post

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার যৌক্তিকতা

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

০৬ মে ২০১৬
মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা, তাহজিব-তমদ্দুনের আলোকে দেশ পরিচালিত হোক এটাই দেশের অধিকাংশ জনগণ কামনা করে। আওয়ামী মহাজোট সরকারের শাসনামলে সমূলে রাষ্ট্রকে সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের মানুষের বোধ ও বিশ^াসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক ইসলামবিদ্বেষী নীতি দেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইসলাম ধর্ম ও স্বাধীনতাকে পরস্পর মুখোমুখি করা হচ্ছে। ইসলামকে দেশ এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতি এ ধরনের অমানবিক আচরণ অগ্রহণযোগ্য। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর মতামত কোনভাবে চাপিয়ে দেয়া যায় না। এই দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে তার নজির বিরল। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাতিল করা মানে দেশের বিরাজমান শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশকে ঘোলাটে করা, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা। এমন স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের ইতিবাচক আচরণকে সাধুবাদ জানাই। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে অনেক দিন তুমুল বিতর্ক চলছিল, যদিওবা তা বিচারিক বিষয়। বিচারিক বিষয় হলেও শাসকগোষ্ঠীর কোন প্রভাব বিচারালয়ে না থাকলে স্বাভাবিকভাবে স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়ে বিচারকগণ দেশের জনসাধারণের মতামতকে মূল্যায়ন করেন বলে আমার ধারণা। অনেক বিষয়ে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন বিষয়ের প্রতি মানুষের বিশ^াস, আবেগ ও ভালোবাসাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না। একপক্ষ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে অন্যদিকে না থাকার পক্ষে মত দিচ্ছে অপরপক্ষ। মূলত চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়, এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত হয়। ২ (ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম।’ রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর ২৩ বছর পর রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করে। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ওই ২ অনুচ্ছেদ আবারো সংশোধন করা হয়। এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ওই বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সম্পূরক রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা ২ (এ) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করার বিরুদ্ধে রিট করার এখতিয়ার নেই মর্মে ১৫ জন নাগরিকের এ সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রুলের শুনানি শেষে এ সংক্রান্ত রিট খারিজ করে দেন। আমি প্রবন্ধে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। আমি একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামের প্রচার প্রসার আরো সমৃদ্ধি লাভ করুক এবং দেশে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা হোক এটাই মনে প্রাণে কামনা করি। ইসলামের মর্যাদা ক্ষুন্ন হোক এমন যে কোন বিষয় আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য। যেহেতেু দেশের মানুষ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদ তাই এখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকলে কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। সুতরাং এটা নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়িকারীরা দেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে এবং এর পক্ষে জনমত তৈরির জন্য নির্লজ্জভাবে কিছু মিডিয়াও উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদের বাগি¦তন্ডা দেখে মনে হয় দেশে ধর্ম উৎখাত করার মিশন নিয়ে এরা মাঠে নেমেছে। ২৫ মার্চ ২০১৬ সারাদেশে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার দাবিতে পথে নেমে আসে। কই আমরাতো দেখলাম না এসব মিডিয়াকে জনগণের সেন্টিমেন্টকে প্রচার করতে! রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাতিলের দুরভিসন্ধিতে যারা লিপ্ত, যারা টকশোতে গলা ফাটিয়ে সেক্যুলার রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাই গাইছেন, মিডিয়ার অপব্যবহার করে জনমত গঠন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন তারা রাষ্ট্রধর্মকে বাতিলের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করে ধর্মপ্রাণ দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। তাদের যুক্তি হলো- এক. স্বৈরাচারী ও নির্লজ্জ এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজিত করেছেন, তাই ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। দুই. সরকার ও সংবিধান যেহেতু সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) সেহেতু এখানে ধর্মের কোন বিষয় সংবিধানে থাকা উচিত নয়। (সেই অজুহাতেই ইতঃপূর্বে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি তুলে নেয়া হয়েছে।) তিন. ধর্মের অপব্যবহার করা হচ্ছে, তাই রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হোক। এসব অবান্তর প্রশ্ন করে সংবিধানের দোহায় দিয়ে যারা সবাইকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল তাদের কাছে কিছু বিষয়ের উত্তর জানা জরুরি। প্রশ্ন হচ্ছে- এক. দেশের শতকরা ৯০% মানুষ যেহেতু মুসলমান, সেহেতু রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে থাকতে সমস্যা কোথায়? এরশাদ অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তাই? তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে একবার সংযুক্ত করে তা আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাতিল করে দেয়ার চেষ্টা চরম অন্যায় নয় কি? আর যেহেতেু পৃথিবীর অসংখ্য দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রাষ্ট্রধর্ম আছে, সুতরাং এদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে সমস্যা কোথায়? দুই. যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাতিল করতে দাবি তুলেছেন তাদের সংখ্যা কত? তারা কারা? দুরভিসন্ধিতে যারা লিপ্ত বা টকশোতে টক ঝাড়ছেন তারা কী উত্তর দেবেন? তিন. রাষ্ট্রের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের চিন্তা-চেতনা, তাহজিব-তমদ্দুনের ভিত্তিতে দেশের সংবিধান ও দেশের নীতি নির্ধারণ হয়, না কী সংখ্যালঘিষ্ঠের মতাদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপরিচালিত হয়? তাহলে কী স্বল্প জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা বৃহৎগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে আপনার মত? চার. কারা জনগণের সামনে মাথায় ঘোমটা বেঁধে, হাতে তসবিহ নিয়ে বিভ্রান্ত করতে এসেছিল? সেই তারা নয় কি, যারা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের বুলি আওড়িয়েছেন? কেন এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রধর্মের পুরনো বিষয়টি বারবার সামনে আনা হচ্ছিল? পাঁচ. যারা আজ নীতিকথা বলছেন, ভোটের সময় তারাই প্রথম নীতি ভাঙবেন, তা বলার অপেক্ষা কি রাখে? তাদের অন্তরালে কী ধরনের শঠতা আর নেকামি লুকিয়ে আছে তা কি কারো অজানা? ছয়. প্রায় ২৮ বছর পূর্বের রিট করা বিষয় হঠাৎ আদালতের শুনানিতে কার স্বার্থে আনা হয়েছিল? দেশের আলেম-ওলামা ও বিরোধী দলকে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে প্রতিবাদে অক্ষমের চেষ্টা দেশকে সমূলে সেক্যুলার ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই কি করা হয়েছিল ? সাত. যারা ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ নীতি কথা আওড়াচ্ছেন যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের ড্রেসকোডের নামে হিজাব/বোরখা নিষিদ্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়, তখন ধর্ম যার যার মধুর শ্লোগানধারীরা কোথায় থাকেন? তখন কি কারো স্বাধীনতা খর্ব হয় না? আট. তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের ধোয়া তুলে প্রায়শই ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে! অপর দিকে অশ্লীল নৃত্য, বারের (মদ/জুয়া) লাইসেন্স, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেলেল্লাপনার আয়োজন চলছে দেদারছে, যখন আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা গুম ও অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তখন এসবের কিছুই কি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বুঝে না? নয়. কথিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুটের নামে পুরোদমে রাষ্ট্রকে যারা সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তারা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের সাথে কী ধরনের বাজে আচরণ করে এবং কিভাবে তাদের সম্পদ লুটে পুটে খায় তা কি কারো অজানা? দশ. দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কারণেই সকল ধর্মের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যতা এখনও বজায় আছে, তা কি এদেশে বারবার প্রমাণিত হয়নি? অপরাজনীতির কারণে যতবার কথিত সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলে পড়েছে ধর্মীয় কারণে তা কি হয়েছে? অথচ পাশের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (একপক্ষীয় মুসলমানদের ওপর উগ্র শিখ হিন্দুদের অমানুষিক নির্যাতন) নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নয় কি? এগার. মাদ্রাসা শিক্ষা রাহুর কবলে! মাদ্রাসা ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ইতোমধ্যে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা প্রতিনিয়ত যাচাই-বাছাই ও মান সংরক্ষণের নামে ছাঁটাই করা হচ্ছে। অনেক মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রায় বন্ধ। এমন বৈষম্যমূলক আচরণ ইসলামের অগ্রযাত্রাকে উৎখাতের দুরভিসন্ধি নয় কি? বার. রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকার কারণে এখনো ইসলাম নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে কথা বলার সুযোগ আছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম থাকার কারণে টিভি, রেডিও ও পত্রিকায় ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার করতে পারে, যদি রাষ্ট্রধর্ম বাতিল হয়ে যেত তাহলে এসব করা কি সম্ভব হতো? তুরস্কে ইসলাম নিষিদ্ধ হয়ে যাবার পর সেদেশের মুসলমানদের অবস্থা কী হয়েছিল তা কি জানা নেই? উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মাঝে সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম না থাকার পক্ষে যারা মত ব্যক্ত করেছিলেন তারা উত্তর খুঁজে পাবেন বলে আশা করি। এখানে জনগণের মতামত ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন হবে কিন্তু গুটিকতেক মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তিতে সব পাল্টে যাবে তা যে কোন সমাজে অগ্রহণযোগ্য। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, তারা দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তারা মনে করে শুধু তারাই সুচতুর, আর সবাই বোকা! আমাদের বোকা বানিয়ে তারা মূলত আমাদের পরিস্থিতি স্পেনের হতভাগা মুসলমানদের মত করতে চেয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে দেশকে ইসলামশূন্য করতে চাইছে। আপনি দ্বীনের প্রচার প্রসার করতে চাইবেন? না, তা হবে না! ওদের মর্জি মতো না হলেই আপনি হবেন জঙ্গি, আপনি হবেন রাষ্ট্রদ্রোহী! আজ রাষ্ট্রর্ধম সংবিধান থেকে বাতিল করা হলে এরপর একই সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিশ্চিত পুনরায় সকল ইসলামী রাজনীতি তারা বন্ধ করত! বিচারাধীন বিতর্কিত নারী নীতিমালা ও সম্পত্তি বন্টন নীতিমালা পাস করত, পর্দা/হিজাব পরা বন্ধ করত, ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী ব্যাংকিংসহ সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হতো! পতিতাবৃত্তিকে পেশার মর্যাদা দেয়া হতো, পর্নগ্রাফিকে বৈধতা হতো, প্রতিনিয়ত ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগারকে বাকস্বাধীনতা বলা হতো! যত যন্ত্রণা তাদের ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ নিয়ে। কারো বুঝতে বাকি নেই এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোতা কারা, কারা কলকাঠি নাড়ছেন বা কারা সব ষড়যন্ত্রের নাটের গুরু। সুতরাং আপনি/ আমি কি এমন বিভ্রান্ত চাটুকার বোকা লোকদের হাতে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য, তাহজিব তমদ্দুনকে ছেড়ে দেবো? তারা যা বলবে আমরা শুনব আর তা মেনে নেবো? যারা কারো ইশারায় নির্বোধ বালকের মতো নিজের সতীর্থকে খামছে ছিঁড়ে ফেলতেও কুণ্ঠিত নয়? ওরা শুধুমাত্র জাগতিক প্রগতি ও অগ্রগতির ধোয়া তুলে আমাদের অন্তঃসারশূন্য ও বিভ্রান্ত করতে চায়! যারা রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করছেন হয়ত তারা না বুঝেই করছেন অথবা বুঝে শুনেই ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার মানসে আদাজল খেয়ে লেগেছেন। ন্যূনতম ঈমান থাকলেও কোন মুসলমান ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান বা ইসলামের সামান্যতম ক্ষয়ক্ষতি হোক তা কামনা করতে পারেন না। কোন অশুভ শক্তির ইশারায় এমন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেয়া যায় না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে ষড়যন্ত্র অসহ্য! এর বিরুদ্ধে দেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। আমাদের প্রতিবাদকে ওরা জঙ্গিপনা বলে দাবি করে! আর ওদের নিষ্ঠুরতা ও অপপ্রচার নাকি অধিকার! এসব অপপ্রচার চালিয়ে মূলত ওরা ইসলামী আদর্শবাহীদের টুঁটি চেপে ধরতে চায়! একটু দৃঢ়পদে সামনে এগোতে হবে, ঠকবাজ ও মিথ্যুকরা নেংটি ইন্দুরের মতো লেজ গুটিয়ে পালাবে। এ জন্য যে যার অবস্থান থেকে এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইসলামবিদ্বেষী যে কোন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে। শিয়ালের মত শত বছর বাঁচার স্বপ্ন না দেখে বীরের মত একদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখুন। তবে কি ফাঁসি হবে? যদি সে ফাঁসি হয়ও, তা যেন হয় সত্যের তরে। আমাদের স্বপ্নের উচ্চারণ আমাদেরই উচ্চকিত করতে হবে, আমাদের বিশ্বাস ও অস্তিত্বের কথা আমাদেরই জানান দিতে হবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছিল, আছে থাকবে, ইনশাআল্লাহ! অন্যান্য ধর্মে মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার গ্যারান্টি দিতে পারেনি। কিন্তু ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জান-মালের ইজ্জত আবরুর নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। আল্লাহ তাই ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তা রাসূল মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে অর্থবহভাবে পৃথিবীতে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি মুসলমানের সেই পথের যথাযথ অনুসরণ করাই চির কল্যাণের। আল্লাহ মহান। হ লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির