post

কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী

মিয়া গোলাম পরওয়ার

১০ জানুয়ারি ২০২১

(শেষ কিস্তি) রাসূল সা.-এর কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে অমুসলিম, জিম্মি ও অন্য মতবাদে বিশ্বাসীদের জন্য আজাদির ব্যবস্থা ছিলো। তারা ইসলামিক রাষ্ট্রের সমালোচনা করতে পারতো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায়। যারা রাসূলের রাষ্ট্রকে পছন্দ করেনি তারাও কিন্তু সেই রাষ্ট্রে বিদ্রোহ করেনি। এর কারণ হচ্ছে রাসূল সা. নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সকলের কথা শুনেছেন; সকলকে অধিকার দিয়েছেন। এর মাধ্যমে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য আল্লাহর রাসূল সা. নিজের জীবনকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। নেতৃত্বের মানদ- হচ্ছে, اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ اَتْقٰىكُمْؕ আল্লাহ বলছেন, “তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহকে বেশি ভয় করবে, যার বেশি তাকওয়া, আল্লাহর কাছে সে ততো বেশি সম্মানিত।” লিডারশিপের এটি একটি কোয়ালিটি। আল্লাহ তায়ালা ইসলামী রাষ্ট্র বা কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সবপর্যায়ে; মন্ত্রিত্ব বলেন, গভর্নর বলেন, ডিসি বলেন, ইউএনও বলেন, পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সেক্টরে, ঊহঃরৎব ড়ভ ঃযব ংড়পরবঃু, যারা যেখানে থাকবেন- তার মধ্যে যার অন্তরে যতো আল্লাহর ভয়, যার যতো তাকওয়া; তাকে তিনি ততো সম্মানিত করবেন। তিনি ততো উচ্চপদস্থ জায়গায় যাবেন। এবং আমানতটি অর্থাৎ রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ এই কনসেপশন দিয়েছেন, اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤى اَهْلِهَاۙ আল্লাহ আদেশ দিচ্ছেন- রাষ্ট্রের আমানত, ক্ষমতার আমানত, সম্পদের আমানত, কথার আমানত, সব ধরনের আমানত; اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন, اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤى اَهْلِهَاۙ তোমাদের আমানত সমূহ তার উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট অর্পণ করো। যে অর্থের আমানত রাখতে পারে না; কথার আমানত রাখতে পারে না; সম্পদের আমানতের খিয়ানাত করে; সে কোন রাষ্ট্রের দায়িত্বে আসতে পারবে না। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে; রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন ক্যাটাগরির লোক হবে তা কিন্তু রাসূল সা. তৈরি করে দেখিয়েছেন। আবু বকরের মতো; উমরের মতো; উসমানের মতো; যায়েদের মতো মানুষগুলো তাঁর অনন্য দৃষ্টান্ত। মক্কায় ১৩ বছর কঠিন পরীক্ষায় দগ্ধ হওয়া মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালা এতো পছন্দ করেছিলেন যে, পরীক্ষার শেষ বেলায় আল্লাহ আয়াত নাযিল করে বললেন, هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَ مَا جَعَلَ عَلَیْكُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍؕ আল্লাহ তোমাদেরকে বাছাই করেছেন। তোমরা বাছাই হয়েছো। ১৩ বছরের ঘর ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে, পিতার চেয়ে আমাকে ভালোবেসেছো। স্ত্রীর চেয়ে, সন্তানের চেয়ে ভালোবেসেছো। সম্পদ ছেড়েছো আমার জন্য। ফলে এই বাছাইতে তোমরা টিকে গেছো। هُوَ اجْتَبٰىكُمْ এই যে পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলো, মদীনায় যাবার পরে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আমানতের যোগ্য মনে করে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। এটা রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের যে মন্ত্রণালয়গুলো ছিলো, রাষ্ট্রের যে মূল সেক্টরগুলোতে তিনি যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন পরীক্ষার আগুনে দগ্ধ হওয়া, পরীক্ষিত হওয়া, বাছাইতে টিকে যাওয়া মানুষদেরকেই আল্লাহ তায়ালার এই প্রিয়নবী রাষ্ট্র পরিচালনার সব জায়গাতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এবং সেই প্রধান দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে বলেছেন, اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ এটাও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের একটা পলিসি যে, পুরুষরা হবে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্বশীল। পুরুষরা হবে নারী জাতির নেতা। উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব নারীদের ওপর যাবে না। রাষ্ট্র বা সমাজের মূল কর্তৃত্বটা বিশেষ কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া; খুব ইমার্জেন্সি কোনো ঊীপবঢ়ঃরড়হ ছাড়া নারীদের কাছে আল্লাহর প্রধান দায়িত্বটা যাবে না- এটা-ই আল্লাহ তায়ালার বিধান। কারণ জন্মগতভাবে নারীরা গুরুদায়িত্ব বহন করার ব্যাপারে দৈহিক এবং মানসিকভাবে শক্তির দিক দিয়ে কিন্তু কম্পারেটিভলি অতোটা অধিকারী নয়। সে কারণে ইসলামী কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে, রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের মূল কর্তৃত্বে পুরুষরাই ছিলেন। নারীরা পরামর্শ দিয়েছেন, রাসূলের স্ত্রীগণ উম্মুল মুমিনীন যারা ছিলেন- যুদ্ধের ময়দানে পরামর্শ দিয়েছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহায্য করেছেন। অর্থাৎ ঢ়ধৎষরধসবহঃধৎু ফবসড়পৎধপু-এর যে আদলটা রাষ্ট্রপতি পরামর্শ সবার থেকে নিবে। সব শ্রেণি, পেশা, নারীদের পরামর্শ, শ্রমিকদের পরামর্শ, ছাত্রদের- সমস্ত ঈষধংং ড়ভ ঢ়বড়ঢ়ষব, সবার থেকে পরামর্শ গ্রহণ করার যে একটা মেকানিজম; তা সেই রাষ্ট্র পরিচালনার মাঝে থাকবে। যাতে প্রত্যেক সেক্টরের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি যেনো রাষ্ট্র পরিচালনার পরামর্শের মাঝে শরিক থাকতে পারে। এমন একটা নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে থাকবে। তবে মূল লিডারশিপ থাকবে কিন্তু পুরুষদের। সেখানে নারীদের নেতৃত্বটা ইসলামী কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পছন্দ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও রাসূল সা. বিদায় হজ্জে কিছু চমৎকার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি সমস্ত মানুষদের, দেশ ও দুনিয়ার সমস্ত জায়গায় মানুষের জান, মাল, ইজ্জতের নিরাপত্তার জন্য মুসলমানদের জন্য আমানতের কথা বলেছেন। সমগ্র বিশ্বকে শান্তি ও কল্যাণের জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে তাকে গাইড দিচ্ছেন যে, كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ সমগ্র মানবজাতির জন্য আপনি এসেছেন। ফলে দেশ এবং দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক নীতি; পররাষ্ট্রনীতির দিক থেকে শক্তিশালী বন্ধন আপনাকে তৈরি করতে হবে। সূরা মায়েদার ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “কোনো এক পক্ষের শত্রুতা যেনো তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিচ্যুত না করে।” কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে আমার কোনোরূপ শত্রুতা থাকতে পারে, তাই বলে আমি তার সাথে বেইনসাফি করতে পারবো না। এটা একটা ফরেন পলিসি। সে আমার শত্রু হতে পারে। সূরা আনফালের ৬১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “অপর পক্ষ যদি সন্ধি করতে চায়, তবে তোমরাও তার প্রতি অগ্রসর হও।” তারা যদি কোন আলোচনা চায়, ডায়ালগ চায়; নেগোসিয়েশন চায়; কোন শর্ত চায়; কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য- আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি সেই সন্ধির দিকে এগিয়ে যাও। বন্দীদের প্রতি সদাচরণের কথা বলে পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নীতিতে ইসলাম অর্থাৎ আল্লাহর নবীর যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র- তার উদাহরণ তিনি উপস্থাপন করেছেন। এবং গণতন্ত্র, জনমত, সংবিধান- এসব ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল তার রাষ্ট্রকে উদাহরণ হিসেবে তৈরি করে ৫৭টি শর্তবিশিষ্ট ‘মদীনা সনদ’, ঈযধৎঃবৎ ড়ভ গধফরহধ যেটাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান; যেখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে, নব উত্থিত রাষ্ট্র হিসেবে, নগর রাষ্ট্র হিসেবে সেখানকার সমস্ত বিরোধী গোত্র, সমাজ, রাষ্ট্রের সাথে তিনি কিভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ৫৭টি আর্টিকেল সেখানে ছিলো। তার ভিত্তিতে লিখিত একটি সংবিধান তিনি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে তৈরি করেছেন। দীর্ঘ ১০ বছর রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব পালন করবার পর তিনি আল্লাহ তায়ালার সাথে মিলিত হন। কিন্তু দেখুন, রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের যেই পযধরহ, সেখানে কিন্তু ফবসড়পৎধপু, পরামর্শের মাধ্যমে গণতন্ত্রটা তিনি কিভাবে প্রমোট করেছেন। তিনি কিন্তু বিদায়ের আগে কাউকে বলে যাননি, যে তিনি তোমাদের খলিফা হবেন, তিনি তোমাদের রাষ্ট্রপতি হবেন। স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনে তিনি কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট, নিশ্চিত নির্দেশ দিয়ে যাননি। কিন্তু পরবর্তীকালে কী হয়েছে? তার এই যে নীরবতা; তিনি চলে গেলেন, তার লাশ দাফনের জন্য প্রায় দুই থেকে আড়াই দিন ডিলেই করা হয়েছিলো। পরবর্তী খলিফা কে হবে, সেটার জন্য সাহাবায়ে কেরামরা পরামর্শ করে স্থির করেছিলেন। এবং রাসূল সা. পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন তার ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশ, কোনো নিয়োগ দিয়ে যাননি তিনি। তার এই নীরবতা, এবং আল্লাহর কুরআন মজিদের ওই আয়াতটা, যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّٰهِؕ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে বলেছেন যে, তুমি রাষ্ট্রীয় সব কাজে-সংগঠনের কাজে-রাষ্ট্রীয় কাজে তুমি তোমার সঙ্গীদের সাথে পরামর্শ করবে। এই যে মোশাওয়ারাহ -وَ اَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَیْنَهُمْ۪ দাতাদের বৈশিষ্ট্য যে তারা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এই যে, রাসূলের নীরবতা আর তাদের সামগ্রিক কাজ পরামর্শ করেই সম্পন্ন হয়, আল্লাহর এই নির্দেশের ভিত্তিতেই কিন্তু পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদা চারজনই কিন্তু পরামর্শ করে রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। ফলে, গণতন্ত্র যেটাকে আমরা বলি-গণতন্ত্র বলতে ঐ অর্থে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। যেটাকে ‘ওয়েস্টার্ন ডেমোক্র্যাসি’ বলা হয়। জনগণের সার্বভৌমত্ব যে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা-আমরা ঐটা ইবষরবাব করি না। শুরুতেই বলেছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি হচ্ছে কি?-দঝড়াবৎবরমহঃু নবষড়হমং ঃড় ঃযব অষসরমযঃু অখখঅঐদ- আর 'ঝড়াবৎবরমহঃু নবষড়হমং ঃড় ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব- জনগণ সার্বভৌমত্বের উৎস-ক্ষমতার উৎস আমরা এটাকে মানি না। এটা গণতন্ত্র নয়। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান পরিবর্তনের ব্যাপারে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠন। এই যে নিয়মতান্ত্রিকতা, এটাকে আপনি ডেমোক্র্যাসি বলবেন, কি একটা ডিসিপ্লিন বলবেন, একটা রুলস বলবেন, যা-ই বলবেন- ‘দ্যাট ইজ আপ টু হিম’। আর এটা আমাদের ব্যাপার। কিন্তু বিশ্বে জনমত নিয়ে সরকার পরিবর্তন আর সরকারকে বিদায় করা এই সিস্টেমটা যেভাবে গড়ে উঠেছে এইটাকে ‘ইসলাম সমর্থন’ করে। এবং সেটা দেখা যায় যে হযরত আবু বকর রা. উমর রা. উসমান রা. আলী রা. চারজন প্রকাশ্য জন-সম্মেলনে আড়াই বছর যে আবু বকর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করলেন সেটা প্রকাশ্যে সভা-সম্মেলনে জনগণের মাঝে পরামর্শ করে কিন্তু তিনি খলিফা নিযুক্ত হয়েছিলেন। উনি কারোও উবঢ়ঁঃবফ ছিলেন না, পরামর্শের ভিত্তিতে ছিলেন। এবং কত স্বর্ণযুগ সেই খলিফার ছিল! ইতিহাস বলে আড়াই বছর তিনি রাজত্ব করেছেন, খিলাফত চালিয়েছেন, আড়াই বছরে রাষ্ট্রের কাছে কোনো ‘মামলা দায়ের’ হয়নি। পার্সনালি নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে, সালিশ হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে কোনো কেইস যেটাকে আমরা বলি আদালতের কাছে আড়াই বছরে আবু বকরের আমলে কোন মামলা দায়ের হয়নি।

উমর রা. খলিফা নিযুক্ত হয়েছিলেন প্রবীণ এবং বিশিষ্ট সাহাবীদেরকে ডেকে তাঁকে আবু বকর রা. আগেই পরামর্শ করে রেখেছিলেন। তারপরে সকলের মতামত নিয়ে হযরত উমরকে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেটাও একা নয় মতামত নেয়া হয়েছিল। উসমান রা.-এর ব্যাপারে আগের খলিফা ছয়জনের বোর্ড গঠন করে দিয়েছিলেন। ছয়জনের পরামর্শের ভিত্তিতে উসমান রা. খলিফা হয়েছিলেন। আলী রা.-এর ব্যাপারেও এরকম যে, কয়েকজন সাহাবী তো হযরত আলী রা.-এর ঘরে চলে গেলেন, গিয়ে বললেন আপনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, বারবার অনুরোধ করলেন। উনি (আলী) বললেন, না, আমি খেলাফতের দায়িত্ব নিতে পারবো না। তারপরে খুব বেশি অনুরোধের পরে হযরত আলী রা. বললেন যে, তাহলে মসজিদে চলুন- গোপনে আমার খেলাফতের বাইয়াত হতে পারে না। সকল জনসাধারণের সামনে সকলের মতের ভিত্তিতে আমার খেলাফতের বাইয়াত হবে। এবং তিনি মসজিদে নববীতে গেলেন আনসার মুহাজির এবং সম্মিলিত সমর্থনে তিনি কিন্তু খলিফা নিযুক্ত হলেন। উদাহরণগুলো এজন্য দিচ্ছি যে, রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্র এবং পরবর্তী খিলাফত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনে; নেতৃত্ব নির্বাচনে কেউ কাউকে নিয়োগ দিয়ে চলে যাবে-রাজার ছেলে রাজা হবে, পীরের ছেলে পীর হবে কোনো জনমত ছাড়া-মতামত ছাড়া; ঙঢ়রহরড়হ ছাড়া এটা রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কোনো উদাহরণ বা নজির নয়। আজকের আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, সেখানে ডেমোক্র্যাসির কথা এটাই। কিন্তু সেই ডেমোক্র্যাসি তো আমরা মানি না। যে ডেমোক্রেসিতে আমরা ভোটের আগের রাত্রিতেই ভোট করে ফেলি। ভোট ছাড়া আমরা ঘোষণা দিয়ে ফেলি-সুতরাং এটাকে আমরা ডেমোক্র্যাসি বলি না। তো, আজকে আমরা যারা রাসূল সা.-এর কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি তাদের কাছে এই ছবিগুলো যে তিনি রাষ্ট্র কিভাবে কায়েম করেছিলেন। আমি লাস্ট একটা কথা বলতে চাই যে, ন্যায়বিচার-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা এসব ব্যাপারে কিন্তু রাসূল সা. ‘কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে’ তিনি নিজে তা কায়েম করে দেখিয়েছেন। আর মহানবীর কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের আইনের উদ্দেশ্য কিন্তু কাউকে শাস্তি দেয়া ছিল না বরং শাস্তির দরকার যেন না হয় এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা কিন্তু রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কাজ ছিল। যে এমনভাবে তিনি রাষ্ট্র চালাবেন কারো যেন শাস্তি পেতে না হয়- নেহাত যদি কোনো প্রয়োজন হয় তখন আদালতে আসবে। এবং ন্যায়বিচারের ব্যাপারে, স্বচ্ছতার ব্যাপারে, জবাবদিহিতার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল এটা করেছেন। খলিফারাও এটা করেছেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভুক্ত মানুষের খোঁজ নিয়েছেন। মাথায় আটা বহন করে নিয়ে গিয়েছেন। প্রসূতি মায়ের সেবা করার জন্য খলিফা উমর নিজের স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিচারের নজির সেই নব্যুয়তের শাসনের ভিত্তিতে খোলাফায়ে রাশেদীনরা কি করেছেন। হযরত আলীর শিরস্ত্রাণ চুরি হয়ে গেল, একজন ইহুদির বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুললেন, আদালতে মামলা করলেন কিন্তু কোর্ট (খলিফার) সেই মামলা খারিজ করে দিলো। কারণ হলো (কোর্ট বলছেন) যে, আপনার ছেলেই তো সাক্ষ্য দিবে ফলে ছেলের সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। সে জন্য ইহুদির পক্ষে রায় হয়ে গেল আর আমিরুল মুমিনীনের মামলা খারিজ হয়ে গেল। এবং কোর্টে যখন হযরত আলী রা. গেলেন সেটাও ইতিহাসে আছে যে, আমিরুল মুমিনীনকে বিচারক দেখলেন, দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন সম্মানের কারণে। আমিরুল মুমিনীন তা দেখে বললেন, অতিরিক্ত সম্মান দেখিয়ে আপনি কিন্তু পক্ষপাতিত্ব করেছেন। সব আসামির মত, সব বাদি-বিবাদির মত আমিও আজকে কোর্টে এসেছি। তো আমার সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে আদালতে আচরণ হবে। কিন্তু আমাকে দেখে অতিরিক্ত সম্মান দেখানোর জন্য এ দাঁড়িয়ে যাওয়া হয়েছে-আমিরুল মু’মিমীন বললেন, এটা হচ্ছে একটা পক্ষপাতিত্ব। কত বড় সুবিচার; কত বড় মর্যাদা; কত বড় আইনের শাসন; কত বড় জবাবদিহিতা এটা খেয়াল রাখতে হবে। এবং এটা আমরা জানি যে কোরাইশের বনি মাখযুম গোত্রের এক মহিলা চুরি করলো-হাত কাটার ফয়সালা হয়ে গেল। রাসূলের সবচেয়ে প্রিয়ভাজন একজন সাহাবী উসামা বিন যায়েদ রা. তিনি সুপারিশ করলেন যে মহিলা রক্ষা করা যায় কি না। উত্তরে রাসূল কী বলেছিলেন? যে আমার কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে তো আমি তার হাত কেটে দিতাম। ঔঁংঃরপব! ফলে কোনো সুপারিশ কোন তদবিরে কোনো কাজ হয়নি। ইনসাফ তো ইনসাফ! নারী অধিকারের ক্ষেত্রেও একেবারে অনুরূপ; রাসূল সা. হাদিসের মধ্যে পরিষ্কারভাবে কন্যাসন্তানকে জান্নাতের কারণ বলেছেন। তাদের উত্তরাধিকার, তাদের মোহর, তাদের জন্য আলাদা আইন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত বলা হয়েছে। মেয়েদেরকে বলা হয়েছে সে পছন্দকৃত কোন স্বামী বাছাই করার ক্ষেত্রে তাকে এখতিয়ার এবং স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, বাধ্য করা যাবে না। এগুলো দিয়ে আল্লাহর রাসূল নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছেন, মায়ের সন্তুষ্টি ছাড়া জান্নাত হবে না। আজকে নারী অধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন, নারী নীতির মাধ্যমে নারীদের যারা ভোগ্যপণ্য বানাতে চাচ্ছেন-রাসূলের কল্যাণমুখী রাষ্ট্র কিন্তু নারীর মর্যাদা-সম্মানের ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ইতিহাস তৈরি করেছে দুনিয়াতে। রাসূল সা. শ্রমজীবী-দুঃখী-বঞ্চিত মানুষদেরকে খুবই পছন্দ করতেন। একদিন এক শ্রমিক সাহাবী মরুভূমিতে কষ্ট করে ধূসর মরুতে পাথরের মধ্য কোদাল চালিয়ে জীবিকা উপার্জন করতে গিয়েছেন। কাছে যখন এসেছেন দেখেন সাহাবীর হাতের তালুতে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। আল্লাহর রাসূল বললেন, “তোমার হাতটা এদিকে বাড়াও তো! তোমার হাতে কালো দাগ কেন?” সাহাবী বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বালুময় মরুভূমির মধ্যে রিযিকের জন্য কোদাল চালাতে গিয়ে আমার হাতে কালো দাগ পড়েছে। আল্লাহর রাসূল তার হাতটা নিয়ে মুখে চুমু দিলেন। “হালাল রুজি, ঘাম ঝরিয়ে যে উপার্জন করা হয় সেটা হচ্ছে উত্তম রুজি, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা” এ কথা বলে রাসূল চুমু খেলেন। আল্লাহর রাসূল তো দোয়া করতেন “আল্লাহুম্মা আহঈনি মিসকিনান, ওয়া আমিতনী মিসকিনান, ওয়া হাশিরনী ফি জুমরাতুল মাসাকিন” (হে আল্লাহ মিসকিনদের সাথে আমাকে বাঁচিয়ে রাখো, অভাবীদের সাথে আমাকে মৃত্যু দান করো, হাশরের ময়দানেও আমাকে মিসকিনদের সাথে রাখো)। আমি তো এই হাদীসটা পড়ে চিন্তা করি সমাজের অধিকার বঞ্চিত-খেটে খাওয়া অভুক্ত-অনাহারী শ্রমিকদের জন্য একটা কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে কী ব্যবস্থা আল্লাহর রাসূল করেছেন। তিনি বলেছেন যে, মালিক যা খাবে পরবে, শ্রমিকও তা খাবে পরবে। শ্রমিক যে কোম্পানিতে যে কাজে শ্রম দিবে, ঐ মালিকের অধীনে ঐ কোম্পানিতে যে লাভ হবে, ঐ লভ্যাংশে শ্রমিকের অধিকার থাকবে। সাধ্যের অতিরিক্ত তাকে বোঝা চাপানো যাবে না। রাসূলের অধীনের থাকা দাস আনাস রা. বলেছেন “আমি এত বছর রাসূলের সাথে ছিলাম, রাসূল কোনদিন আমাকে প্রশ্ন করেননি তুমি এই কাজটি কেনো করনি।” দাসের প্রতি মালিকের কী আচরণ! কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে ক্রীতদাস, শ্রমিকদের সাথে মালিকের আচরণ কেমন হবে আল্লাহর রাসূল কিন্তু তার চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেছেন। এই আলোচনার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হচ্ছে- রাসূল সা. দু’টি পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েম করেছিলেন। একটা হচ্ছে দাওয়াত ও তাবলিগ। অন্যটা তানযিম ও তারবিয়াত। এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে একদল মুমিন ও যোগ্য লোক তিনি তৈরি করেছিলেন। এবং রাসূলের চারটি দফা ছিলো, দাওয়াত দিয়ে তিনি দ্বীনের পথে লোকদের ডেকেছেন, সংগঠিত করেছেন এবং তাদেরকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই সমস্ত কাজ করে তাদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। আল্লাহর রাসূল সা. মক্কার জীবনে এই কষ্ট করেছেন। লোকদেরকে ‘সংগঠিত জীবনে’ এনে প্রশিক্ষিত করেছেন। আল কুরআনের সূরা বাকারার ১২৯ ও ১৫৯, আল ইমরানের ১৬৪, সূরা জুমআ’র ২ নং আয়াতে তারবিয়াত-প্রশিক্ষণ-লোক তৈরি করা-মানুষকে কাছে এনে দাওয়াত দেয়া-এটা একটা ইতিবাচক পদ্ধতি। অন্যদিকে এর মধ্যে একটা নেগেটিভ পদ্ধতি ছিলো। এই কাজ করতে গিয়ে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, উত্তপ্ত মরুর বালুতে পাথর চাপা দিয়ে কষ্ট দেয়া হয়েছে, আগুনে শোয়ানো হয়েছে, টুকরো টুকরো করে হযরত খোবায়েবকে শহীদ করা হয়েছে। এই যে কঠিন অগ্নি পরীক্ষায় নিজের জীবনকে দগ্ধ করে করে তার মাধ্যমে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের সৈনিক তৈরি হওয়ার একটা যোগ্যতা তৈরি হয়-নেফাকি দূর হয়ে যায়, আত্মত্যাগের গুণাবলি সৃষ্টি হয়, আনুগত্যের যোগ্যতা তৈরি হয়। তো একটা হচ্ছে থিওরিটিক্যাল ক্লাস-তারবিয়াত- কুরআন তিলাওয়াত-দারস-টিসি-টিএস-শব্বেদারি করে আমরা মানুষকে জ্ঞানগত যে প্রশিক্ষণটা দেই এটা একটা জিনিস এটা হচ্ছে আমার প্রশিক্ষণের লোক তৈরির পজেটিভ পদ্ধতি। নেগেটিভ পদ্ধতি হচ্ছে-ময়দানে কাজ করতে করতে, দাওয়াত দিতে দিতে, সংগঠন করতে করতে, দ্বীনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হবে, শহীদ হবে, মার খাবে, পঙ্গু হবে, হারিয়ে যাবে, চাকরি থাকবে না। খাদ্য, বস্ত্র, অনাহার এগুলোর মুখোমুখি সে হবে। আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বলেছেন - " وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ " পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে একটা যোগ্যতা তৈরি হয়। এটাকে বলা হচ্ছে লোক তৈরি করার নেতিবাচক পদ্ধতি। সংঘাতমুখর পরিবেশ দিয়ে একটি চরিত্র তৈরি হয়, শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করে কেউ ভালো ছাত্র হয় না তাকে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও করতে হয়। ইসলামী আন্দোলনে লোক তৈরির দুটো পদ্ধতি। একটা হচ্ছে, নাসিহাহ-তাকওয়া- অনুশীলন- তারবিয়াত- প্রশিক্ষণ- লেখাপড়া “ওয়া ইউয়া’ল্লিহুমুল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা ওয়া ইউজাক্কিহিম।” আর ময়দানে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে সেখানে টিকিয়ে রাখতে পেরে নিজের নেফাকি দূর করে ইখলাস তৈরি করা, তাকওয়া তৈরি করা, আল্লাহর জন্য জযবা তৈরি করা, শাহাদাতের তামান্না তৈরি, এটা শুধু থিওরিটিক্যাল ক্লাস করে হয় না এর জন্য ফিল্ডে যেতে হয়। সাঁতার কিভাবে শিখতে হবে তার লিখিত বর্ণনা দিয়ে যদি আপনি সারা বছর ক্লাস করান ঐ ব্যক্তি সাঁতার শিখবে না, ওকে পানিতে ছাড়তে হবে-ধরতে হবে দুইটা-দাপাদাপি করবে, নাকে একটু পানি যাবে, মুখে একটু যাবে, একটু ডুববে, একটু উঠবে এরপর সাঁতার শিখবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী তৈরিরও এই দুটি পথ। একটা থিওরিটিক্যাল, আরেকটা প্র্যাক্টিক্যাল। আর এইভাবে যখন লোক তৈরি হবে সর্বশেষে আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াতে ওয়াদা করেছেন- وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ তিনি ওয়াদা করছেন যে ঈমান আনার পরে যে নিজের চরিত্রকে; যোগ্যতাকে সালেহিনদের মতো যোগ্য করে গড়ে তুলবে আল্লাহ ওয়াদা করছেন “لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ অর্থাৎ আমি অবশ্যই তোমাদেরকে খিলাফত দান করবো। আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে দুটো কথা। এক-মানুষ তৈরি করা লাগবে। দুই-মানুষ একবার তৈরি হয়ে গেলে, জনগণ যদি আল্লাহর আইন ও শাসন পছন্দ করে, আমাদের পক্ষে জনমত দিয়ে দেয়, তো আল্লাহই তাদের হাতে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে দিবেন এবং সেটা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায়। কোন হঠকারী, কোন চরমপন্থা, তথাকথিত জঙ্গিবাদ এবং মানুষ হত্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ ইসলাম সমর্থন করে না। জনমত তৈরি করতে হবে, মানুষের হৃদয়কে জয় করতে হবে। একটা কম্যুনিটি, একটা টেরিটোরি, একটা রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে যখন আল্লাহর আইন ও শাসনের পিপাসা তৈরি হবে, জনগণই সমর্থন দিয়ে সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক পথেই সেই দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এটি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক পন্থা। এই দুটি পন্থা কল্যাণমুখী রাষ্ট্র কায়েমে মহানবীর পন্থা এই দুটি। প্রথমত-একদল লোক তৈরি করা, দ্বিতীয়ত-জনগণ যদি সৎ ও যোগ্য লোকদের পছন্দ করে ফেলে তাহলে আল্লাহই তাকে তার নিয়মে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। এই ক্ষমতা হাতে পেয়ে কিভাবে রাসূলের এই কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে আমরা রূপ দিবো। সে জন্য প্রচারমূলক কাজ করবেন, মানুষের মন মগজ গড়ে তুলবেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করবেন, সৎ-যোগ্য নাগরিক তৈরি করবেন এবং রাষ্ট্রপ্রধান বা খলিফার দায়িত্বের যে বর্ণনা আমি দিয়েছি সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। জান-মাল, ইজ্জতের নিরাপত্তা-সুবিচার নিশ্চিত করবেন এবং রাষ্ট্রকে “দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের” পলিসি হিসেবে নিয়ে আইনকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রকে একটি কল্যাণকর শাসন চালু করতে হবে। শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দিকে আমরা সেই স্বপ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছি। তারাই রাসূল সা.-এর এই কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে এ জাতির শেষ ঠিকানা। আমাদের শেষ প্রত্যাশা আমরা শত শত শহীদের রক্তের কাফনে মোড়া এই কাফেলার দিকে গোটা জাতি একটা আবেগ নিয়ে, আকুতি নিয়ে তাকিয়ে আছি। আমরা আর কতো শহীদ হবো? আমাদের আর কতো রক্ত ঝরবে? আমাদের লোকেরা আর কতো মজলুম হবে? বাড়িঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে রুটিরুজি হারিয়ে মানুষ আজকে পেরেশান হয়ে গেছে। রাসূল সা.-এর একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের স্বপ্ন তারা দেখছে। এই স্বপ্ন কখন বাস্তবায়িত হবে? আমরা আমাদের প্রিয় কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের দিকে তাকিয়ে আছি। যারা আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে এই জমিনে প্রতিষ্ঠিত করা ও রাসূল সা.-এর সিরাতের আদলে এই কল্যাণমুখী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় আমরা যদি সেইভাবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করি, গড়ে তুলতে পারি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের জন্য প্রাণভরে দোয়া করতে পারি আমাদের সন্তানদেরকে, নতুন প্রজন্মকে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে রাসূলের একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রগঠনের সংগ্রামের কাফেলার সৈনিক হিসেবে গড়ে দেয়ার জন্য ভূমিকা রাখতে পারি নিশ্চয়ই আমাদের এই স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ পূরণ হবে। শিবিরের জন্য আমার দোয়া রইল। আশা করি ইসলামী ছাত্রশিবির জাতির সেই প্রত্যাশা পূরণ করবে। ঝড়ঝাপ্টা, বাধাবিপত্তি আসবেই কিন্তু শিবির সমস্ত প্রতিরোধকে মোকাবেলা করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাবে এবং এ জাতির আঠারো কোটি মানুষের দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটিয়ে নিরন্ন মানুষের কষ্ট-অনাহার- অন্নহীন-বস্ত্রহীনের আকুতি বন্ধ করে দিয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের ভাগ্যে হেরার আলোকোজ্জ্বল সেই সোনালি দিন, রাসূলের সুন্দর এক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রগঠনের জন্য তারা বিজয়ের একটি স্বপ্ন আমাদের দেখাবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করছি। ওয়ামা তাওফিক ইল্লা বিল্লাহ।

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজসেবক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির