post

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ সংরক্ষণ

কৃষিবিদ মো: আজাহার গাজী

১০ জুন ২০২০

পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার, বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব সকল বিশ্ববাসীর, প্রতিটি ব্যক্তির ইসলামকে বলা হয় ফিতরাত বা স্বভাবগত বা প্রকৃতির ধর্ম। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মূলত সামাজিক জীব। মানুষকে ঘিরেই পরিবেশ-প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। আর পরিবার, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। লন্ডনের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে প্রকাশিত, “দি ইসলামিক কোয়ার্টারলি’’ পত্রিকার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর সাইয়্যেদ নাসের হোসাইন, “ইসলাম অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ক্রাইসিস’’ নামক এক প্রবন্ধে বলেন, “পরিবেশ সঙ্কট আধুনিক মানুষের প্রকৃতিকে আধ্যাত্মিক নিরপেক্ষ হিসাবে বিবেচনা করারই ফল।” কুরআনে আল্লাহপাক নিজেকে আল্ মুহিত বলে ঘোষণা করেছেন। আল্ মুহিত হিসাবে আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির পবিত্রতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রকৃতির বাস্তবতাকে আল্লাহর নিদর্শন হিসাবে দেখা এবং সচেতন থাকা। তাঁর মতে, “প্রাকৃতিক পরিবেশ-সংক্রান্ত ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ঐশী পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অনস্বীকার্য স্থায়ী সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত।” পরিবেশের সাধারণ সংজ্ঞা হচ্ছে: আমাদের চারপার্শ্বস্থ সবকিছুকেই পরিবেশ বলে। আল কুরআনের ভাষায় পরিবেশের সংজ্ঞা হচ্ছে : তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও না কেন, সে দিকই আল্লাহর দিক। (সূরা বাকারা : ১১৫) পরিবেশে জীবের বাসোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি ও মাটি। মূলত মাটি থেকেই অনেক কিছু উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনাধারা, যাতে তারা ফল খায়।” (সূরা ইয়াসিন : ৩৩) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদরূপে স্থাপন করেছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না। বস্তুত তোমরা এসব জান।” (সূরা বাকারা : ২২) সারা পৃথিবীজুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ সঙ্কট। মানুষের সৃষ্টি যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্মম কুঠারাঘাত। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ভোগ লালসা চরিতার্থ করার জন্য বিচার বিবেচনাহীনভাবেই মানুষ দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু। মারাত্মক পানি ও বায়ুদূষণ নিয়ে আমরা আজ উদ্বিগ্ন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। একটু লক্ষ করলেই আমরা দেখতে পাই, নিজেদের অবহেলার কারণেই প্রতিদিন আমরা চারপাশে তৈরি করছি বিষাক্ত পরিমণ্ডল যা নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে মারাত্মক নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটছে, যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

পরিবেশ দূষণের নানা কারণ পরিবেশ দূষণের কারণ অগণিত। তবে মূল কারণসমূহ হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, জনসংখ্যার লাগামহীন বৃদ্ধি এবং আদিপ্রাণ বৃক্ষ আর বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার। এটা সত্য যে উনিশ শতকে শিল্প বিপ্লবের দ্রুত অগ্রগতির ফলে ভোগবিলাসী ও লোভে ব্যাকুল মানুষ দস্যুর মতো লুণ্ঠন করতে থাকে নিজের ও পৃথিবীর নানা দেশের প্রাকৃৃতিক সম্পদ। ঔপনিবেশিক শাসন আর শোষণ এই প্রক্রিয়াকে করেছে আরো বেগবান। প্রাকৃতিক সম্পদের এই যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্যকে করেছে বিনষ্ট। পরিবেশ দূষণের আর একটি কারণ পৃথিবীর বুকে জনবসতি বৃদ্ধি। এর ফলে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়েছে প্রচণ্ডভাবে। খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, কর্মসংস্থান ইত্যাদির পরিমাণ বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ভূমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের তীব্রতা, ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য ভূমির সঞ্জীবনী শক্তি, অন্য দিকে নতুন নতুন বসতি আর কলকারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে চাষযোগ্য ভূমি ও প্রতিদিন নদী, হ্রদ, সমুদ্রে মিশছে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্যদ্রব্য। মাটি, পানি, বাতাস এবং আমাদের চারপাশের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর বিষক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠছে ভারসাম্যহীন, দূষিত ও বসবাস অযোগ্য। শিল্প-কারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে সৃষ্টি করছে বায়ুদূষণ। তা ছাড়া এর ফলে বাতাসে অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না থাকায় ওজোন স্তরে ধরেছে ফাটল, ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। সমগ্র পৃথিবীতে শিল্প-কারখানা থেকে বছরে প্রায় বিশ কোটি টন বিষাক্ত গন্ধকের ধোঁয়া বাতাসে মিশছে। এসব গন্ধকের ধোঁয়া বাতাসের জলীয় অংশের সাথে মিশে সালফিউরিক এসিডে পরিণত হয়। যা বৃষ্টির সাথে এসিড বৃষ্টি নামে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যে এসিড বৃষ্টির মাত্রা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ তার গৃহনির্মাণ, শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ও জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনে প্রতিদিন উজাড় করছে বনভূমি। শিল্পের জ্বালানি হিসেবে কাঠ কয়লার প্রয়োজনে মানুষ অনেক সময় অবৈধভাবে বনভূমিতে আগুন ধরিয়ে সংগ্রহ করে কাঠ কয়লা। সমগ্র পৃথিবীতে জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এসব উপযোগের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন হ্রাস পাচ্ছে মুক্তভূমি ও বনাঞ্চল। যার নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশ দূষণকে করছে ত্বরান্বিত। পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে আমরা আশঙ্কা করছি বাতাসে যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে আর তার ফলে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের গড় তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পায় তাহলে উত্তর সাগরের বরফ গলে উঁচু হয়ে উঠবে সাগরের পানি। আর বহু কোটি টন কয়লার ধোঁয়া আর ধুলোবালি যদি প্রাণদায়ী সূর্যালোককে পৃথিবীতে পৌঁছতে বাধা দেয় তবে তার ফলাফলও হবে ভয়াবহ। যদি এ কারণে পৃথিবীতে আলো আসার পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় ১.৫% থেকে ২% ভাগও কমে যায় তাহলে ক্রমে মেরু অঞ্চলের চিরস্থায়ী বরফ ছড়িয়ে পড়বে বিষুব অঞ্চল পর্যন্ত। আর পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে প্রবল শীতের মৃত্যুর পরশ। আমার মতে পরিবেশ দূষণের জন্য মূলত পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলোই দায়ী। দূষণ মাত্রার পরিসংখ্যান যোগ করলে দেখা যাবে প্রায় ৭০%-৮০% পরিবেশ দূষণের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী। কিন্তু উল্লেখ্য যে, পরিবেশের বিপর্যয় এককভাবে কোনো দেশ বা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নির্দিষ্ট নয়। এটা সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে দেবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ সচেতনতা পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে রয়েছে ইসলামের তাকিদ। আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তোমরা নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে এনো না।” (সূরা বাকারা-১৯৫) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।” (সূরা রূম : ৪১) অন্য আয়াতে আছে, “তোমরা কি দেখ না কিভাবে পৃথিবীর সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন।” (সূরা হজ : ৬৫) পরিবেশ দুষণ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। আল্লাহপাক পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হচ্ছে: “আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম, বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।” (সূরা কাফ : ৭-৮) সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। ভূমিকম্প, ভূমিধস কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে মানুষকে নিয়ে এ পৃথিবীর নড়াচড়া করতে না পারে অথবা সে জন্য আল্লাহপাক পাহাড়সমূহকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছেন বলে এরশাদ করেছেন। “এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।” (সূরা আন্ নহল : ১৫) অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনিই স্থাপন করেছেন ভুপৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা এবং তাতে রেখেছেন প্রভূত কল্যাণ।” (সূরা হা-মীম সাজদা : ১০) অন্য আয়াতে আছে, “আর পাহাড়গুলোকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছি।” (সূরা নাবা : ৭) আরো এরশাদ হয়েছে, “আর পাহাড়কে শক্ত করে দাঁড় করানো হয়েছে।” (সূরা গাশিয়া : ১৯) অথচ আমরা নিজেরাই পাহাড় কেটে, গাছ কেটে, পুকুর ভরাট করে, মারণাস্ত্রের অশুভ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস করছি এবং পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি। বৃক্ষ বা গাছ মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সবুজ গাছপালার ওপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীরা টিকে থাকে। জীবের জন্য গাছপালা সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে। শুধু খাদ্য তৈরি নয়, সালোক-সংশ্লেষণের সময় তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের করে দেয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা হয়। হাদীসে রাসূল (সা.) থেকে জানা যায়, একজন লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙে তখন নবী করিম (সা.) সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বললেন, “তুমি যেমন শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।” পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গাছ লাগানোর শিক্ষা আমরা মহানবী (সা.) থেকে পাই। তিনি বলেছেন, “যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কিয়ামত হবে, তবু আজ একটি গাছ লাগাও।” রাসূল (সা.) বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করে বলেছেন, “বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়া হিসাবে পরিগণিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল আরো (সা.) বলেছেন, “কোন মুসলমান যদি একটি বৃক্ষ বা গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেত-খামার করে, অতঃপর তা হতে মানুষ, পাখি বা কোন প্রাণী ভক্ষণ করে, তা তার জন্য দান বা সদকার সওয়াব হবে।” সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর- ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। রাসূল (সা.) বলেছেন, “ঈমানের ৭৩টি শাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূরীভূত করা। তিনি আরো বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।” হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পানিতে প্র¯্রাব করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, “তোমরা অভিশাপ পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।” হাদীসে রাসূল (সা.) থেকে আরো জানা যায়, মৃত শরীরের কোন অংশ তিনি যত্রতত্র ফেলতেন না, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে। যা পুঁতে না ফেললে তা কোন প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করতে পারে। এজন্য রাসূল (সা.) রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। বায়ু দূষিত হয়ে একজনের রোগ অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয়। ধূমপানের মাধ্যমেও বায়ু তথা পরিবেশ দূষিত হয়। পোড়া তামাকের গন্ধ পরিবেশের জন্য কতখানি ক্ষতিকর তা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও শঙ্কিত। সিগারেটের নিকোটিন এত মারাত্মক ক্ষতিকর যে, দুটো সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন আছে, তা দ্বারা কোন সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করলে মৃত্যু নির্ঘাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা জ্বলন্ত সিগারেটে কম করে হলেও চার হাজার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে সিনা বলেছেন, “পৃথিবীর এত ধুলা-বালি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত তাহলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারত।”

বসবাসের ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঢাকা ঢাকা শহরের বর্তমান আবহাওয়া ও পরিবেশ যানজট এবং শিল্প কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু এবং পানি দূষণ বাড়ছে, ফলে শহরের জনস্বাস্থ্য এবং জীবন মান মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে জলাশয় এবং জলাভূমিগুলি ধ্বংসের সম্মুখীন কারণ, এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন এবং অন্যান্য আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দূষণের ফলে প্রকৃতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ দূষণের ফলে শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শীতকালে পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যার ফলে ঐ সময়ে পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনার স্তূপ পরিবেশের পাশাপাশি পানিও দূষিত করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত অনেক মানুষ শহরগুলোতে ঢুকে পড়েছে যার ফলে সুবিখ্যাত ও সুন্দর শহর ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ ফুট থেকে কম উঁচু, তাই এই আশঙ্কা যে ২১ শতকের শেষ নাগাদ দেশের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি জলপ্লাবিত হবে এবং ১৫ মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হবে। ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩ মিলিয়ন যা ২০২৫ সাল নাগাদ ২৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছি। এর ফলে জলবাহিত রোগ এবং অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবের ভয় দেখা দিবে। জাতিসংঘ এবং ডব্লিউ ডব্লিউ এফ রিপোর্টে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে ঢাকা এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে। ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স-এর মতে, বাস করার অযোগ্য শহরের তালিকায় সর্বনিম্নে ঢাকা।

পরিবেশ দূষণ সমস্যা ও বাংলাদেশ নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক জীবন স্বভাবতই মানুষকে করেছে প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমী। কিন্তু সীমিত ভূখণ্ড ও সম্পদ এবং তুলনামূলকভাবে অতি ঘন জনবসতি ও দুর্যোগপ্রবণ ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের মানুষকে পরিণত করেছে পরিবেশের শিকারে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে - ১. জনবিস্ফোরণ : জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে বাংলাদেশে মুক্তাঞ্চল ও বনভূমির পরিমাণ কমছে। বাসস্থান ও চাষের জমির ওপর বিপুল চাপ পড়ায় জলাভূমি ভরাট করেও ব্যবহার করা হচ্ছে। মাছের আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় গ্রামবাসী প্রোটিন ঘাটতির শিকার হচ্ছে। ২. সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে জমিতে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে মাটির দূষণ ঘটছে এবং জমির গুণ নষ্ট হচ্ছে। এই সব রাসায়নিক উপাদান বৃষ্টিতে ধুয়ে নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। ৩. শিল্প দূষণ : বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানার অবস্থান নদীর তীরে। এসব কলকারখানা থেকে নিঃসৃত তরল রাসায়নিক বর্জ্য পানিকে কেবল দূষিত করছে না, আমিষের অপার ভণ্ডার মাছের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে। তা জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ৪. বন উজাড়করণ : পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ সরকারি হিসেবে ১৬ শতাংশ হলেও বাস্তবে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর উজাড় হচ্ছে ১.৪ শতাংশ। ফলে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা বাড়ছে, বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ৫. গভীর ও অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন : সাম্প্রতিক কালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, গভীর ও অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট বাড়ছে। প্রকট হচ্ছে পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা। ৬. আবর্জনা সমস্যা : শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং পরিকল্পিত ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান না থাকায় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। এসব ময়লা আবর্জনার পচা গ্যাস বায়ু দূষণ সৃষ্টি করে। ৭. ভূমির অপর্যাপ্ততা : পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শহরের ভাসমান মানুষ ও বিপুল বস্তিবাসীর চাপেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

প্রতিকার আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণ রোধে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে সেগুলো হলো, পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দেশের মোট আয়তনের ন্যূনতম ৫০% এলাকায় বনায়ন করতে হবে। বর্তমান জ্বালানি পরিবর্তন করে বাতাস, সৌর ও পানি বিদ্যুতের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির প্রচলন করতে হবে। বন উজাড়করণ ও ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে। শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। বর্জ্য থেকে সংগৃহীত গ্যাস জ্বালানি হিসেবে এবং পরিত্যক্ত পদার্থটি সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং পরিবেশসম্মত কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের কাজকে রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। শিল্প-কারখানাগুলো আবাসিক এলাকা থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। শিল্পে এবং যানবাহনে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার রোধ করতে হবে এবং অল্প জ্বালানিতে অধিক কার্যকর যন্ত্র আবিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ ও শিক্ষার হার বাড়ানো, যে-কোনো পরিকল্পনার পূর্বে তার পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ এবং বাঁধের পাশে বনায়ন করা দরকার। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সরকার পরিবেশ সংরক্ষণে অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০ বছর মেয়াদি বন মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে পরিবেশ উন্নয়ন, জ্বালানি কাঠ সরবরাহ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কাঁচামাল সরবরাহ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ রোধে পদক্ষেপ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (টঘঊচ) ও বিজ্ঞানীদের সময়োচিত তৎপরতায় ১৯৮৭ সালে কানাডায় মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রটোকলের আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী বস্তুসমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। ১৯৯২ সালে ৩রা ও ১৪ জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী শীর্ষ সম্মেলনে’ পরিবেশের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র খুঁজে বের করা হয়। এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র অভিযাত্রী ইয়ান জিয়েনান সমুদ্র দূষণ প্রত্যক্ষ করে ১৯৯৩ সালে ‘বিশ্ব পরিচ্ছন্ন আন্দোলন’-এর সূত্রপাত করেন। জাতিসংঘ পরিবেশ বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২০টি দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি, যার সামগ্রিক অবদান হবে বিরাট।

আমাদের কাজ ১. বনায়ন : পরিবেশ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বনায়ন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই পরিবেশ দূষণের মরণ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনায়ন করা দেশের সচেতন প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য। ২. শব্দদূষণ রোধ : হাইড্রোলিক হর্ন এবং যত্রতত্র মাইক বাজানোর বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শব্দদূষণের কবল থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করা হলেও বর্তমানে তা কাগুজে বাঘ হয়ে আছে। সুতরাং বর্তমান সরকারের উচিত জাতীয় স্বার্থে শব্দদূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩. পলিথিন বর্জন : পলিথিন পরিহার করা পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দেশের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। নব্বই সালের গোড়ার দিকে দেশে পলিথিন উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তৎকালীন সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু পরে রাজনৈতিক জটিলতা এবং ভোট নষ্ট হবার আশঙ্কায় সিদ্ধান্তটির মৃত্যু ঘটে। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও এর ব্যবহার এখন রমরমা। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য বর্জন করে এর পরিবর্তে পাট জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে। ৪. পরিবেশ আইনের প্রয়োগ : প্রত্যেক দেশের মতো আমাদের দেশেও পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশ কিছু আইন রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর যদি পরিবেশ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের সমস্যা সম্পর্কে অধিক প্রচারণা চালায় ও জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে তাহলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে আমরা অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারব বলে বিশ্বাস। ৫. উন্নত ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার : ঘরবাড়ি কিংবা কলকারখানায় যথাসম্ভব দূষণযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার না করা। ৬. পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা : যত্রতত্র বর্জ্য বা আবর্জনা না ফেলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৭. সম্পদ সংরক্ষণ : পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ব্যবহারে যথাসম্ভব সাশ্রয়ী হওয়া এবং খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের সম্পদের অপচয় কমানো। সব ধরনের বিলাসিতা বর্জনের করতে হবে। ৮. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার : কাঠ, কয়লা, তেল ইত্যাদি যেসব জ্বালানি পরিবেশের দূষণ ঘটায় সেগুলো যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা এবং তার পরিবর্তে সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করতে হবে। ৯. বেশি বেশি গাছ লাগানো : পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যও পুষ্টি চাহিদা পূরণে যথাসম্ভব বেশি বেশি ফলগাছ রোপণ গাছ লাগানো। ১০. সচেতনতা বৃদ্ধি : পরিবেশ বিপর্যয়ের সমস্যা সামগ্রিকভাবে একটি দেশের জাতীয় সমস্যা। কাজেই এই সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ আইনই যথেষ্ট নয়, এ জন্য দরকার দেশের সমগ্র জনগণের চেতনাবোধ। দেশের জনগণ যদি পরিবেশ বিপর্যয়ের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হন, তাহলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কবল থেকে আমরা অতি সহজেই নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে পারব।

পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার, বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব সকল বিশ্ববাসীর, প্রতিটি ব্যক্তির। যারা অজ্ঞতাবশত পরিবেশ দূষণে যুক্ত হচ্ছেন তাদের যেমন সচেতন করা প্রয়োজন তেমনি যারা অতি মুনাফার লোভে জেনে শুনেও পরিবেশের তোয়াক্কা করছেন না তাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও পরিকল্পনার নীতি কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হবে। বিরল সম্পদ রক্ষার জন্য বিকল্প উপায় উদ্ভাবন এবং পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার আজ তাই সময়ের দাবি। এই অনন্ত মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার জন্য সকল উপাদান দিয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাদের কারণে পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ হারাচ্ছে। গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলে বিশ্বের কিছু কিছু নিম্নভূমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসলামের অনন্য পরিবেশ নীতির আলোকে বিশ্বের পরিবেশকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি। প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে সুষ্ঠু নিয়ম মেনে চলা, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া, বন-বনানী থেকে বৃক্ষ উজাড় না করা, গগনচুম্বী অট্টালিকা তৈরির জন্য পাহাড় না কাটা, পশু-পাখি নির্বিচারে শিকার না করা, কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনসাধারণকে আরো অধিক সচেতন হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়াটাও অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশ দূষণের জন্য কে বা কারা দায়ী? উন্নত না অনুন্নত বিশ্ব পারস্পরিক দোষারোপ না করে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে হবে যে, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে হবে যেখানে তারা সুখে শাস্তিতে বসবাস করবে। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে হাতে হাত রেখে পরিবেশ রক্ষা করতে এগিয়ে আসি আর স্বকণ্ঠে বলি- “রক্ষা করি পরিবেশ, গড়ি প্রিয় বাংলাদেশ।”

লেখক : কলামিস্ট ও পরিবেশবিদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির