post

কেন্দ্রীয় সভাপতি রিমান্ডে নির্যাতিত ছাত্রশিবির

২৬ মে ২০১৩

কেন্দ্রীয় সভাপতি রিমান্ডে নির্যাতিত ছাত্রশিবির মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার

৩১ মার্চ। রাজধানীর শ্যামলীতে এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার পথে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেধাবী ছাত্রনেতা মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর মামলা দিয়ে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ১৪ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। দেখা যায় যে, নির্যাতনের ফলে তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। বাম হাতের দু’টি আঙুলের নখ টেনে উপড়ে ফেলা হয়েছে। নির্যাতনের ফলে তিনি কয়েকদিন অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। এই অবস্থায় আবারও তাকে ১৮ দিনের রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, ১৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ৫ দিন অতিবাহিত হতেই তাকে আবার আদালতে হাজির করা হয়। অন্য একটি মামলায় আরও ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত! রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতনে ছেলের জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন বলে দাবি করেছেন তার মা তৈয়বা খাতুন। গত ৮ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। ছোটবেলা থেকে সে কখনও কোনো ধরনের অন্যায় কাজের সাথে জড়িত না থাকলেও এই সরকারের নির্দেশে তাকে মিথ্যা মামলায় আটক করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, নিয়মিত কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করে। নামাজ পড়া, কুরআন হাদিস পড়া কি অপরাধ? তাকে যে অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন শুধু নয় বানোয়াট এবং হয়রানিমূলক।’ ফেসবুকে কেন্দ্রীয় সভাপতির একান্ত প্রিয় জাকিউল ইসলামের স্ট্যাটাস পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি লিখেছেন: ‘সিএমএম কোর্টে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। কেন্দ্রীয় সভাপতির গর্বিত মা কোর্টে দেলাওয়ার হোসেন ভাইকে দেখে বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা, আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা, আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা। তুমি কোনো দোষ করোনি, আমি ধৈর্য ধারণ করেছি। তুমি ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহ তোমার সাথে আছেন।’ তার চোখে পানি এবং আইনজীবীসহ সকলকেই কাঁদতে দেখা যায় কোর্টে। তখন কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, ‘আমি খাব্বাব, খুবাইব (রা)-এর নির্যাতনের কাহিনী পড়েছি। এখন আমিসহ আমাদের ভাইয়েরা এই পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার জন্য চিন্তা করো না।’ দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। একটি কঠিন সময় পার করছে আমাদের প্রিয় এই জন্মভূমি। চারিদিকে অশান্তি। অস্থিতিশীল গোটা জনপদ। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-সংঘাতের কবলে প্রতি মুহূর্তে ভারাক্রান্ত আপামর জনতা। বিশেষ করে ইসলামপ্রিয় জনতা আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যারাই ইসলামের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন, নানাভাবে সবাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের রোষানলে পড়েছে মেধাবীদের প্রিয় সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই সংগঠনটি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মহান ভিশন নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। ইতোমধ্যে মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে একদল যোগ্য, দক্ষ ও চরিত্রবান লোক তৈরি করতে তারা সক্ষম হয়েছে । কথা  ও কাজের অসাধারণ প্রতিফলনে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে ছাত্রশিবির। সারাদেশে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে যখন হাজারো প্রশ্ন, সেই জায়গায় ছাত্রশিবির আগামী দিনে দেশ ও জাতির কল্যাণে একদল আদর্শ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। যাদের মাঝে আল্লাহ ও রাসূল (সা)-এর প্রতি আনুগত্য, খোদাভীতি, আদর্শের সঠিক জ্ঞানের পরিসর, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, শৃঙ্খলা বিধানের যোগ্যতা, মানসিক ভারসাম্য, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, কর্মের দৃঢ়তা, অনঢ় মনোবল এবং আমানতদারিতার মতো গুণাবলী আছে, তারাই এ সংগঠনের নেতৃত্বের উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সরকারের উচিত ছিলো এই ধরনের একটি সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, এরাই আজ সরকারের রোষানলে! তাদের শেষ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। তাদের থামিয়ে দিতে পারলেই যেন সরকার সফলতা পাবে! প্রতিষ্টালগ্ন থেকেই বাধার পাহাড় মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছাত্রশিবির। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও থেমে যায়নি এ কাফেলা। দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। অসংখ্য অগণিত নেতা-কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দিনের পর দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সময় কাটাচ্ছেন হাজারো জনশক্তি। বিশেষ করে এই মুহূর্তে কারাগারে আছেন অসংখ্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল। কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্যদের মধ্যে কারাগারে আছেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান, শামছুল আলম গোলাপ, আবু সালেহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, দেলাওয়ার হোসেন, মোবারক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান আশু ও সাজ্জাদ হোসাইন। ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি ফারুক হত্যাকাণ্ডের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হয় শামছুল আলম গোলাপ ভাইকে। ৩টি বছর তিনি কারারুদ্ধ। রিমান্ডে নিয়ে তাকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আমার প্রিয় বন্ধু ইয়াহইয়াকে গ্রেফতার করার পর নির্মম নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তার এক হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়। একইভাবে নির্যাতনের শিকার ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি প্রিয় ভাই সাজ্জাদ হোসাইন। “হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না, তোমরাই জয়ী হবে, যদি তোমরা মু’মীন হও।” (সূরা আলে ইমরান : ১৩৯) তাই শত কষ্টের মাঝেও আমরা হতাশ হতে চাই না। সত্য, শান্তি আর মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে চাইলে বাধা বিপত্তি আসবেই। কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন-যাপন করতে চাইলে ব্যথা-বেদনা সহ্য করতে হবে। আদম (আ) থেকে শুরু করে বিশ্বনবী (সা) পর্যন্ত যত নবী রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন, সবাই মানুষকে আল্লাহর গোলামীর দিকে আহবান করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত এ পথে যারাই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরকে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হবে। কেননা, এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। হে আল্লাহ! সত্য পথের যাত্রীদের প্রতি রহম করো। দৃঢ় ঈমান, সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে পথ চলার সুযোগ দাও। সবরের যোগ্যতা দাও। তোমার সন্তোষ অর্জনের জন্য উপযুক্ত করো। আমীন ॥ লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, সিলেট মহানগরী

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির