post

‘সীমান্তে আর হত্যা হবে না’ এমন আশ্বাসে বিশ্বাস রাখা যায়?

২৮ আগস্ট ২০১১
মাহমুদুর রহমান দিলওয়ার ‘সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিএসএফ-কে কড়া নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। .... সন্ত্রাসবাদ দমনে উভয় দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। ছিটমহলগুলোর লোক গণনা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা যায়, দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে ৫১ হাজার মানুষ বাস করে। ছিটমহল এবং অপদখলীয় সম্পত্তির বিনিময় বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ড. মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরের সময় এর একটি সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।’ সম্প্রতি সফরে আসা ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। ২৯ জুলাই, শুক্রবার। রাতে দিল্লি থেকে ঢাকায় আসেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। শনিবার সকাল ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসে দ্বিপাকি বৈঠক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগদান করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিষয়ে একটি চুক্তি স্বারিত হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালকদ্বয় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা আনন্দিত। তার আন্তরিকতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে এ রকম আশ্বাস নতুন নয়। অনেক আশ্বাস শুনেছি, সহযোগিতার অনেক সুন্দর নীতিবাক্য দেশবাসীর স্মৃতিপটে অম্লান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিশ্রুতির বাস্তবরূপ আজও এ দেশের মানুষ অবলোকন করেনি। গল্পটি অনেক পুরনো। সম্ভবত গল্পের বইয়ে পড়েছিলাম। গল্পটি হলো, ‘একজন লোক দুটো বিয়ে করেছে। তাদের সংসার ভালোভাবেই চলছিলো। সময়ের পরিক্রমায় দু’জন স্ত্রীর ঘরে দুটো ফুটফুটে সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান দুটো বেড়ে ওঠতে শুরু করে। হঠাৎ একদিন দ্বিতীয়া স্ত্রী ইন্তেকাল করলেন। স্ত্রীর ইন্তেকালের পর তার সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়নি, কেননা সেই সন্তানের দায়িত্ব প্রথমা স্ত্রী সাদরে গ্রহণ করলেন। দুটো সন্তানকেই তিনি মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। এমনকি তিনি নিজের সন্তানের চেয়েও তার সতীনের সন্তানকে অনেক বেশি ভালবাসতে শুরু করলেন। সতীনের সন্তানকে নিজের সন্তানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদর-স্নেহ করেন। ধীরে ধীরে সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ঐ মহিলা নিজের সন্তানকে সদাসর্বদা কোলে-কাঁখে না রাখলেও সতীনের সন্তানকে তা থেকে বঞ্চিত করেন না। মমতাময়ী একজন ‘মা’ হিসেবে তার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। তার ভালোবাসা, আন্তরিকতা, উদারতা আর স্নেহ-মমতার প্রশংসা সর্বত্র। সবাই অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করতো, এটা কিভাবে সম্ভব? নিজের সন্তানকে আদর স্নেহের চেয়েও সতীনের সন্তানকে অনেক বেশি আদর- স্নেহ ও যত্নের সাথে লালন পালন করা! এভাবে ৪-৫ বছর অতিক্রান্ত হলো। একদিন ঐ মহিলার একান্ত একজন বান্ধবী তার সাথে সাক্ষাতে এলেন। দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করলেন। এক পর্যায়ে আগত বান্ধবী তার কাছে জানতে চাইলেন, তোমার প্রশংসা সবখানে। সতীনের সন্তানকে লালন পালনে তুমি অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছো। এটা কিভাবে সম্ভব? এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে কি না? হঠাৎ ঐ মহিলা নীরব হয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমার প্রশংসা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সতীনের সন্তানকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবেসে আমি উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। কিন্তু আমার ছেলে এখন স্কুলে যায়, সতীনের সন্তান যেতে পারে না। আমার ছেলে মাঠে খেলতে পারে, সে তা পারে না। আমার ছেলে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মজা করে, বেড়াতে যায়; কিন্তু সে তা থেকে বঞ্চিত। বান্ধবী প্রশ্ন করে এর মমার্থ বুঝলাম না? মহিলা বললো, যখন শিশু হাঁটতে শেখে, দৌড়াতে শেখে, আমি আমার সন্তানকে সে সুযোগ দিয়েছি। সেই সময়ে আমি সতীনের সন্তানকে  কোলে-কাঁখে রেখেছি, আদর করেছি। তবে তাকে হাঁটতে শেখায়নি, দৌড়াতে শেখায়নি। যার ফলশ্রুতিতে সে আজ পঙ্গু।” এ গল্প থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সতীনের সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা সবার মাঝে সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে দিলেও এর অন্তরালে কত ভয়াবহতা ছিলো, নৃশংসতা ছিলো- ভাবতে অবাক লাগে, কষ্ট হয়! সুতরাং এরকম স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা কিংবা আন্তরিকতা কখনো কাম্য নয়। যে ভালোবাসা আর আন্তরিকতা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়, ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করে। বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অফুরন্ত সম্পদে ভরপুর আমাদের প্রতিটি জনপদ। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট হলেও একটি সম্ভাবনাময় ভূখণ্ড ‘বাংলাদেশ’। রক্ত, ত্যাগ আর জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির স্বাধীনতা রায় দেশপ্রেমিক জনতা সদাজাগ্রত, সবাই ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু নানাবিধ কারণে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। আমাদের সীমান্ত এলাকা অরতি। সীমান্তে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চলছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। সীমান্তে বারবার প্রতিশ্র“তি পেলেও বিএসএফ-এর সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না। অনেকবার চুক্তি স্বারিত হলেও তার বাস্তবরূপ দেখা যায়নি। আমরা বন্ধুত্ব বিনষ্ট নয়, রক্ষার পক্ষে কিন্তু আন্তরিক আশ্বাস, অতুলনীয় প্রতিশ্রুতি আর সহযোগিতার অসাধারণ পদপেক্ষ নেয়ার পরও বারবার আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের সোচ্চার হতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখতে হবে, জন্মভূমির মর্যাদা রায় আপসহীন হতে হবে। লেখক :  সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, সিলেট মহানগর। ইমেইল : [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির