post

লগি

বৈঠার সন্ত্রাস : দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘৃণ্য নীলনকশার নগ্নরূপ

০৬ অক্টোবর ২০১১
এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আযাদ এমপি ২৮ শে অক্টোবর ২০০৬ সাল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জঘন্য কালো দিবস।  সেইদিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের পথ ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের দুঃশাসন। ভূলুণ্ঠিত হয় তিন তিনটি নির্বাচিত সরকারের ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ষড়যন্ত্রের নেপথ্য শক্তি পরাজিত হলেও ২০০৮ সালে আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশার নির্বাচনে বাকশাল ও নকশালী চক্রের ক্ষমতা দখলের ফলে দেশ চলে যাচ্ছে মহা বিপর্যয়ের পথে। আজকের অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তাণ্ডবতার পেছনে লুকায়িত ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা মাত্র। তবে ষড়যন্ত্র নতুন নয়। চারদলীয় জোট সরকার পাঁচ বছর মেয়াদের শাসনকাল শেষে সংবিধান অনুযায়ীই কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কথা। যথারীতি ২৮ অক্টোবর রাত ৮টায় বঙ্গভবনে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসানের শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার অপেক্ষায় সমগ্র দেশবাসী। সেই অনুযায়ী বঙ্গভবনে এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের এই পথ অবশ্যই সহজ ছিল না। আমাদেরকে স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকেই একদলীয় ব্যবস্থা, বাকশালী স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যার রূপকার ও মূল প্রবক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর  তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। তিন জোট ও জামায়াতের অবিরাম আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ পরবর্তীতে গণতন্ত্রের নবপথচলা শুরু হলে সেই পথও শত্রুমুক্ত ছিল না; ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালের একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের দোসরদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের স্থানীয় ও অস্থানীয় নীলনকশা ও অপতৎপরতার কাছে জিম্মি। এই গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইত্যাদি নেতিবাচক পরিচিতিতে দেশে-বিদেশে প্রচার করে এদের গণতন্ত্রায়নের মূলে কুঠারাঘাতের জন্য সদা সচেষ্ট থেকেছে এবং পরিশেষে ২০০৭ সালের নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রহীনতা কায়েমের টার্গেটে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে। গণবিরোধী রক্তপিপাসু অপশক্তির সেদিনের লোমহর্ষক, নারকীয় তাণ্ডবতার ঘটনাবলি অবলোকন করে গণতন্ত্র ও শান্তিবিরোধী অপশক্তির হীন চক্রান্তের বিষয়টি সমগ্র জাতির সামনে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। সেদিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লগি-বৈঠাধারী ১৪ দলের সন্ত্রাসী ঘাতকদের হাতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করতে হয়। এসব সন্ত্রাসীর হাতে আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে এ ঘটনার আগে ও পরে শাহাদাতবরণ করেন আরো ৮ জন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। ঘাতকরা যে কত নিষ্ঠুর ও পাশবিক চরিত্রের, সেটা প্রমাণ হয় যখন টেলিভিশনের পর্দায় সারা দিনব্যাপী আমাদের ভাইদের শাহাদাত ও রক্তদানের দৃশ্যাবলি এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র আক্রমণ ও মৃতদেহের ওপর নৃত্যরত নৃশংস-উন্মত্ততা দেখে। ঘৃণায় বিষিয়ে এলো পুরো শরীর। মানুষ কত নিচে নামতে পারে! মানুষের নাম ও পরিচয় ধারণ করে কত নির্মম হতে পারে!! এই ভাবনার মধ্যে আওয়ামী নির্মমতায় শহীদের তালিকায় উঠে এলো মুজাহিদ, জসিম-১, মাসুম, শিপন, শাহজাহান আলী, আরাফাত, জসিম-২, রফিক, জাবেদ আলী, হাবীব, সাবের, আব্বাস ও রুহুল আমীন ভাইয়ের নাম। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ও আওয়ামী সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার সংগ্রামে এতজন নিরপরাধ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর শাহাদাতের ঘটনায় হৃদয়মন ভীষণভাবে ভারাক্রান্ত না হয়ে পারে না। আর সেই সময়ই শান্তি ও ধৈর্যের পরশ নিয়ে মনে উদিত হল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা : “ঐ ঈমানদারদের সাথে ওদের দুশমনীয় এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা এমন আল্লার প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি মহা শক্তিমান ও যিনি কারো প্রশংসার ধার ধারেন না।” (সূরা বুরুজ-৮) রক্তঝরা ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসের ভয়াবহ নৃশংসতার কথা মনে হলেই সমগ্র বাংলাদেশ ভয়ে বিহ্বল হয়ে যায়। মনুষ্যত্ব, মানবতা ও বিবেক সেই অপশক্তির প্রতি নিক্ষিপ্ত তীব্র ঘৃণা ও লানতের কথা পুনর্ব্যক্ত করে। আওয়ামী সন্ত্রাস ও রক্তপাতের ধারাবাহিকতায় সমগ্র জাতি ও বিশ্বজগৎ জানতে পেরেছে যে, ২০০৭ সালের নির্বাচন বানচালে মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রহীনতা কায়েমের টার্গেটে ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে সংঘটিত নৈরাজ্য, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। আধিপত্যবাদী শক্তি এ দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নস্যাতের চক্রান্ত করে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। কারণ কোনো অসাধু পরিকল্পনাই কখনও সফল হতে পারে না। আল্লাহর রহমতে ও দেশপ্রেমিক জনতার প্রতিরোধে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা কোন দিনই বাংলাদেশে তাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পূর্ব পরিকল্পনার ঘৃণ্য নীলনকশা সফল করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। লেখক : মাননীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগরী

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির