post

ক্ষমতালিপ্সুদের রোষানলে প্রিয় মাতৃভূমি

০৩ মার্চ ২০১৫

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

csবাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট একটি দেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ উর্বর ভূমি, নদ-নদী, সাগর-পাহাড়,  বন-বনানীর অপরূপ প্রাকৃতিক শৈল্পিক ছোঁয়ায় অদ্বিতীয়। ১৬ কোটির বেশি মানুষ। এই ভূখন্ডের মানুষের পরিশ্রমপ্রিয়তা, দুর্যোগ মোকাবেলার হিম্মত, অটুট ঐক্যই সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য পাথেয়। আবহমানকাল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মুসলিম জনপদে সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতি নজিরবিহীন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি তুলনাহীন ভূখন্ডের নাম। বাংলাদেশের তুলনা কেবল বাংলাদেশ। অযুত সম্ভাবনার পরও বহুরূপী ষড়যন্ত্রের মারপ্যাঁচে পড়ে স্বদেশ এখন শ্মশানের পথে। সকল সম্ভাবনা তৈলাক্ত বাঁশে রূপায়িত হয়েছে। একপা এগোলে দুইপা পিছায়।  বেশির ভাগ মানুষের বোধ, বিবেক, বিশ্বাস মেজাজকে অদৃশ্য অপশক্তির অপঘাতে  অবদমিত করতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষফোঁড়ার প্রচলন করতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে একটি পক্ষ। ব্যর্থ পুঁতিগন্ধময় ধর্মনিরপেক্ষতাকে চাকচিক্যতা প্রদান করে সেটিকে ক্ষমতা লাভের সিঁড়ি বা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী  বাহনরূপে ব্যবহার করতে চায়! ক্ষমতা দখলের নীতিই যেখানে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। জনগণের জন্য দেশের জন্য রাজনীতি নয়; নিজের ও পরিবারতন্ত্র কায়েমের জন্যই যেন রাজনীতি! সুশীলসমাজ দেশের অস্বস্তিকর পরিবেশের বিরুদ্ধে হক কথা বলতে চান। কিন্তু তারা হক কথার আশপাশে  ঘুরাঘুরি করেন, শেষ পর্যন্ত হক কথা না-বলাই থেকে যায়। হক কথা যারা বলতে চান তারা ক্ষমতালিপ্সুদের জন্মের শত্রু। কাউকে জাগতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। যদি কেউ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সেই অপশক্তি একসময় প্রতিবাদীকে  গ্রাস করতে চায়। সময় থাকতে প্রতিবাদ করতে হয়। অধিকার আদায়ের কথা বলতে হয়।  হাত-পা বাঁধা বন্দিদশা সময়ে চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না। তাই ছদ্মবেশীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে জনসমক্ষে। এরা দেশ, জাতি ও আগামী বিশ্বব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ষড়যন্ত্রের কবলে বাংলাদেশ অযুত সম্ভাবনার চারণভূমি বাংলাদেশ ভারত, মিয়ানমার ও বঙ্গোপসাগর পরিবেষ্টিত। এ ভূখন্ডটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমাবিশ্ব চীনকে ঘায়েল করতে এ ভূখন্ডের ওপর আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বহুগুণে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ইতোমধ্যে নতুন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র কায়েমের গুঞ্জন রটে গেছে! কালের পরিক্রমায় হয়তোবা তা বাস্তবে রূপ নিতে পারে। পাকিস্তান ও ভিনদেশী আছড় থেকে বাঁচার জন্য ভারত  বাংলাদেশের ওপর অটুট রেখেছে ওপেন-সিক্রেট আধিপত্যবাদ। বাংলাদেশ যেন ‘গরিবের সুন্দরী বউ সবার ভাবী’ রকমের বিপদের কবলে। সেই ১৯৭১ থেকে ২০১৫ সাল। স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৩ বছর পরও শাসকমহলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা, নিরাপত্তা, ভোটের অধিকার অনিরাপদ। গণতন্ত্র, নাগরিকের মৌলিক অধিকার এখানে কেবলমাত্র সংবিধান ও রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের  বক্তব্যের ফ্রেমে আবদ্ধ। তাই নেতাদের যখন যেভাবে যার যেমন খুশি  দেশের মানুষকে নীতিকথার ফুলঝুরি শুনিয়ে, বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা অব্যাহত করা ছিল স্পষ্ট। ক্ষমতার হোলিখেলায় মানুষ খুন, ভোট ডাকাতি, বাড়িঘর লুটপাট, নারীর সম্ভ্রমলুণ্ঠন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিত্যব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ক্ষমতার পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র আমাদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে কাজ করেছে বারবার। ক্ষমতালিপ্সুরা ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করতে প্রয়োজনে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও লেন্দুপ দর্জির মতো ভিনদেশে হাওলা করে দিতে প্রস্তুত বলে মনে হয়! তাদের অপরাজনীতি ও দুঃশাসন দেশের মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে। তেমনি একটি চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বাংলাদেশ।  একটি পক্ষ দেশের সিংহভাগ মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে যেনতেনভাবে গলটিপে, চেপে ধরে, খবরদারি চালিয়ে  শাসনক্ষমতা পরিচালনা করতে চায়। জনপ্রত্যাখ্যাত কোনো ক্ষুদ্রগোষ্ঠী একটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের শাসন পরিচালনা বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় দ্বিতীয় কোথাও নেই। একজনের নেতৃত্বে পাঁচ শ’ জন  ক্ষমতাভোগীর হাতে অবরুদ্ধ সারাদেশ। তাদের অপরাধকর্ম তাদেরকে জনতার আদালতে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। তাই যতদিন সম্ভব, যেভাবে সম্ভব ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যায় ততই লাভ! জনগণের জীবন যায়, সম্পদ যায় তাতে কি? এমন গন্তব্যহীন যাত্রার কবে শেষ হবে কে জানে? কখন ষড়যন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা মিলবে প্রিয় বাংলাদেশের।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আছর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ফেরিওয়ালারা কিছুসংখ্যক ধর্মীয় গুরুদের কুৎসিত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশের ফলে জন-অসন্তোষের সুযোগে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রগতি ও অগ্রগতির দূত হিসেবে  চাকচিক্যভাবে উপস্থাপনের সম্ভব সকল  প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মানে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে সে-ই পালন করবে, ধর্মপালনে কারো কোনো জবরদস্তি নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়  ধর্মের কোনো প্রভাব থাকতে পারবে না বলে সংজ্ঞায়িত করলেও মূলত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রকৃত স্বরূপ হলো ধর্মহীনতা। ধর্মহীন ব্যক্তির  চিন্তা-চেতনা, বিবেকবোধ সবকিছু জড়বাদের অক্টোপাসে জড়িত। জড়বাদের আড়ষ্টে জড়িতরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে থাকে। তারা নিজের চিন্তাচেতনাপ্রসূত সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করতে চায়। কিন্তু এমন শাসন পরিচালনা বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।  সোস্যালিজম, কমিউনিজম ও ক্যাপিটালিজম বিশ্বব্যাপী এখন অচল  মতবাদ, যা বিশ্বকে  ক্ষমতার প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদেরও পতনঘণ্টা এখন সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষবাষ্প এখন সংবিধানে, অবৈধ ক্ষমতাধরদের মুখে।  কেউ কেউ জোরগলায় প্রচার করছে স্বাধীনতার চেতনাই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ! অথচ অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশ স্বাধীন করেছিলেন।  দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপালন করেন। এরপরও  ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রবক্তারা গায়ের জোরে টেনেহিঁচড়ে সবাইকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে চায়। গায়ের জোরে সংবিধানে অনেক কিছু যোগ-বিয়োগ করা যায় কিন্তু মানুষের অভ্যাসগত প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক আচরণ বদলানো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তবে কথা, কাজে, প্রচারে সমাজের নানা স্তরে ধর্মকে যেভাবে মূল সমস্যার চাবিকাঠি হিসেবে চিত্রিত করে অপপ্রচার মিশন চলছে তা এক্ষুনি যদি লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে সমাজে ধর্মহীনতার কুপ্রভাব অচিরেই  প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে স্ব স্ব ধর্ম অনুশীলন ও অনুশাসন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে না পারলে ভোগবাদী সমাজ রাষ্ট্রকে আরো অশান্ত করে তুলবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আছড় থেকে বাঁচার জন্য উদ্যোগী হলে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা সমাজজীবনে গন্ডগোল পাকাতে পারবে না।

ক্ষমতালিপ্সুদের রোষানলে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মীর জাফর, রাজবল্লভ ও ঘসেটি বেগমদের প্রেতাত্মাদের বদনজর থেকে রক্ষা পায়নি। দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলা ও মীর কাশিমকে  ক্ষমতার মোহে নৃশংসভাবে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। কালক্রমে দেশ স্বাধীন হলেও আমাদের দেশের ওপর সেই প্রেতাত্মার আছড় পড়েছে তা এখনও ভর করেই চলছে। ১৯৭১  এ দেশের প্রারম্ভিকটা সুন্দর হলেও কয়েক বছর পর দেশ স্বৈরশাসকের কবলে পড়ে দেশ এক গভীর সঙ্কটে পড়ে। ১৯৭৫ এ এক দুঃখজনক ঘটনার পর স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনকাল, ১/১১-এর পর মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আড়াই বছরের তিক্ত শাসনামলের পর এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করে। শাসন পরিচালনার ৫ বছরে দেশে ভিন্নমতের সকল দল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রমের ওপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ৫ জানুয়ারি ২০১৫  নিয়মরক্ষার নির্বাচনের নামে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৭ সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে, গৃহপালিত বিরোধীদল নিয়ে এবং ভোটারবিহীন হাস্যকর নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতার উন্মাদনায় বাংলাদেশকে আগুনে পুড়ে ছারখার করে নিশেঃষ করে ফেলাই যেন আওয়ামী জোটের বড়  মিশন। তাই দেশে এখন রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। জনগণের রোষানলে পিষ্ট হওয়ার আতঙ্কে বিরোধী মতের সকল সভা-সমাবেশ, দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের ওপর কড়া হস্তক্ষেপ আরোপ করা হয়েছে। টিভি, টকশো, কলাম লেখাÑ সব কিছুই সরকারের পক্ষে নম নম করতে দিব্যি বাধ্য করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনী  নির্বিচারে  বিরোধীদের গুলি করে হত্যা করছে এবং দেশে সংঘটিত সাংঘাতিক  অপরাধ দমনের পরিবর্তে সকল বিরোধী মত দমনের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। এতে দেশাভ্যন্তরে যেমন অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে তেমনি সীমান্তের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। জনগণের মাঝে অটুট ঐক্যের পরিবর্তে নানা ধরনের বিভক্তি বিরাজ করছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি বলে ভেদাভেদ তোলা হয়! দেশের মানুষ যেন এখন স্বাধীন দেশের বন্দিনাগরিক!  সর্বসাকুল্যে বলা চলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে কবলে ক্ষমতালিপ্সুদের রোষানলে প্রিয় মাতৃভূমি!

প্রতিবাদীরা ক্ষমতান্ধদের শত্রু দেশের কল্যাণকামীরা সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সরকার অনেক সময় প্রতিবাদীদের ক্ষমতার জন্য হুমকি মনে করে। কিন্তু সরকার যদি প্রতিবাদ ও সমালোচনাকে সহ্য করতে পারে তাহলে তাহলে প্রতিবাদ-সমালোচনা সরকারকে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার যখন মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের দানা বাঁধতে থাকে। কালেভদ্রে সে ক্ষোভ গণবিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে। তখন সরকার এমন বিস্ফোরণ ঠেকাতে স্বৈরাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের সুরক্ষার জন্য বৃথা চেষ্টা করে। কারণ স্বৈরাচারী সরকারের সমাপ্তি হয় অত্যন্ত করুণ। সুশীলসমাজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শিক্ষিত বিশেষজ্ঞ সমাজ। বিশেষ করে দেশের বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতকে নিয়ে যারা বিশ্লেষণ করেন দেশের কল্যাণে সুদূরপ্রসারী চিন্তা বিশ্লেষণ করেন। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার জন্য বিশেষ অবদান ছাড়াও সরকার ও বিরোধীদলকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আবার সুশীলসমাজ যখন দেশের ও জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে কোন দলের হয়ে কাজ করতে থাকেন তখন দেশের  পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। আমরা এদের মধ্যে সুবিধাবাদী সুশীলসমাজ দেখতে পাই, যারা সত্য বলতে পারেন না। ইনিয়ে বিনিয়ে সত্যের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে  নিজেকে নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করেন। আসল সত্য কথা না বললে অপরাধীরা নতুন করে উৎসাহিত হয়।

জাগতে হবে জাগাতে হবে মানুষ সৃষ্টির মাঝে এক অনন্য। আশা-হতাশা, সাহসিকতা-ভীরুতা, উদারতা-কপটতা, দয়ার্দ্রতা-নিষ্ঠুরতা, ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায়-অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা সব কিছু নিয়েই রক্তে মাংসে মানুষ। ব্যক্তির বোধ ও বিবেক যথার্থ কার্যকর হওয়া-না-হওয়ার ওপর ভিত্তি করে উপরোল্লিখিত সদাচরণ ও অসদাচরণগুলো প্রয়োগ হতে দেখা যায়। মানুষের সৎগুণাবলি ও অসৎগুণাবলি মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের পুরস্কৃত ও তিরস্কৃত করে। মর্যাদাকে বুলন্দ অথবা অপদস্থ করে। জাগতে ও জাগাতে হবে এমন কথা মানুষ ব্যতীত অন্য কানো জীব বা জড়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেহেতু ভালো-মন্দ যাচাইয়ের সক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাই মানুষকে ঘিরেই বিশ্বব্যবস্থায় স্রষ্টার যতসব আয়োজন। মানুষ তার রবের নির্দেশ পালন ছাড়া কারো নির্দেশ পালন করতে পারে না। যখন ব্যক্তি নফসের বা তাগুদের নির্দেশিত পথকে আত্মতৃপ্তির পথ হিসেবে বাছাই করে নেয় তখন জানের ভয় ও মালের প্রতি আকর্ষণ এবং জুলুমবাজি তার কাছে মামুলি ব্যাপার মাত্র। আবার কিছু নিরীহ প্রকৃতির লোক আছে, এরা আমজনতা বলে পরিচিত। এরা জুলুমবাজি ও হঠকারিতা অপছন্দ করলেও ক্ষমতাধরদের তোষামোদি করে নিজেদের বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। এ ধরনের পক্ষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে আমজনতা বা নিরপেক্ষ বলতে পৃথিবীতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাইকে তার যুৎসই পক্ষ বাছাই করে নিতে হয়। পাগলও পক্ষ বাছাই করতে মোটেও ভুল করে না। যেমন- সাগর বা গভীর নদীর মধ্যভাগে কেউ বিনাতরীতে ভেসে থাকতে চাইবে না, তাকে কোনো কিছু অবলম্বন করে তাতে চেপে বাঁচার প্রচেষ্টা চালাতে হয় অথবা সাগর বা নদীর কিনারায় ভিড়তে সাধ্যমাফিক চেষ্টা করতে হয়। কারণ এ দুই ভিন্ন ছাড়া  কোনো অবলম্বন না থাকায় পানির মধ্যভাগের  ব্যক্তিকে নিশ্চিত পানিতে ডুবে মরতে হবে। আমাদের দেশেও তেমন সরকারপক্ষ বা বিপক্ষ দু’টি পক্ষ রয়েছে, যাদের পরম্পর চরম বৈরিতায় দেশে মহা সঙ্কটকাল অতিবাহিত করছে। সবাই বলছে তাদের রোষানলে পড়ে সবাই পিষ্ট হয়ে গুমরে মরছে। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস এ দুই পক্ষের বাইরে ভিন্ন কোনো পক্ষের লোক খুঁজে পাওয়া বড়ই মামুলি ব্যাপার। দেশে এখন যারা আমজনতা বলে মুখে কুলুপ দিয়ে সরকারের জুলুম নির্যাতন থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা করছে তারা মরার আগে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এদের জীবন্ত লাশ বলতে দ্বিধা নেই। এরা হককে হক বলতে পারে না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। এদের নীরবতায় ক্ষমতাধররা মনে করে আমজনতা তাদের পক্ষে। দিনে দিনে ওদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাই ওরা জনগণের শাসনের পরিবর্তে শোষণ করে তৃপ্ত হয়। দেশে এখন অপরাধপ্রবণতা, জুলুমবাজি, অবিচার স্থায়ীভাবে খুঁটি গেড়ে বসছে। তাই শুধু নিজে জাগলে হবে না, সব বিবেককে জাগাতে হবে। আমজনতাকেও সবার জায়গা থেকে না জেগে গত্যন্তর নেই।থ আত্মসম্মান বোধকে শাণিত করতে হবে। আজ নিজেদের অতীত ইতিহাসকে স্মরণ করা জরুরি। যাদের কাছে ফ্যাসিস্টরা পদানত হয়েছিল। কারো রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করে যারা হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন আমরা সে জাতি। তাই পুঁজিবাদ ও ভোগবাদের মোহকে পরিত্যাজ্য করে চিরস্থায়ী জিন্দেগিতে কাক্সিক্ষত পুরস্কার লাভের প্রত্যাশায় সফল মানব মুহাম্মদ (সা)-এর আদর্শ গ্রহণ করে পৃথিবীর কল্যাণ ও আখেরাতের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রয়াসে আমরা এগিয়ে চলি। নচেৎ একটি প্রজন্মের কাপুরুষতা, আল্লাহদ্রোহিতা ও ভীরুতার ফলস্বরূপ দীর্ঘকাল কাপুরুষতা, আল্লাহদ্রোহিতা ও ভীরুতার ঘানি টানতে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, যা একটি জাতির ইতিহাসের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির