আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলার জমিনে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্র ও যুব সমাজের মাঝে আলোকবর্তিকা রূপেই ছাত্রশিবিরের আবির্ভাব। ঘূণে ধরা সমাজব্যবস্থায় ছাত্রশিবির সত্যিকারার্থেই ঊষার আলোর ন্যায় সকল অন্যায়, অসত্য, অবিচার, অনাচার আর অরাজকতার বিপরীতে জাগরণের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের প্রাণের স্পন্দনে পরিণত হয়েছে এই সংগঠনটি। পথহারা যুবকেরা খুঁজে পেয়েছে তাদের গন্তব্য। আর এ কারণেই ঘন দুর্যোগে ও দুর্ভোগে ছাত্রশিবির পরিণত হয়েছে মুক্তির মোহনায়।
আর সব ছাত্রসংগঠনের মতো ছাত্রশিবির ইহকালীন বা সাময়িক কোনো স্বার্থ হাসিলের মানসে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। বরং পরকালীন মুক্তির পথে ছাত্র ও যুবসমাজকে আহ্বান করা এবং দেশ ও দশের সার্বিক কল্যাণ সাধনের মহান উদ্দেশ্যকেই মূল লক্ষ্যে পরিণত করে। আর তখনই নানামুখী বিরোধিতা শুরু হয় এর বিরুদ্ধে। চলতে থাকে একে নিস্তব্ধ করে দেয়ার মানসে নানান ষড়যন্ত্র।
ছাত্রশিবির সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে তার মিশন চালিয়ে গেছে অব্যাহতভাবে। অবশ্য সময়ে সময়ে তার গতিপথ কিছুটা শ্লথ হয়েছে। কিন্তু হোঁচট খায়নি কখনো। এ জন্য প্রায় দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে বিরোধীদের আক্রমণের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। জীবনের সফলতা অর্জন করে তারা মহান প্রভুর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমান সরকার মাস্টার প্ল্যানের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় চেপে বসার পর থেকে তাদের সাড়ে চার বছরের কলঙ্কময় শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। হেরার এই কাফেলার কেন্দ্রীয় সভাপতিকে পর্যন্ত গ্রেফতার করে বারবার নিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা রুজু করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করে চলেছে সরকার। এদেশের ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একমাত্র রক্ষাকবচ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সকল নেতাকে কারান্তরে অন্তরীন রেখে চরম নির্যাতন চালাচ্ছে। অসংখ্য কর্মীও তাদের সাথে কারাগারে আটক রয়েছেন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করে চলেছেন বহু নেতাকর্মী। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার আগেই অনেকের জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনের সুযোগটুকুও। আদর্শ দিয়ে মোকাবেলায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে সরকার তার দলীয় প্রশাসন ও পোষ্য অন্যান্য সংগঠন দিয়ে প্রতিনিয়ত দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর।
কিন্তু আল্লাহর অপার রহমত যে, কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই এর চলার পথকে আগলে রাখতে পারে না। সমাজকল্যাণের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির রাজ-তোরণে আনয়নের লক্ষ্যে সারা বছরব্যাপীই নানান ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। শত নির্যাতন, দমন, পীড়ন আর অস্থিরতা এবং রাজপথে চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি তাই তো সেসবের কথা ভুলে বসে থাকেনি। “গাছে গাছে সবুজ দেশ, আমার সোনার বাংলাদশ” এই স্লোগান সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কেন্দ্রীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল যার ব্যাপ্তি ছিল ২০ থেকে ২৬ জুন। সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী চেষ্টা করেছেন এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৩টি গাছের চারা রোপণের। কল্পনাতীতভাবে সারা দেশে প্রায় ৩ লক্ষাধিক গাছের চারা মাত্র এক সপ্তাহে রোপণ করা হয়েছে। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের কাছ থেকে যা আশাই করা যায় না। সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুনোখুনি, হল ও ক্যাম্পাস দখল, প্রতিপক্ষ কিংবা নিজ দলের সহপাঠীকে নির্যাতন বা খুনের নজির ছাত্রশিবিরের ৩৬ বছরের ইতিহাসে একটিও নেই। বরং ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সকল ছাত্রসংগঠনের সাথে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে তৎপর ছাত্রশিবির। সব বাতিল শক্তি যেখানে এক হয়ে শিবিরকে নিঃশেষ করার চক্রান্তে লিপ্ত, সেখানে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর নিশ্চয়তার অভাব সত্ত্বেও শিবিরের এমন একটি কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন সত্যিই প্রশংসার। বরং এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, শিবিরের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য সব ছাত্রসংগঠনকে এরূপ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার। তাতে আগামী দিনে সবুজ বিপ্লবের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এ কারণে জুলুম-নির্যাতন বা হত্যা-গুম, জেল-রিমান্ড নয় ছাত্রশিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। কারণ বিগত দিনে সংগঠনটি যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তা দেশের সরকারের করা উচিত ছিল। আশা করবো অবিলম্বে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ সকল নেতাকর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দান করে আগামী দিনের দেশ পরিচালনার জন্য সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির কাজকে ত্বরান্বিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলেই তৎপর হবেন।