post

সম্পাদকীয়

২৯ অক্টোবর ২০১৫
তুমি আছো হৃদয়ের গভীরে ভুলবো তোমায় বলো কী করে দেখি নাই তোমারে কোন দিন তবু আছো স্মরণে অমলিন প্রেমের ভুবনে তোমারি বিরহ ব্যথায় নিশীথের শেফালীরা ঝরে - তারিক মুনাওয়ার মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) আমাদের সর্বোত্তম আদর্শ। তবে মহানবী (সা) যে আমাদের নেতা; আমাদের আদর্শ তা শুধু মুখে প্রচার করলেই কি যথেষ্ট? বরং রাসূল (সা)-এর অনুসরণ, অনুকরণই আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির পাথেয় হতে পারে। আমরা চাকরি-বাকরিসহ নানা কাজে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করি। সেখানে প্রিয় ব্যক্তির তালিকায় মহানবী (সা)-এর নামটা লিখি। কেউ জিজ্ঞেস করলেও আমাদের প্রিয় ব্যক্তির তালিকায় মহানবী (সা)-এর নামটা উচ্চারণ করি। আফসোস! ব্যক্তিজীবনে আমাদের প্রতিটি কাজে তাকে আমাদের মডেল হিসেবে গ্রহণ করি না। নিছক আমাদের জীবনবৃত্তান্ত সমৃদ্ধ করার জন্যই কি এই পলিসি? বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের অধঃপতনের একটি মাত্র কারণ রাসূল (সা)-এর আদর্শ থেকে দূরে থাকা কিংবা সুবিধামতো আংশিক পালন করা। রাসূল (সা)-এর আনুগত্য ও ভালোবাসার মাধ্যমেই আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে নতুন করে আত্মশুদ্ধির কাঠগড়ায় নিজেদেরকে উপস্থাপন করি। প্রিয় শিল্পী মাহফুজ বিল্লাহ শাহী লিখেছেন, সুন্নাত নয় শুধু দাওয়াতের মেহমান/ সুন্নাত নয় শুধু খাওয়া শেষে মধুপান/ আরো কিছু সুন্নাত আছে তুমি জানো কি/ জানলেও জীবনে কখনো তা মানো কি? আমাদের শপথ হোক আমরা যেন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সা)-এর অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। আর দুনিয়ার সব না-পাওয়ার বেদনাকে ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের কামনা হয়ে উঠুক। ২. অস্থিতিশীল পরিবেশ কখনো একটি দেশের কল্যাণ বয়ে আনে না। নানা সঙ্কটের আবর্তে আমাদের এই দেশ। একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে। প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বলে বিদেশ পাঠিয়ে দিলেন সরকার। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে সে পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া মানেই আমাদের সর্বোচ্চ আদালতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা। অবশেষে এস কে সিনহা বিদেশ থেকে পাঠিয়ে দিলেন পদত্যাগনামা। বিষয়টি এবার আরো স্পষ্ট হয়ে গেলো, তাকে পূর্বপরিকল্পিত ছকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। এখন কে হবেন প্রধান বিচারপতি এই নিয়েও চলছে তুমুল লড়াই। এদিকে সরকার ১১তম সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দলীয় সভা-সমিতি জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আবারো উল্টো পথে ক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে সরকার মাঠে নেমেছে। অন্য দিকে বিরোধী দলকে কোনো রকম নড়াচড়া করতে দিচ্ছে না। সরকার বিরোধী জোটের নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিচ্ছেন এবং তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য করার দুরভিসন্ধি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশের স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনা কখনো একটি দলীয় সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনারের বর্তমান কার্যক্রম বলে দেয় তার দ্বারা কখনো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে নৈতিক দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতার পরিচয় দেয়া দুঃসাধ্য। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট তিনি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছেন; যা এদেশের সচেতন নাগরিক মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তর শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে একটি পুতুল খেলার নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকার। আমাদের প্রত্যাশা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতপূর্বক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে এ দেশের জনগণ। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল আমাদের মৃত গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং জনগণকে তার ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। ৩. বিজয়ের ৪৫ বছর অতিক্রম করে এখন ৪৬ এ পা রাখতে যাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। তবে এই দীর্ঘ সময়ে কী পেলাম সেটাও ভাববার বিষয়। আসলে আমরা কিসের বিজয় চেয়েছিলাম? একটি ভূখন্ডের বিজয়। আমরা চেয়েছিলাম, মানবমুক্তির বিজয়। আমরা শোষণ ও অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করেছিলাম। একটি বৈষম্যমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আফসোস! আজো অধরাই রয়ে গেল আমাদের স্বপ্ন। আমরা যে সময়ে বিজয় উৎসব পালন করছি ঠিক তখনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদে কেঁপে ওঠে বুক। নিরন্ন মানুষ খাবারের অভাবে ডাস্টবিনের ময়লা খাবারের দিকে দৃষ্টি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আজ বিজয় উৎসবের চেয়ে বড় প্রয়োজন এ দেশের নাগরিক সাধারণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। তাহলেই কেবল সার্থক হবে আমাদের আয়োজন, আমাদের উৎসব।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির