post

ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা যারা হয়েছিলেন নিখাদ

১১ আগস্ট ২০১১
ডা. মো: ফখরুদ্দিন মানিক সত্য-মিথ্যা বা হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। দ্বন্দ্ব শুধু আজকে নয়, বরং মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে এই সংঘাত শুরু হয়েছে। এই সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে সত্য সবসময় বিজয় লাভ করেছে। যুক্তি, বুদ্ধির বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা সাময়িক জয় লাভ করলেও তা কখনও চিরস্থায়ী হয়নি। সত্য একটি কালজয়ী আদর্শ। বুদ্ধি ও জ্ঞান আর যুক্তি এবং ক্ষমতার বলে কেউ কেউ এই সত্যকে ছাপিয়ে রাখতে চাইলেও সময়ের ব্যবধানে সত্যের মশাল এমনভাবে প্রজ্বলিত হয়েছে যার তেজোদ্বীপ্ত আলোকরশ্মি মিথ্যাকে পরাজিত করেনি বরং শক্তি এবং ক্ষমতার অহঙ্কারে নিমজ্জিত এই মিথ্যার ফানুসগুলো চরম পরিণতি বরণ করে বর্তমান এবং অনাগত পৃথিবীর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে গিয়েছে। এটি শুধু তাত্ত্বিক কোনো কথা নয়, শত কোটি বছরের এই পৃথিবী ইতোমধ্যে অনেকগুলো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক গাণিতিক অথবা তাত্ত্বিক কোনো বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই বিশ্বাসীদের পৃথিবীর স্থিতি, স্থায়িত্ব, ক্রমবিকাশ, ক্রমোন্নতি যে মহান সত্তার হাতে সেই মহান রাব্বুল আলামিন শাশ্বত সেই বিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এই কথা অনেক আগেই ঘোষণা করেছেন, ‘‘সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পরাজয় অবশম্ভাবী।” (আল কুরআন) ইসলাম হচ্ছে বড় সত্য, সবচাইতে বড় বাস্তবতা, সবচাইতে বৈজ্ঞানিক এবং সময় উপযোগী একটি জীবনব্যবস্থা, নিঃসন্দেহে ইসলাম কিন্তু অন্য সকল ধর্মের মতো অনুষ্ঠানসর্বস্ব কোনো ধর্মের নাম নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। যুগে যুগে যারা এই ইসলামকে ধারণ করেছে তাদেরকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক বন্ধুর অমসৃণ কণ্টকাকীর্ণ পথ, অতিক্রম করতে হয়েছে লোনা দরিয়ার উত্তাল তরঙ্গমালা, মরু সাহারার ভয়ঙ্কর সাইমুমের সামনে থাকতে হয়েছে অবিচল। প্রমাণিত হতে হয়েছে অগ্নিপরীক্ষায় নিখাদ। মূলত ইসলামকে ধারণ করলে এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য যখনই ঈমানদার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হয়েছে তখনই বাতিলপন্থী তথা ইসলামবিরোধীদের পক্ষ থেকে তাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অপপ্রচার, নির্যাতন, হত্যা, যড়যন্ত্রসহ সবগুলো কৌশলকে অবলম্বন করেছে ইসলামের আলোকে নির্বাপিত করে দেয়ার জন্য কিন্তু সত্যের এই মশালধারীরা ত্যাগ-কুরবানির এক উজ্জ্বল নমুনা প্রদর্শন করেছে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তারা যেমন মাথা নত করেনি তেমনি যড়যন্ত্র মোকাবেলায় কোনো ধরনের উগ্রতা বা কোনো ধরনের হঠকারিতা প্রদর্শন করেনি। মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সূরা বাকারার ২১৪ নম্বর আয়াতে যেভাবে বলা হয়েছে, তোমরা কি মনে করেছ এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর তা নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল, এমনকি সেই সময়ে নবী-রাসূল ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল, তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে, তখন তাদেরকে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিলÑ অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটে।’ আল্লাহর সেই প্রদত্ত সাহায্যের ওয়াদার জন্য অপেক্ষা করেছিল। এই পৃথিবীর সেরা মানুষ হচ্ছেন নবী এবং রাসূলগণ। যারা সত্যের মাপকাঠি এবং ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে। আল্লাহ রাববুল আলামিন সেই সেরা মানুষদেরকে এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছিলেন। হযরত ইবরাহিম (আ)-কে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছিল নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে হযরত ঈসা (আ)কে শূলে চড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অসীম কুদরতে উনাকে আসমানে উঠিয়ে নেন। করাত দিয়ে চিরে দ্বিখণ্ডিত হতে হয়েছিল হযরত জাকারিয়া (আ)কে। ইহুদিদের রাজা হিরোডিয়াস হযরত ইয়াহিয়া (আ) শিরচ্ছেদ করে উপহার দিয়েছিলেন তার প্রেমিকাকে। হযরত মূসা (আ)-কে পড়তে হয়েছিল ফেরাউনের তৈরি করা অনেক যড়ন্ত্রে। আর সকল নবী-রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা)কেও অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অপপ্রচার, মিথ্যাচার, নির্যাতন অবরোধ, জন্মভূমি থেকে বহিষ্কার এবং শেষ পর্যন্ত তারা রাসূল (সা)-কে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অথচ তিনি তাদের কাছে ছোটবেলা থেকে আল আমিন, আস সাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নবুওয়তের পূর্বেও অজ্ঞতা বা নিজের অজান্তে মক্কার প্রচলিত জাহেলিয়াতের কোনো একটি রাসূল (সা)কে স্পর্শ করতে পারেনি। যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো, ‘‘হে কম্বলাবৃতকারী, জেগে ওঠো, সাবধান কর, তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।’’ (সূরা মুদ্দাসসির : ১-৪) রাসূল (সা) তখন মক্কার চিরাচরিত নিয়মানুসারে যখন সকল অধিবাসীকে এই বলে আহ্বান করলেন, ইয়া সাবাহা, ইয়া সাবাহা, এই আওয়াজ শুনার সাথে সাথে সবাই একত্রিত হলেন। রাসূল (সা) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, এই পাহাড়ের পেছনে একটি বাহিনী অপেক্ষা করছে তোমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য, তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে, তারা জবাব দিয়েছিল অবশ্যই কারণ আমরা তোমাকে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী বলে জানি। ঠিক তার পরই রাসূল (সা) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কালু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু কুম তুফলিহুন’ বল আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।’ রাসূল (সা)-এর এই বক্তব্য শুনার সাথে সাথে তারা বিরোধিতায় লিপ্ত হলো। পাগল, জাদুকর, কবি বলে রাসূল (সা)কে বিদ্রুপ বানে জর্জরিত করলো অথচ রাসূল (সা) ছিলেন এই সকল আচরণ থেকে পূতপবিত্র। মক্কাবাসীদের এহেন আচরণে রাসূল (সা) কিছুটা বিব্রত হলেও তিনি হতাশ হয়ে যাননি। ধৈর্য ও সহনশীলতা নিয়ে মক্কার সকল মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়ে তাদেরকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানাতে থাকলেন। মানুষের চিন্তা ও বিবেকের দুয়ারে আঘাত করে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করলেন, ভেঙে দিলেন আরব-অনারবের বিভেদের দেয়াল, প্রবাহিত করলেন ভ্রাতৃত্ব এবং সাম্যের স্রোতধারা, যার সম্পর্কে ফিলিপ ফেরি হিট্টি প্রণীত দ্যা হিস্ট্রি অব দ্যা অ্যারাবস গ্রন্থটিতে উল্লেখ করেন, এক খোঁচায় আরবীয় সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অর্থাৎ উপজাতীয় আত্মীয়তা ধর্মবিশ্বাসের নতুন বন্ধন দ্বারা পরিবর্তিত হলো। অর্থাৎ আরবের সমস্ত ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য এক ধরনের যুদ্ধবিরোধী আদেশ বলবৎ হলো। এই নতুন ধর্ম সম্প্রদায়ের কোনো যাজকবর্গ, যাজকতন্ত্র প্রধান বিশপের এলাকা কিছুই রইল না। মসজিদই ছিল এই সম্প্রদায়ের সমাবেশস্থল, সামরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্র ও সকল মানুষের আরাধনার স্থান। প্রার্থনার পরিচালক অর্থাৎ ইমাম ছিলেন ধমবিশ্বাসীদের সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং এই ধর্মবিশ্ববাসীদের প্রত্যেকেই গোটা বিশ্বের আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একে অপরকে রক্ষা করার নির্দেশ পেয়েছিল। মহিলা ছাড়া আর যে দু’টি জিনিস আরবীয়দের কাছে প্রিয় ছিল মদ ও জুয়া তা হারাম করা হল। নবুওয়তি ফল্গুধারায় ইসলাম পূর্ব আরব এবং ইসলাম পরবর্তী আরবে সমাজ ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন সূচিত হয় তা বুঝা যায় আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী দলের নেতা জাফর ইবনে আবু তালিবের নেগামের উদ্দেশে প্রদত্ত থেকে জাফর (রা) বলেন, ‘আমরা ছিলাম জাহেলিয়া যুগের মানুষ। মূর্তিপূজা করতাম ও মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করতাম। অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলাম, পরিবারকে ত্যাগ করে আমরা তাদের রক্ষা করার মৌখিক চুক্তি লঙ্ঘন করতাম। আমাদের মধ্যে যে সবল সে দুর্বলকে গ্রাস করতো। যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের মধ্যে থেকেই একজনকে তার দূত করে আমাদের কাছে পাঠালেন ততক্ষণ আমাদের অবস্থা ছিল এ রকম। সেই দূতের পূর্ব পুরুষদের আমরা জানি এবং তার সত্যপরায়ণতা, সততা ও পবিত্রতা আমরা স্বীকার করি। তিনিই আল্লাহকে মান্য করা, তার আরাধনা করার জন্য আমাদেরকে আহ্বান জানান। আল্লাহর পরিবর্তে আমরা যে সকল পাথর ও মূর্তিপূজা করি তা পরিত্যাগ করতে বলেন। তিনি আমাদের অবিবাহিত অবস্থায় যৌন সহবাস করতে, মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে, অনাথ শিশুকে অধিকার বঞ্চিত করতে, সতী নারী সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি কেবল আল্লাহর উপাসনা করতে এবং তার সাথে কাউকে শরিক করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নামাজ পড়তে, জাকাত দিতে ও রোজা রাখতে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল (সা)-এর এই নেতৃত্বে ইসলামী ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গোটা আরবের সীমানা ছাড়িয়ে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিরাট অংশকে প্রভাবিত করে। রাসূলের ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনে সম্ভাবনাহীন উপাদান থেকে এমন একটি জাতির উদ্ভব ঘটান, যারা কখনো ঐক্যবদ্ধ ছিলো না। আর তাদের মাধ্যমে এমন একটি দেশের সৃষ্টি করেন যা আগে শুধু একটি ভৌগোলিক সীমানাকেই বোঝাত কিন্তু তার জাতীয় চরিত্র বলতে কিছুই ছিল না। রক্তের বদলে রক্ত ছিল আরবের আদিম আইন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বনু জর ও বনু তাগলিব গোষ্ঠীর মধ্যে রামুস যুদ্ধ চলেছিল প্রায় ৪০ বছর। সেই বর্বরতার মূলোৎপাটন করে বালাদুল আমিন ও শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। আর সেই জন্য রাসূল (সা) কে তার জীবদ্দশায় আহত, রক্তাক্ত, দান্দান মোবারকের শাহাদাত, প্রায় ৩ বছরের শিয়াবে আবু তালিবে অবরোধ, পাথর বৃষ্টিতে জর্জরিত হওয়া ছাড়া তার জীবদ্দশায় ছোট বড় ২৭টি যুদ্ধের নেতৃত্বসহ প্রায় ৮৩টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। সাহাবীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, শিবে আবু তালিবে কষ্টকর দিনগুলোর কথা, খাবার আর পানীয়ের অভাবে গাছের ছাল এবং পাতা খেতে খেতে তাদের মুখ এবং গলাতে ঘা হয়ে যায়। খাবারের অভাবে ঘরের উপরে ছাদে দেয়া উটের শুকনো চামড়া পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়। দুগ্ধপোষ্য অনেক শিশু দুধের অভাবে মারা যায়। এত কঠিন নির্যাতনের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঈমানদারদেরকে এই বলে সতর্ক করেছিলেন, ‘‘আলিফ লাম মিম, লোকেরা কি মনে করেছে যে আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললে ছেড়ে দেয়া হবে আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তী সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।” (সূরা আন কাবুত : ১-৩) ঈমানের এই অগ্নিপরীক্ষার চিত্র ফুটে ওঠে হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত (রা)-এর জীবনী থেকে। খাব্বাব (রা) যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তিনি ছিলেন উম্মে আনসার নামক এক মহিলার ক্রীতদাস। তিনি কয়লার মধ্যে লোহা গলিয়ে ঢাল, তলোয়ার ও বর্শা তৈরির কাজ করতেন। ইসলাম গ্রহণ করার অপরাধে তার মনিব এবং উম্মে আনসারের ভাইয়েরা তাকে অকথ্য নির্যাতন করতো। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে জ্বলন্ত কয়লার ওপর শুয়ে রেখে পাথর চাপা দিতো। আর তার শরীরের রক্ত মাংসগুলো গলে গলে কয়লা ঠাণ্ডা হয়ে যেত, কয়লার আগুনে ঝলসে গিয়ে তার শরীরে এমন গর্ত হয়েছিল যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই গর্তগুলো পূরণ হয়নি। সেই জন্য তিনি সব সময় গায়ের ওপর চাদর জড়িয়ে রাখতেন। চাদরের ব্যাপারে তার বক্তব্য ছিল সেই আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য আমার পিষ্ট ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে, পরকালে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে সেই পিঠ দেখানো ছাড়া দুনিয়ার কোনো মানুষকে দেখাবো না। এত নির্মমতার মধ্যেও তিনি ঈমান থেকে দূরে সরে যাননি। সেই ধারাবাহিকতায় নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও জুলুম এখনো সত্যের পতাকাধারীদের ওপর অব্যাহত রয়েছে। এর চাইতে নির্মমতার কথা স্মরণ করে দিয়ে রাসূল (সা) সাহাবীদের সতর্ক করে দেন। হযরত খাব্বাব (রা)-এর বর্ণনা থেকে একটি হাদিসে রাসূল (সা)-এর বক্তব্য ছিল এ রকম : রাসূল (সা) একবার কাবাঘরের ছায়ায় বসে আছেন, সেখানে উপস্থিত হয়ে খাব্বাব (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না। এ কথা শুনে তার চেহারা রক্তিমবর্ণ ধারণ করে। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বে যেসব মুমিনগণ এর চেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছে, তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তাতে বসিয়ে মাথায় ওপর করাত চালিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হতো, কারো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ লোহার চিরুনি দ্বারা হাড্ডি-মাংসগুলোকে আলাদা করা হতো যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে নেয়। এই জুলুম নির্যাতন ঈমানদারদের জন্য নতুন নয়। অতীতে যারাই ঈমানের দাবি করেছে তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এই পরীক্ষা হচ্ছে আমরা ঈমানের দাবিতে কতটুকু সত্যবাদী তা যাচাই করার জন্য। ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা ব্যতীত কেউই জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই তো আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো যাতে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ এবং ধৈর্যশীল।” (সূরা মুহাম্মদ : ৩১)    (চলবে) লেখক :  কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির