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য উল্লাস করার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতার বিচার হওয়াতো দূরের কথা, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলাই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। দেশের বিশিষ্টজনেরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতা ছিল নজিরবিহীন। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। মামলা প্রত্যাহার করার মাধ্যমে বিচার পাওয়ার অধিকারও কেড়ে নেয়া হলো। এতেই প্রমাণ হয় এই হত্যাকান্ডটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। হত্যার রাজনীতিকে উৎসাহিত করার পরিণতি কারো জন্যই শুভ নয়। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে, সেই লাশের ওপর হত্যাকারীদের উল্লাস অবাক করেছিলো বিশ্ববিবেককে। শুধু ঢাকাতেই নয়, লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা সেদিন সারা দেশে চালিয়েছে এই নারকীয় তান্ডব। ওই দিন লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডবে ঢাকাসহ সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৭ জন। ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ৩ দিনে নিহত হয়েছিল চারদলীয় জোটের ৫৪ নেতাকর্মী। ওই দিনের ঘটনায় প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে এখনও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। ওই ঘটনা বাংলাদেশ সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। সেই পৈশাচিক ঘটনার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। বিচার হয়নি একজন অপরাধীরও। ওই দিনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পথ ধরে আসে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান-ইলেভেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসে সেনাসমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার ও বর্তমান মহাজোট সরকার। জরুরি অবস্থার সরকার নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে আর বর্তমান সরকার মামলাটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়ে খুনিদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়। ঘটনার ৯ বছর হতে চলল- হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হয়নি এখনও। দেশবাসীর দাবি, সেই হত্যার বিচার করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশ ও জাতির স্বার্থেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। হ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির