post

বাংলাদেশে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা

আবু সালেহ মামুন

১৩ মার্চ ২০১৬
বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশের আলোকে গবেষণার চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেশা হিসেবেও গবেষণা অনেক উঁচু মানের ও সম্মানজনক একটি পেশা, গবেষকরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে উচ্চস্থানে আসীন হয়ে থাকেন, তারা দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ, জাতির গৌরব। গবেষকরা শিক্ষকতা, এনজিও ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রভৃতি সেক্টরে চাকরি ও প্রমোশনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। একজন গবেষণাপ্রার্থীর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার সম্যকজ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক এবং সুগভীর চিন্তা। সুতরাং ছাত্রজীবনে যারা স্ব স্ব বিষয়ে সুগভীর জ্ঞান ও ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন তাদেরই গবেষক হওয়া প্রয়াজন। গবেষকগণ  পৃথিবীর সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না, তবে যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন তার আদ্যোপান্ত সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর পর্যন্ত ফলাফল বের করে আনবেন। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে দেশ ও জাতিগঠনে শক্তি সঞ্চয় ও সাহস সঞ্চয় করেন এবং রাষ্ট্রকে আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য উৎসাহ উদ্দীপনা জোগাবেন। সুতরাং গবেষণার্কমগুলো আমাদের জাতীয়জীবনে বিশেষ করে দেশপ্রেম, সুনাগরিক ও শোষণমুক্ত সমাজগঠনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রাখে। গবেষণামূলক উচ্চশিক্ষার স্তর বর্তমানে বাংলাদেশে গবেষণামূলক উচ্চশিক্ষার স্তর হচ্ছে এমফিল ও পিএইচডি। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে দুই বছর মেয়াদি (সর্বোচ্চ তিন বছর) এমফিল ডিগ্রি এবং ৩ বছর মেয়াদি (সর্বোচ্চ ৫ বছর) মেয়াদি পিএইচডি কোর্স চালু আছে। এসব ডিগ্রি দেশ ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অর্জন করা যেতে পারে। গবেষণার বিষয় প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও কমার্সসহ মোটামুটি সব বিষয়ের ওপর গবেষণা হচ্ছে এবং গবেষকরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে উত্তরোত্তর গবেষণার পরিধি সম্পসারিত করছেন। একজন গবেষক কোন বিষয়ের ওপর গবেষণা করবেন সেটা নির্ভর করে তার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং অ্যাকাডেমিক বিষয়ের ওপর যে বিষয়ে সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করছে অথবা অন্য অনুষদ ও বিভাগ থেকেও করা যেতে পারে যদি তার বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য হয়। গবেষণাপ্রার্থীর করণীয় গবেষণাপ্রার্থীর প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে সুপারভাইজার নির্বাচন বা গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক, যার তত্ত্বাবধানে থেকে গবেষণাপ্রার্থী তার গবেষণার কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। সুপারভাইজার গবেষণাপ্রার্থীর গবেষণার বিষয় ঠিক করে দেবেন, গবেষণার কার্জক্রম তত্ত্বাবধান করবেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। তাই প্রার্থীকে সুপারভাইজার নির্বাচন করতে হবে নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হচ্ছে তত্ত্বাবধায়কের গবেষণার ক্ষেত্র, গবেষণার ব্যাপারে তার ইচ্ছা, আগ্রহ সর্বোপরি তার যোগ্যতা  অভিজ্ঞতা। কোথায় গবেষণা করবেন বাংলাদেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৭টির মতো। এদের মধ্যে পুরাতন ও প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মূলত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের জন্য উপযুক্ত। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রাচীন ও খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলোচনায় আনতে পারি। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গবেষণার কাজ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অনেক  গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এবং বিভাগগুলোর মাধ্যমে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আলাদা আলাদা বিভাগ থেকে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমফিল ও পিএইচডিতে ভর্তির যোগ্যতা প্রায় একই রকম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে কিছুটা তারতম্য আছে, এর মধ্যে মূল ধারার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : এমফিল ডিগ্রিতে ভর্তির জন্য স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। তবে বিশেষ কোন ক্ষেত্রে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সুপারিশে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যোগ্যতা শিথিল করতে পারে। পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই এমফিল ডিগ্রিধারী হতে হবে অথবা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা স্নাতকপর্যায়ে কোন কলেজের ২/৩ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, সরকার স্বীকৃত কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২ বছর গবেষণার অভিজ্ঞতা, অথবা স্বীকৃত কোন জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সরাসরি পিএইচডি ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এমফিল প্রাথীকে এসএসসি/ সমমান এবং এইচএসসি/ সমমান উভয় পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে যে কোন একটি ন্যূনতম প্রথম বিভাগ অন্যটিতে দ্বিতীয় বিভাগ অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে উভয় পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ন্যূনতম জিপিএ ৪.২৫ থাকতে হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে যে কোন একটি ৫৫% অন্যটিতে ন্যূনতম ৫০% নম্বর থাকতে হবে অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে সিজিপি ৪ স্কেলের মধ্যে একটিতে ন্যূনতম ৩.২৫ অন্যটিতে ৩.০০ থাতে হবে। পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে উপরোক্ত যোগ্যতাসহ এমফিল/ সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে অথবা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা স্নাতক পর্যায়ে কোন কলেজের ৩ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, সরকার স্বীকৃত কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ৩ বছর গবেষণার অভিজ্ঞতা অথবা স্বীকৃত কোন জার্নালে ২/৩টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : এমফিল প্রার্থীকে এসএসসি/ সমমান এবং এইচএসসি/ সমমান উভয় পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৫০% নম্বর থাকতে হবে অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে সিজিপি ৪ স্কেলের মধ্যে ন্যূনতম ৩.২৫ থাকতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এমফিল প্রাথীকে এসএসসি/ সমমান এবং এইচএসসি/ সমমান উভয় পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে দ্বিতীয় বিভাগ অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। স্নাতক পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে ৫০% নম্বর অথব সিজিপি ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগের সমমান থাকতে হবে এবং সর্বশেষ স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫৫% নম্বর থাকতে হবে। পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে উপরোক্ত যোগ্যতাসহ এমফিল/ সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে অথবা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা স্নাতকপর্যায়ে কোন কলেজের ২ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অথবা সরকার স্বীকৃত কোন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে ২ বছর গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউবি : বিইউবি বাংলাদেশের নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা এবং সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণামূলক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ প্রতিষ্ঠানে এমফিল পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমপক্ষে সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা স্নাতকপর্যায়ে কোন কলেজের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, সরকার স্বীকৃত কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার অভিজ্ঞতা এবং সকল পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে উপরোক্ত শর্তের পাশাপাশি স্বীকৃত কোন জার্নালে গবেষণামূলক ২টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : এমফিল প্রাথীকে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় তবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০% নম্বর থাকতে হবে। এ ছাড়াও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমফিল ও পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভর্তির শর্ত পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে পারে। সুতরাং আলোচনার শেষ পর্যায়ে আমরা বলতে পারি গত এক দশকে বাংলাদেশে গবেষণার ক্ষেত্র ও পরিধি বেড়েছে, তদ্রুপ গবেষণা সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। তাই যারা ভাবছেন ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী, এমফিল পিএইচডি ডিগ্রি, তাদের ভবিষ্যৎ  ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি। কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট : www.du.ac.bd, www.ru.ac.bd, www.cu.ac.bd www.juniv.edu, www.jnu.ac.bd, www.bup.edu.bd www.iu.ac.bd, www.bau.edu.bd লেখক : পিএইচডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির