post

আবারো অবাস্তব বাজেট

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ

১৬ জুন ২০১৬
জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অথচ বাজেটে সাধারণ মানুষ কী পেল এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। বিশেষ করে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা ধানের উৎপাদন খরচ না পেলেও এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। তথাকথিত অবৈধ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আসেন। বাজেটে কৃষকদের জন্য কিছু নেই। নেই ছাত্রদের জন্যও। সরকার শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বললেও আগামী বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু না থাকলেও তাদের কাঁধে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট, যা অর্থায়নের কানো নির্দেশনা নেই। তার মানে এই বিশাল ঘাটতি জনগণের কাছ থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অথবা জোর করে আদায় করবে। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে করলে এ কথা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে আসে যে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও ব্যাপক লুটপাটের উদ্দেশ্যে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ এই অবৈধ সরকারকে যেকোনো সময় ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তাই রাজনৈতিক ও লুটপাটের বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনায় এনে দলীয় নেতাকর্মীদের তুষ্টির লক্ষ্যে এ বাজেটকে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে ব্যাপক অর্থসঙ্কটের মধ্যেও বাজেটের অর্থ থেকেই দলের ভোটারদের দান-দক্ষিণাসহ ঠিকাদার নেতাকর্মী এবং এমপিদেরও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা যায়। উল্লেখ্য যে, চলতি বাজেটে লুটপাট করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোমের নামে টাকা পাচার করছে। এবারও সরকার সে ব্যবস্থাই করছে। ভর্তুকির নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও মোটা অঙ্কের টাকা  দেয়া হচ্ছে, যা অবৈধ সরকারের নেতাকর্মীরা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে ব্যাংকগুলো সূত্রে জানা গেছে। বাজেট বিশ্লেষকদের মতে, বাজেট হলো- রাষ্ট্রের আয়নাস্বরূপ। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আমরা যেমন নিজের চেহারার সব খুঁটিনাটি দেখতে পাই, তেমনি বাজেটের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। কিন্তু এই আয়নায় রাষ্ট্রের চেহারা দেখার বিষয়টি আমরা সাধারণ মানুষ কতটুকুইবা বুঝি আর কতটুকুই বা খোঁজ রাখি। এতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব সংগ্রহে মূল্য সংযোজন করকে (মূসক) গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। আগামী বাজেটে এ নির্ভরতা আরো বাড়ছে। ২০১২ সালে নতুন মূসক আইন পাস হলেও আগামী ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু তা আদায় নিয়ে ইতোমধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই মূসক আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে। অর্থমন্ত্রী শুরু থেকেই ১৫ শতাংশ মূসক বহালের পক্ষে দৃঢ়তা দেখিয়ে আসছেন। মূসক নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে একাধিক  বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাজেটের মৌলিক দুর্বল দিকগুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখা যায়, দেশের প্রবৃদ্ধি গেল কয়েক বছর ধরে ৫-৬ এর মধ্যে আটকে থাকছে। সেখানে এই বাজেটে প্রবৃদ্ধ ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। ফলে হঠাৎ করেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন কিভাবে হবে তার কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা নেই এই বাজেটে। আর চলতি বাজেেট ৭.১ শতাংশের উপরে যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ সরকার চলতি অর্থবছরেও ঘোষণা করেছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন হলে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। কিন্তু কাটছাঁটের পর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ কাটি টাকা। তাহলে কিভাবে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলো। এখানে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে যে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। অথচ বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছে না। অর্থনীতিবিদরাও এ নিয়ে চুপ মেরে বসে আছেন। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ১৯ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী বাজেট হবে জিডিপির ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জিডিপির সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণের কাছে?পৌঁছানোর একটি বার্তা থাকবে আগামী বাজেটে এবং অর্থমন্ত্রী একে ‘সমতা সহায়ক প্রবৃদ্ধির বাজেট’ নামে অভিহিত করবেন। জিডিপির তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধির হারকে অবশ্য ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো: আজিজুল ইসলাম। মির্জ্জা আজিজ বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে ২৯ শতাংশের মতো, যা অবাস্তব বৃদ্ধি। কোনোভাবেই এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সাধারণ মানুষকে ভুলানোর জন্যই সরকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছে। তিনি সরকারকে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দেন। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ ধরার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। গেল দুই-তিন বছর থেকে দেশীয় বিনিয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। এতে অর্থনীতি অনেকটাই চাপের মধ্যে রয়েছে। ফলে দেশীয় বিনিয়োগ না বাড়লে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্যিই অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য যে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। এ বিষয়ে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলা নেই। যা কিছু বলা আছে, তা একেবারেই গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে কর্মসংস্থানের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ বাড়ানো ও দক্ষতার ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন সেটা এই বাজেটে নেই। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে কথা বলা হয়েছে তা অর্থমন্ত্রীর কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তাতেও অন্তত সন্দেহ নেই। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার উপরে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মোট বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বরাদ্দসহ হিসাব করলে এডিপির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের জন্য মূলধন : চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেও বাজেট বক্তব্যে তা আড়াল করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থবছর শেষ হতে চললেও ব্যাংকগুলোকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার, এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক একাই পেয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির