post

ইসলামী শিক্ষা ও সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদ

২৫ জুলাই ২০১৬
সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কতিপয় দেশে জঙ্গিবাদ একটি বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণেই এই নব্য জঙ্গিবাদের উত্থান। তারা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে, সত্যিকার ইসলামপন্থী, ইসলাম প্রচারক ও ইসলামী আন্দোলনকারীদের বিতর্কিত করতে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে। অন্য দিকে ইসলামী  দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নতির পথ রোধ করতে এবং এসব দেশে তাদের সামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে একে কাজে লাগাচ্ছে। এ জন্য তারা কিছু বিভ্রান্ত মুসলিমকে বেছে নিয়েছে। তাদেরকে দিয়ে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে, এ সকল মুসলিম বুঝে  হোক না বুঝে হোক তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক শাসন দেখছে। অগণতান্ত্রিক শাসনের এই সুযোগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর প্রভাবেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক শাসন চলার নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে বলেও মনে করেন অনেকে। সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বাংলাদেশকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলেছে। পৃথিবীজুড়ে যে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ছে তা একদিকে মানবতাবাদী বিশ্ব, অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদী বিশ্বকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এই দুই জায়গার মাঝখানে ব্যবহৃত হচ্ছে মুসলমানরা। শান্তির ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগোচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদী চক্র। বেশির ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশের এই সঙ্কটকে মোকাবেলা করতে হলে সব দলকে সাথে নিয়ে এর উত্থান রুখতে হবে। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। দেশের এখন যে অবস্থা তাতে কোন রকম বিতর্কে না গিয়ে সব দলকে নিয়ে জঙ্গিবাদের এই উত্থান রুখতে হবে। দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সম্পৃক্ততা একটি অশনিসঙ্কেত বলে সমাজ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকে এই নেতিবাচক প্রবণতার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যাকে দায়ী করেছেন। আবার অনেকে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়কে দায়ী করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে যে জাতীয় শিক্ষানীতি থাকার কথা ছিল তা আমাদের নেই। এর কারণ স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ছিল তারা সার্বজনীন যুগের চাহিদাভিত্তিক টেকসই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। ফলে উচ্চবিত্তের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করে বিদেশে অবস্থান করেন। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে তারা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন নাই। সার্বজনীন মানবিক গুণাবলি থেকে তারা বঞ্চিত হন। প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রত্যাশা হলো প্রকৃতির সাথে মানবিক আচরণ করা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে। এই নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে শিক্ষার্থীগণকে এবং তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনা অত্যাবশ্যক। এর জন্য গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে সর্বাধিক কল্যাণমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। শিক্ষা মানুষের দেহ এবং মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে মানবসমাজকে পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করে যে, শুধু সামাজিক মূল্যবোধের অভাব নয়, কোথাও যেন একটা গলদ আছে। আর এই গলদের কথাই শহীদ আবদুল মালেক বলতে চেয়েছিলেন। নতুন একটি শিক্ষানীতির দাবি তিনি তুলেছিলেন। এই দাবির মুখেই নির্মমভাবে হত্যা করা শহীদ আবদুল মালেককে। সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ায় টক শোতে আলোচনা করা হয়, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের সমগ্র মাদরাসার মোট শিক্ষার্থীর কত % এই অস্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানগত তথ্য তারা উপস্থাপন করতে পারেন না। ইসলামী আইনের উৎস কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। এই চারটি উৎসকে কোনো মুসলমান অস্বীকার করতে পারে না। এই চারটি উৎস সম্পর্কে মুসলমানদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। খন্ডিত ইতিহাস দিয়ে যেমন জাতি গঠন করা যায় না, তেমনি খন্ডিত ধর্মীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়া যায় না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ৬৬৬৬টি আয়াত আছে এবং প্রতিটি আয়াতের সঠিক বাংলা অর্থ জানা মুসলমানদের জন্য ফরজ। এই আয়াতগুলোর কোথাও ইসলামের নামে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার কথা বলা হয়নি এবং দায়িত্বও দেয়া হয়নি। কুরআনের ৬৬৬৬টি আয়াতের বাংলা অর্থ যদি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণকে এবং যুবসমাজকে সার্বভৌম রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে কোনো বিশেষ মহলের পক্ষে কোনো শিক্ষার্থীকে খন্ডিত ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে মগজধোলাই তথা কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে পারবে না। তা ছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা অর্জনের যে শাখা-প্রশাখা রয়েছে তার প্রত্যেক শাখার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মানবিক গুণাবলি বিকাশের স্বার্থে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের বাংলা অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত করার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য হলো অর্থ বুঝে পড়া, অর্থ অনুধাবন করা এবং বাস্তবজীবনে অনুসরণ করা। এতে করে সকল প্রকার দুর্নীতি, অনাকাক্সিক্ষত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিহার করা সম্ভব হবে এবং সাথে সাথে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন ভবিষ্যৎ দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করাও সহজতর হবে। হ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির