post

রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতি না করলে কারো পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়

২৩ নভেম্বর ২০১১
কর্নেল অব: অলি আহমেদ বীর বিক্রম ছাত্র সংবাদ :  বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ তম বর্ষপূর্তিতে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার অনুভুতি ব্যক্ত করুন? অলি আহমেদ : বুকে বড় আশা নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করেছিলাম। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল এদেশের রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করবে। জনগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করবে, কিন্তু‘ আজকে চল্লিশ বছর পর  এসে দেখি দেশের জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সরকার দলের ব্যতিত অন্য কারও জান মালের নিরাপত্তা নাই। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিরও নিরাপত্তা নেই। কিছুদিন আগে নরসিংদীর অত্যন্ত জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনিও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্বগতির কারণে এদেশের শতকরা নব্বইজন মানুষ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন না। বিচার বিভাগ এবং বিচার বিতর্কিত হওয়ার কারণে অনেক সময় জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বত্র দলীয়করণ বিরাজ করছে। দলের আজ্ঞাবহ না হলে তাকে কোনো সুযোগ সুবিধা বা প্রমোশন দেয়া হচ্ছে না। আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম সত্যিকারার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় বলতে হয় এ দেশে গণতন্ত্র এখনও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। জনগণের ভাষা বুঝতে হবে। আমি আশা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে এই বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করবেন। ছাত্র সংবাদ : স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কি কি অর্জন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন ? অলি আহমেদ : উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে কিছু কিছু লোক ধনী হয়েছে অনেক লোক মন্ত্রী হয়েছে যাদের মন্ত্রী হওয়ার কথা নয়। অনেকে বড় বড় পদে আসীন হয়েছে যাদের বড় পদে আসীন হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। একটা মানচিত্র পেয়েছি, কিন্তু মানসিক দিক দিয়ে  এখনও আশানুরূপ তেমন কিছু অর্জন করতে পারিনি। ছাত্র সংবাদ : স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের মৌলিক অধিকারসহ আমরা স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছি ? অলি আহমেদ : আজকে গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে আমি যখন যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম একজন সফল মন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ আমাকে বাহবা দিয়েছিল। বাংলাদেশের সবচয়ে বড় সেতু আমার সময়কালেই নির্মাণ হয়েছিল। সারা বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছিল আমার সময়। অথচ আমার মত একজন মানুষকে যখন আদালত কক্ষে বিচারকের সামনে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পুলিশের নাকের ডগায় আক্রমণের শিকার হতে হয়, তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরপরাধ মানুষের কঠিন সাজা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার দলীয় ফাঁসির আসামিরাও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। হত্যা খুনের মত বড় বড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে দলীয় বিবেচনায় । দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে দেশের মানুষ আজ চরমভাবে দিনাতিপাত করছে । ছাত্র সংবাদ :  স্বাধীনতার চেতনা ঐক্যের বিভক্তির নয়Ñএ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? অলি আহমেদ : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আর তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সকল দল ও মতের লোককে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কারণ একটি দেশের উন্নতির জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই। কিন্তু খুনিরা তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঐক্য না থাকলে দেশের আপমর জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারত না। ১৯৭১ সালে দেশে মাত্র ১০% লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে দেশের আপামর জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সারা দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করত কিন্তু আজ কেউ কারো বাসায় যাওয়ার সাহস পায় না। বাইরের লোকেরা কারো সাথে দেখা হলে কথা বলতে চায় না, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ হওয়া প্রয়োজন। সত্যিকারার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং যারা সচেতন দায়িত্বশীল তাদেরকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজনীতিবিদদেরকে দূর্নীতির উর্দ্ধে উঠে আসতে হবে। রাজনীতিবিদেরা যদি দুর্নীতি না করেন তাহলে বাংলাদেশে অন্য কারও পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। ছাত্র সংবাদ : দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোন বিষয়গুলোকে আপনি প্রতিবন্ধক মনে করছেন? অলি আহমেদ : সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলেন রাজনীতিবিদরা । কারণ তারা নিজের দেশের জন্য দালালি না করে বিদেশের দালালি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন : নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং দুদককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদেরকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে, তাদের কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমরা ঠিকমত রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারি তাহলে কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু আমরা ক্ষমতার ভাগাভাগি, ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি করছি। জনগণের মঙ্গলের জন্য কোনো কর্মকাণ্ডে আমরা নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারিনি। ছাত্র সংবাদ : স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী? অলি আহমেদ : সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে মানুষ মানুষের জন্য, যেহেতু আমাদের সকলকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের নির্দেশের বাইরে কোনো কাজ করা  আমাদের উচিত নয়। মিথ্যা সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাগ করতে হবে।মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা বলা কখনও কাম্য নয়। যেটা অন্যায় সেটা প্রত্যাহার করতে হবে এবং কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, প্রতিশোধের রাজনীতি নয়। জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র সংবাদ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তরুন ছাত্র ও যুব সমাজের কাছ থেকে আপনি কেমন ভূমিকা প্রত্যাশা করেন ? অলি আহমেদ : বর্তমান যুগে তরুণ ছাত্র সমাজের অনেক বেশি জানার সুযোগ রয়েছে। রাজনীিিবদদের সম্বন্ধে সকল তথ্য তাদের কাছে আছে। আমরা আশা করব তারা যেন দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং বিদেশের দালালের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে  এবং আগামী দিনের সকল নির্বাচনে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।  তরুণ ছাত্র যুব সমাজকে সঠিক দিক নির্দেশনা এবং সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা আমাদের সকলের উচিত। ছাত্র সংবাদ : একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সমৃদ্ধি আনয়নে আপনার পরামর্শ কি ? অলি আহমেদ : আমাদের কঠোর পরিমশ্রম করতে হবে। দেশকে ভালবাসতে হবে, দেশের জনগণকে ভালবাসতে হবে। দেশের মঙ্গলের জন্য যা যা করা প্রয়োজন নিজেদের জীবন বাজি রেখে তা করতে হবে। সকল প্রকার অন্যায় এবং দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য সকলের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির