post

একটি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা) প্রফেসর

তোহুর আহমদ হিলালী

০৫ ডিসেম্বর ২০১৭
একটি কল্যাণমূলক সমাজ বলতে এমন একটি সমাজকে বোঝায় যেখানকার অধিবাসীরা পূর্ণ নিরাপত্তা সহকারে সকল অধিকার ভোগ করে অর্থাৎ ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-লিঙ্গ সকল ভেদাভেদ উপেক্ষা করে মানুষ হিসেবে সকলে সম মর্যাদা ও অধিকার ভোগ করে। দুর্বলের ওপর সবলের, নারীর ওপর পুরুষের, অধীনের ওপর কর্তৃত্বশীলের সকল প্রকার অত্যাচার-নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সমাজের চিত্রই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে। প্রশ্ন হচ্ছে-মানুষ কি কখনই এরূপ সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে? মানুষের প্রতি মানুষের জুলুম-নির্যাতনের অসহনীয় কাহিনীতে ইতিহাসের পাতাগুলো পূর্ণ। সুদূর অতীত থেকে সভ্যতার প্রতিটি অধ্যায় মানুষের প্রতি শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনায় পরিপূর্ণ এবং বর্তমানেরও তা অব্যাহত। ব্যতিক্রম শুধু মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা) ও সাহাবীদের (খোলাফায়ে রাশেদিন) এবং তাঁদের অনুসরণকারী শাসকবর্গ ও অতীত যুগের আল্লাহপাকের মনোনীত (আম্বিয়ায়ে কেরাম) ব্যক্তিবর্গের শাসনামল। বর্তমান প্রবন্ধে একটি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা)-এর কার্যক্রম ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাসূল (সা)-এর আগমনকাল ছিল সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। মানুষ তার অধিকার হারিয়ে মানুষের গোলামে পরিণত হয়েছিল। এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে সমাজে চালু ছিল না। চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি-ছিনতাই, জেনা-ব্যভিচারের এক সয়লাব বয়ে চলেছিল। এমনকি আল্লাহপাকের সেরা সৃষ্টি মানুষ হাটে-বাজারে কেনা-বেচা হয়েছে। নারী জাতির অবস্থা ছিল বড় করুণ। কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে পিতা অপমান বোধ করতো এবং অনেক সময় জীবন্ত কবর দিত। এমনি একটি পরিবেশে আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা)-কে আল্লাহপাক প্রেরণ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- সেই বর্বর সমাজটাকে তিনি ইতিহাসের চরম সভ্য সমাজে পরিণত করেন। একই দেশ-মাটি-আবহাওয়া-জলবায়ুতে প্রতিপালিত পূর্বেকার ডাকাত-খুনিরা মানুষের জীবন ও সম্পদের পাহারাদার এবং নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকারীরা নারীর ইজ্জত ও সম্মানের হেফাজতকারী হয়ে যান। কথায় কথায় যারা অস্ত্র বের করে মানুষের খুন ঝরাতো-তারাই অপ্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াকে ও কষ্ট দিয়ে একটি পশু জবেহ করাকে অপরাধ মনে করতে থাকে। পৃথিবীতে এই প্রথম মানুষ মুক্তির স্বাদ অনুভব করে। রাসূল (সা)-এর স্বপ্নসাধ (সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন একজন ষোড়শী সুন্দরী যুবতী স্বর্ণালঙ্কারসহ সানা থেকে হাজরামাওত একাকী হেঁটে যাবে-আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সে ভয় করবে না) পূরণ হয়। নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলেই মূলত এটা সম্ভব হয়েছিল। সমাজের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের মত পাপিষ্ঠ, জালেম ও খোদাদ্রোহীদের হাত থেকে নবী মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের হাতে ফিরে আসায় সমাজের এ পরিবর্তন। সমাজে অসৎ ও খোদাবিমুখ নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত রেখে নিছক ওয়াজ-নসিয়তের মাধ্যমে যে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয় তার বড় প্রমাণ আল্লাহপাকের কিতাব ও নবী-রাসূলদের জীবন-ইতিহাস। কুরআন সাক্ষ্য দেয় যে, যত নবী-রাসূলকেই আল্লাহপাক প্রেরণ করেছেন তাদের সবাইকে একই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন-দ্বীন কায়েম কর অর্থাৎ অসৎ ও খোদাবিমুখ নেতৃত্বকে পরিবর্তন করে খোদামুখী নেতৃত্ব কায়েম কর এবং এ প্রচেষ্টায় সকল নবী-রাসূলদের সাথে সমসাময়িক রাজা-বাদশাহ ও কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মোকাবেলা হয়েছে। রাসূল (সা)-এর সাথেও একই আচরণ লক্ষণীয় এবং সমাজ পরিবর্তনের পদ্ধতিও সবার একই ছিল অর্থাৎ দাওয়াত প্রদান, তাদেরকে সংগঠিত ও পরিশুদ্ধিকরণ এবং গণভিত্তি গড়ে তোলা। সমাজের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তিনি কোন বাঁকা পথ গ্রহণ করেননি। রাসূল (সা)-এর নিকট আরবের কাফের-মুশরিকদের প্রস্তাব ছিল যে, ইসলামের দাওয়াত প্রদান থেকে সরে এসে সমাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করার। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন বা প্রচলিত পন্থায় আন্দোলন করে যেমন-ধনীর বিরুদ্ধে দরিদ্রকে, পুরুষের বিরুদ্ধে নারীকে, প্রভুর বিরুদ্ধে দাসকে উসকিয়ে দিয়ে বা সমাজের কোন সমস্যাকে ইস্যু বানিয়ে বা নিজে কোন ইস্যু সৃষ্টি করে আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের কর্তৃত্ব গ্রহণের চেষ্টা করেননি। বরং সমাজের হাজারো সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষকে উদাত্ত কণ্ঠে আহবান জানান, ‘হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা সবাই মিলে বল-আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তাহলেই তোমরা সফলকাম হবে’। তাদের অতি চেনা-জানা সুন্দর ও পবিত্র মানুষটির মুখের এ পবিত্র কথাটি তারা বরদাশত করতে পারলো না। রাসূল (সা)-এর মুখ নিঃসৃত এ পবিত্র বাক্যটি শুধু একটি ধর্মীয় বাক্যই ছিল না বরং এটা ছিল সমাজ পরিবর্তনের এক বিপ্লবাত্মক ঘোষণা। যারা নিজেদের মনগড়া আইন-কানুনের ভিত্তিতে সমাজের মানুষগুলোকে নিজেদের গোলামে পরিণত করে রেখেছিল তারা এ বাণীর ভেতর নিজেদের বিপদ অনুভব করলো। রাসূল (সা) সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর তাঁর সমাজে জীবন যাপন করেছেন। অত্যন্ত নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী মানুষটি তাঁর জাতির নিকট হতে আল-আমিন ও আস-সাদিক উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। অথচ ইসলামের দাওয়াত দানের সাথে সাথে তাঁর নিকটতম আত্মীয়-স্বজনসহ সে সমাজের লোকদের নিকট থেকে তিনি প্রচন্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হন। আল কুরআন সাক্ষী সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবনেও একই ধরনের অত্যাচার নির্যাতন দেখা দিয়েছিল। আজও যারা ইসলামের দাওয়াত দিতে চান এবং এর ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ে তুলতে চান তাদেরকে অবশ্যই বাতিল ব্যবস্থার ধারক-বাহকদের বিরোধিতা মোকাবেলা করেই অগ্রসর হতে হবে। রাসূল (সা) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের এবং বিরোধিতাকারীদের নিকট রাসূল (সা)-এর দাওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট। তিনি তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার দাওয়াত কবুল করো তাহলে গোটা আরবের কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে চলে আসবে এবং সমগ্র অনারব তোমাদের বশ্যতা স্বীকার করবে’। আরবের কাফির-মুশরিকরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, রাসূল (সা)-এর দাওয়াতকে যদি প্রতিহত করা না যায় তবে সমাজে তাদের কর্তৃত্ব শেষ হয়ে যাবে। রাসূল (সা)-এর দাওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে অসৎ ও খোদাদ্রোহী নেতৃত্ব থেকে মুক্ত করে সৎ নেতৃত্বের অধীন নিয়ে আসা-যা আল্লাহপাকের ভাষায় বলা যায়-‘তিনি তাঁর আপন রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেন যাতে সকল দ্বীনের ওপর একে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠা করতে পারেন যদিও শিরকবাদীগণ মোটেই বরদাশত করবে না।’ দ্বীনের বিজয়ী হওয়া অর্থ বাতিলপন্থীদের মোকাবেলায় হকপন্থীদের জয়লাভ করা। মূলত রাসূল (সা)-এর সকল কর্মপ্রচেষ্টা এ লক্ষ্যেই নিয়োজিত ছিল। এ জন্য আল্লাহপাকের হেদায়াত অনুসারে তিনি যে কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন-তাহলো দাওয়াত প্রদান ও দাওয়াতে যারা সাড়া দেন তাদেরকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। মানুষ ভালো কিছু আশা নিয়ে জীবন বাজি রেখে নেতৃত্বের পরিবর্তন সাধনের জন্য চেষ্টা করে কিন্তু তাতে দেখা যায় ফলাফলের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে মানবগোষ্ঠী গড়ে ওঠে সমাজের নেতৃত্ব তাদের হাতে আসলেই কেবল কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এরূপ বিশ্বাসীদের এক জামাত গড়ে ওঠায় নবী করিম (সা)-এর পক্ষে একটি কল্যাণমূলক সমাজ বিশ্ববাসীকে উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছিল। আর বাতিলের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে এক চরম অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল এরূপ একটি জামাত গড়ে তোলা সম্ভব। বাতিলের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আদর্শের প্রতি যে একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং ধৈর্য ও সহনশীলতার মনোভাব সৃষ্টি হয় তা অন্য কোন উপায়ে সম্ভব নয়। তাই চরম মিথ্যাচার ও নিষ্ঠুর আচরণের জবাব উত্তম আচরণের মাধ্যমে দেয়ার তাগিদ আসে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। সীমাহীন অত্যাচার এমনকি সাথীদের (হারিছ ইবনু আবি হালাহ (রা), ইয়াসির (রা) প্রমুখ) শাহাদত বরণের পরও পাল্টা ব্যবস্থা নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো ‘কুফ্ফু আইদিয়াকুম’ (হাত গুটিয়ে রাখ) অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবহার করো না। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে অস্ত্রের মোকাবেলায় অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি অর্থাৎ সশস্ত্র লড়াই-এর নির্দেশ আসে। এটাই ছিল রাসূল (সা) প্রবর্তিত ইসলামী আন্দোলনের স্বাভাবিক পদ্ধতি। মক্কাভূমিতে দীর্ঘ তেরো বছর দাওয়াতি কাজের পর প্রায় প্রতিটি গোত্র থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নত চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ রাসূল (সা)-এর দাওয়াতে সাড়া দেন। নেতৃবৃন্দের প্রচন্ড বিরোধিতার কারণে মক্কার সাধারণ জনগণের ইসলামের পক্ষে আসা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে মদিনার জনগণ রাসূল (সা)-এর দাওয়াত কবুল করে তাঁকে মদিনায় গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। সে মুহূর্তে রাসূল (সা)-কে আল্লাহপাক তাঁর সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজসহ একটি ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার জন্য ১৪টি মূলনীতি দান করেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে দোয়া শিখিয়ে দেয়া হয়- ‘হে আমার পরোয়ারদিগার! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি সার্বভৌম শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।’ আর ঘোষণা করে দাও- ‘সত্য এসে গেছে এবং বাতিল নির্মূল হয়ে গেছে, বাতিলের তো বিলুপ্ত হবারই কথা।’ (সূরা বনি ইসরাইল ৮০-৮১) অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব দান করো অথবা কোন রাষ্ট্রক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে দুনিয়ার বিকৃত জীবনব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে পারি। এটা স্পষ্ট, রাসূল (সা) যে সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা রাষ্ট্রশক্তি অর্জন ছাড়া সম্ভব ছিল না, কারণ নিছক ওয়াজ-নসিয়ত দ্বারা সমাজ থেকে কোনো মন্দ দূর করা যায় না। রাসূল (সা) যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন মদিনার সর্বসাকুল্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৭৩৫ জন এবং মদিনার আয়তন ছিল ৬ বর্গমাইল। আর ১০ বছর পর তাঁর জীবদ্দশায় ৬ বর্গমাইলের সীমারেখা ৮ লক্ষ বর্গমাইলে দাঁড়ায় এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লক্ষাধিক। এ হলো রাষ্ট্রশক্তি লাভের মাহাত্ম্য। মক্কাভূমি থেকে জুলুম অপসারণ দূরে থাক-তিনি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথী নিজেরাই ছিলেন জুলুমের শিকার। মক্কা বিজয়ের পর অবসান ঘটলো সকল জুলুম, নির্যাতন ও অনিয়মের, আর প্রতিষ্ঠা লাভ করলো এক সুখী ও শান্তিপূর্ণ সমাজ। মুসলমানদের মধ্যে এক বিরাট অংশ সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ¯্রফে রাজনীতিক কাজ বলে মনে করে। অথচ এটাই ছিল দ্বীনের মৌলিক দাবি-দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ। এ প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে যে জীবন তা মূলত মুনাফিকের জীবন। রাসূল (সা)-কে প্রেরণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার সাথে সাথে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের কথা বলবো যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে-তাহলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)-এর প্রতি বিশ্বাস এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে।’ (সূরা সফ) এর ফলাফলও তিনি জানিয়ে দিলেন-‘সকল গুনাহের মাফ ও এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত।’ এবং মুমিনদের কামনা-বাতিলের মোকাবেলায় হকের বিজয় সে সম্পর্কেও ওয়াদা- ‘তোমরা যা পছন্দ কর-আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়- হে নবী মুমিনদেরকে সে সুসংবাদও জানিয়ে দিন।’ (সূরা সফ, আয়াত নং ১০-১৩) আজ সারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নিপীড়িত-নির্যাতিত-অবহেলিত-আল্লাহর দুশমনদের আদেশানুগত। অথচ আল্লাহপাক মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠতম জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর ঘোষণা, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠতম জাতি- তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য- তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে’। আজ নির্দেশদানের অবস্থানে আল্লাহর অবাধ্য বান্দাহ্রা, আর অনুগত ও প্রিয়ভাজন বলে দাবিদাররা আদেশানুগত। আমাদের এ দুর্গতির কারণ কী তা ভেবে দেখা দরকার। আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাহদেরকে পৃথিবীতে খেলাফতের দায়িত্ব দানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। বর্তমানে ইসলামের সকল সৌন্দর্য ও কল্যাণকারিতা থেকে বিশ্ববাসী বঞ্চিত। এর একটিই কারণ হলো আল্লাহর দ্বীন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত না থাকা। দুর্ভাগ্য হলো, এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা-চেতনা থেকেও আজ মুসলমানরা মুক্ত। দ্বীনের হাজারো খেদমত-মসজিদ-মাদ্রাসা-খানকা-ওয়াজ-তাবলিগের দাওয়াত চালু থাকা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী শয়তানি কর্মকান্ড পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে এবং আজ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে এক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আল্লাহ মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠতম জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধের তাগিদ দিয়েছেন। আজ বিশ্বব্যাপী মুসলিম ও অমুসলিম দেশসমূহে মজলুম মুসলিম জনগোষ্ঠীর আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে-আল্লাহর আহবান ছিল মজলুমের সাহায্যার্থে আল্লাহর পক্ষে লড়াই করার। আদর্শিকভাবে আজ পৃথিবী দুটো ভাগে বিভক্ত-হক ও বাতিল। বাতিল তার সকল শক্তি নিয়োগ করেছে হকের পুনরুজ্জীবন রুখতে অর্থাৎ ইসলামের ভিত্তিতে আবার কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হোক এবং মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হোক তা যেন না ঘটে। ব্যক্তিগতভাবে দ্বীন পালন করুক বা এ ব্যাপারে যতই পরহেজগারি দেখাক তাতে বাতিলের আপত্তি নেই কিন্তু তাকে থাকতে হবে বাতিলের অধীনে। শয়তান তার কৌশলে দারুণভাবে সফল হয়েছে। অথচ আল্লাহপাক চান বাতিলের মোকাবেলায় তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী দেখতে। মুসলিম নওজোয়ানদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের লক্ষ্যে আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতেই হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই। কোন হটকারী সিদ্ধান্ত নয়, আসতে হবে রাসূল (সা)-এর প্রদর্শিত পথে। কারণ আল্লাহর ঘোষণা, ‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে আর যারা কাফের তারা লড়াই করে খোদাদ্রোহিতার পথে। তোমরা শয়তানের সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর আর বিশ্বাস কর শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল।’ (সূরা আন নূর ,আয়াত নং ৭৬) এ সংগ্রাম থেকে যারা নিজেদেরকে দূরে রাখবে তারা আসলে বাতিলেরই সহযোগী-বর্ণচোরা-মুনাফিক। জান-মাল নিয়ে এ পথে এগিয়ে এলে নিশ্চিত জান্নাতের ওয়াদার সাথে সাথে রয়েছে মহান রবের সাহায্য ও দুনিয়ার বিজয় এবং এর ফলে দুনিয়াবাসী লাভ করবে একটি কল্যাণমূলক সমাজের সাক্ষাৎ। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আমিন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির