post

আমাদের ভাষা আন্দোলন

২৭ ডিসেম্বর ২০১২
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। গত সংখ্যার বিষয় ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন। আগামী সংখ্যার বিষয় “স্বাধীনতার সুফল”। লিখবেন ২৫০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে। অ৪ সাইজের ফুলস্কেপ সাদা কাগজের একপিঠে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁক রেখে লিখতে হবে। লেখার নিচে আপনার পূর্ণ নাম ও ঠিকানা থাকতে হবে। খামের উপরে অবশ্যই “পাঠক চিন্তা” কথাটি লিখে দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ফটোকপি বা নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা গ্রহণযোগ্য হবে না। ই-মেইলেও লেখা পাঠানো যাবে : [email protected]। -বিভাগীয় সম্পাদক
আল্লাহপাক ভাষাবিচিত্রতা ও জাতিবিচিত্রতাকে সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টির নিদর্শন হিসেবে। ভাষা বিচিত্রতার মাধ্যমে তিনি বিশ্বমানবতাকে দিয়েছেন ভাষাগত মুক্তি। এই ভাষা আল্লাহর  বিশেষ দান। পৃথিবীর কোনো দেশ বা জাতিকে তাদের মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করতে হয়নি। কিন্তু আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। এই আন্দোলন ১৯৫২ সালে জোরদার হলেও এর সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর। তখন আমাদের এই ভূ-খণ্ডের শাসক ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে এদেশের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার কথা ছিল বাংলা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠি এদেশের মানুষের উপর উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। এর প্রতিবাদে এদেশের মানুষ “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগানে মিছিলে মিছিলে রাজপথ মুখরিত করে। শাসকগোষ্ঠি মিছিলের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে গুলি চালায়। আর তাতে শহীদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ আরও অনেকে। ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস বিশ্বে আর কোথাও নেই। আমাদের পূর্বপুরুষদের এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্র“য়ারিকে  ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করা হয়। সেই থেকে সারাবিশ্বে ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। অথচ আজ সেই আজ সেই ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ২১ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠানের মধ্যে হিন্দি গান গেয়ে সেই ভাষাকে অসম্মান করা হচ্ছে। মিডিয়ায় হিন্দি সিরিয়ালগুলোর আধিপত্বের কারণে আজ বাংলা ভাষা সঙ্কটের মুখে প্রতিপন্ন। তাই আসুন, আমরা সকল ষড়যন্ত্রকে দূরীভূত করে দিয়ে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা এবং তা রক্ষার আন্দোলনে সচেষ্ট হই। মু. সাইফুদ্দিন কালাকচুয়া ফাজিল মাদ্রাসা বুড়িচং, কুমিল্লা “বাংলাভাষা মাতৃভাষা খোদার সেরা দান”। আমাদের নিজের ভাষা, মায়ের ভাষা, আমরা যে ভাষায় কথা বলি তা হলো বাংলাভাষা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ৮ ফাল্গুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের ঐতিহাসিক আমতলায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার সংগ্রামে একত্রিত হয়ে একত্রে সংগ্রাম করেছিল। এ খবর পেয়ে পুলিশ প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করলে সংগ্রামী ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করে এবং পুলিশ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিছিলে গুলি ছুড়তে থাকে আর তা কোনো বিরতি ছাড়াই চলতে থাকে প্রায় ৩০ মিনিট এবং সেখানেই ঝরে যায় সালাম, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অগণিত প্রাণ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা বাংলাদেশী, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, কিন্তু আমরা আমাদের কথা, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বিদেশী সংস্কৃতির মিল খুঁজে পায়। পাই না আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির কোনো মিল। আবার আমাদের অনেকেই জানে না যে, আজ বাংলা কোন্ সালের কোন্ মাসের কত তারিখ, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর কাছে জনতে চাইলেও মনে হয় বলতে পারবে না যে আজ বাংলা কোন্ সালের কোন্ মাসের কত তারিখ। দিগন্ত টেলিভিশনের এক জরিপে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিক মতো বলতেও পারে না যে কোন্ মাস কত দিনে হয়, ৬ ঋতুর নাম কী? এমন কি বাংলা সনের ১২ মাসের নামও। তাহলে আমাদের এতো কষ্টার্জিত ভাষা আন্দোলনের মূল্য কোথায়? অপর দিকে অন্য ভাষার বছর, মাস ও  দিনের নাম এমন কি তার ইতিহাসও জানে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন স্থাপনা, দোকান ঘরের নাম ও পণ্যের নাম বাংলা ভাষায় না দিয়ে  ইংরেজি বা অন্য ভাষায় বাজারজাত করা হয়। তাই আমি অন্য কোনো ভাষার উপর ঈর্ষা করে নয় বরং সম্মান প্রদর্শন করেই বলতে চাই, আমরা আমাদের ব্যবহার্য সকল বিষয়াদির নাম, কথোপকথন এবং বাংলা সংস্কৃতির লালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বাংলা ভাষা ও ভাষা সৈনিকদের মর্যাদা সকলের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। বাংলার ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাক আমাদের ভাষা সৈনিকদের নাম। বাবুল হুসাইন এমএ (ইংরেজি বিভাগ), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির