post

ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব ও তার ফলপ্রসূ পদ্ধতি

২৭ নভেম্বর ২০১৪

মো: আতিকুর রহমান

18দাওয়াত মুমিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মিশন। পৃথিবীতে যতজন নবী এবং রাসূল আগমন করেছেন তাঁদের সকলেরই মিশন ছিল দাওয়াত। দাওয়াত দানের মাধ্যমেই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে আলোর ফল্গুধারা প্রবাহিত করেছেন। কুরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার দাওয়াতের গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে। আলোচনা হয়েছে এর গুরুত্ব এবং ফলপ্রসূ পদ্ধতি নিয়ে। নিম্নে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হলো : দাওয়াত কী? দাওয়াত শব্দটি আরবি ‘দাআ’ শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি। ইংরেজিতে ঈধষষ বলা হয়। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য মানবজাতিকে আল্লাহর দাসত্ব ও ইসলামী জীবনবিধানের দিকে আহবান করাকে দাওয়াত বলা হয়। ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দাওয়াতের ভূমিকা অনস্বীকার্র্য। ইসলামী আন্দোলনের সফলতা সঠিকরূপে দাওয়াত উপস্থাপনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। ইসলামে দাওয়াতের সূচনা হ    মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করেছেন। হ    পৃথিবীতে আগত কোনো কওমকে নবুওয়ত থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। হ    সকল নবীগণ মানুষের সামনে একই দাওয়াত পেশ করেছেন। আর তা হচ্ছেÑ “আল্লাহর দাসত্ব করা এবং তাগুতকে অস্বীকার করা।” হ    আল্লাহর একচ্ছত্র প্রভুত্ব ও নবীদের নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব মানার আহবানই ছিল নবী ও রাসূলগণের প্রথম ও শেষ দায়িত্ব। দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব হ    দাওয়াতি কাজ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব ও ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “এখন তোমরাই দুনিয়ার ঐসব উম্মত, যাদেরকে মানবজাতির হেদায়াত ও সংশোধনের জন্য ময়দানে আনা হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। আহলে কিতাবগণ যদি ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্যই তা ভালো ছিল। যদিও তাদের মধ্যে কিছু লোক ঈমানদারও পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই নাফরমান।  (সূরা আলে ইমরান : ১১০) হ    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে প্রচার কর। (বুখারী) হ    দাওয়াতি কাজ নবুওয়তি দায়িত্বের একটি অংশ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে রাসূল! যা কিছু আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। যদি তা না করেন তাহলে তো তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব আপনি পালন করলেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে বাঁচাবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে (আপনার বিরুদ্ধে) সফলতার পথ দেখাবেন না।” (সূরা মায়িদা : ৬৭) হ    নিজের মুক্তির জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক তো অবশ্যই থাকা উচিত, যারা নেকি ও কল্যাণের দিকে ডাকবে, ভালো কাজের হুকুম দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সফল হবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৪) হ    দ্বীনকে হিফাজত করার জন্য আল্লাহ বলেন, “হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুখবরদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে, আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর দিকে দাওয়াতদাতা বানিয়ে এবং উজ্জ্বল বাতি হিসেবে।” (সূরা আল আহজাব : ৪৫-৪৬) হ    হিদায়াতের ওপর নিজের টিকে থাকা ও অন্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য দাওয়াতি কাজ অত্যাবশ্যক। হ    সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূতি জাগ্রত করার জন্য। হ    দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে দাওয়াত একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। হ    ইসলামী আন্দোলন যে ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব চায় তা উপহার দেয়ার মাধ্যম হলো দাওয়াতি কাজ। হ    কেয়ামতের দিন দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তির অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য দাওয়াতি কাজ অত্যাবশ্যক। হ    দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে শুধু উম্মতকেই নয়, নবীদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে। হ    দাওয়াতের দায়িত্ব আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব। আল্লাহর কাজ আমি ও আমরা করছি। হ    দাওয়াতি কাজ নিজের আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা। আমাদের দাওয়াত হ    আমাদের দাওয়াত সকল মানুষকে বিশেষ করে মুসলমানদেরকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহবান জানানো। হ    যারা ইসলাম গ্রহণ ও মেনে চলার দাবি করবে তাদের বাস্তব জীবন হতে মুনাফিকি ও কর্মবৈষম্য দূর করা। হ    বাতিলপন্থী ও ফাসিক কাফিরদের কাছ থেকে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কেড়ে নিয়ে সৎপন্থীদের হাতে তুলে দেয়া। দাওয়াতের কতিপয় ত্রুটি হ    ইসলামের সঠিক চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারা। আমরা ইসলামকে শুধুমাত্র মুসলমানদের ধর্ম হিসেবে সাব্যস্ত করতে অভ্যস্ত। বর্তমান বাস্তবতায় ইসলামকে দুনিয়ার সমস্ত ধর্মের শত্রু হিসেবে পেশ করা হয়েছে। অথচ সকল ধর্মের মানুষের অধিকার ইসলামে সুরক্ষিত আছে। হ    আমাদের দেশে ইসলামের অনেক খেদমত হয় কিন্তু ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় না। হ    মুসলমানদের দ্বিমুখী নীতি। হ    আমরা সব সময় নি¤œ শ্রেণী বা সাধারণ লোকদের কাছে দাওয়াত দিতে অভ্যস্ত। নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে আমরা দাওয়াত দিতে অভ্যস্ত নই। হ    দায়ীর ইসলামী জিন্দেগির নমুনা হতে না পারা। হ    নিজেদের চারিত্রিক দাওয়াতের পরিবর্তে মৌখিক দাওয়াতকেই দাওয়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা। হ    দুনিয়ার সকল কাজের জন্য আমরা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন মনে করি কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের জন্য যে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন তা অনেকাংশে আমরা অনুভবও করি না। দায়ী ইলাল্লাহর যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি হ    ইসলামের যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী হওয়া। এ ক্ষেত্রেÑ ষ    ইসলামের জ্ঞানের ঘাটতি দূর করা। ষ    রাসূল সা.-এর বিপ্লবী জীবন বারবার পড়া। ষ    নবী ও রাসূলদের দাওয়াতি কাজের প্রেক্ষাপট জানা ও বোঝা। ষ    বিশ্বের সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থাকা। ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঁঢ়ঃড় ফধঃব থাকা। হ    আদর্শের ব্যাপারে বিশ্বস্ত ঈমান থাকা। হ    দ্বীনের দাওয়াতকে জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করা। হ    পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। হ    তীব্র বিরোধিতার পরিবেশে আল্লাহর পথে দাওয়াত অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ “তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষদের আল্লাহর তায়ালার দিকে ডাকে এবং সে (নিজেও) নেক কাজ করে এবং বলে, আমি তো মুসলমানদেরই একজন।” (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৩৩) হ    তীব্র বিরুদ্ধতার পরিবেশ বলতে যেখানে ইসলামের কথা বলা ও প্রকাশ করা নিজের ওপর বিপদ ডেকে আনার শামিল সেখানেও বুক ফুলিয়ে বলা ‘আমি মুসলমান’। হ    উত্তম নেকি দ্বারা মন্দের  মোকাবেলা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে নবী! ভালো আর মন্দ সমান নয়। মন্দের মোকাবেলা করো সে নেকি দিয়ে যা অতীব উত্তম। তাহলে দেখতে পাবে- তোমার সাথে যাদের ছিল চরম শত্রুতা তারা হয়ে গেছে তোমার পরম বন্ধু।” (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৩৪) হ    সকল প্রকার জুলুমের মোকাবেলায় সবর অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর এ (বিষয়)টি শুধু তাদের (ভাগ্যেই লেখা) থাকে যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং এ (সফল) লোক শুধু তারাই হয় যারা সৌভাগ্যের অধিকারী।” (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৩৫) হ    নিঃস্বার্থভাবে দাওয়াতি কাজ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে নবী! আপনি বলে দিন, এ দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের জন্য আমি তো তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছি না। এ তো গোটা জগৎবাসীর জন্য সাধারণ উপদেশ ও নসিহত মাত্র।” (সূরা আন আম : ৯০) হ    “হে নবী, আপনি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছেন? আপনার জন্য আপনার রবের দানই উত্তম। আর তিনিই উত্তম রিজিকদানকারী।” (সূরা মুমিনুন : ৭২) হ    শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্ররোচনা অনুভব করো তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।” (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৩৬) হ    মানুষের কল্যাণ ও হিদায়াতের জন্য চরম হৃদয়াবেগ ও তীব্র পেরেশানি থাকা। হ    নিজের ব্যাপারে কারও প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া বরং দোয়া করা। হ    সহজ সরল জীবন যাপন এবং আচরণে সর্বদাই হাসিমুখ থাকা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা:) বলেছেন, দায়িত্বশীলদের জন্য চারটি গুণ অপরিহার্য : ষ    কোমলতা, তবে দুর্বলতা নয়। ষ    দৃঢ়তা, তবে কঠোরতা নয়। ষ    স্বল্পব্যয়িতা, তবে কৃপণতা নয়। ষ    দানশীলতা, তবে অপব্যয় নয়। হ    দাওয়াতি কাজ করতে যেকোন ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলায় অভ্যস্ত হওয়া এবং প্রয়োজনে জীবন দিতেও কুষ্ঠাবোধ না করা। দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি হ    জনসংখ্যার দিক থেকে দাওয়াত- ষ    ব্যক্তিগত দাওয়াতি কাজ ষ    সামষ্টিক দাওয়াতি কাজ হ    অঢ়ঢ়ৎড়ধপয-গত দিক থেকে দাওয়াত- ষ    মৌখিক সাক্ষ্য (ঞযবড়ৎরঃরপধষ) ষ    বাস্তব সাক্ষ্য (চৎধপঃরপধষ) হ    প্রয়োগগত দিক থেকে দাওয়াত ষ    উরৎবপঃ যার মাধ্যমে সরাসরি দাওয়াত প্রদান করা হয়। ষ    ওহফরৎবপঃ সরাসরি দাওয়াত না দিয়ে বিভিন্নভাবে দাওয়াতের বলয়ে নিয়ে আসা। হ    এর মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ষ    মৌখিক পদ্ধতিতে দাওয়াত ও ষ    আমলি বা চারিত্রিক দাওয়াত মৌখিক দাওয়াত : মৌখিক দাওয়াতের ক্ষেত্রে দায়ীকে নি¤েœাক্ত গুণাবলি অর্জন করা খুবই জরুরি। হ    সুন্দরভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারা। (অৎঃ ড়ভ ঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ সঁংঃ নব ংঃধহফধৎফ) হ    মহান আল্লাহর বাণীÑ (হে নবী) হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে ডাকুন। আর তাদের সাথে তর্কবিতর্ক করতে হলে সুন্দরভাবে করুন। আপনার রবই বেশি জানেন যে, কে তাঁর পথ থেকে সরে আছে, আর কে সঠিক পথে আছে। (সূরা নাহ্ল : ১২৫) ষ    বুদ্ধিমত্তার সাথে শ্রোতার মানসিকতা, সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী কথা বলতে হবে। ষ    সব ধরনের লোকদেরকে একই ডান্ডা দিয়ে সোজা করার চেষ্টা করা ঠিক নয়। ষ    যার কাছে দাওয়াত নিয়ে যাওয়া হবে- প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর এমন সব যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে তার চিকিৎসা করতে হবে-যা তার মনমানসিকতার গভীর থেকে সমস্ত রোগের উৎস মূল উপড়ে ফেলতে সামর্থ্য হবে। হ    উত্তম উপদেশ দেয়া। শ্রোতাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টাকে যথেষ্ট মনে করা যাবে না। বরং তার অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে হবে সহানুভূতি, আন্তরিকতা ও একান্ত দরদের সাথে উপদেশ দান করতে হবে। হ    বিতর্ক পরিহার করা। হ    মন্দের মোকাবেলা সবচেয়ে ভালো দিয়ে করা। হ    রাগের মাথায় কোনো বাজে কথার প্রতি উত্তরে বাজে কথা বলা না বলা। ঠান্ডা মাথায় পরিবেশ অনুযায়ী তুলাদন্ডে মেপে মেপে কথা বলা। কেননা রাগ মানুষকে সীমালংঘনের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “যদি কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাও; অবশ্যই তিনি সর্বশ্রেতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৩৬) হ    ঐবংরঃধঃরড়হ দূর করা : এ ক্ষেত্রে ষ    দাওয়াতি কাজকে আল্লাহর কাজ মনে করে কোন ধরনের সংকোচ ব্যতীত দ্বিধাহীন চিত্তে দাওয়াত পেশ করা। ষ    সাহসিকতা বৃদ্ধি করা। ষ    আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা। হ    শ্রোতার মধ্যে আঘাতভিত্তিক কোনো কথা না বলা। হ    দাওয়াত প্রদানকারীর কল্যাণ কামনা ও হিদায়াতের জন্য দোয়া করা। আমলি দাওয়াত বা চারিত্রিক দাওয়াত : আমলি দাওয়াত বা চারিত্রিক দাওয়াতের ক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত দিকগুলো খুবই জরুরি : দায়ীর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ইসলামকে ফুটিয়ে তোলা। দাওয়াত দানকারীকে আমলে সালেহের সৌন্দর্যে সুশোভিত হতে হবে। দায়ী ইলাল্লার নৈতিক চরিত্র এমন হবেÑ হ    কোনো ব্যক্তি তাতে একটি দাগও খুঁজে পাবে না। হ    তার আশপাশ পরিবেশ, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, আপনজন ও আত্মীয় স্বজন যেন এ কথা মনে করে যে, আমাদের মধ্যে একজন উচ্চ ও পবিত্র চরিত্রের ব্যক্তি রয়েছেন। হ    রাসূল (সা:) যখন দ্বীনের দাওয়াত দেয়া শুরু করেছেন, তখন সেই সমাজ যাদের মধ্যে তিনি জীবনের চল্লিশটি বছর অতিবাহিত করেছেন তাদের মধ্যে এমন একজন লোকও ছিল না যে রাসূল (সা:) এর উন্নত নৈতিক চরিত্রের প্রশংসাকারী ছিল না। হ    যে ব্যক্তি তাঁর যতো নিকটে অবস্থান করেছিলো সে ততো বেশি তাঁর প্রতি অনুরক্ত ছিলো। হ    যে লোকগুলোর নিকট তাঁর জীবনের কোনো একটি দিকও গোপন ছিলো না, তারাই সর্বপ্রথম তাঁর নবুওয়তের স্বীকৃতি প্রদান করেন। নি¤েœ কতিপয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হলো : হযরত খাদিজা (রা) রাসূল (সা:) এর সহধর্মিণী যিনি ১৫ বছর রাসূল (সা:) এর জীবন সঙ্গিনী ছিলেন। নবুওয়তকালে তার বয়স ছিল ৫৫ বছর। যিনি ১৫ বছর আড়ালবিহীন নিকট থেকে রাসূল (সা:) কে দেখেছেন। এ রকম একজন বয়স্ক, অভিজ্ঞ মহিলা কোন পার্থিব উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য স্বামীর না-জায়েজ কাজে শরিক হতে পারে বটে কিন্তু কোন অবস্থাতেই তার অপকর্মের প্রতি ঈমান আনতে পারেন না। রাসূল (সা:) যখন তার নিকট, নবুওয়ত লাভের ঘটনা বর্ণনা করেন, তখন একটি মুহূর্ত পর্যন্ত চিন্তা না করে দ্বিধাহীন চিত্তে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি ঈমান আনেন। হযরত জায়েদ (রা) একেবারে নিকট থেকে রাসূল (সা:) কে যারা জানতেন, তাঁদের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন-হযরত জায়েদ বিন হারেসা (রা:)। একজন গোলাম ১৫ বছর বয়সে রাসূল (সা:) এর ঘরে আসেন। নবুওয়তের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। যায়েদ (রা:) ছোটবেলায় পিতা-মাতা থেকে নিখোঁজ হন। বাপ-চাচারা যখন জানতে পারলো তাদের সন্তান অমুক স্থানে গোলামির জীবন যাপন করছে, তখন তারা মক্কায় এলো। এটা হচ্ছে রাসূল (সা:) এর নবুওয়ত লাভের আগেরকার ঘটনা। তারা এসে বলল- আমাদের ছেলেটাকে যদি আজাদ করে দেন, তবে এটা আমাদের প্রতি বড়ই মেহেরবানি হবে। তার পিতা-চাচা তাকে নেয়ার কথা বললে জায়েদ বিন হারেসা (রা) বললেন- আমি এ ব্যক্তির মধ্যে এমন সব সুন্দর গুণাবলি দেখেছি, যা দেখার পর আমি তাঁকে ছেড়ে বাপ-চাচা এবং আত্মীয় স্বজনের নিকট ফিরে যেতে চাই না। এ ছিল মনিব সম্পর্কে খাদেমের সাক্ষ্য। মদিনায় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার পর হযরত জায়েদ (রা:) কে বহু যুদ্ধের সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) যিনি নবুওয়তের বিশ বছর পূর্ব থেকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে রাসূল (সা:) কে দেখার এবং জানার সুয়োগ পেয়েছেন। হযরত আবু বকর (রা:) কর্তৃক নির্দ্বিধায় তাঁর নবুওয়তের স্বীকৃতি দান এ কথার প্রমাণ করে যে, ২০ বছরের সুদীর্ঘ সময়ে তিনি রাসূল (সা:) কে পবিত্র চরিত্র, সুউচ্চ স্বভাব ও আচরণের প্রতিচ্ছবি হিসেবে পেয়েছেন। হযরত আলী (রা) ইসলাম গ্রহণের সময় যার বয়স ছিল ১০ বছর। রাসূল (সা:) এর ঘরেই প্রতিপালিত হয়েছেন। দশ বছরের বালকও যে ঘরে থেকে যার কাছে থাকে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সেও ওয়াকিফহাল থাকে। রাসূল (সা:) এর নিকটতম দুশমন আবু জেহেলও একবার বলেছিলো, হে মুহাম্মদ (সা:) ! আমরা তো তোমাকে মিথ্যা বলছি না। আমরা তো ঐ দাওয়াতকে মিথ্যা বলছি যা তুমি নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ নিকৃষ্টতম দুশমনও তাঁর সত্যবাদিতার প্রবক্তা ছিলো। হ    কথা ও কাজের গরমিল পরিহার করা। কথা ও কাজের মিল উত্তম চরিত্রের একটি অন্যতম মানদন্ড। হ    মৌলিক অসৎগুণাবলি থেকে বেঁচে থাকাÑ গর্ব অহঙ্কার প্রদর্শনেচ্ছা ও ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত। হ    মানবিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে থাকার প্রচেষ্টা চালানো। আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণা, গিবত, চোগলখোরি প্রভৃতি থেকে নিজেকে বিরত রাখা। হ    ত্যাগ ও কোরবানির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হওয়াÑ ষ    সময়ের কোরবানি ষ    সম্পদের কোরবানি ষ    কষ্টদায়ক কাজ ও বিষয় সহ্য করার মানসিকতা ষ    আকাক্সিক্ষত বস্তু লাভের ত্যাগ ষ    শাহাদাতের তামান্না থাকা হ    ব্যবহারিক জীবন সুন্দর হওয়া- ষ    কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট না দেয়া ষ    কটু কথা ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা ষ    পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রুচি সম্মত চলা ষ    শালীন পোশাক-পরিচ্ছেদ পরা ষ    বই পুস্তক, পড়ার টেবিল, শোয়ার খাট, আলনা, কাপড়- চোপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও গোছালো রাখা ষ    থাকার ঘর ও ওয়াশরুম পরিচ্ছন্ন রাখা হ    মিষ্টভাষী ও বিন¤্র ব্যবহারের অধিকারী হওয়া। এটা আল্লাহর এক (অসীম) দয়া মহান আল্লাহ বলেনÑ “তুমি এদের সাথে ছিলে কোমল প্রকৃতির (মানুষ, এর বিপরীতে) যদি তুমি নিষ্ঠুর ও পাষাণ হৃদয়ের (মানুষ ) হতে, তাহলে এসব লোক তোমার আশপাশ থেকে সরে যেতো, অতএব তুমি এদের (অপরাধসমূহ) মাফ করে দাও, এদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মের ব্যাপারে এদের সাথে পরামর্শ করো, অতঃপর সে পরামর্শের (ভিত্তিতে) সঙ্কল্প একবার যখন তুমি করে নেবে তখন (তার সফলতার জন্য) আল্লাহর ওপর ভরসা করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (তাঁর ওপর) নির্ভরশীল মানুষদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান :১৫৯) আমরা দাওয়াত কোথায় কোথায় দেবো? হ    নিজের পরিবার পরিজন হ    আত্মীয়-স্বজন হ    বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী হ    সহপাঠী/ ক্লাসমেট হ    সাধারণ ছাত্র হ    অছাত্র যুবক হ    প্রভাবশালী ব্যক্তি (লেখক, বুদ্ধিজীবী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আমলা, শ্রমিকনেতা প্রভৃতি) হ    নিরক্ষর ও অবহেলিত শ্রেণী হ    অমুসলিমদের মাঝে হ    ক্লাব সমূহে হ    আলেম, ওলাম, ইমাম, মোতাওয়াল্লি, মুয়াজ্জিন হ    মুহাররমাদের মাঝে দাওয়াতি কাজের মাধ্যম হ    ব্যক্তিগত টার্গেট হ    চা-চক্র অনুষ্ঠান হ    বই উপহার দেয়ার মাধ্যমে ষ    তাফসির ষ    হাদিস ষ    ইসলামী সাহিত্য হ    লেখনীর মাধ্যমে হ    দাওয়াতি সামগ্রী উপহার প্রদান Ñ ষ    ইসলামী অডিও, ভিডিও, সিডি ও ক্যাসেট ষ    ইসলামী পত্রিকা ষ    শিক্ষাসামগ্রী হ    ঊ-সধরষ, ওহঃবৎহবঃ, ঋধপবনড়ড়শ হ    ফোন, মেসেজ হ    লেন্ডিং লাইব্রেরি হ    অনলাইন লাইব্রেরি হ    ছাত্রকল্যাণমূলক কাজ হ    জনকল্যাণমূলক কাজ হ    ঈদকার্ড পাঠানো। দায়ী ইলাল্লাহর দায়িত্ব হ    দাওয়াতের মূল বক্তব্য হবে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণের আহবান জানানো। কেননা আল্লাহর দাসত্বগ্রহণকারী ব্যক্তিকে খুব সহজেই দ্বীনি আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা যায়। হ     দাওয়াতদানকারী হিদায়াত দিতে পারেন না, হিদায়াতের মালিক ‘আল্লাহ’ এ কথা সর্বদা স্মরণে রাখা। হিদায়াত দেয়ার কাজ নিজের মনে করলে এ দায়িত্ব পালন দুরূহ হবে। হ    দায়ী ইলাল্লাহকে চিন্তা করা উচিত নয়Ñ ষ    তার দাওয়াতে কে হেদায়েত পেল আর কে হেদায়েত পেল না। ষ    লোকেরা তার কথা শুনছে নাকি শুনছে না ষ    যুগ অনুকূল না প্রতিকূল ষ    লোকেরা তাঁর দাওয়াত কবুল করল নাকি করল না হ    লোকেরা তার ডাকে সাড়া দিক বা না দিক তবুও দাওয়াতি কাজ করতে থাকা। হ    এ পথে চলতে গিয়ে আল্লাহ সকল অবস্থায় তাকে সাহায্য করবেন এ ধারণা বদ্ধমূল রাখা। লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির