post

সুন্দর কথা বলুন

অশালীনতা পরিহার করুন জাফর আহমাদ

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বিশ^াসী মুসলমানের উচিত সব সময় সুন্দর ও সৎ কথা বলা। কারণ তিনি মুসলমান হওয়ার সময় যেই পবিত্র ও সর্বোত্তম কথা বলে ঈমান নামক সবুজ অরণ্যে প্রবেশ করেছেন সেটিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘কালিমাতুত তাইয়্যেবা’ বা ‘পবিত্র কথা’ বলে অভিহিত করেছেন। তাই মুমিন ব্যক্তির মুখ থেকে সর্বদা মধুবাক্য ঝরবে এবং অন্যের কান যেটিকে শ্রুতিমধুর বা মধুরবাণী হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ৭০ এবং ৭১ নং আয়াতে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ ঠিকঠাক করে দেবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মাফ করে দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে বড় সাফল্য অর্জন করে।” রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও কিয়ামতের উপর ঈমান আনে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।”

মুমিন কখনো অশ্লীল, অশালীন কথা, গালিগালাজ, অভিশাপ তিরস্কার, ব্যঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, গর্ব-অহংকার, কটূক্তি, দম্ভোক্তি, কুৎসা রটনা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে না। আল কুরআনের পরিভাষায় এগুলো কালিমা তাইয়েবার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কালিমাতু খাবিসার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তুমি কি দেখছো না আল্লাহ কালিমা তাইয়্যেবার উপমা দিয়েছেন কোন জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে, যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। প্রতি মুহূর্তে নিজের রবের হুকুমে সে ফলদান করে। এ উপমা আল্লাহ তায়ালা এ জন্য দেন যাতে লোকেরা এর সাহায্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অন্যদিকে অসৎ বাক্যের উপমা হচ্ছে, একটি মন্দ গাছ, যাকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।” (সূরা ইবরাহিম : ২৪-২৫)

যিনি কালিমা তাইয়্যেবার ভিত্তিতে নিজের জীবনব্যবস্থাকে গড়ে তুলেন, তার চিন্তাধারায় পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্যতা, চরিত্রে পবিত্রতা, আচরণে মাধুর্যতা, ব্যবহারে ন¤্রতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন যাপনে সদাচার, কথা-বার্তায় চিন্তার ছাপ, চেহেরায় পবিত্রতার ভাব ফুটে উঠবে। মোট কথা সামগ্রিক জীবনব্যবস্থায় বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন সূচিত হবে। যে জীবনধারার কোথাও কোনো অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হবে না। আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. অশালীন কথা উচ্চারণকারী, লানতকারী এবং গালিগালাজকারী ছিলেন না। তিনি যখন নারাজ হতেন তখন কেবল এতটুকু বলতেন যে, তার কি হলো? তার কপাল ভূলুণ্ঠিত হোক। (বুখারি-৫৬১১; কিতাবুল আদাব)

মাসরুক বর্ণনা করেছেন, মু’আবিয়া রা. কুফা আগমন করলে আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-এর নিকট গেলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, হুযুর সা.-এর কখনো অশালীন কথা বলার অভ্যাস ছিল না; আর ইচ্ছা করেও তিনি তা বলতেন না। তিনি আরও বর্ণনা করেছেন, নবী সা. বলেছেন, তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম হলো সে ব্যক্তি, স্বভাব-চরিত্রে যে সবার চেয়ে ভালো। (বুখারি-৫৫৯৪; কিতাবুল আদাব) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, (মুসলমান) মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ করা কুফরি। (বুখারি : ৫৬০৯; কিতাবুল আদাব) মুখ মানুষের এমন একটি অঙ্গ যার শক্তি সীমাহীন। এটি ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পিছনে, উপড়ে-নিচে সমানতালে চলতে পারে। একজন মানুষ যতটুকু বুদ্ধি ও অনুভূতি ধারণ করে মুখ ততটুকু বর্ণনা করতে পারে এবং মাঝে মাঝে বুদ্ধিকেও ছাড়িয়ে যায়। যাকে আমরা বুদ্ধিভ্রষ্ট বলে অভিহিত করি। অর্থাৎ মুখ মানুষের অঙ্গরাজ্যের ওপর রাজত্ব কায়েম করে। মানুষের আরও একটি প্রভাবশালী অঙ্গ হলো মন। মুখ সেই মনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। কারণ মন তার ভেতরকার সকল কিছু প্রকাশ করতে হলে মুখের সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। আর মুখের ভেতর একটি অঙ্গ আছে যার নাম জিহ্বা। মনের ভাষা জিহ্বার দ্বারা প্রকাশ করে থাকে।

তাই জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ জিহ্বা মানুষের সামগ্রিক চরিত্রকে কলুষিত করে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু’চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হিফাজতের জিম্মাদার হবে, আমি তার জান্নাতে প্রবেশের জিম্মাদার হবো।” হযরত ওমর রা. বলেন, আমি একবার হযরত আবু বকর সিদ্দিককে রা. দেখতে পেলাম, তিনি নিজের হাত দ্বারা নিজের জিহ্বা টানছেন ও রগড়াচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধি! আপনি একি করছেন? তিনি বললেস, “এ হাড়বিহীন ক্ষুদ্র অঙ্গটি আমার উপর অনেক দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।” রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “জিহ্বা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল।” হযরত মুয়াজ রা. একদিন রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সা. স্বীয় মুখের জিহ্বা বের করে আঙুল দিয়ে চেপে ধরলেন।” অর্থাৎ তিনি ইঙ্গিত করলেন যে, যবানের হিফাজত করা সবচেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূলুল্লাহ সা. একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সহজতম ইবাদাত তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে, চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব।”

মানুষের সাথে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ করা আল্লাহর প্রিয়তম ইবাদাতসমূহের অন্যতম। আবু দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: “কিয়ামতের দিন কর্মবিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে সুন্দর আচরণ এবং সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই নফল সালাত ও নফল সিয়াম পালন করার সওয়াব অর্জন করবে।” (তিরমিজি) জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান করবে যাদের আচরণ সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে তারা যারা বেশি কথা বলে, যাদের কথায় বা আচরণে অহঙ্কার প্রকাশিত হয় এবং যারা কথাবার্তায় অন্যের প্রতি অবজ্ঞা বা অভদ্রতা প্রকাশ পায়।” (তিরমিজি) সুতরাং ভালো ও সৎ কথা বলুন। অশ্লীল, অশালীন ও অশোভন কথা পরিহার করুন। লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির