post

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান

০৯ জানুয়ারি ২০২০

এবারই প্রথম বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছে। এদেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি খুবই সাধারণ দৃশ্য। সুযোগ পেলেই এক শ্রেণির মুনাফাখোর ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে মূল্য বৃদ্ধি করে থাকেন। বছরের শেষার্ধেকে পেঁয়াজের দাম বাড়লো। সরকার নির্বিকার, জনগণ ক্ষুব্ধ। তারপরও যেন দেখার কেউ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বর্তমান এই যুগে ন্যায়সঙ্গত মূল্যে কোনো পণ্যই আর পাওয়া যায় না। প্রতিটি পণ্যেই যেন অধিক মূল্যের আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। অথচ এক বা দুই দশক আগেও এই অবস্থা ছিল না। মানুষ জীবন কাটাতো সাধ্যের মধ্যে ভালো থেকে। শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মণ চালের কথা যেন এখন রূপকথা। ব্রিটিশ শাসনামলেও দেশের দ্রব্যমূল্য ছিল নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়। দাঙ্গা আর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দেশের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হলেও দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর অর্থনৈতিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী আমাদের জীবনে অতর্কিত হানা দেয়। ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় অধিকাংশ দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে। আর এরই ধারাবাহিকতার চরম পর্যায় হলো বর্তমান অবস্থা। বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় গত চার বছরের মধ্যে বেড়েছে সর্বোচ্চ। তাদের হিসাব মতে, ২০১৪ সালের পর রাজধানীর দুই কোটির বেশি মানুষকে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির মুখে পড়তে হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ১৬ কোটির মধ্যে ১২ কোটি মানুষকেই অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার পঁচাত্তর শতাংশকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্য তাদের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলেছে। সর্বাধিক বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র দুই কোটি মানুষের ওপর। উন্নয়নের সুফল তারা পাচ্ছে না। বাজারে চাল নিয়ে এরই মধ্যে অন্যরকম চালবাজি হয়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের খরচের বড় অংশই চলে যায় চাল কেনায়। গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। আমাদের দেশে প্রায় সব মানুষের খাদ্য ভাত। এমতাবস্থায় চালের দাম বাড়লে তো মূল্যম্ফীতি বাড়বেই। চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মরিচ, মাছ, মাংস, তেল, সাবান ইত্যাদি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্রতিটি জিনিসের দামই ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়া, যাতায়াত খরচ, শিক্ষা, চিকিৎসা, ওষুধপত্রের দাম, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির রেইট। অথচ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আয়-উপার্জন সেই তুলনায় বাড়ছে না। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা তথা তাদের ‘প্রকৃত আয়’ ক্রমাগতভাবে কমছে। শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুরসহ স্বল্প আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্ত জনগণের জীবন সঙ্কট এ কারণে অসহনীয়ভাবে বেড়ে চলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার প্রধানত দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ- তথা শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, কৃষক, পেশাজীবী, কারিগর, নির্দিষ্ট আয়ের কর্মচারী প্রমুখ। মেহনতি মানুষের মজুরি বাড়ে না, কৃষক ফসলের যুক্তিসঙ্গত দাম পায় না, কর্মচারীদের বেতন দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বাড়ে না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগতই বাড়তে থাকে এমনকি লাফিয়ে লাফিয়েও। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তথা ‘প্রকৃত আয়’ কমতে থাকে। শুরু হয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যাতনা। ‘প্রকৃত আয়’ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চলে যায় অনেক মাস-বছর। ততদিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ে তার ‘প্রকৃত আয়’কে আবার পেছনে ফেলে দেয়। ফলে দ্রব্যমূল্যের যন্ত্রণা চলতে থাকে নিরন্তর। দ্রব্যমূল্যের ‘পাগলা ঘোড়া’র যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য মানুষের ‘প্রকৃত আয়ের’ ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একসাথে নিতে হবে দুই দিক থেকে পদক্ষেপ। প্রথমত, ব্যাপক জনগণের ধারাবাহিক আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পণ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্য এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন তা স্থিতিশীল থাকে কিংবা বৃদ্ধি পেলেও তা যেন কখনোই আয় বৃদ্ধির সাধারণ হারের ঊর্ধ্বে না ওঠে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন মহলে উৎকণ্ঠা ও প্রতিবাদের সুর প্রকাশ্যে আসছে। বর্তমান সরকারের আমলে বেশ ক’বার জ্বালানি যেমন- পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুতর দাম বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সাধারণত এতো ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধির কথা শোনা যায় না। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমাদের দেশের সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশের মতো আরো অনেক দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। গত ক’বছরে ওইসব দেশেও কি এই হারে দাম বেড়েছে? পরিসংখ্যান কিন্তু এ কথা বলে না। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বলে থাকেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জ্বালানির মূল্য তুলনামূলকভাবে কম। তারা অবশ্য অন্যান্য দেশের মাথাপিছু গড় আয়ের সাথে আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকের গড় আয়ের কথা বলেন না। বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার ব্যবস্থা, সংস্কারের নামে পুঁজিপতি আর বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে টাকার পাহাড় গড়ে তোলার সুযোগ দেয়া হলেও গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে লালন আর মুষ্টিমেয় মানুষের ধনকুবের করতে গিয়ে সাধারণ মানুষদের নিষ্ঠুর দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পেট্রোলসহ প্রায় সব জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি গরিবদের ওপর আরেক নির্মম আঘাত। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দেশের প্রতিটি মানুষের ওপর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব ফেলতে বাধ্য। জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে কলকারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। আর এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ নাগরিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সরকারি-বেসরকারি যানচালকরা এর সুযোগ গ্রহণ করেন। পেট্রোল-ডিজেলের দাম দশ শতাংশ বাড়লে পরিবহন মালিকরা বাড়ান ত্রিশ শতাংশ। সাধারণ যাত্রীদের তাই মেনে নিতে হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে তারা নির্যাতন ও অপমানের শিকার হন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম যেভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে তার সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চাল-ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজসহ আনুষঙ্গিক অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের যে হিমশিম খেতে হচ্ছে তা উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতা যেন সরকারি কর্তৃপক্ষের নেই। গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম ৪-৫ গুণ বেড়ে গেলেও সরকারি মহল নিশ্চুপ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় দিনকে দিন দেশের কোটি কোটি মানুষের পক্ষে জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালুর কথা বললেও বাস্তবে এর সুবিধা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কায়েমি স্বার্থবাদীদের পকেট ভারী করছে। বিপন্ন অসহায় মানুষের করুণ আর্তনাদ শোনার মতো যেন কেউ নেই। নির্বাচনের পর দেশের প্রত্যেকটি জিনিসপত্রের দাম কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। কিন্তু গত নির্বাচনের পর এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নির্বাচনের সময় বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি কিংবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মোটা অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করেন। নির্বাচনের সময় ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ অর্থ রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে থাকেন নির্বাচনের পর সুদে-মূলে এর দ্বিগুণ অর্থ উসুল করার সংকল্প গ্রহণ করেন তারা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জরুরি প্রয়োজনে দ্রব্যমূল্য মজুদ করে কিছু ক্ষেত্রে বাজার মনিটর করছে, তবে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোরালো নয়। এ বিষয়ে এখনই গভীরভাবে বিবেচনা করা উচিত নীতি নির্ধারকদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকায় নাকি ১৪টি বাজার মনিটরিং টিম নিয়োজিত আছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়। তবে এসব উদ্যোগও সফল বলে মনে হচ্ছে না এখন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিকেজি শিম (কালো) বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শিম (সাদা) ৮০ টাকা, গাজর (ফ্রেশ) ৯০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর রেগুলার ৭০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন আকারভেদে ৫০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৪০ টাকা, শসা (প্রকারভেদে) ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শসা (ক্ষীরা) ৭০ টাকা, কচুর ছড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, জালিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে নতুন আলু এলেও সব ধরনের আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। পুরাতন আলু ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, নতুন আলু (আকারভেদে) ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর মাছের বাজারে প্রতিকেজি (এক কেজি সাইজ) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া কাচকি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, মলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, কই মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাতল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী কালোবাজারি, মজুদদার, মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যদ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। এমন পরিস্থিতি দেশের সীমিত আয়ের মানুষের জনজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ব্যবসায়ীদের বিবেকহীন ও অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের কারণে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ে। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বাজারপ্রক্রিয়াকে রক্ষার জন্য ইসলাম মজুদদারি, মুনাফাখুরি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও দালালির মতো কার্যক্রমকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, “মজুদদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তবে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায় তবে আনন্দিত হয়।” (মিশকাত) মজুদদারি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কখনো কখনো পণ্যদ্রব্যের দাম তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয়। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার ওপর মহামারী ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।” (ইবনে মাজা ও বায়হাকি) দালালি বা মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে দ্রব্যের দাম বাড়ানোর জন্য হাদীসে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মূল্যবৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে আগুনের হাড়ে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।” (তাবরানি, ৮/২১০) বাজারে পণ্য সামগ্রী সঙ্কটের বিরুদ্ধে ইসলাম সতর্ক করেছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, “যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুদ করে রাখে সে বড় পাপী।” (মুসলিম) দ্রব্যসামগ্রীর দাম নাগালে রাখা ও সুষ্ঠু বাজার তদারকিতে ইসলামী বিধান অনুসরণ ফলদায়ক হতে পারে। দূর হতে পারে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি। অন্য দিকে বাজারমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা, অধিদফতর ও অনুবিভাগকে সমন্বিত পরিকল্পনাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির