post

সফলকাম মুমিন

মুশিউর রহমান নাদিব

১১ জুন ২০২২

‘মুমিন’ বলতে এমন লোকদের বুঝানো হয়েছে যারা মুহাম্মদ সা.-এর দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাকে নিজেদের নেতা ও পথপ্রদর্শক বলে মেনে নিয়েছে এবং তিনি জীবন যাপনের যে পদ্ধতি বা কাঠামো পেশ করেছেন তা অনুসরণ করে চলতে রাজি হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ।” (সূরা মুমিনুন : ১) সফলকাম বা সাফল্য শব্দটি কুরআন ও হাদিসে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে। আযান ও ইকামতে দৈনিক পাঁচবার প্রত্যেক মুসলমানকে সাফল্যের দিকে আহ্বান করা হয়। এর অর্থ প্রত্যেক মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়া ও প্রত্যেক কষ্ট দূর হওয়া। এটি ক্ষতি, ঘাটতি, লোকসান ও ব্যর্থতার বিপরীত অর্থবোধক শব্দ। এই শব্দটি যেমনই সংক্ষিপ্ত তেমনি সুদূরপ্রসারী অর্থবহ। কোনো মানুষ এর চাইতে বেশি কিছু কামনাই করতে পারে না। বলা বাহুল্য একটি মনোবাঞ্ছা অপূর্ণ না থাকা এবং একটি কষ্টও অবশিষ্ট না থাকা এরূপ পূর্ণাঙ্গ সাফল্য লাভ করা জগতে কোনো মহৎ ব্যক্তিরও আয়ত্তাধীন নয়। সপ্তরাজ্যের অধিকারী বাদশাহ হোক কিংবা সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও পয়গম্বর হোক জীবনে অবাঞ্ছিত কিছুর সম্মুখীন না হওয়া এবং অন্তরে বাসনা জাগ্রত হওয়া মাত্রই অবিলম্বে তা পূর্ণ হওয়া কারও জন্য সম্ভবপর নয়। অন্য কিছু না হলেও যে কোনো বিপদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কামুক্ত কেউ অন্তত নেই। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ সাফল্য দুনিয়াতে অর্জিত হতে পারে না। কেননা দুনিয়া কষ্ট ও শ্রমের আবাসস্থল এবং এর কোনো স্থায়িত্ব ও স্থিরতা নেই। এই অমূল্য সম্পদ (সাফল্য) অন্য একজগতে পাওয়া যায় যার নাম জান্নাত। সেখানেই প্রত্যেক মনোবাঞ্ছা সর্বক্ষণ ও বিনা প্রতীক্ষায় অর্জিত হবে। মোট কথা এই যে, পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সাফল্যতো একমাত্র জান্নাতেই পাওয়া যেতে পারে। দুনিয়া এর স্থান নয়। তবে অধিকাংশ অবস্থার দিক দিয়ে সাফল্য অর্থাৎ সফলকাম হওয়া ও কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করা এটা দুনিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে দান করে থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এমন কিছু গুণের কথা বলেছেন যে সকল গুণে গুণান্বিত হতে পারলে পরকালের পূর্ণাঙ্গ সাফল্য ও দুনিয়ার সম্ভাব্য সাফল্য অর্জন করা যায় সর্বপ্রথম গুণ হচ্ছে ঈমানদার হওয়া। কিন্তু এটা একাটা বুনিয়াদি ও মৌলিক বিষয় বিধায় একে আলাদা করে আরো কিছু গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা পালন করলে পরে সাফল্য লাভ করা যায়। তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

নামাজে বিনয় অবলম্বন করা

কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে খুশু বা বিনয় ন¤্রতার সাথে নামাজ আদায় করা খুশু এর অর্থ হচ্ছে কারো সামনে ঝুঁকে পড়া দমিত বা বশীভূত হওয়া বিনয় ও ন¤্রতা প্রকাশ করা। এ অবস্থার সম্পর্ক মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্থার সাথেও সম্পর্কযুক্ত। মনে খুশু হচ্ছে মানুষ কারো ভীতি শ্রেষ্ঠত্ব প্রতাপ ও পরাক্রমের দরুন সন্ত্রস্ত ও আড়ষ্ট থাকবে। আর দেহের খুশু হচ্ছে, যখন সে তার সামনে যাবে, মাথা নত হয়ে যাবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢিলে হয়ে যাবে, দৃষ্টি নত হবে, কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে এবং কোনো জবরদস্তি প্রতাপশালী ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক ভীতির সঞ্চার হয় তার যাবতীয় আলামত তার মধ্যে ফুটে উঠবে। নামাজে খুশু বলতে মনও শরীরের এই অবস্থা বুঝায় এবং এটাই নামাজের আসল প্রাণ। হাদিসে বলা হয়েছে একবার নবী সা. এক ব্যক্তিকে নামাজ পড়াতে দেখলেন এবং সাথে সাথে আরো দেখলেন যে, সে তার দাড়ি নিয়ে খেলা করছে। এ অবস্থায় দেখে তিনি বলেন, যদি তার মনে খুশু থাকত তাহলে তার দেহেও খুশুর সঞ্চার হতো। নামাজ খুশু সৃষ্টিতে সাহায্য করে এমন কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। এই নিয়ম কানুনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নামাজি যেন ডানে বামে না ফিরে এবং মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে না তাকায়। বড়জোর শুধুমাত্র চোখের কিনারা দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে পারবে। হানাফি ও শাফেয়িদের মতে দৃষ্টি সেজদার স্থান অতিক্রম না করা উচিত। কিন্তু মালেকিগণ মনে করেন দৃষ্টি সামনের দিকে থাকা উচিত। এই বাহ্যিকে আদবের সাথে সাথে নামাজরত অবস্থায় স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে নামাজের সাথে অসংশ্লিষ্ট ও অবান্তর কথা ও চিন্তা করা থেকে দূরে থাকার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনিচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা মনের মধ্যে আসতে থাকা মানুষ মাত্রেই একটি স্বভাবগত দুর্বলতা। কিন্তু মানুষের পূর্ণ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। নামাজের সময় তার মন যেন আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকে এবং সে মুখে পেশ করে মনেও যেন তা আর্জি করে। এ সময়ের মধ্যে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে  অন্য চিন্তা ভাবনা এসে যায় তাহলে মানুষ যখনই সজাগ হবে। তখনই তার মনোযোগ সেদিক থেকে সরিয়ে নিয়ে পুনরায় নামাজের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

অনর্থক আচরণ থেকে দূরে থাকা 

এমন প্রতিটি কাজ ও কথা যা অপ্রয়োজনীয় অর্থহীন ও যাতে কোনো ফল লাভ হয় না। যেসব কথায় বা কাজে কোনো লাভ হয় না। যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, যেগুলোই আসলে কোনো প্রয়োজন নেই, সেগুলো উদ্দেশ্য ও ভালো নয়, সেগুলো সবই অনর্থক কাজের অন্তর্ভুক্ত। আসলে মুমিনরা অনর্থক কথায় কান দেয় না, যেখানে এ ধরনের কথাবার্তা হতে থাকে বা এ ধরনের কাজ চলতে থাকে সেখানে যাওয়া থেকে দূরে থাকে। তাতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। আর যদি কোথাও তার সামনা সামনি হয়ে যায় তাহলে তাকে উপেক্ষা করে এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্তত পক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। মুমিন এমন এক ব্যক্তি যার মধ্যে সব সময় দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত থাকে। সে যানে দুনিয়াটা আসলে একটা পরীক্ষাগৃহ। যে জিনিসটাকে জীবন বয়স, সময় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে সেটি আসলে একটি মাপজোখ মেয়াদ। তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ মেয়াদ কালটি দেয়া হয়েছে। যে ছাত্রটি পরীক্ষার হলে বসে নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে চলছে সে যেমন নিজের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পূর্ণ ব্যস্ততা সহকারে তার মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন রাখে এ অনুভূতিও ঠিক তেমনি মুমিনকে গুরুত্ব ও ব্যস্ততা সহকারে নিমগ্ন রাখে। সেই ছাত্রটি যেমন অনুভব করে পরীক্ষার এ ঘণ্টাগুলো তার আগামী জীবনের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারী এবং এই অনুভূতির কারণে সে এ ঘণ্টাগুলোর প্রশ্নপত্রের সঠিক জবাব লেখার চেষ্টায় ব্যয় করতে চায় এবং এগুলোর একটি সেকেন্ড ও বাজে কাজে নষ্ট করতে চায় না। ঠিক তেমনি মুমিন ব্যক্তি ও দুনিয়ার এ জীবনকে এমন সব কাজে ব্যয় করে যা পরিণামের দিক দিয়ে কল্যাণকর। এমনকি সে খেলাধুলা ও আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে ও এমন সব জিনিস নির্বাচন করে যা নিচক সময় অতিবাহিত করার কারণ হয় না। বরং কোনো অপেক্ষাকৃত ভালো উদ্দেশ্যে পূর্ণ করার জন্য টাকা তৈরি করে। তার দৃষ্টিতে সময় পার করে দেওয়ার জিনিস নয় বরং ব্যবহার করার জিনিস। অন্য কথায় সময় অতিবাহিত করার জিনিস নয় কাজে খাটানোর জিনিস। আল্লাহ মুমিনকে যে জান্নাতের আশা দিয়ে থাকেন তার একটি অন্যতম নেয়ামত তিনি এটাই বর্ণনা করেছেন যে, “সেখানে তুমি কোনো আজে বাজে কথা শুনবে না।” (সূরা গাসিয়া : ১১)

জাকাতের পথে সক্রিয় থাকা

আরবি ভাষায় জাকাত শব্দের দুটি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা তথা পরিশুদ্ধি এবং দ্বিতীয়টি ‘বিকাশসাধন’ কোনো উন্নতি সাধনে যেসব জিনিস প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো দূর করা এবং তার মৌল উপাদান ও প্রাণবস্তুকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করা এই দুটি অর্থ এক সাথে মিলে জাকাতের পরিপূর্ণ ধারণাটি সৃষ্টি হয়। তারপর এ শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় পরিণত হলে এর দুটি অর্থ প্রকাশ হয়। এক এমন ধন সম্পদ যা পরিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বের করা হয়। দুই পরিশুদ্ধ করার মূল কাজটি। যদি বলা হয় জাকাত আদায় কর তাহলে এর অর্থ হবে তারা পরিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে নিজেদের সম্পদের একটি অংশ দেয় বা আদায় করে। এভাবে শুধুমাত্র সম্পদ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি বলা হয় জাকাতের পথে সক্রিয় থাক  এর অর্থ হবে তারা পরিশুদ্ধ করার কাজ করে এবং এ অবস্থায় ব্যাপারটি শুধুমাত্র আর্থিক জাকাত আদায় করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং আত্মার পরিশুদ্ধি চরিত্রের পরিশুদ্ধি জীবনের পরিশুদ্ধি অর্থের পরিশুদ্ধি ইত্যাদি প্রতিটি পর্যায়ের বা দিকের পরিশুদ্ধি এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়াও এর অর্থ কেবলমাত্র নিজের জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং নিজের চারপাশের জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়বে। অর্থাৎ তারা নিজেদেরও পরিশুদ্ধি করে এবং অন্যদেরও পরিশুদ্ধির দায়িত্ব পালন করে। এখানে শুধুমাত্র আত্মশুদ্ধি ওপর জোর দেয় না বরং শুদ্ধিকর্মের বর্ণনা করে আর এ কর্মটির মধ্যে নিজের সত্তা ও সমাজজীবন উভয়ের পরিশুদ্ধি শামিল রয়েছে। 

লজ্জাস্থানের হেফাজত করা

মুমিনরা স্ত্রী ও শরিয়তসম্মত দাসীদের ছাড়া সব পর নারী থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে এবং এই দুই শ্রেণীর সাথে  শরিয়তের বিধি মোতাবেক কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কারও সাথে কোনো অবৈধ পন্থায় কামবাসনা পূর্ণ করতে প্রবৃত্ত হয় না। হেফাজতের দুটি অর্থ হয়। ১. নিজের দেহের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে। অর্থাৎ উলঙ্গ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করে এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান খোলে না। ২. তারা নিজেদের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করে। অর্থাৎ যৌন স্বাধীনতা দান করে না এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন হয় না। লজ্জাস্থানের হেফাজত অর্থ নিছক প্রবৃত্তির কামনা থেকে দূরে থাকা নয় বরং নিজের লজ্জাস্থানকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করা থেকে দূরে থাকাও বুঝায়। পুরুষের জন্য সতর তথা লজ্জাস্থানের সমান। নবী সা. নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। শরীরের এ অংশ স্ত্রী ছাড়া করো সামনে ইচ্চাকৃতভাবে খোলা হারাম। কেবল অন্যের সামনে নয় একান্তেও উলঙ্গ হওয়া নিষিদ্ধ।

আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা 

আমানত শব্দটি বিশ্বপ্রভু অথবা সমাজ কিংবা ব্যক্তিগণ যে আমানত কারো নিকট সোপর্দ করেছেন সেই সবগুলো অর্থেই ব্যবহৃত হয়। আর এমন যাবতীয় চুক্তি প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত যা মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে অথবা মানুষ ও মানুষের মধ্যে কিংবা জাতি ও জাতির মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে কখনো আমানতের খিয়ানত করে না এবং কখনো নিজের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। মহানবী সা. প্রায়ই তার ভাষণে বলতেন “যার মধ্যে আমানতদারিতার গুণ নেই তার মধ্যে ঈমান নেই এবং যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুণ নেই তার মধ্যে দ্বীনদারি নেই।” বুখারি ও মুসলিম একযোগে এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যে রাসূল সা. বলেছেন “চারটি অভ্যাস যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে নিখাদ মুনাফিক এবং যার মধ্যে এর কোনো একটি পাওয়া যাবে সে তা ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তা তার মধ্যে মুনাফিকির একটি অভ্যাস হিসেবেই বিদ্যমান থাকে। সে চারটি অভ্যাস হচ্ছে- ১. কখনো কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. কখনো তাকে আমানত সোপর্দ করলে তা খেয়ানত করে, ৩. প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে, ৪. যখনই কারো সাথে কথা বলে তখনই (সততা ও নৈতিকতার) সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে। ধর্মপরায়ণতার দৃষ্টিতে আমানত ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা ওয়াজিব এবং শরিয়তসম্মত ওজর ব্যতীত খেলাফ করা গুনাহ।

নামাজসমূহ হেফাজত করা 

নামাজসমূহের সংরক্ষণ এর অর্থ হচ্ছে মুমিন নামাজের ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম-কানুন আরকান-আহকাম মোট কথা নামাজের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি জিনিসের প্রতি পুরোপুরি নজর রাখে। শরীরও পোশাক পরিচ্ছদ পাক রাখে। অজু ঠিকমত করে। কখনো বিনা অযুতে নামাজ না পড়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায় করে। ওয়াক্ত পার করে নামাজ পড়ে না। নামাজের  সমস্ত আরকান পুরোপুরি ঠা-া মাথায় এবং পূর্ণ একাগ্রতা ও মানসিক প্রশান্তি সহকারে আদায় করে এটি বোঝার মত তাড়াতাড়ি নামিয়ে সরে পড়ে না। যা কিছু নামাজের মধ্যে পড়ে এমনভাবে পড়ে যাতে মনে হয় বান্দা তার প্রভুর কাছে কিছু নিবেদন করছে এমনভাবে পড়ে না যাতে মনে হয় একটি গৎবাঁধা বাক্য উচ্চারণ করে শুধুমাত্র বাতাসে কিছু বক্তব্য ফুঁকে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত লোকদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হিসাবে ঘোষণা করেছেন। উত্তরাধিকার বলার মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি যেমন উত্তরাধিকারী মালিকানায় আসাও অনিবার্য তেমনি এই সব গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিদের জান্নাতে প্রবেশও সুনিশ্চিত। ফিরদাউস জান্নাতের সবচেয়ে বেশি পরিচিত প্রতিশব্দ। মানবজাতির প্রায় সমস্ত ভাষায় এ শব্দটি পাওয়া যায়। সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় পরদেখা। প্রাচীন কালাদানী ভাষায় পারদেস আর্মেনীয় ভাষায় পারদেজ সুরিয়ানি ভাষায় ফারদেসো গ্রিক ভাষায় প্যারাডাইসোস ল্যাটিন ভাষায় প্যারাডাইস এবং আরবি ভাষায় ফিরদাউস বলা হয়। এ শব্দটি এসব ভাষায় এমন একটি বাগানের কথা বলা হয়ে থাকে যার চারদিকে পাঁচিল দেয়া থাকে বাগানটি সুবিস্তৃত মানুষের আবাস গৃহের সাথে সংযুক্ত এবং সেখানে সব ধরনের ফল বিশেষ করে আঙ্গুর পাওয়া যায়। বরং কোনো ভাষায় এর অর্থের মধ্যে এ কথাও বুঝায় যে, সেখানে বাছাই করা গৃহপালিত পশু পালিত পাওয়া যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা কাহাফে বলেছেন “তাদের আপ্যায়নের ফিরদাউসের বাগানগুলো আছে। ফিরদাউস একটি বড় বাগান যেখানে অসংখ্য বাগবাগিচা রায়েছে।

সফলতা নিছক ঈমানের ঘোষণা নয়, সৎচরিত্র মানুষ যখন আল্লাহর পাঠানো পথ নির্দেশ মেনে চলে এবং তারপর সে অনুযায়ী নিজের মধ্যে উন্নত নৈতিকতা ও সৎকর্মশীলতা সৃষ্টি করে তখন সে সফলতা লাভ করে। আমরাও উপরোক্ত গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে সফলতা লাভ করবো। ইনশাআল্লাহ।

লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির