post

আওয়ামী শাসনের নাশকতা

১৬ জুন ২০১৩

ড. ফিরোজ মাহবুব কামাল

রাষ্ট্র যেখানে জুলুমের হাতিয়ার বাংলাদেশে জুলুমের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম ও সবচেয়ে বড় হাতিয়ারটি পেশাদার চোর-ডাকাত বা খুনি-সন্ত্রাসীদের সংগঠন নয়। সেটি খোদ রাষ্ট্র। সরকারের পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নিরস্ত্র মানুষ হত্যায় কতটা নৃশংস ও কতটা বর্বর হতে পারে সেটি তারা ৫ মের রাতে ঢাকার মতিঝিলে অগণিত নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিলো। বাংলাদেশের সকল ডাকাত বা সকল খুনি-সন্ত্রাসী বিগত পঞ্চাশ বছরে যত মানুষকে হত্যা করতে পারেনি সেখানে সরকারি এ খুনি বাহিনীগুলো একরাতে হত্যা করেছে। বন-জঙ্গলে মানুষের জীবনের জানমালের নিরাপত্তা থাকে না। কারণ সেখানে চলে পশুর রাজত্ব। সেখানে কোর্টকাচারি থাকে না। পুলিশও থাকে না। খুনের দায়ে বন্য বাঘ-ভল্লুককে ধরে হাজতে তোলা বা তাদের বিরুদ্ধে বিচার বসানোর রীতিও বনে জঙ্গলে নেই। পশু তাই অন্যের প্রাণ নাশ করেও তাই হুঙ্কার দিয়ে চলা ফেরা করে। এক সময় মানবও অসভ্য ছিল। পাহাড়ের গুহায় বা বন-জঙ্গলে বাস করতো এবং বহু মানুষ নগ্ন হয়ে চলাফেরা করতো। সে সমাজেও আইন-আদালত ও বিচার-আচার ছিল না। ছিল জোর যার মুল্লুক তার-এর রাজত্ব। কিন্তু মানুষ যখন থেকে সভ্য হতে শিখেছে তখন থেকেই নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সভ্য রাষ্ট্র গড়তে শিখেছে। সে রাষ্ট্রে সভ্য ও দায়িত্ববান সরকার নির্বাচন করতেও শিখেছে। একটি সরকার কতটা সভ্য বা অসভ্য সেটি কোন সরকারেরই গায়ে লেখা থাকে না। তবে সেটি নির্ভুলভাবে ধরা পড়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার কতটা তৎপর ও সফল তা থেকে। তাই যে কোন সভ্য রাষ্ট্র তার কোন নাগরিক দেশে বা বিদেশে, গভীর সমুদ্রে বা গহিন জঙ্গলে হঠাৎ হারিয়ে গেলে তার জীবন বাঁচাতে যেমন দিবারাত্র লাগাতার তল্লাশি করে, তেমনি কোন ব্যক্তি খুন হলে সে খুনের বিচারে বছরের পর বছর এমনকি দশকের পর দশক ধরে লাগাতার তদন্তও করে। সরকারের মানবতা ও সভ্যতার বিচার হয় জনগণের নিরাপত্তায় এরূপ আপসহীন অঙ্গীকারে। কিন্তু যে দেশের সরকার লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে অস্ত্রধারী পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবকে রাতের আঁধারে ব্রাশফায়ারে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অনুমতি দেয়, তাকে কি আদৌও সভ্য সরকার বলা যায়? রাষ্ট্রের এমন প্রধানকে কি আদৌও সুস্থ মানুষ বলা যায়? এমন সরকারপ্রধান ও তার মন্ত্রীদের পশু বললেও তো পশুর অবমাননা হয়। কারণ আফ্রিকা বা আমাজানের গহিন বনে সকল বন্যপশু মিলেও কি কোন কালের কোন এক রাতে এত মানুষকে বধ করেছে? তা ছাড়া পশু ক্ষুধার্ত না হলে শিকার ধরে না, ধরলেও এক সাথে একটার বেশি নয়। তাই মতিঝিলে যেরূপ শত শত লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল সেটি কোন বন-জঙ্গলে কোন কালেই দেখা যায়নি। তাই বিশ্বের কোন জঙ্গলে এ অবধি যে অসভ্য বর্বরতাটি ঘটেনি সেটিই বাংলাদেশে প্রকাণ্ডভাবে সংঘটিত করলো হাসিনা সরকার। এত খুনের পর এ সরকার কোন খুনিকে গ্রেফতার করবে বা তার বিচার করবে সেটিও কি আশা করা যায়? ডাকাত দলের সর্দার তো নিজ দলের ডাকাতের বিচার করে না। সেটি করলে তো তার দল বাঁচে না। বরং তার এজেন্ডা তো হয় সবচেয়ে বড় ডাকাতদের আরো পুরস্কৃত করা। হালাকু-চেঙ্গিসেরা কি তাদের দলের কোন খুনিকে বিচার করেছে? শেখ মুজিবের আমলে ৩০-৪০ হাজার মানুষ খুন হলেও একটি খুনেরও কি বিচার হয়েছে? হয়নি। বরং সে সব খুন নিয়ে মুজিব “কোথায় সিরাজ সিকদার?” বলে উল্লাস করেছে। সে নীতি হাসিনারও। এরূপ দুর্বৃত্তদের শাসনে যা বাড়ে তা হলো আরো খুন, আরো নির্যাতন। সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তখন হয়ে পড়ে গুম, নির্যাতন ও মানব খুনের হাতিয়ারে। প্রতি যুগের হালাকু- চেঙ্গিস-হিটলারেরাই বেছে বেছে সমাজের সবচেয়ে ভয়ানক চরিত্রের খুনিদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বসিয়েছে। সেটি ঘটেছে বাংলাদেশেও। তাই নিরীহ নাগরিক হত্যার কাজটি এখন আর শুধু পুলিশ, র‌্যাব বা বিজিবির মধ্যে সীমিত নয়। বরং প্রশাসনের কর্মকর্তা, দলীয় নেতানেত্রীর সাথে আদালতের বিচারকগণও সে নৃশংসতায় নেমেছে। বিচারের নামে তাই সরকারের রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম শোনানো হচ্ছে। তা ছাড়া যে দেশের সরকার বিনা বিচারে শত শত মানুষ হত্যা করতে পারে সে দেশে বিচারেরই বা মূল্য কোথায়? জালেম সরকার কি বিচারের অপেক্ষায় থাকে? বাংলাদেশের সামনে তাই মহা দুর্দিন। মশকরা মদিনা সনদ নিয়ে! দেশে এত খুন, এত জুলুম, পত্রিকা ও টিভি অফিসে এত তালা ও এত চুরি-ডাকাতির পরও শেখ হাসিনা বলছেন, দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী। মশকরা আর কাকে বলে! প্রশ্ন হলো, মদিনা সনদ কী সেটি কি তিনি বুঝেন? গণতন্ত্রের সাথে তার পিতার মশকরা এবং তার নিজ সরকারের গাদ্দারি জনগণ বার বার দেখেছে। দেখেছে দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী আমলের নাশকতাও। তা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতকতাই কি কম? গণতন্ত্রের কথা বলে ১৯৭০-য়ে ও ১৯৭৩-য়ে ভোট নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। অথচ উপহার দিয়েছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দল ও সকল বিরোধী পত্রপত্রিকা। স্বাধীনতার নামে মুজিবের মুখে খই ফুটতো। অথচ তিনিই ডেকে এনেছিলেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অধীনতা। দেশের অভ্যন্তরে হাজার হাজার বিদেশী সন্য থাকলে কি স্বাধীনতা থাকে? মুজিব স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসত্ব চুক্তি। সে চুক্তির বদৌলতে ভারত পেয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যখন ইচ্ছা তখন সৈন্য সমাবেশের অধিকার। একমাত্র সে অধিকার পাওয়ার পরই ভারত ১৯৭২ সালে নিজ সৈন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে সরিয়ে নিতে রাজি হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের বিশ্বাসঘাতকতা কি কম? ১৯শ সত্তরের নির্বাচনে মুজিব ভোট নিয়েছিলেন এ ওয়াদা দিয়ে যে, কুরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না। অথচ ক্ষমতায় এসেই সে ওয়াদা তিনি ভুলে যান। কুরআন সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন দূরে থাক, কুরআনি বিধানের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতিকেই তিনি নিষিদ্ধ করেন। তিনি তালা ঝুলিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ সব দলের অফিসে। মদিনা সনদের নিজস্ব একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে এ ভূপৃষ্ঠে নবীজী (সা)-এর আগমনেরও। প্রেক্ষাপট আছে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার। শুধু নামাজ-রোজা, হজ-জাকাত প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন কুরআন নাজিল হয়নি, তেমনি শুধু সে ইবাদত শেখাতে ইসলামের মহান নবী (সা)-এরও আগমন ঘটেনি। প্রশ্ন, সে মূল লক্ষ্যটি কী? মহান রাব্বুল আলামিন সে লক্ষ্যটি বার বার ব্যক্ত করেছেন পবিত্র কুরআনে। সেটি হলো, “লিইউযহিরাহু আলা দ্বীনি কুল্লিহি” সমগ্র প্রচলিত ধর্মের ওপর আল্লাহর নিজের ধর্ম ইসলামের বিজয়। নবীজী (সা)ও তাই শুধু নামাজ, রোজা, হজ-জাকাত প্রতিষ্ঠার মধ্যে নিজের কাজকে সীমিত রাখেননি। নবীজী (সা)-এর মিশন ছিল, আল্লাহর জমিনকে শয়তানি শক্তির দখলদারি থেকে মুক্ত করা। তাঁর জীবনে এটিই ছিল তাঁর আমৃত্যু মুক্তিযুক্ত। মু’মিনের জীবনে এটিই জিহাদ। আল্লাহর জমিনের যেখানেই শয়তানি শক্তির দখলদারি সেখানেই শুরু হয় এ জিহাদ। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো, এ জিহাদে জান ও মাল দিয়ে অংশ নেয়া। সাহাবাদের যুগে কি এমন একজন সাহাবীও খুঁজে পাওয়া যাবে যার জীবনে জিহাদ ছিল না? যে মুখে মুসলমান হওয়ার কথা বলে অথচ জীবনে জিহাদ নেই তাঁকে নবীজী (সা) মুনাফিক বলেছেন। বোখারি শরীফের সে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হলো, “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো অথচ জিহাদ করলো না এবং জিহাদের নিয়তও কোনদিন করলো না সে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলো মুনাফিক রূপে।” মদিনা সনদের লক্ষ্য কি মুসল্লিহত্যা? নবীজী (সা) যখন ইসলামের প্রচার শুরু করেন তখন থেকেই কাফেরগণ তাঁকে পদে পদে বাধা দেয়। সর্বশেষ পরিকল্পনা নেয় নবীজী (সা)-এর প্রাণনাশের। সে মুহূর্তে নবীজীর ওপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুকুম আসে মক্কা ছেড়ে হিজরতের। তখন তিনি মদিনায় চলে যান। সাহাবাদের অনেকেই ইতোমধ্যে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। মদিনা ও মদিনার আশপাশে তখন মুষ্টিমেয় মুসলমানের পাশে ছিল বহু কাফের, ইহুদি ও খ্রিষ্টান গোত্রের বসবাস। গোত্রগুলোর মাঝে ছিল শতাধিক বছরব্যাপী চলা গোত্রীয় সংঘাত। নবীজী (সা) উদ্যোগ নেন সে গোত্রগুলোর মাঝে সংঘাত থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। কারণ, ইসলামের সদ্য রোপণ করা বৃক্ষের নিরাপদে বেড়ে ওঠার স্বার্থে এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ জরুরি ছিল। তাছাড়া এমন একটি সমঝোতা জরুরি ছিল বহিঃশক্তির হামলা থেকে ক্ষুদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিরক্ষার স্বার্থেও। তেমন একটি প্রেক্ষাপটেই মদিনা ও তার আশপাশে বসবাসরত গোত্রগুলোকে নিয়ে নবীজী (সা) পারস্পরিক শান্তি, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তাতে ছিল স্ব স্ব ধর্মপালনের অধিকার। সেটিই হলো মদিনা সনদ। নিজ ধর্ম পালনে তেমন শান্তি ও নিরাপত্তা মুসলমানগণ মক্কাতে পাননি। প্রশ্ন হলো, মদিনার সনদে মুসলমানগণ ধর্ম পালনে যে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন সে স্বাধীনতা কি হাসিনা সরকার বাংলাদেশের মুসলমানদের আদৌ দিচ্ছে? ইসলাম পালনের অর্থ তো শুধু নামাজ-রোজা, হজ-জাকাত পালন নয়, বরং সেটি পরিপূর্ণ রূপে ইসলাম পালন। সে ধর্মপালনে অবশ্যই শরিয়ত পালনও এসে যায়। শরিয়ত পালন না করাটি কবিরা গুনাহ। ফলে রোজ হাশরের বিচার দিনে মহান আল্লাহর সামনে যার জবাবদিহির ভয় আছে সে কি শরিয়ত পালন থেকে সামান্যক্ষণের জন্যও দূরে থাকতে পারে? মহান আল্লাহর ঘোষণা : “যারা আমার নাজিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার আচার করে না তারা কাফের ... তারা জালেম ... তারা ফাসেক।” (সূরা মায়েদা আয়াত : ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কিন্তু মহান আল্লাহর নাজিলকৃত সে বিধান পালন তথা শরিয়ত পালন আজ অসম্ভব করা হয়েছে বাংলাদেশে। সেটি সরকারের পক্ষ থেকে। কাফের ব্রিটিশ সরকার সেটি অসম্ভব করেছিল, আর পরবর্তী সরকারগুলো সেটিকেই চালু রেখেছে। অথচ মদিনার মুসলমানগণ পরিপূর্ণ ধর্মপালনের সে সুযোগটি প্রথম দিন থেকেই পেয়েছিলেন। মদিনা সনদ অনুসারে সেখানে বসবাসরত অমুসলমানগণ মুসলমানদের সে পরিপূর্ণ ধর্মপালনে কোনরূপ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটি। এদেশে অমুসলমানগণ তাদের ধর্ম পালনে পুরো সুবিধাগুলো পেলেও সে সুযোগ পাচ্ছে না মুসলমানগণ। তারা আপসহীন অবস্থান নিয়েছে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা যে নীতি অনুসরণ করছেন সেটি তো মক্কার কাফেরদের নীতি। সেটি হলো ইসলাম নির্মূলের নীতি। সেটি শরিয়তের প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধের নীতি। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় নাশকতা আর কী হতে পারে? যারা ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ চায় তাদের জন্য নিরাপত্তা না বাড়িয়ে তিনি বরং নানাভাবে বিপদ বাড়িয়ে চলেছেন। সে নীতির বাস্তবায়নের তিনি পূর্ণ সহায়তা নিচ্ছেন ভারতীয় কাফেরদের। তাই তার সরকার বাংলাদেশে কুরআনের তাফসির বন্ধ করে দিয়েছে এবং ফাঁসির হুকুম শুনিয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রখ্যাত তাফসিরকারকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মক্কার কাফেরগণ যেমন নবীজীকে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের অনুমতি দেয়নি, হাসিনা সরকারও তেমনি অনুমতি দিচ্ছে না দেশের ইসলামী দলগুলোর সমাবেশের। সম্প্রতি (৫ মে ’১৩) তাই নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে। শাহবাগের মোড়ে নাস্তিক ব্লগারদের মাসের পর মাস লাগাতার সমাবেশের অধিকার দিলেও সে অধিকার হাসিনা ইসলামপন্থীদের দেননি। ইসলামপন্থী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যেই জেলে তোলা হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে ২ শত জনের বেশি নিরস্ত্র মানুষকে তারা শহীদ করেছে। সরকার শত শত মানুষের ঘরে পুলিশ ও র‌্যাব নামিয়েছে জিহাদবিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করার কাজে। এমনকি ইসলামবিষয়ক বইপত্র রাখার অপরাধে সরকার হেজাবধারী মহিলাদের হাজতে তুলেছে। এমনকি নামাজীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে তালা ঝুলিয়েছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে। প্রশ্ন হলো, এই কি হলো মদিনার সনদ অনুযায়ী দেশ-শাসন? ৫ সে ’১৩ তারিখে ছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। এ অবরোধ কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১৩ দফা দাবি আদায়। কিন্তু আলেম-উলামাদের এ কর্মসূচির বিরুদ্ধে সরকার হাজার হাজার পুলিশ লেলিয়ে দেয়। পুলিশের পাশাপাশি ছিল সরকারি দলের বিশাল গুণ্ডাবাহিনী। শত্রুর অধিকৃতি ও মুক্তির জিহাদ লাগাতার জিহাদ ও কোরবানির মাধ্যমে নবীজী (সা) আরব ভূমিকে কাফের শত্রুদের অধিকৃতি থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। নবীজী (সা)-এর রাজনীতির এটিই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। নবীজী (সা)-এর এ সুন্নত পালনটি হলো মু’মিনের জীবনে পবিত্র জিহাদ। সে জিহাদ পালনটি নবীজী (সা)-এর আমলে যেমন সীমিত ছিল না, তেমনি স্রেফ আরব ভূমিতেও সীমিত ছিল না। বরং যেখানেই তারা দেখেছেন কাফের শক্তির অধিকৃতি, সেখানেই তারা শুরু করেছেন সে অধিকৃতি থেকে মুক্তি দেয়ার লড়াই। সে মিশন নিয়ে তারা যেমন পৃথিবীর নানা প্রান্তে গেছেন, তেমনি বাংলাদেশেও পৌঁছেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ আজ আবার অধিকৃত হয়ে গেছে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। নবীজী (সা)-এর শরিয়তভিত্তিক শাসনকে তারা মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলছে। অথচ মুসলমানদের সকল গৌরব সে মধ্যযুগে। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, ইসলামের এ শত্রুপক্ষ সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর আস্থার কথাটিও উল্লেখ করতে চায় না। তাদের কারণে আল্লাহর শরিয়তি বিধান আজ তাই আঁস্তাকুড়ে গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু কোন মুসলমান কি ইসলামের এ পরাজিত দশা মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তার ঈমান থাকে? শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব নিজেকে মুসলমান রূপে দাবি করতেন। সে দাবি শেখ হাসিনাও করেন। ৪ মে তারিখে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, তার দাদার মুখে দাড়ি ছিল। নিজেকে মুসলমান ও ইসলামের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রূপে জাহির করার জন্য তিনি এখন দাদার দাড়ির উল্লেখ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নিজের মুসলমান রূপে পরিচয় দেয়ার জন্য কি দাদার মুখে দাড়ি থাকাটি জরুরি। শেখ, সৈয়দ বা চৌধুরী পরিবারে পরিবারে জন্ম নিলে যে কেউ শেখ, সৈয়দ বা চৌধুরী হতে পারে। সে জন্য কোন যোগ্যতা লাগে না। পাগল এবং চোর-ডাকাতেরাও সে উপাধি পায়। কিন্তু মুসলমান হওয়ায় জন্য তো মহান আল্লাহর লক্ষ্য পূরণে আপসহীন অঙ্গীকার চাই। সে লক্ষ্যে লাগাতার কোরবানিও চাই। কাফের পুত্রও মুসলমান হতে পারে যদি তার মধ্যে সে অঙ্গীকার ও কোরবানি থাকে। নবীজী (সা)-এর প্রথম সারির সাহাবাদের পিতামাতা কি মুসলমান ছিলেন? প্রশ্ন হলো শেখ মুজিব, হাসিনা বা আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবনে কোথায় সে অঙ্গীকার? মুসলমানের প্রতি সময়ের নামাজ-রোজ, হজ-জাকাত পালনে আল্লাহকে রাজি করার নিয়ত থাকতে হয়, নইলে সেগুলো ইবাদত হয় না। তেমনি তার যুদ্ধবিগ্রহ ও রাজনীতিতেও আল্লাহকে রাজি করার নিয়ত থাকতে হয়। মানুষ তো আখেরাতে জান্নাত পাবে সে নিয়তের কারণে। যুদ্ধে-বিগ্রহ ও রাজনীতিতে অর্থ, শ্রম ও প্রাণের কোরবানি তো বহু কাফেরও করে। কিন্তু তাদের কোরবানিতে কি মহান আল্লাহর লক্ষ্য পূরণের নিয়ত থাকে? সে নিয়ত না থাকার কারণেই তাদের সকল কোরবানি ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে তারা পৌঁছবে জাহান্নামে। কিন্তু মুসলমানের কোরবানিতে আল্লাহকে খুশি করার নিয়ত থাকার কারণেই সে বিনা বিচারে জান্নাত পায়। শেখ মুজিব আজীবন রাজনীতি করেছেন। জেলও খেটেছেন। রাজনীতি করছেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীও। কিন্তু কোথায় সে আল্লাহর লক্ষ্য পূরণে সে নিয়ত? কোথায় সে অঙ্গীকার? কোথায় আল্লাহর জমিন থেকে শয়তানি শক্তির দখলদারি মুক্তির লড়াই? এ তো ক্ষতির ব্যবসা। সূরা আসরে মহান আল্লাহতায়ালা কি সে মহাক্ষতির কথাটিই শুনিয়ে দেননি। বরং শেখ মুজিব তো ভারতের কাফের সৈন্যদের সাথে কাঁধ মিলিয়েছেন। তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডেকে এনেছেন। মুজিবের রাজনীতিতে অঙ্গীকার ছিল সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা, মহান আল্লাহকে খুশি করা নয়। তাঁর শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রচণ্ড ধর্ম-বিরোধিতা।ইসলামের বিরুদ্ধে সে অঙ্গীকার নিয়ে যেখানেই তিনি কুরআনের আয়াত ও ইসলাম দেখেছেন সেখান থেকেই তা সরিয়েছেন। তাই তার হাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কুরআনের আয়াত বাঁচেনি। বাঁচেনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল বা জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মুসলিম শব্দ। তেমনি বাঁচেনি ঢাকার নজরুল ইসলাম কলেজের ইসলাম শব্দটি। প্রশ্ন হলো, এমন চেতনার নেতাদের হাতে কি ইসলামী চেতনা বাঁচে? রক্ষা পায় কি মুসলিম স্বার্থ? আল্লাহর দ্বীনের এমন চিহ্নিত শত্রুকে বাঙালি মুসলমানের বন্ধু বলা যায়? বলা যায় কি জাতির পিতা? সেটি যে কোন হিন্দু বা বৌদ্ধ বলতে পারে, নাস্তিক বা কাফেরও বলতে পারে। কিন্তু কোন মুসলমানও কি বলতে পারে? কোন মুসলমান বললে কি তার ঈমান থাকে? মুখের কথার মধ্য দিয়ে যেমন ঈমানের প্রকাশ ঘটে, তেমনি বেঈমানিও ধরা পড়ে। আল্লাহর দ্বীনের শত্রুকে বন্ধু বলা যে ঈমানদারি নয় সেটি বোঝা কি এতই কঠিন? অতীতে মুসলমানগণ মুরতাদদের হত্যা করতেন তো তাদের কথার ওপর ভিত্তি করেই। কবিরা গুনাহর রাজনীতি মুজিবের অনুসারীরা একাত্তরে ভারতীয় কাফেরদের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে কাফেরদেরই এজেন্ডা পূরণ করেছে। তাদের সে সফল কর্মে প্রচণ্ড উৎসব বেড়েছে দিল্লির শাসক মহলে। আর মাতম বেড়েছে সমগ্র মুসলিম জাহানে। মুসলিম উম্মাহকে এভাবেই মুজিব কাঁদিয়েছেন এবং হাসি ফুটিয়েছেন ভারতের কাফেরদের মুখে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এটিই ছিল মুজিবের বড় অপরাধ। তাই ভারত ভুটানের ন্যায় অমুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এলেও কোন মুসলিম রাষ্ট্র এগিয়ে আসেনি। মুজিব ও তার অনুসারীরা একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে তারা ভেঙেছেন। অথচ ইসলামে এটি শতভাগ হারাম। ইসলামে এটি কবিরা গুনাহ। অন্যের শ্লীলতাহানি বা পকেটে হাত দেয়াই শুধু কবিরা গুনাহ নয়, কবিরা গুনাহ হলো মুসলিম দেশের ভূগোলে হাত দেয়াও। ইসলামে এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কুরআন হাদিসের এটি মৌলিক জ্ঞান। বাংলাদেশ যে শুধু দুর্বৃত্তিতেই বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে তা নয়। দেশটি বহু দূর এগিয়েছে কুরআন হাদিসের ওপর সীমাহীন অজ্ঞতা নিয়েও। ফলে দেশ ছেয়ে গেছে সুদ, ব্যভিচার, অশ্লীলতা ও মদ্যপানের ন্যায় নানাবিধ কবিরা গুনাহতে। তবে কবিরা গুনাহ যে শুধু শিরক, মূর্তিপূজা, সুদ-ঘুষ, ব্যভিচার, অশ্লীলতা, মদ্যপান, চুরি-ডাকাতি তা নয়, বরং তার চেয়েও বড় কবিরা গুনাহ হলো ভাষা, বর্ণ বা ভৌগোলিক পরিচয় নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের সংহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা। পবিত্র কুরআনে এমন কবিরা গুনাহর বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। কিছু লোকের ব্যভিচার ও মদ্যপানের কারণে মুসলমানদের ঘাড়ে কাফের শত্রুদের গোলামি চেপে বসে না। অথচ মুসলিম ভূমিতে কাফেরদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা পেলে সেটি হয়। মুসলমানগণ শক্তিহীন ও মর্যাদাহীন হয়। একাত্তরে মুজিব বাংলাদেশের ভারতের সে অধিকৃতিকেই নিশ্চিত করেছিল। এখানেই মুজিব ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল নাশকতা। মুজিবের গাদ্দারি মুজিবের গাদ্দারিটা শুধু পাকিস্তানের সাথে ছিল না। সে গাদ্দারিটা ছিল মূলত ইসলামের বিরুদ্ধেও। এবং ছিল বাংলাদেশের মুসলমানদের সাথে। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল বাংলাভাষী। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের লড়াইকে তিনি বিচ্ছিন্নতার লড়াইয়ে পরিণত করেন। এবং সেটি স্রেফ ভারতীয় অভিলাষ পূরণে। তাই একাত্তরে সকল লাভের ফসল মুজিব ভারতের ঘরে তুলে দেন। পাকিস্তানের অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ভারত নিজ দেশে লুটে নিয়ে যায়। আওয়ামী নেতাগণ তার বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিবাদও করেনি। প্রভুর সামনে গোলামদের প্রতিবাদের সে নৈতিক বল থাকারও কথা নয়। ইসলামে যেমন নামাজের বিধান আছে তেমনি রাজনীতির বিধানও আছে। ইসলামের হারাম হালামের বিধান শুধু খাদ্য-পানীয়ে নয়, সেটি রয়েছে রাজনীতিতেও। নবীজী (সা) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রাজনীতিতে আমৃত্যু অংশ নিয়ে তা দেখিয়ে গেছেন। কিছু ইসলামী চেতনাশূন্য মুজিব ও তার অনুসারীগণ সে বিধানের প্রতি সামান্যতম ভ্রƒক্ষেপও করেননি। ফলে মুজিব ও তার সাথীরা পরিণত হন ভারতীয় আগ্রাসীদের অতি অনুগত সেবাদাসে। কথা হলো, রাজনীতিতে সামান্যতম ইসলামী জ্ঞান কি শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের ছিল? সে জ্ঞান এবং ইসলামের প্রতি সে অঙ্গীকার না থাকার কারণেই একাত্তরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সেক্যুলার ও সমাজতন্ত্রী নেতাকর্মীরা ভারতীয় কাফেরদের সাথে মিশে যায় এবং ভারতের কোলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। একাত্তরে ভারতের অস্ত্র ও ভারতের অর্থ নিয়েই তারা ইসলামপন্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলামের সাথে তাদের দুশমনি যে কতটা গভীর এবং ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য যে কতটা প্রকট সেটি শুধু একাত্তরে ধরা পড়েনি, আজও ধরা পড়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে। বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরে বহু ইসলামী দল ছিল। ইসলামী দলের বহু লক্ষ নেতাকর্মী এবং সমর্থকও ছিল। কিন্তু তারা ভারতের এজেন্ডা পূরণে তাদের দেয়া অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি। তারা ভারতেও যায়নি। একই কারণে কোন আলেম এবং কোন পীর সাহেবও সে কবিরা গুনাহতে অংশ নেননি। তারা বরং দলে দলে রাজাকার হয়েছে, বহু হাজার রাজাকার প্রাণও দিয়েছে। একাত্তরের রাজাকারের চেতনা ছিল এই কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার চেতনা। মুসলমান যুদ্ধ করে মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়াতে, সেটিকে ভাঙতে বা খর্ব করতে নয়। এটি তো মুসলমানদের শত্রুদের কাজ। সে কাজটি একাত্তরে ভারত চেয়েছে। মুজিব ভারতের সে চাওয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কোন মুসলিমই মুসলিম দেশ ভাঙতে বা মুসলিম দেশের ভূগোল বিলীন করতে যুদ্ধ করে না। তাই উসমানিয়া খেলাফত ভেঙে যখন বিশের অধিক আরব রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা হয়, তাতে বিপুল অর্থ, অস্ত্র ও জনশক্তির বিনিয়োগ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। তাদের চর ও দাস হিসাবে খাটে আরব জাতীয়তাবাদীরা। সে সাথে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, আবুধাবি, ওমানের কিছু ট্রাইবাই নেতা। কোন ঈমানদার ব্যক্তি সে কাজে যোগ দেয়নি। সে দাসদের কারণেই আরব ভূখণ্ড আজ ২২ টুকরায় বিভক্ত। আরো বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে ইরাক, সুদান ও ইয়েমেনে। মুসলিম উম্মাহ শক্তিহানির মূল কারণ তো এ বিভক্তি, জনশক্তি বা সম্পদের কমতি নয়। আর বাংলাদেশের মাটিতে সে বিভক্তির নায়ক ছিলেন শেখ মুজিব। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন ভারতবন্ধু, বঙ্গবন্ধু নন। দেশ শাসনের সনদটি দাসত্বের শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব যে সনদ নিয়ে কাজ করেছেন সেটি মদিনার সনদ নয়, বরং সেটি ছিল ভারতের কাছে দাসত্বের। সে সনদের শর্ত অনুসারেই মুজিব বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তুলে দিয়েছেন পদ্মার পানি। অথচ পাকিস্তানে ২৩ বছরে একদিনের জন্যও ভারত বেরুবাড়ির গায়ে হাত দিতে পারেনি। পদ্মার পানিও তুলে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে মুজিব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমান্ত বিলোপ করেছিলেন। তিনি সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতকে অনুমতি দিয়েছিলেন বাজার বসানোর। ভারতের এ সেবাদাসটি তার প্রভু দেশের কাছে বাংলাদেশের কারেন্সি নোট ছাপানোর দায়িত্ব দেন। আর ভারত সে সুযোগ পেয়ে শত শত কোটির বেশি অতিরিক্ত নোট ছেপে নিজের হাতে রেখে দেয়। সে অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘিরে বসানো মুক্তবাজার থেকে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রা, কাঁসা-পিতল, পাকিস্তান আমলে বিদেশ থেকে ক্রীত যন্ত্রপাতি ও সঞ্চয়কৃত ধাতব পদার্থ কিনে ভারতে নিয়ে যায়। জাতীয়করণের নামে মুজিব ধ্বংস করেন পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানা। এভাবে ধ্বংস করেন বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ডেকে আনেন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যাতে প্রাণহানি হয় বহু লক্ষ মানুষের। দরিদ্র মানুষ তখন কাপড়ের অভাবে মাছধরা জাল পরতে বাধ্য হয়। মদিনার সনদের লক্ষ্য ছিল, মুসলমানদের দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি। লক্ষ্য ছিল ইসলামী রাষ্ট্র ও সভ্যতার নির্মাণ। অথচ হাসিনা যাচ্ছেন উল্টো দিকে। তার লক্ষ্য, মুসলমানদের শক্তিহানি। লক্ষ্য, ইসলামের রাষ্ট্র নির্মাণের সবল প্রতিরোধ। সেটি তিনি ঘোষণা দিয়েই করছেন। একটি দেশের শক্তির তিনটি মূল উৎস। এক. শিক্ষাগত শক্তি, দুই. সামরিক শক্তি, তিন. অর্থনৈতিক শক্তি। আওয়ামী এ তিনটি খাতেরই দ্রুত বিনাশে হাত দিয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলোকে তছনছও করে দিয়েছে। সে লক্ষ্য নিয়েই হাসিনা ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই সংঘটিত হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ড। সেখানে হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে। আর্মির পাশাপাশি শক্তি হানি করা হয় বিডিআরের। শত শত বিডিআর সদস্য এখনো কারাবন্দী। বন্দী অবস্থায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে জেলখানায়। অপর দিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিণত করেছে দলীয় ক্যাডার তৈরির কারখানায়। এবং বছরের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে রাজনৈতিক ক্যাডারদের মাঝে সংঘাতের কারণে। ফলে লেগে আছে দীর্ঘ সেশনজট। এভাবে নাশকতা ডেকে এনেছে দেশের শিক্ষা খাতে। আওয়ামী নাশকতা অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার মাঝে ভারতের স্বার্থ বিশাল। ভারত চায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ টিকে থাকুক স্রেফ ভারতীয় পণ্যের ক্রেতা হিসেবে। অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়। বাংলাদেশীদের ক্রয়ক্ষমতা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেমন উৎপাদন বেড়েছে, তেমনি বিদেশী অর্থের উপার্জন বেড়েছে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশীর বিদেশগমনে। ফলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর পকেটে এখন অনেক পয়সা। এত বড় বাজার ভারতের পশ্চিম বাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মত ছয়-সাতটি প্রদেশ মিলেও নেই। এ বাজার ভারত দখলে নিতে চায়। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের রাজনীতিতে বেড়ে ওঠার মূল কারণ তো ভারতের এ বিনিয়োগ। এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে সমগ্র পৃথিবীতে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম ছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশী অর্থ উপার্জিত হতো এ খাতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পূর্বপাকিস্তানের এবং পরে বাংলাদেশের সে প্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান ভারত মেনে নিতে পারেনি। ভারত চেয়েছিল সে মর্যাদা তা নিজের জন্য। সে জন্যই ভারতের প্রয়োজন দেখা দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আদমজী জুটমিলসহ সকল পাট শিল্পের ধ্বংস। ভারতের স্বার্থে সে কাজটি সমাধা করে দেয় তাদেরই পালিত দাস মুজিব। মুজিব আমলে একদিকে যেমন পাটকলগুলোকে অচল করা হয় তেমনি পাটের গুদামগুলোতে আগুন দেয়া হয়। আর অপর দিকে ভারত তার পুরনো পাটকলের বদলে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘিরে গড়ে তোলে বহু পাটকল। তখন বাংলাদেশের সস্তা কাঁচাপাট দেশে মূল্য না পেয়ে ভারতের বাজারে গিয়ে ওঠে। ভারত তখন তাড়াতাড়ি পাট শিল্পে বিশ্বে প্রথম হওয়ার মর্যাদা অর্জন করে। আজ বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বী উঠেছে গার্মেন্টস শিল্পে। ভারত সেটিকেও ধ্বংস করতে চায়। আর গার্মেন্টস শিল্পকে আজ ধ্বংস করা হচ্ছে অতি পরিকল্পিতভাবে। এ শিল্পে নামানো হয়েছে কিছু দুর্বৃত্ত ও ডাকাতদের। যারা নেমেছে দরিদ্র শ্রমিকের রক্তচোষক রূপে। যে শিল্পে রক্তচোষণ হয় দরিদ্র শ্রমিকের সে শিল্প কি বেঁচে থাকে? সে শিল্প বরং আল্লাহর আজাব ডেকে আনে। তখন তাতে আগুন লাগে বা ভবনধসে পড়ে। সাভারে যা ঘটে গেল তা কি তারই আলামত নয়। আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতিতে দেশের দরিদ্র মানুষ পরিণত হয়েছে রাজনীতির কাঁচামালে। সেটি যেমন মুজিব আমলে তেমনি হাসিনার আমলে। মুজিব সোনার বাংলা প্রতিশ্রুতি দিতে ১৯৭০-য়ের নির্বাচনে ভোট নিয়েছিলেন। ওয়াদা দিয়েছিলেন আট আনা সের চাল খাওয়োনোর। অর্থ উপহার দিয়েছিলেন দুর্ভিক্ষ। তেমনি ২০০৮ সালে হাসিনা ওয়াদা দিয়েছিলেন ৮ টাকা সের চাল খাওয়ানোর। এখন খাওয়াচ্ছেন ৪৫ টাকা সের দরে। ওয়াদা দিয়েছিলে বিনা মূল্যে সারের। ওয়াদা দিয়েছেন ঘরে ঘরে চাকরির। সবই ছিল প্রকাণ্ড মিথ্যাচার। ২৪ নভেম্বর ২০১২-তে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লেগে ১১১ কর্মী পুড়ে মারা যান। হাসিনা সরকার ওয়াদা দিয়েছিল ক্ষতিপূরণের। কথা ছিল কারণ খুঁজে শাস্তি দেয়ার। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। স্বজনহারা পরিবারগুলোকে আজ অবধি কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। কারণ, তাজরীনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেলোয়ার হোসেন একজন সরকার সমর্থক ব্যক্তি। ফলে কারো পক্ষে তার পকেট থেকে স্বজনহারাদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়াও সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এমন কোন শ্রমিক সংগঠনও গড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। কয়েক বছর আমিনুল ইসলাম একজন ব্যক্তি গার্মেন্টস ইন্ডাসট্রিতে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে অপরাধে তাকে লাশ হতে হয়। পুলিশ ৪ দিন পর তার লাশ উদ্ধার করেই দায়িত্ব সেরেছে। আজ অবধি তার খুনের কোন বিচার হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। তাজরীনে আগুন লাগার দুই দিন পর ২৬ নভেম্বর ২০১২-তে চট্টগ্রামে বহদ্দার পুকুরপাড়ে নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৫ জন নিহত হয়। কিন্তু কেন সে নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে পড়লো তার কোন তদন্ত হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। কারণ এই ফ্লাইওভার নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাকটো পারিসা লিমিটেড এবং মীর আক্তার কন্সট্রাকশন দু’টি ফার্ম যুগ্মভাবে। ফলে কে তাদের গায়ে আঁচড় দেবে? এভাবেই একের পর দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী দুর্বৃত্তগণ। অর্থনীতিতে আওয়ামী নাশকতার আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দেশের চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট মেটানোর লক্ষ্যে স্থায়ী কোন সাশ্রয়ী পদক্ষেপ না নিয়ে চালু করেন ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল সিস্টেম। এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটে গেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশ। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড)-এর ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রাইভেট কুইক রেন্টাল কোম্পানি থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে তা কম দামে বিক্রি করে বিপিডিবি। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কেনে ১৪ থেকে ১৭ টাকা। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট টাকার মধ্যে। এখানে অর্ধেকই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকির যে ৯,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে তার ৮০ শতাংশই দিতে হচ্ছে কুইক রেন্টাল থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনায়। ভর্তুকিার এ অর্থ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় কর্নেল ফারুক খান, আজিজ গ্রুপ, গার্মেন্টস রফতানিকারক মোহাম্মদী গ্রুপ, ফার্নিচার বিক্রেতা অটবি গ্রুপ, সালমান রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ ইত্যাদির ন্যায় আওয়ামী রাজনীতির অর্থজোগান দারদের পকেটে। এভাবে শেখ হাসিনা তার পিতার ন্যায় রাজনীতিকে পরিণত করেছেন শুধু দেশ ধ্বংসের হাতিয়ারে নয়, বিপুল অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ারেও। নাশকতা শেয়ারবাজারে যে কোন দেশের শিল্পায়নে অর্থের বিশাল জোগান আসে জনগণের পকেট থেকে। জনগণ তাদের অর্থ ফেলে না রেখে শিল্পকারখানার শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করে। পাশ্চাত্যে তো এভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে। শেয়ার মার্কেটের অর্থ নিয়েই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত জয় করেছিল। কিন্তু আওয়ামী নাশকতা ঘটেছে এ ক্ষেত্রটিতেও। শেখ হাসিনা যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন তখন নভেম্বর ১৯৯৬য়ে শেয়ার মার্কেটে প্রচণ্ড ধস আসে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসায় আবার ধস আসে অক্টোবর ২০১১য়ে। শেয়ার বাজারের দ্বিতীয়বারের কেলেঙ্কারিতে দেশের প্রায় ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এতে নিঃস্ব হয়ে যান। শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের জন্য যারা দায়ী সরকার তাদের একজনকেও গ্রেফতার করেনি এবং শাস্তিও দেয়নি। অথচ দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা যখন মতিঝিলে বিক্ষোভ মিছিল করে তখন প্রধানমন্ত্রীর অথনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, “ওরা দেশের শত্রু। সমাজের শত্রু। ওদের জন্য মাথা ঘামানোর কোনো কারণ নেই। তাদের কষ্টে আমার মন কাঁদে না। শেয়ারবাজার ধসে সরকারের মাথাব্যথার কিছু নেই। কারণ শেয়ারবাজারে পুঁজি প্রকৃত বিনিয়োগে যায় না... শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখে না।” চোর-ডাকাতদের অভয়ারণ্য প্রতিটি আওয়ামী শাসনামলেই দুর্বৃত্তদের পোয়া বারো হয়। দেশ পরিণত হয় চোর-ডাকাতদের জন্য অভয়ারণ্যে। সেটি যেমন মুজিব আমলে হয়েছিল, তেমনি হাসিনার আমলেও। ডাকাতদের এখন আর ডাকাত দল গঠনের প্রয়োজন পড়ে না। তারা ডাকাতির জন্য ভুয়া বাণিজ্যিক কোম্পানি গড়ে তোলে। তখন ডাকাতি শুরু করে দেশের অর্থভাণ্ডারে। সেটি হাজার হাজার কোটি টাকার অঙ্কে। আওয়ামী লীগের আমলে জনগণের অর্থের নির্মম লুটেরা হলো ডেসটিনি নামক একটি কোম্পানি। এ কোম্পানিটি ৩,২৮৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং ও আত্মসাৎ করে। ডিসটিনির কর্মকর্তা হলেন জেনারেল হারুন। তদন্তে দুদক জেনারেল হারুনের কাছে জানতে চায় তার ব্যাংক একাউন্টে ২০ কোটি টাকা ঢুকলো কিভাবে? হারুনের জবাব, “মাসিক সম্মানী, ডিভিডেন্ড ফান্ড, এলাউন্স, কমিশন বাবদ এই টাকা আমার একাউন্টে ঢুকেছে। এ ছাড়া কিছু টাকা বাড়ি ভাড়া থেকেও এসেছে।” (যুগান্তর ৫.১১.২০১২)। জেনারেল হারুন একজন আওয়ামী লীগ নেতা। দুদকের কি সামর্থ্য আছে এ নেতাকে একদিনের জন্যও জেলে নেয়ার? এতবড় দুর্নীতির পরও তাকে জেলে যেতে হয়নি। ডেসটিনি ছাড়া আরো ত্রিশটির বেশি এমএলএম কোম্পানি অবাধে মানুষকে প্রতারণা করার সুযোগ পায় আওয়ামী সরকার শাসনে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ইউনিপে টু ইউ, সাকসেস লিংক, গ্লোবাল নিউওয়ে প্রভৃতি। দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, কয়েকটি এমএলএম প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে ৪,৯৬৩ কোটি টাকার কিছু বেশি এবং এর মধ্যে ব্যক্তিগত একাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল প্রায় ৪,৬০১ কোটি টাকা। (প্রথম আলো ৯.৯.২০১২)। টাকা বানানোর এরূপ সুযোগ দেখলে কি দুর্বৃত্তরা আর বসে থাকে। মরা লাশের গন্ধ পেলে যেমন শকুন ছুটে আসে তেমনি অর্থলুটের সুযোগ দেখলে দেশ-বিদেশের ডাকাতেরাও ছুটে আসে। বাংলাদেশের সরকার দুর্বৃত্ত চোর-ডাকাতদের জন্য তো সে সুযোগই সৃষ্টি করেছে। তাই ২০০৫-এ এগিয়ে আসে চায়না থেকে তিয়ানশি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। (আমাদের সময়.কম ৫.১১.২০১২)। এসব চোর ডাকাতদের হাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কুশ্রী অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল ব্রাঞ্চে। সেটিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগসাজশে। ব্যাংকের ঐ শাখা থেকে ৩,৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ বা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা লুট হয়ে যায়। হলমার্ক একাই নিয়েছে প্রায় ২,৬৬৮ কোটি টাকা। একটি ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চে একটি কোম্পানির এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। এটিই ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। (প্রথম আলো ৫.৯.২০১২)। বাংলাদেশে সকল ডাকাত মিলেও গ্রামগঞ্জ থেকে এত অর্থ বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরে লুটতে পারেনি। অথচ সে লুটের সাথে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা। স্বাধীনতা ও ঈমানের হেফাজত যে পথে কিন্তু এরূপ সীমাহীন লুটপাটও আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষনেতাদের কাছে গুরুতর কিছু মনে হয়নি। এক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিই। এর মধ্যে মাত্র তিন বা চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হইচই করারও কিছু নেই। সংবাদমাধ্যমে এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা করে দেশের ক্ষতি করছে। এমন ভাব যেন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধসে গেছে। এতে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।” “সোনালী ব্যাংকের এক রূপসী বাংলা শাখায় জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণই তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অন্য কোনো বেসরকারি ব্যাংকে এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যেত। যেমন বন্ধ হয়েছিল ওরিয়েন্টাল ব্যাংক।” (প্রথম আলো ০৫.০৯.২০১২)। এই অর্থমন্ত্রীই সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে সাভারে ভবনধসে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন, এটি কোন গুরুতর বিষয় নয়। বলেছেন, এ ভবন ধসে গার্মেন্টস শিল্পের কোন ক্ষতি হবে না। বিকৃত ও অসুস্থ বিচারবোধ আর কাকে বলে। চোর-ডাকাত বা ব্যভিচারীদের ঘৃণা করার সামর্থ্য চোর-ডাকাত ও ব্যভিচারীদের থাকে না। কিন্তু দেশের নিরক্ষর সাধারণ মানুষদের তা থাকে। এমনকি শিশুদেরও সে সামর্থ্য থাকে। কিন্তু সে সামর্থ্য নেই হাসিনা সরকারের এসব মন্ত্রীদের। নাই খোদ শেখ হাসিনার ও তার দলীয় কর্মীদের। বাংলাদেশের মূল বিপদটি এখানেই। দেশ আজ জিম্মি এসব বিবেকহীন অসুস্থ ও দুর্বৃত্ত ব্যক্তিদের হাতে। তারা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে তাতে শুধু দেশের নয়, ইসলাম এবং দেশবাসীর ঈমানের বিরুদ্ধেও নাশকতা বাড়বে। কতটা দ্রুততর সাথে এ আওয়ামী দখলদারির সমাপ্তি ঘটবে, তার ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা ও শান্তি। এবং নির্ভর করছে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও ঈমানের হেফাজত। দেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি, দেশবাসীর ঈমানের হেফাজত এবং তাদের ইহকাল ও আখেরাতের কল্যাণে এ ছাড়া ভিন্ন পথ আছে কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির