post

সম্পাদকীয়

২৮ অক্টোবর ২০১৫
প্রশ্নপত্র ফাঁস, না-কি জাতির গলায় ফাঁস! জনসমর্থনহীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়া সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এই ব্যাধি। কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা এমনকি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। সর্বশেষ মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নফাঁস নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও কোনো লাভ হয়নি। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত এক কর্মকর্তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আন্দোলনকারীরা। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অনেক সময় সরকারদলীয় লোকদের নাম এলেও অপরাধীরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে, ২০০২ থেকে শুরু হওয়া সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে নকলপ্রবণতা কমে যাওয়ার পর হঠাৎ করে অব্যাহতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরীক্ষায় একটি বা দু’টি প্রশ্নের উত্তর নকল করে দেয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি প্রশ্নই আগে থেকে জেনে যাচ্ছে এবং সে অনুযায়ী উত্তর তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পরীক্ষা বলতে প্রশ্ন কমন পড়ার যে অনিশ্চয়তা বা ভালো ফলাফল করার জন্য  যে প্রস্তুতি তার কোনোটাই  নেয়ার আগ্রহ থাকে না শিক্ষার্থীদের। প্রশ্নফাঁসের পর তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু বিচার হয় না। প্রশ্নফাঁসের মত ভয়াবহ ব্যাধিটা শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। প্রশ্নফাঁসের আলোচিত সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্টে প্রশ্নফাঁসের ঘটনার জন্য সেই সময় সাভারের সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন), ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এবং সাভার অধরচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে দায়ী করা হয়েছিল। প্রশ্নপত্রের সিলমোহর করা প্যাকেট কেটে ওই বছর প্রশ্ন ফাঁস করা হলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে দায়ী ব্যক্তিদের গায়ে আঁচড় লাগেনি। সেই থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। তবে এবারের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ছাপিয়ে গেছে সবকিছু- সর্বনিম্ন ৭ লাখ থেকে শুরু করে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ফাঁসকৃত প্রশ্ন বিক্রির খবর বেরিয়েছে কাগজে। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিসিএস, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, অডিট, এনবিআর, এটিইও,  মেডিক্যাল, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ও অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থগিত করা হয় ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা ও অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ১৭ জেলার পরীক্ষা বাতিল করা হয় একই কারণে। প্রশ্নফাঁসের এ সকল ঘটনা শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করছে। প্রশ্নফাঁসের ফলে একটি নীতিহীন সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সবার মধ্যেই একটি ব্যাধি সংক্রামক আকারে বাড়তে থাকে। এটা রোধ করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে একটি নীতিবিবর্জিত প্রজন্ম উপহার দেয়ার মতো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ওই প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটা  যে আমাদের শিক্ষা-দর্শনে পক্ষান্তরে একটি জাতির গলাতেই ফাঁস পরিয়ে এর দফারফা করছে, তা কি আমরা  খেয়াল করছি? কিন্তু আজ যা সামান্য একটু দমকা বাতাস, কাল যে তা ঝড়ের বেগে তান্ডবে রূপ নেবে না, তার কি  কোনো নিশ্চয়তা আছে?

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির