post

টাগ অব ওয়ার

২৯ জানুয়ারি ২০১৫

মু.সাজ্জাদ হোসাইন

Recentবাংলাদেশে আওয়ামী লীগের গণসম্পৃক্ততাবিহীন নির্বাচন অতঃপর ২০ দলীয় জোটের ঘর গোছানোর কর্মকান্ড। প্রায় বছর ধরে আন্দোলন থেকে নিরাপদ দূরত্বেই ছিল ২০ দলীয় জোট তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। দেশের আপামর জনসাধারণের মনে একটা প্রশ্ন ছিল যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসা এ সরকার কতদিন টিকবে কিংবা কখন শুরু হবে সরকার পতনের আন্দোলন। যদিও নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু কিছুদিন পরই বুঝা গেল ঘটনা এতো সহজ নয়, অনেক প্যাঁচানো। ২০১৪ সালে পুরো বছরে যখন ২০ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে আন্দোলনের কোন Message জনগণ পাচ্ছিল না তখন বেগম খালেদা জিয়ার একটা কথা বেশ রসের জোগান দিয়েছিল। সেটা হলো আন্দোলন কোন ঈদের পরে হবে সে সংক্রান্ত। ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তি। এ খুশিতে ১৪ দল রাজধানীতে মহাসমাবেশের আহবান করে। অপর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোট এ দিনটিকে কালো দিবস আখ্যা দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। ২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে রাজধানীতে একটা সমাবেশ করবে এর প্রচার প্রচারণা তারা মৌখিকভাবে অনেক আগেই শুরু করেছিলো। জেলখানার পরিভাষায় বলতে হয় ‘আমের ভাও’। অনুমতি অনুমতি খেলা শুরু হয়ে গেল। যদিও সভা-সমাবেশ করা কোনো ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ যেকোনো কাজেই এখন পুলিশের হস্তক্ষেপ এবং তারপরে পদক্ষেপ। কেয়ামত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সা) এর অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে এটিও একটি যে রাষ্ট্রসমূহে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। আর সেটিই জেনে কিনা জানি না আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি করে আরও ৫০ হাজার পুলিশ নেয়ার চিন্তা করছেন। যা হোক ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ ঢাকায় হলো না। অর্থাৎ করা গেল না। কেন গেল না সেটি দেশবাসীর কাছে খুবই পরিষ্কার। ২০ দলীয় জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করার আগে আওয়ামী লীগ বিগত ২০১২ সালের মতো সারাদেশ থেকে ঢাকা শহরকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো আর ২০ দল তা অনেকটা প্রস্তুতিহীনভাবেই continue করলো। তাও প্রায় এক মাস হতে চললো। একদিকে দেশবাসী অবরুদ্ধ, অপরদিকে অবরুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া আসলে অবরুদ্ধ নয়। নিজেই অফিস থেকে বাসায় যেতে চাচ্ছেন না। তার বাড়ির সামনে বালু এবং ইটবোঝাই ২৩টি ট্রাক রাখা আছে সেগুলো তিনি নিজেই তার বাড়ির কাজ করার জন্য এনেছেন। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন তিনি এসির বাতাসে খাট-পালঙ্কে বসে ভালো ভালো খাবার খাচ্ছেন আর দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছেন। এ কথাগুলো ম্যাডাম হাসিনাসহ মহাজোট সরকারের এমপি, মন্ত্রীদের বক্তব্য। media-র কল্যাণে পৃথিবীবাসী যখন প্রত্যক্ষ করলো খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের গেটে পুলিশ তালা দিয়ে রেখেছে। তারপর সরকারদলীয় লোকজনের এমন বক্তব্য ১৭ কোটি জনগণকে মহাজোট নেতারা যে বলদ-ঠাওরিয়েছেন তা বুঝা যায়।  এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে একটি terminology মনে পড়ে আমাদের। আর সেটি হলো Tug of war বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির পরিস্থিতিও অনেকটা রশি টানাটানি খেলার মতো। Tug of war সম্পর্কে Free Dictionary যা বলা হয়েছে তা হলো: * Tug of war : i. any Hard struggle between equally matched groups. ii. An open clash.. between two opposing groups (or individuals) police tried to control the battle between the pro-and anti- abortion * Tug of war : a contest in which teams pull of opposite ends of a rope; the team dragged across a central line loses. উপরের সংজ্ঞা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে যে Tug of war চলছে সেটি স্পষ্ট। এখন আমরা এই রশি টানাটানি খেলাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণনা করার প্রয়াস পাবো। এই খেলায় আওয়ামী মহাজোটের উপকরণ যা যা আছে : মহাজোট সরকার তথা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখন প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের নিজস্ব লোক বসানোর ক্ষেত্রে কোনো ভুল করে না। ছাত্রলীগের সাবেক অস্ত্রবাজ ক্যাডারদেরকে এই সরকার এখন পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবিতে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। র‌্যাবের বর্তমান ডিজি বেনজীর আহমেদ ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি যখন মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে visiting teacher ছিলেন তখন নাকি তার ছাত্রদের সামনে বলেছিলেন ছাত্রাবস্থায়ও আমার হাতে পিস্তল ছিলো এখনও আমার হাতে পিস্তল আছে। আর ছাত্রলীগের ক্যাডার হলেই পুলিশের চাকরিতে থাকা অবস্থায়ও উত্তরবঙ্গের এক জেলায় গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী যোসেফের বড়ভাই আমাদের মহামান্য বীর বিজিবির প্রধান আজিজ আহমদ বিজিবি সদস্যদের আক্রান্ত হলে অবরোধকারীদের গুলি করার জন্য বলেছেন। বিজিবি প্রধানের এ বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কারণ অবরোধ হরতাল এগুলো সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। যেখানে বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে প্রতিদিনই বাংলাদেশীদের হত্যা করছে সেখানে প্রতিরোধ না করে তিনি দেশের জনগণকে গুলি করার যে নির্দেশ বিজিবি সদস্যদেরকে দিয়েছেন সেটি অবশ্যই কাপুরুষতাপূর্ণ। আওয়ামী মহাজোট সরকারের তথা ম্যাডাম শেখ হাসিনা ওয়াজেদের অবরোধ ঠেকানোর জন্য কিছু ‘সোনার ছেলে’ আছে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য না হয়েও তাদের সাথে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। তারা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ফায়ার করলেও কোনো অপরাধ হয় না। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢিল ছুড়লেই অপরাধ, ক্ষমাহীন অপরাধ। তবে এটা ঠিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছাড়া মাঠে নামলে যে তাদের অবস্থা কী হবে সেটা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। তাদের হাতিয়ার এর মধ্যে আরও যা আছে তা হলো কিছু paid সুশীলসমাজ এবং কিছু হলুদ সাংবাদিক। আর এদের অধিকাংশই টকশোজীবী। তাদের নাম আমাদের সকলের জানা। তারা যেমন রাতকানা আবার দিনকানাও। এ সরকারের আমলে তারা এতো বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন যে মহাজোট সরকারের সন্তুষ্টির জন্য তারা দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বলতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না এবং এতে তাদের কোনো হায়া কিংবা লজ্জাও নেই সামান্যতম। যেমন ধরুন, আপনি বললেন দেশে অবরোধে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত যেখানে সেই  paid agent রা বলবে দেশে কোনো অবরোধ নেই। জনগণ বলবে খালেদা জিয়ার অফিসের গেটে তালা। তারা জবাবে বলবে সেখানে কোনো তালা নেই, আপনারা ভুল দেখেছেন। কিংবা আর একটু রসিয়ে বলা যায়। টকশো চলাকালে যদি কোন দর্শক ফোন করে বলেন আপনার প্রতিপক্ষের যুক্তি সঠিক। তাহলে হয়তো সে Paid টকশোজীবী বলতে পারেন আসলে আমি ছাড়া আর কোন অতিথিই নেই আপনি ভুল দেখেছেন। কিছুদিন আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বেতন দ্বিগুণ করার বিষয়টিও মহাজোট সরকার তাদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে কাজে লাগাবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ১৫টি চ্যানেল নতুন করে অনুমতি দেয়। আর এগুলোকে বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে প্রচারযন্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। প্রত্যেকটি চ্যানেল যেন বিটিভির ক্লোন। অপর দিকে ইটিভি, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, আমার দেশ বন্ধ করার মাধ্যমে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। তারপরও যে সকল চ্যানেল কিছুটা স্বাধীনভাবে খবর প্রচার করার চেষ্টা করতো, কয়েকদিন আগে মহাজোটের মন্ত্রীরা তাদের শাসিয়ে সেটা বন্ধ করে দিলেন। অপর দিকে মহাজোট সরকার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আনুকূল্যও পেয়ে যাচ্ছে। BGMEA, BKMEA তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে এরূপ প্রচারণা চালাচ্ছে। আর বিরোধী জোটকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে। মহাজোট সরকার বারবার যেটি মানুষের সামনে তুলে ধরে সেটি হলো তারা ঢাকায় বেশ কটি ফ্লাইওভার করেছে, হাতিঝিলের সংস্কার করেছে। তবে সব মিলিয়ে হাজার পাঁচেক কোটি টাকার কাজ হবে। তাদের সময়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এসএসসি এবং এইচএসসিতে জিপিওএ ৫ পেয়েছে।  বৈদেশিক রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের অধিক করেছে। মাথাপিছু বার্ষিক আয় বেড়ে ১১৫০ ডালারে উন্নীত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এগুলোর প্রায় সব কটি নিয়েই লজ্জাজনক বিতর্ক আছে। ২০ দলীয় জোটের পক্ষে যে সকল বিষয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচন ২০ দলীয় জোটের জন্য একটা পজেটিভ পয়েন্ট। কারণ মিডিয়ার কল্যাণে সারা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যায়নি। আর এতেই ২০ দল বুঝে যায় public support তাদের পক্ষে। তবে নির্বাচনে না যাওয়াটা তাদের জন্য ভুল ছিলো কি না সেটা বড় বিষয় না হলেও জনগণ যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তখন পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ মানুষ ২০ দলীয় জামায়াত-বিএনপি জোটের পক্ষে। এটা তাদেরকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তবে তার জন্য ২০ দলীয় জোটের সরকারকে নির্বাচমুখী করতে হবে, সেটা, যেকোনোভাবেই হোক না কেন। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০ দলীয় জোটের পক্ষে সরাসরি কথা না বললেও তারা যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি এবং সংলাপের তাকিদ সরকারকে দিচ্ছে সেটা স্পষ্ট। এই রশি টানাটানির খেলায় জিততে হলে বিএনপি-জামায়াত জোটকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থনকে কাজে লাগাতে হবে। কিছু দালাল ব্যতীত দেশের সচেতন নাগরিকবৃন্দের বিশেষ করে সুশীলসমাজের একটা বিরাট অংশের মৌন সমর্থন রয়েছে ২০ দলের প্রতি। বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নারাও এ সরকারের একগুঁয়েমি নীতির বিরুদ্ধে। যা এর আগে খুব বেশি একটা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিশেষ করে HRW (Human Rights Watch), Amnesty International যেভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছে, তাতে সচেতন নাগরিকদের কাছে সরকারের দুর্বল দিকগুলো উঠে এসেছে। আর তার ফলশ্র“তিতে মহাজোট নেতারা মাঝে মাঝে বলেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিএনপির পেইড। সব মিলিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ২০ দলের হাতে। যেসব কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়: বিগত ছয়টি বছর মহাজোট সরকারের আমলে যে কয়টি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছে তার যদি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার হয় তাহলে এ সরকারের অনেকের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে বিডিআর হত্যাকান্ডের শিকার ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার, আর তার বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮০০০ বিডিআর সদস্য এবং তাদের পরিবার। ঘটনার জন্য দায়ী তা বিবেচ্য বিষয় হলেও তার চেয়ে বেশি বিবেচিত বিষয় হলো মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থেকে হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না। Destiny, হলমার্কের পুকুরচুরি শেয়ার বাজারের ৮৬,০০০ কোটি টাকা লুটপাট এবং তার ফলশ্র“তিতে ৩৩ লাখ গ্রাহকের সর্বস্বান্ত হওয়া এসব ঘটনায় আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নাম বরাবরই উঠে এসেছে। আর এতে শঙ্কিত আওয়ামী লীগ। ৫ মে শাপলা চত্বরে সরকার যৌথবাহিনী দিয়ে নিরস্ত্র নিরীহ ইয়াতিম হাফেজ এবং বৃদ্ধ আলেমদের হত্যা করেছে আর এতে করে বাংলাদেশের আলেমসমাজের মনে যে ঘৃণার জন্ম হয়েছে তা কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে। একদিকে নিরীহ আলেমদের হত্যা, অপরদিকে নাস্তিক ব্লগারদের উসকিয়ে দেয়া ভালোভাবে গ্রহণ করেনি দেশের তৌহিদি জনতা। অপর দিকে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে ট্রাইব্যুনাল দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতিকে বিভক্ত করেছে। আর এ বিভক্তি উসকিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর সহিংসতাকে। এলাকাভিত্তিক প্রতিপক্ষকে দমনের রাজনীতি এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নামধারী ডাকাতদের সন্ত্রাস আতঙ্কিত করেছে গোটা দেশবাসীকে। তাই কাউকে কউকে বলতে শোনা যায় যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় তাহলে একদিনেই আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী আক্রান্ত হবে। আর সে ভয়ও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে, যারা বিগত দিনে অপরাধ করেছে তাদের মনে। আর একটি বিষয় যেটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সেটি হচ্ছে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা অর্থাৎ ক্রসফায়ার এবং গুম। মহাজোট সরকারের দুই মেয়াদের এ ছয় বছরে হাজার হাজার মানুষ ক্রসফায়ার এবং গুমের শিকার হয়েছে। কি রাজনীতিক, কি শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, প্রায় সর্বশ্রেণী-পেশার মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর শেষ কোথায়? একদিকে ২০ দলের অবরোধে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস। গরিব, মেহনতি মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির প্রায়। একটা অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত গোটা দেশবাসী। কি হতে যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত? অপর দিকে সরকারের দমন-পীড়ন, বাসা, অফিস-আদালত থেকে গ্রেফতার করে না ফেরা দেশে পাঠিয়ে দেয়া অশান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। বল এখন সরকারের কোর্টে। ইচ্ছে করলে সরকারই এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু সরকার এবং তার বাহিনী দেশটাকে নিয়ে যাচ্ছে Point of no return-এ। মনে হয় কারোই যেন এদেশের মানুষগুলোর জন্য দরদ নেই। মুখে দেশপ্রেমের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে দেশকে কেউই ভালোবাসে না। বিরোধী দল তথা ২০ দলীয় জোট বলছে তাদের আন্দোলন হচ্ছে অহিংস অপর দিকে সরকার বলছে তাদের আন্দোলন সহিংস। কিন্তু সহিংসতার চিত্র দেখা যাচ্ছে বার্ন ইউনিটে। তবে কেউ নিশ্চিত নয় কারা করছে এগুলো। দেশের কিছু এলাকায় সরকারদলীয় সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ সদস্যরা পেট্রল দিয়ে আগুন লাগাতে গিয়ে ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। আবার ছাড়াও পেয়ে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কোনো চাপের কাছেই তাদেরকে নতিস্বীকার করলে চলবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন মানুষ যদি পানির নিচে এক মিনিট শ্বাস বন্ধ করে থাকতে পারে আর তাকে বলা হয় আপনি আরও ১০ সেকেন্ড ডুব দিয়ে থাকেন তাহলে তার পরবর্তী-এ ১০ সেকেন্ড থাকতে অনেক বেশি কষ্ট হবে। যদি আরও ১০ সেকেন্ড থাকতে বলা হয় তাহলে পরবর্তী প্রতি সেকেন্ড তার পূর্ববর্তী সকল সময়ের চেয়ে অধিক কষ্টকর হবে। ঠিক দীর্ঘসময় আন্দোলন পরিচালনা করতেও ২০ দলের অনেক কষ্ট পোহাতে হবে। যদি সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা না যায় তাহলে এ আন্দোলন ব্যর্থ হবে এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পরাজয় হবে। তাই দেশ রক্ষার স্বার্থে ২০ দলীয় জোটকে মাটি কামড়িয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। সরকার এবং বিরোধী পক্ষ তাদের সর্বোচ্চ শক্তি যাচাই করার পরই আলোচনায় বসবে এটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। লেখক : কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির