post

আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঈমানের সহায়ক আমল

ড. মো: হাবিবুর রহমান

২৭ মে ২০১৮
আল্লাহ বিশ্বাসী একজন ঈমানদার ব্যক্তি ঈমান ও ইসলামী আকিদা মোতাবেক প্রত্যেকটি কাজ করতে বাধ্য। তাই ঈমান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেকটি মুমিনের অবশ্যই কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের ৭২০টি জায়গায় ঈমানের উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবীরাও আল কুরআন শিক্ষা করার আগে ঈমান শিক্ষা করতেন। ঈমানের সাথে আমলের সম্পর্ক এমন যে, ঈমান ছাড়া আমলে সালেহ (নেক আমল) যেমন গ্রহণযোগ্য হয় না, ঠিক তেমনি আমলে সালেহ ছাড়া ঈমানও আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। রাসূল (সা.) বলেছেন, “নিয়তের ওপরই সব কাজ নির্ভরশীল। মানুষ যা নিয়ত করে তাই পায়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) রাসূল (সা.)-এর হাদিসের মর্ম হচ্ছে, যে কোন সৎ কাজই করা হোক না কেন, তা কি উদ্দেশ্য ও কোন নিয়তে করা হয়েছে, তার ওপরেই আল্লাহ এর প্রতিদান দিবেন। এখানে যে নিয়তের কথা বলা হচ্ছে সেটাই মূলত ঈমান। যদি আন্তরিক বিশ্বাস ও উদ্দেশ্য সৎ থাকে তাহলে সে কাজের প্রতিদান পাওয়া যাবে নচেৎ তার কোন সওয়াব বা প্রতিদান পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা একজন মু’মিনের চেহারা ও ধন-সম্পদ দেখেন না, দেখেন তার অন্তর ও আমলকে। আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদের আকৃতি, চেহারা ও ধন-সম্পদ দেখবেন না। তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর ও আমলকে।” (সহিহ মুসলিম) কোরবানি করা প্রসঙ্গেও আল্লাহ তাআলা এমনই বলেছেন, “আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশ্ত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া বা অন্তরের অবস্থা।” (সূরা হজ: ৩৭) এ আয়াত থেকেও অনুধাবন করা যায়, শুধু বাহ্যিক কাজই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না যদি তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস বা নিয়তের বিশুদ্ধতা না থাকে। মানুষের দুনিয়ার জীবনের আমল বা কর্ম দুই ভাগে বিভক্ত (ক) আমলে সালেহ বা ভালো আমল যা মানুষের ঈমানের সহায়ক (খ) আমলে সাইয়্যেয়াত বা খারাপ আমল যা মানুষের ঈমান ধ্বংস করে। ঈমানের সহায়ক আমল বা ঈমান বৃদ্ধির আমল সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।” (সূরা আনফাল : ২-৩) আলোচ্য প্রবন্ধে এই আয়াতের মানদণ্ডে অঙ্কিত আল কুরআন ও আল হাদিসের আলোকে ঈমানের সহায়ক আমল বা ঈমান বৃদ্ধিকারী আমলসমূহের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো: একমাত্র ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা মানবতার জন্য কল্যাণকর একমাত্র জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম যা আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান : ১৯) একজন মুমিন তার জীবনে একমাত্র ইসলামকেই জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে। আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে মেনে নেবে, তাঁর কাছেই মাথানত করবে এবং জীবন চলে গেলেও তাঁর সাথে কাউকে শরিক স্থাপন করবে না। তাওহিদের এই ভিত্তির উপরে সমাজ গঠন করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাঁর হাবিবকে বলেছেন, (হে নবী তুমি) বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।” (সূরা ইখলাস) উল্লেখ্য, যারা আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহর ছেলেমেয়ে আছে বলে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের জবাবে বলেন, “তিনি আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। কিভাবে তাঁর সন্তান হবে অথচ তাঁর কোন সঙ্গিনী নেই! আর তিনি প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আনআম : ১০১) এর পরে আল্লাহ নিজেই নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, “এই হচ্ছে আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর তত্ত্বাবধায়ক।” (সূরা আনআম- ১০২) সুতরাং একজন মুমিন তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহকেই ইলাহ, আইনদাতা, বিধানদাতা, হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেবে এবং সেই আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত জীবনব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে, তবেই তার ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা : ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেয়ার পর একজন মুমিনের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা বা সকল অবস্থায় আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলা এবং একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করা। আল্লাহ তাআলা সকল মানুষ ও জিনকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ বলেন, “আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।” (সূরা জারিয়াত : ৫৬) আল্লাহর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে মানুষদেরকে আবদ্ধ করার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণ (সা.) কে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, (তাঁরা তাদের জাতির লোকদেরকে বলেছে) তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর।” (সূরা আন নাহল : ৩৬) একজন মুমিন সব সময় এই আনুগত্যের গণ্ডির মধ্যে অবস্থান করবে। যদি কোন সময় ভুল করে এই গণ্ডির বাইরে চলে যায় তাহলে সাথে সাথে তাওবা করে আবার গণ্ডির মধ্যে ফিরে আসবে। আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, মুমিন ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুঁটিতে বাঁধা ঘোড়ার ন্যায়। যতদূর তার দড়িতে ঠাঁই পায় ততটুকু সে যায়, আবার খুঁটির নিকট ফিরে আসে। সে ভুল করে অতঃপর আবার ঈমানের দিকে ফিরে আসে। (মুসনাদে আহমদ) পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা ঈমানের জন্য সহায়ক ও ঈমান বৃদ্ধিকারী আমলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করা। আল্লাহর ইবাদতের পরই আল কুরআনে পিতা-মাতার হক আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪) রাসূল (সা.) বলেছেন, “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ঐ ব্যক্তি কে ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)? তিনি জবাবে বললেন, যে তার পিতা-মাতার উভয়ের একজনকে অথবা উভয়কেই বৃদ্ধ অবস্থায় পেল, অথচ সে বেহেশতে গমন করতে পারলো না।” (সহীহ মুসলিম) রাসূল (সা.) কে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়া একজন মুমিন তার অন্তরে লালিত সকল স্বপ্ন, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও মতবাদের মধ্যে দুনিয়াবি লালসার যত হাতছানি আছে তা সব দাফন করে দিয়ে জীবনের সকল পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ ও আইনদাতা হিসেবে মেনে নিবে এবং রাসূল (সা.) কে সেই ইলাহপ্রদত্ত আইন বাস্তবায়নকারী ও সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে মেনে নিবে। এ ছাড়া কোন ব্যক্তিই ঈমানদার হতে পারবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” (সূরা আন নিসা : ৬৫) দ্বীন কায়েমের জন্য পূর্ণশক্তি দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সেই সময়ে বিরাজমান মানবরচিত সকল মতবাদের ওপরে আল্লাহর সার্বভৌমভিত্তিক জীবনব্যবস্থা তথা আল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এ সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে, “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহি পাঠিয়েছি এবং ইবরাহিম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো, তোমরা দ্বীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।” (সূরা শূরা : ১৩) রাসূল (সা.)কে এই পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের ওপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস-সফ : ৯) বর্তমানে আর কোন নবী ও রাসূল আসবেন না বিধায় এ দায়িত্ব এখন আমাদের ওপরে অর্পিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেই এই কাজের জন্য মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।” (সূরা আল-হজ : ৭৮) যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।” (সূরা আনকাবুত : ৬৯) আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর পথে কাজ করলে এর উপকারিতা হচ্ছে মুমিনের জীবনে ঘটে যাওয়া গুনাহ-খাতাও আল্লাহ মাফ করে দিয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেবো, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।” (সূরা আস-ছফ : ১০-১২) নামাজ কায়েম করা নামাজ কায়েম করা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ। মুমিন নামাজের পাবন্দির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে ৮২ স্থানে নামাজ কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” (সূরা আল বাকারা : ৪৩) নামাজ কায়েম করার মধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দাহর সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এবং সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। আল্লাহ বলেন, “তোমার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে, তা থেকে তেলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত : ৪৫) একজন মুসলিমের জীবনে কোন অবস্থাতেই নামাজ ছেড়ে দেয়া যাবে না। যে ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দিবে সে কাফির হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দিয়ো না, কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দিবে সে কাফির হয়ে যাবে।” (বাইহাকি) আল হাদিসে আরো বলা হয়েছে, “আল্লাহর বান্দাহ ও কাফেরদের মধ্যে পাথ্যর্ককারী হচ্ছে নামাজ।” (সুনান আত-তিরমিজি) জাকাত প্রদান করা ও আল্লাহকে করজে হাসানা প্রদান করা নামাজ প্রতিষ্ঠা করার সাথে সাথে জাকাত প্রদান করা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ। জাকাত প্রদান করা ও আল্লাহকে করজে হাসানা (আল্লাহর রাস্তায় তাঁর দেয়া অর্থ ব্যয়) প্রদানের মাধ্যমে একজন মু’মিন আল্লাহর সাহায্য ও বরকত পাওয়ার উপযোগী হয় এবং আল্লাহ এর প্রতিদানস্বরূপ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর অবশ্যই আল্লাহ বনি ইসরাইলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বারোজন দলনেতা পাঠিয়েছিলাম এবং আল্লাহ বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদেরকে সহযোগিতা কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ মুছে দেব। আর অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। তোমাদের মধ্য থেকে এর পরও যে কুফরি করেছে, সে অবশ্যই সোজা পথ হারিয়েছে।” (সূরা আল মায়েদা : ১২) জাকাত আল্লাহর অধিকার। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যখন তুমি তোমার সম্পদের জাকাত আদায় করে দিলে, তখন তুমি আল্লাহর হক আদায়ের দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গেলে।” (সুনান ইব্ন মাযা) জাকাত আদায় না করার শান্তি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে সেই সম্পদের জাকাত দেয়নি, তার এই সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের রূপ ধারণ করবে। যার মাথার উপরে দুটো কালো তিল থাকবে। অতঃপর ঐ সাপ তার গলায় শেকল হয়ে ঝুলতে থাকবে এবং তার উভয় চোয়ালকে জাপটে ধরে সে বলতে থাকবে, “আমি তোর ধন-সম্পদ, আমি তোর পুঁজি।” (সহিহ আল বুখারি) তবে মনে রাখতে হবে, হারাম পথে উপার্জিত কোন সম্পদ আল্লাহর পথে দান করলে এর কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “আর যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ সঞ্চয় করলো এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলো, সে তার কোন প্রতিদান পাবে না, বরং এর জন্য তার গুনাহ হবে।” (আস-সুনান আল-কুবরা) রমজানের রোজা পালন করা রোজা পালনের মাধ্যমে মুমিনের অন্তরে তাকওয়া অর্জিত হয় এবং এই তাকওয়ার মাধ্যমে জীবন চলার পথে সকল প্রকার অন্যায়, পাপাচার ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৩) রোজার কল্যাণ সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন, “আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৪) রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজা পালন করবে তার পূর্বের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (সহিহ আল-বুখারি ও মুসলিম) তবে রোজা রাখার পরেও যদি কেউ পাপাচার ও অন্যায় অশ্লীলতা পরিহার করতে না পারে তাহলে তার রোজা তার জীবনে কোন উপকারে আসবে না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করতে পারল না, আল্লাহর কাছে তার খাদ্য-পানীয় পরিত্যাগের কোনই মূল্য নেই। (সহিহ আল-বুখারি) তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে রোজা সঠিকভাবে আদায় করে জীবনকে পাপমুক্ত করা এবং আল্লাহর জান্নাতে যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার করা। সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও গুনাহ থেকে পরিত্রাণের একটি উত্তম ইবাদত হচ্ছে পবিত্র হজ পালন করা। হজ পালন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ ইবাদত। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।” (সূরা আলে ইমরান : ৯৭) হজ মানুষকে অশ্লীল ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “হজের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের ওপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।” (সূরা আল বাকারা : ১৯৭) হজের উপকারিতা সম্পর্কে রাসূল (সা.) আমর ইবনুল আস (রা.) কে বলেছিলেন, “হে আমর! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মোচন করে দেয়? হিজরত তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মোচন করে দেয়? হজ তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মোচন করে দেয়?” (সহিহ মুসলিম) রাসূল (সা.) আরো বলেন, “এক উমরা থেকে আরেক উমরা পালন এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সগিরা গোনাহসমূহের কাফ্ফরাস্বরূপ। আর কবুল হজের বিনিময় জান্নাত বৈ কিছুই নয়।” (সহিহ আল-বুখারি ও মুসলিম) রাসূল (সা.) আরো এরশাদ করেন, “তোমরা হজ ও উমরা পালনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখ। কেননা এতদুভয় (হজ-উমরা) দরিদ্রতা এবং গোনাহ দূর করে দেয়, যেমনিভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত বৈ কিছুই নয়।” (সুনান আত তিরমিজি) আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করা ও জামায়াতবদ্ধ জীবন-যাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর কর্তব্য আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কুরআন) শক্তভাবে ধারণ করা এবং জামায়াতবদ্ধভাবে সমাজে বসবাস করা। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৩) এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন “যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে বসবাস করতে চায়, সে যেন জামায়াতের সাথে যুক্ত থাকে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সাথে থাকে। যখন দু’জন হয়ে যায় তখন সে দূর হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমদ) হাদিসে কুদ্সিতে বর্ণিত হয়েছে, “হজরত হারিস আল-আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি যে আদেশ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তা হলো: ১. জামায়াতবদ্ধ জীবন, ২. নেতার আদেশ শোনা, ৩. নেতার আদেশ মানা, ৪. (ইসলামের প্রয়োজনে) হিজরত করা এবং ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে এক বিঘত পরিমাণ সরে গেলো সে তার গলা থেকে ইসলামের রশিটা সরিয়ে ফেললো, যতক্ষণ না সে আবার জামায়াতবদ্ধ জীবনে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে তাকে জাহান্নামের খড়ি তৈরি করা হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)? সে যদি নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে? রাসূল (সা.) বললেন, সে যদি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে এর পরেও।” (মুসনাদ আহমদ) তাই একজন মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে জামায়াতবদ্ধ জীবন-যাপনের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে শক্ত করে ধারণ করা এবং সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহকে ভয় করা ও কল্যাণকর কাজ করা একজন মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সব সময় আল্লাহকে ভয় করে কর্ম সম্পাদন করা, তাহলে আল্লাহ তাকে হিদায়াত দিয়ে সম্মানিত করবেন এবং তার রিযিক বাড়িয়ে দিবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” (সূরা আত-তালাক : ২-৩) এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং অসৎ কর্মের পর সৎ কর্ম কর। তবে পুণ্যকর্ম মন্দ কর্মকে মিটিয়ে দিবে। আর মানুষের সাথে সদাচরণ কর।” (সুনান আত-তিরমিযি) হযরত আবু যার (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছে উপদেশ চাইলেন। জবাবে রাসূল (সা.) বললেন, “আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা ইহা তোমার সমস্ত বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে।” (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান) সত্য কথা বলা ও সত্যের ওপরে টিকে থাকা একজন মুসলিম সকল অবস্থায় সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং সমাজজীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (সূরা আত-তাওবা : ১১৯) সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, “তুমি সব সময় সত্য কথা বলবে যদি সেটা তিক্তও হয়।” (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান) আল-হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, “রাসূল (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে একজন প্রতিষ্ঠিত সুলতানের সামনেও হক কথা বা ন্যায় কথা বলা।” (সহিহ আল-বুখারি) যদি কেউ সত্যের ওপরে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করে তাহলে এই সত্য তাকে পুণ্যের পথ দেখায় এবং তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ সত্যের অনুসরণ করতে করতে অবশেষে আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ নামে লিপিবদ্ধ হয়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) সবর বা ধৈর্য অবলম্বন করা মুমিন জীবনে ঈমানের সহায়ক বা ঈমান বৃদ্ধিকারী আমলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সবর বা ধৈর্য। মুমিন জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে ইসলামবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা, বিপদ-আপদ, মুসিবতে ঘেরা। এ সকল বিপদ-মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে তাই এ জাতীয় পরিস্থিতি আসলে মুমিনকে আল্লাহর ওপরে ভরসা করে বাতিলের মোকাবেলায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” (সূরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৬) বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য অবলম্বনকারী আল্লাহর সান্নিধ্য পায়। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন, “হে মু’মিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল বাকারা : ১৫৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “হে মু’মিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।” (সূরা আলে ইমরান : ২০০) বিপদ-মুসিবতে ও ঈমানের ময়দানে পরীক্ষার সন্ধিক্ষণে ধৈর্য অবলম্বন করলে প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ মুমিনের জীবনে ঘটে যাওয়া পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “মু’মিন নর-নারীর জীবনে সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের ওপর বালা-মুসিবত আসতেই থাকে। অবশেষে সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে, তার আর কোন পাপ থাকে না।” (সুনান আত-তিরমিজি) মুসলিমদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা একজন মুমিন আর একজন মুমিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, বিপদে তার সহযোগিতা করবে এবং সব সময় তার কল্যাণকামী বন্ধু হিসেবে কাজ করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “মু’মিনদের জন্য তোমার বাহু অবনত কর।” (সূরা আল-হিজর : ৮৮) এ সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন, “কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তাই তার জন্য উত্তম।” (সূরা আল হজ : ৩০) রাসূল (সা.) বলেছেন, “পারস্পরিক মহব্বত, দয়া-অনুগ্রহ ও স্নেহ-মমতার দৃষ্টিকোণ হতে সকল মু’মিনের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি দেহ সদৃশ। যদি দেহের কোন অংশ অসুস্থ হয়, তবে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই জ্বর ও অনিদ্রা অনুভব করে।” (সহিহ আল-বুখারি) মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি মানুষের নিকট বলে বেড়াবে না বরং তা সব সময় গোপন রাখবে। তার মনে কষ্ট দিবে না এবং তার ক্ষতি সাধনের চেষ্টাও করবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।” (সূরা আন-নূর : ১৯) এ আয়াত থেকে অনুধাবন করা যায়, একজন মুসলিম যদি অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে বলে বেড়ায় তাহলে এর প্রভাবে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে সমাজজীবনে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে গোলাম অপর গোলামের দোষ-ত্রুটি এ পার্থিব জগতে গোপন রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।” (সহিহ মুসলিম) ( চলবে...) লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির