post

অনন্ত পথের যাত্রায় প্রথম প্লাটফর্ম বিরতি । ইয়াসিন মাহমুদ

০৭ ডিসেম্বর ২০১৮

সবাইকে একদিন চলে যেতে হবেই মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে; কবরের আঁধারের গহবরে শেষ হাজিরাতো দিতেই হবে। মরণের যতো জ্বালা সইতে হবেই হবে বেদনার যতো বোঝা বইতে হবেই হবে; সেই জ্বালা সেই ব্যথা ভাগ করে নিতে আসবে না কেউ নিঠুর ভবে। -মতিউর রহমান মল্লিক

অনন্ত পথের যাত্রায় প্রথম প্লাটফর্ম বিরতিজন্মকে আমরা স্বাগত জানাই। মৃত্যুতে শোকাহত হই। কারো আগমনের জন্য অধীর অপেক্ষা করি, আবার কারো চলে যাওয়ার সংবাদে ভারাক্রান্ত হই। চিরন্তন বাস্তবতা। আমরা কেউই মৃত্যু কামনা করি না বরং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। একজন মানুষের এমন প্রত্যাশায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘মরিতে চাহি না এই সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ শৈশব-কৈশোর কেটে যায় মন আনন্দে। তারুণ্য মানেই নিজেকে আবিষ্কার। আমরা রঙিন স্বপ্ন দেখা শুরু করি এখান থেকেই। একবারও রঙিন পৃথিবীতে আমার স্থায়িত্বের সময়কাল নিয়ে ভাবি? বরং আমাদের মনের ভেতরে অহঙ্কারের ভিত্তি স্থায়ী আসনে অলঙ্কৃত হয়। এই পৃথিবী আমারই; আমরা অনেকটা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিজেকে ভাবতে থাকি। আমরা দুনিয়ার মোহে নিজেরাই এতটাই সম্পৃক্ত হয়ে যাই যে, পরকাল আছে; সেখানে আমাদেরকে প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে এটা আর আমাদের মাথায় থাকে না। বরং আমরা প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকি সম্পদের পাহাড় নির্মাণে। অথচ মৃত্যুই আমাদের কতই না কাছাকাছি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : তোমরা যেখানেই থাকো, মৃত্যু তোমাদেরকে পাবেই। যদি দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও! (সূরা আন নিসা : ৭৮) অনেকেই মৃত্যুকে ভয় করলেও ততটা গুরুত্ব দিই না। অনেক সময় বলে থাকি, আগে দুনিয়া সামলে নিই। মরণের পরে কী হয় পরে দেখা যাবে। বস্তুত মরণের পরে একজন বান্দার কিছুই করার থাকে না। প্রতিটি কাজের একটা সময় থাকে। সময় অতিক্রান্ত করলে তা আর সম্ভব হয় না। দুনিয়া একজন মুমিনের শস্যক্ষেত্র। একজন চাষি যেমন শীতকালীন সবজি গরমকালে বপন করতে পারে না তেমনি একজন মুমিনও মরণের পরে কিছুই করার হিম্মত রাখে না। যতই ভালো ছাত্র হোক না কেন পরীক্ষার সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে এক সেকেন্ড সুযোগও দেয়া হয় না। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটে। সাথে সাথে তাঁর কর্মকাণ্ডেরও সমাপ্তি ঘটে। তাঁর সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে এসেছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার (মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো- তার পরিবার; তার ধন-সম্পদ ও তার আমলনামা। এর মধ্যে পরিবার ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধুমাত্র আমলনামা থেকে যায়। (বুখারি ও মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায়, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি কাজ ছাড়া মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমটি হলো অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে সাদকা করা, যে দানের সাওয়াব অবিরাম দানকারী মৃত বক্তির আমলনামায় পৌঁছবে। দ্বিতীয়টি হলো এমন জ্ঞান অর্জন করা; যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। আর তৃতীয়টি হলো এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া; যে সন্তান মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। (মুসলিম) আমরা কেউই অসময়ের মুখোমুখি হতে চাই না। সবাই সুন্দর সুস্থভাবে জীবন যাপনের প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমাদের জীবনের কিছু ঘটনায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। বলা যায়, অপ্রস্তুত অবস্থায় শত্রুর মুখোমুখি। মৃত্যুর বিষয়টাও তেমনি, আমরা কেউই মৃত্যু কামনা না করা সত্ত্বেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আল্লাহর সাথে একজন বান্দার কথোপকথন : হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় দুনিয়ায় প্রেরণ করুন, যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি করিনি। কখনই নয়, এটা তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে বরযাখ তথা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের মাঝখানে একটি সময়সীমা রয়েছে, আর তা হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত। (সূরা আল মুমিনুন : ৯৯-১০০) মহান আল্লাহ আরো বলেন : আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় কর মৃত্যু আসার আগেই। অন্যথা মরণের সময় বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কিছু সময় অবকাশ দিলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা আল মুনাফিকুন : ১০), আমাদেরকে পুনরায় ফেরত দেয়া হলে আমরা পূর্বে যা করতাম, তার বিপরীতে কাজ করে আসতাম। (সূরা আরাফ : ৫৩), সেখানে তারা চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের বের করুন। আমরা সৎকাজ করব, পূর্বে যা করতাম, তা করব না। (সূরা আল ফাতির :৩৭) কিয়ামতের দিন মানবসন্তানকে প্রধানত পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। তার জবাব না দিয়ে তার এক পা অগ্রসর হবার উপায় থাকবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে এসেছে। হযরত ইবনে মাসউদ রা. নবী করীম সা:-এর নিকট হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, (কিয়ামতের দিন মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা না হবে- ১. জীবনের সময়গুলো সে কোন কাজে ব্যয় করেছে? ২. (বিশেষ করে) তার যৌবনকাল সে কোন কাজে লিপ্ত রেখেছে? ৩. সে কিভাবে তার অর্থ উপার্জন করেছে? ৪. তার অর্জিত অর্থ-সম্পদ সে কিভাবে কোন পথে ব্যয় করেছে? ৫. সে যে সত্য জ্ঞান লাভ করেছিল, তার কতটা সে তার জীবনে কার্যকর করেছে? (তিরমিযী শরীফ) আমরা যখন আরাম আয়েশে থাকি তখন কিন্তু দুঃখ দুর্দশার মর্ম বুঝিনি। জীবনকে উপলব্ধি করতে পারি না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) এক ব্যক্তিকে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন, তুমি ৫টি বিষয়ের পূর্বে ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দাও। ১. মৃত্যুর আগে তোমার (দুনিয়ার) জীবনকে মূল্যবান মনে কর; ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে মূল্যবান মনে কর ৩. ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবসরকে মূল্যবান মনে কর; ৪. বৃদ্ধ হওয়ার আগে যৌবনের সময়কে মূল্যবান মনে কর; ৫. অভাব বা দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতা বা প্রাচুর্যকে মূল্যবান মনে কর। (মুসনাদে আহমদ) সময়ের গতিতে সময় চলে যাচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে আমাদের সময়। সামনে অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। কৃতকার্য-অকৃতকার্যের আসল হিসাব নিকাশ। দুনিয়াতে একেকজন একেকভাবে নিজেদের স্বপ্ন নির্মাণে ব্যস্ত। একজন আরেক জনের উপকারে খুব কমই আসে। নিজের ভালো থাকা নিয়ে নিজেই ব্যস্ত। অন্যকে নিয়ে ভাববার সময় কোথায়? কে কাকে টপকিয়ে উঁচু শিখরে আরোহণ করবে, নিজের কৃতিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে এমন মানসিকতায় সবাই কর্মব্যস্ত। দম ফেলানোর সময় নেই। ব্যর্থ ও অকৃতকার্য ব্যক্তিটি সফল ব্যক্তিটির করুণার প্রত্যাশা করে কখনো কখনো। অনেক সময় সফল মানুষটি এড়িয়ে যাওয়ার ভানও করে। এতে পিছিয়ে পড়া মানুষটির কিছুই করার থাকে না। কারণ তিনি তাঁর মেধা ও যোগ্যতার সবটুকু কাজে লাগিয়ে আজকের এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। কিয়ামতের দিন ঠিক একই চিত্রের অ্যালবাম আমাদের সামনে হাজির হবে। অনেক আপনজনই আমাদের কাজে আসবে না। এমন একটি অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদেরকে। পবিত্র আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন : সাবধান সেই দিনের ব্যাপারে, যেদিন কেউ অন্য কারও জন্য একটুও এগিয়ে আসবে না, কারও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কোনো বিনিময় নেয়া হবে না, সেদিন কেউ কারও সাহায্য পাবে না। (সূরা আল বাকারা : ৪৮) ওরা যাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের প্রভুর অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে, যদিও তারা তার সবচেয়ে কাছের। তারা সবাই তাঁর করুণার আশা করে, তাঁর শাস্তিকে প্রচণ্ড ভয় পায়। নিঃসন্দেহে, তোমার প্রভুর শাস্তি অত্যন্ত ভয় পাওয়ার মতো। (আল-ইসরা : ৫৭) সেদিন কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে না, তবে তার সুপারিশ ছাড়া, যাকে পরম করণাময় অনুমতি দিবেন, যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট। (সূরা তাহা : ১০৯) আমরা দুনিয়ার জীবনের অনেক ঘটনাই চোখের আড়াল করতে পারি; লোক চক্ষুর ভয়ে নিজের সম্মানকে রক্ষা করার স্বার্থে ক্ষমতাবানদের সহযোগিতায় নিজের দুর্বলতাকে গোপন করতে সক্ষম হই। জনসম্মুখে নিজেকে একজন পরিচ্ছন্ন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রমাণ করার জন্যই কতই না বুদ্ধি-ফিকির করে থাকি। নিজের অযোগ্যতাকেও আড়াল করে নিজেকে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। ইশারায় সব অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে ফেলি। ঢেকে যায় কত শত দুর্বলতা ও ব্যর্থতার গ্লানি। সবাই স্যালুট করে; শ্লোগান তোলে। পক্ষান্তরে চৌকস, বুদ্ধিদীপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। অন্তরালের মানুষ থেকে যায় আজীবন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সব কিছু দেখেন। তবে সাময়িক কোন প্রতিক্রিয়া দেখান না। তিনি তার বান্দাকে অবকাশ দেন। তার দৌরাত্ম্য দেখেন; আবার কাউকে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার সুযোগ দেন। যারা সীমালঙ্ঘন করবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা : নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন। (সূরা আল বুরুজ : ১২) আমরা আমাদের প্রাত্যহ্যিক জীবনে বিভিন্ন কাজের সাথে সংযুক্ত। ঘর- সংসার, অফিস-আদালত, রাজনীতি, সমাজনীতিসহ নানান কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। এই কাজে কখনও নেতা- কখনো কর্মী হয়ে কাজ করি। উল্লেখ্য, এইসব কাজে কতটুকু ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারি সে প্রশ্ন থেকেই যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দেই তাঁর কোনটাই পূরণ করতে পারি না। বরং জুলুমবাজ হিসেবে শেষমেশ উপাধি পেতে হয়। সামান্য এই ছোট দায়িত্বে থেকে আমরা মানুষের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হই। অথচ মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রতিশ্রুতির কোন ব্যত্যয় ঘটাবেন না। আল্লাহর ঘোষণা : আজ (হাশরের দিন) কারো প্রতি একবিন্দু জুলুম করা হবে না। আর তোমাদেরকে তেমন প্রতিফল দেয়া হবে, যেমন আমল তোমরা করেছিলে। (সূরা ইয়াসিন : ৫৪) তিনি সকলের প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি করবেন না। প্রতিটি কাজের পুরস্কার ও তিরস্কার বান্দার আমলনামায় যোগ হবে। ভালো কাজের পুরস্কার বান্দার ডান হাতে যাবে। আর মন্দ কাজের প্রতিদান বাম হাতে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন : যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজ হবে। (সূরা ইনশিকাক : ৭-৮), আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, অনন্তর যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) বিন্দু পরিমাণ নেক আমল করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ বদ আমল করবে, সেও তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল : ৭-৮) এমন সময় সৎকর্মশীলদের চোখে মুখে আনন্দের ঢেউ খেলে যাবে। আর বদকর্মশীলরা হাহুতাশ করবে, তারা বলবে : হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি- সবকিছু এতে রয়েছে। (সূরা কাহাফ : ৪৯) তখন পরিতাপ নিয়ে আরো বলবে, হায় যদি মাটির সাথে মিশে যেতাম! (সূরা নাবা : ৪০) ভুল স্বীকারে নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয় না। বরং নিজের চলার পথকে আরো শাণিত করতে নতুনভাবে নিজেকে জানা, বুঝা, আবিষ্কার করা যায়। পক্ষান্তরে, আমরা ভাবি, ভুল স্বীকার করা মানে শেষ। আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমাদের জীবনের অনেক বিষয় আমরা আড়াল করি, চোখ বুজে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। অথচ আমরা যদি নিজের ভুলে অনুতপ্ত হতে শিখতাম; নিজেকে একটু ছোট ভেবে তওবায়ে নুসুহা করে শুদ্ধতার রঙে রঙিন করার ব্রত নিয়ে চলতাম, তাহলে ব্যক্তিগত জীবনে যেমন একজন পরিচ্ছন্ন, অহংবোধমুক্ত মানুষ হয়ে উঠতাম। অন্যদিকে মহান আল্লাহর কাছেও প্রিয় বান্দায় পরিণত হতাম। আল্লাহ তওবাকারীকে পছন্দ করেন। আমরা যে ভয়ে সত্যকে গোপন করার ছলচাতুরী করছি। বস্তুত আমরা ব্যর্থই হবো; পরাজিত হবো। আল্লাহ রাব্বুল আমিন সবকিছুই সংরক্ষণ করছেন। আমাদের কোন কিছুই গোপন থাকবে না। আমরা কিয়ামতের দিন আমাদের কৃতকর্ম অস্বীকার করার চেষ্টা করব। কিন্তু তা কোন কাজে আসবে না। মহান আল্লাহর ঘোষণা : আপন কর্মের রেকর্ড পড়। আজ তোমার নিজের হিসাব করার জন্যই তুমিই যথেষ্ট। (সূরা বনি ইসরাইল : ১৪) প্রতিদিন সূর্যোদয়ে সকাল হয়। সূর্যাস্তে সন্ধ্যা নামে। সকাল হলেই আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যাই। কর্মব্যস্ততা সেরে আবার আমাদের বাসভবনে ফিরি। চমৎকার এই নিয়মে দুনিয়ার এই খেল তামাশার ইতি হবে একদিন। হাজিরা দিতে হবে মহান প্রভুর কাছে। এই দুনিয়ার মোহাবিষ্ট হয়ে যদি আমাদের কাক্সিক্ষত ঠিকানা ভুলে যাই তাহলে মাঝিবিহীন নৌকা যেমন কিনারে ভিড়তে পারে না। আমাদের অবস্থাও এমনই হবে। আমরা কেউই চিরকাল এই দুনিয়ায় থাকব না। এই পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়। মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের সকল রঙিন পরিচয় মুছে যাবে। প্রত্যেক বস্তু যেমন তার গন্তব্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। আমাদেরকেও আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাড়ি দিতে হবে। এ এক অনিবার্য, অমোঘ বিধান। সেই অনন্ত পথের যাত্রী হিসেবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারি আল্লাহ সেই তাওফিক দান করুন। আর দ্ব্যর্থকণ্ঠে উচ্চারণ করি : আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা আল বাকারা : ১৫৬), হে রাসূল! বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার সবরকম ইবাদত, আমার হায়াত, আমার মওত সবকিছুই রাব্বুল আলামিনের জন্য। (সূরা আন’আম : ১৬২)। মহান প্রভুর কাছে মিনতি আমার- ‘নিজেকে চেনার তুমি তাওফিক দাও খোদা তোমাকে চেনার তুমি তাওফিক দাও আলোয় দীপ্ত করো নয়ন আমার ভোরের বিভায় ভরো এ মন আমার তবু অচেনার যতো পর্দা সরাও।’ -মতিউর রহমান মল্লিক লেখক : এমফিল গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির