post

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ

২৭ মার্চ ২০১২
জালাল উদ্দিন ওমর ভারত এবার তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার এক মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আন্তঃনদী সংযোগ নামের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত তার  ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ইচ্ছামতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নেবে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং মেগা এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ভারতের এক নদীর সাথে আরেক নদীর সংযোগ ঘটানো হবে। এর জন্য কৃত্রিমভাবে খাল খনন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩৮টি নদীকে ৩০টি খালের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। ফলে এক নদীর পানিকে সংযোগ খালের মাধ্যমে অন্য নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া ৭৪টি জলাধার এবং বাঁধ নির্মাণ করা হবে, যার ফলে বর্ষার অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করা হবে, যা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা হবে। ২০০২ সালে ভারত এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে এবং কাজ শুরু করে। তখন এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই আন্দোলন শুরু হয়। সরকারের এই ঘোষণার পর ভারতীয় নাগরিক রনজিত কুমার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে পরিবেশবাদীদের তীব্র আন্দোলনের কারণে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ভারত সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এগুতে থাকে। অবশেষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায় সরকারকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধান বিচারপতি এসকে কাপাডিয়ার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারক প্যালেন সরকারকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে এবং তা সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছে। বিচারক প্যানেলের অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি সতান্তর কুমার এবং এ কে পট্টনায়েক। আদালত একই সাথে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের জন্যও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে আদালতের রায়ের ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের আর কোনো বাধা রইল না। আগেই বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। তার জন্য খাল খনন করা হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে বারো হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের মধ্যে সংযোগ খালসমূহ খনন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৪টি লিংক তৈরি করা হবে। সেগুলো হচ্ছেÑ ১. কোচি-মেসি লিংক ২. কোচি-ঘাঘারা লিংক ৩. গংদক-গঙ্গা লিংক ৪. ঘাঘারা-যমুনা লিংক ৫. সারদা-যমুনা লিংক ৬. যমুনা-রাজস্থান লিংক ৭. রাজস্থান-সবরমতি লিংক ৮. ছনার-সোন ব্যারাজ লিংক ৯. সোনড্যাম-গঙ্গা লিংক ১০. মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা লিংক ১১. জোগিঘোপা-তিস্তা-ফারাক্কা লিংক ১২. ফারাক্কা-সুন্দরবন লিংক ১৩. গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা লিংক ১৪. সুবর্ণরেখা-মহানদী লিংক। এই লিংকগুলোর মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে প্রয়োজন মতো এক নদীর পানি অন্য নদীতে নিয়ে যাওয়া যায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খাল কেটে বৃষ্টিপ্রধান উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ পশ্চিম ভারতে অপেক্ষাকৃত বৃষ্টিপাত কম হয় এবং সেখানে আবহাওয়া শুষ্ক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি খাল কেটে রাজস্থান, গুজরাটসহ দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। আবার গঙ্গার পানি গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ১৭৪ বিলিয়ন কিউসেক পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে যার মাধ্যমে এসব রাজ্যের ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ করা হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে খাল খনন সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলতপক্ষে এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো ভারতজুড়ে একটি নদীপথ  তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে ভারতের উষ্ণাঞ্চলে পানিরপ্রবাহ নিশ্চিত হয়ে যাবে। ভারতের এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পরিবেশগতভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। কারণ তখন বাংলাদেশ পানি পাবে না। গঙ্গা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদী যা ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অভিন্ন নদীগুলোর মাধ্যমে যে পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তার তিন ভাগের দুই ভাগই কিন্তু ব্রহ্মপুত্র হয়ে বাংলাদেশে আসে। এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের ওপর কোন বাঁধ নির্মিত না হওয়ার কারণে তার পানি প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু এখন আন্তঃনদী সংযোগের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ ভারতের অন্য অঞ্চলে চলে গেলে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। সুতরাং বাংলাদেশে পানি কম আসবে। বিশেষ করে শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশ পানি পাবে না। ফলে বাংলাদেশ মরুভূমির দিকে ধাবিত হবে। সুতরাং ভারতের আন্তঃনদী সংযোগের বিরুদ্ধে আজ সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। ভারত কর্তৃক পানি নিয়ন্ত্রণের পরিণতি কী তা আমরা ইতোমধ্যেই বুঝতে পারছি। গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। পদ্মার বুকে এখন ধুধু বালুচর। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে মরুপ্রক্রিয়া চলছে। একইভাবে ভারত পানি না দেয়ার কারণে তিস্তার কী হাল আমরা তাও বুঝতে পারছি। তিস্তায় এখন শুধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজ এখন একটি মৃত প্রকল্প। এর প্রভাবে বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল পানির অভাবে হাহাকার করছে। এখন আবার ভারত বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করছে। যার প্রভাবে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মরুপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হলেও বাংলাদেশ কিন্তু কখনই তার ন্যায্য পানি পায়নি। তাই বর্ষাকালে গঙ্গার পানিতে বাংলাদেশে বন্যা হয় আর শুষ্ক মওসুমে ভারত কর্তৃক গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে খরা হয়। এদিকে নদীতে পানি শুকিয়ে যাবার ফলে নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যায়। ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। পানির অভাবে রাজশাহী বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প ধ্বংসের মুখোমুখি। এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবার ফলে অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরো বাংলাদেশই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে এবং এ দেশে মরুপ্রক্রিয়া শুরু হবে যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে, যেগুলোর উৎপত্তি ভারতে এবং ভারত হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদীর পানির ওপর ভারতের মতো বাংলাদেশেরও আইনসঙ্গত এবং ন্যায্য অধিকার রয়েছে। তাই ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলেই ভারত কিন্তু তার প্রয়োজন অনুসারে এবং ইচ্ছামত নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ বণ্টনের জন্য আন্তর্জাতিক যে আইন কানুন এবং নিয়মনীতি রয়েছে তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক অনেক নীতিমালা রয়েছে। তার দু’টি এখানে উল্লেখ করছি। হেলসিংকি রুল ১৯৬৬-এ বলা হয়েছে, ‘অভিন্ন নদী বয়ে চলা প্রতিটি দেশকে নদীর পানি এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে তা অন্য কোন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে বিঘিœত না করে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত দেশে কী ক্ষতি বয়ে আনবে তা বিবেচনায় আনতে হবে।’ ১৯৯৭ সালের ২১শে মে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ইউএন কনভেনশনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,  ‘সর্বোচ্চ টেকসই ব্যবহার ও উপকারের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পানিপ্রবাহ পর্যাপ্ত সংরক্ষণ নিশ্চিত করে অভিন্ন নদীপ্রবাহের দেশগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক উপায়ে পানিপ্রবাহ ব্যবহার করবে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘পানিপ্রবাহের দেশগুলো আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ ব্যবহার, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কাজে ন্যায্য ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে অংশ নেবে।’ অথচ ভারত সরকার শক্তির জোরে ইচ্ছামতো অভিন্ন নদীর পানিকে ব্যবহার করছে। এখন আবার বাস্তবায়ন করছে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। এ অবস্থায় অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে ভারতের ইচ্ছার ওপর। ফলে বাংলাদেশের কৃষি এবং মৎস্য খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষি এবং খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দেবে। নৌপরিবহন, শিল্প এবং সেচব্যবস্থায়ও বিপর্যয় আসবে। বাংলাদেশ পরিবেশগতভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে মরুপ্রক্রিয়া শুরু হবে, যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা শুধু ব্যাহতই হবে না বরং দীর্ঘমেয়াদে পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে। ভারত সরকার তার প্রয়োজন অনুসারে যে কোন নদীতে বাঁধ দিতেই পারে এবং যে কোন নদীর পানি যে কোন স্থানে সরিয়ে নিতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের কোন অভিযোগ থাকার কথা নয় এবং নেইও। কিন্তু ভারতকে এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে, এর ফলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পরিমাণ পানি পাবে এবং এর থেকে কখনো বঞ্চিত হবে না। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক যে নীতিমালা রয়েছে, সেই নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পরিমাণ পানি দিতে হবে। ভারত যদিও বারবার বলেছে সে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না তবু তার অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা সে কথাকে বিশ্বাস করতে পারছি না এবং এই বিশ্বাস করতে না পারার পেছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কারণ ফারাক্কা চালুর সময়ও ভারত বলেছিল যে সে বাংলাদেশকে ন্যায্য পরিমাণ পানি দেবে। অধিকন্তু ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলেও ভারত কখনো তা মেনে চলেনি। তাছাড়া ভারত চায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট। ভারত চায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ব্যবহার। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাতে রাজি না হওয়ায় ভারত এ দেশের ওপর ক্ষুব্ধ। অথচ পানি আমাদের অধিকার আর ট্রানজিট ওদের আবদার। বাংলাদেশ আজ ভারতীয় পণ্যের একক মার্কেটে পরিণত হয়েছে। ভারতের সাথে আমাদের রয়েছে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। ভারতের প্রায় সবগুলো স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে উন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলও ভারতে উন্মুক্ত নয় এবং এক্ষেত্রে ভারতের কোন প্রকার ছাড় নেই। বিএসএফ নিয়মিতভাবেই সীমান্তে বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করেই চলছে। সবকিছু মিলিয়ে এদেশের প্রতি ভারতের আচরণ কখনই বন্ধুসুলভ প্রমাণিত হয়নি বরং প্রমাণিত হয়েছে বিমাতাসুলভ এবং শত্রুতামূলক হিসেবে। এ অবস্থায় ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত যে তার ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পরিমাণ পানি থেকে বঞ্চিত করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? বরং শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারবে এবং এটাই সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত। সুতরাং আজ ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এদেশের সকল মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা কোন দলের একক সমস্যা নয়, এটা হচ্ছে আমাদের জাতীয় সমস্যা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সরকার ভারতের কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না। বরং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে ভাষায় কথা বলেন তাতে মনে হয় তারা ভারতের স্বার্থে কথা বলছেন। আর এসব কিন্তু দেশপ্রেমের লক্ষণ নয়। সরকারের এই নীরবতাই ভারতকে আরো বেপরোয়া করে তুলেছে। কিন্তু দেশের স্বার্থে এসব এখনই পরিহার করতে হবে। সুতরাং সরকার এবং সরকারবিরোধী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই আমাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা। তাই আজ এই ন্যায্য অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্বয়ং ভারতেও এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। সুতরাং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এর জন্য জোরালো দাবি তুলতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে সার্ক, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং জাতিসংঘে এ বিষয়টি তুলতে হবে। ভারত যতই শক্তিশালী রাষ্ট্র হোক না কেন আমাদের ন্যায়সঙ্গত, ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবি ও অধিকার সে মানতে বাধ্য। মরহুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা বিরোধী ঐতিহাসিক আন্দোলনের কারণেই এবং পরবর্তীতে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ফারাক্কা ইস্যুটি জাতিসংঘে তোলার কারণেই কিন্তু ভারত ফারাক্কা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে আলোচনায় বসেছে এবং এর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি করেছে। গঠিত হয়েছে জেআরসি। ১৯৭৬ সালের ১৬ই মে মওলানা ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে জাতিসংঘের ৩১তম অধিবেশনে ফারাক্কা সমস্যা উত্থাপন করেছিলেন। সাধারণ পরিষদের রাজনৈতিক কমিটির সভায় ২৪শে নভেম্বর বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল এবং এ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের কারণে ভারত ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করে। এসব কিন্তু আন্দোলনের ফলেই অর্জিত। যদিও ভারত তার শক্তির জোরে এসব চুক্তি মানতে চাচ্ছে না এবং বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। কিন্তু আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে ভারত এক্ষেত্রে আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিবাদই প্রতিরোধের ভাষা আর প্রতিবাদ, প্রতিরোধই যে কোনো অন্যায়কে বন্ধ করতে পারে এবং আমাদের প্রতিবাদ যত বেশি শক্তিশালী হবে, ন্যায্য অধিকারও তত বেশি আদায় হবে আর অন্যায় কার্যকলাপও তত বেশি বন্ধ হবে। আমরা ভারতের সাথে অবশ্যই সুসম্পর্ক চাই। তবে তা সমতার ভিত্তিতে, নিজস্ব স্বার্থ এবং স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে নয়। সুতরাং ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প যেন আমাদেরকে ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত না হয়, তার জন্য জাতীয় ঐক্য ও সম্মিলিত প্রতিরোধ অপরিহার্য। লেখক : কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির