post

জাতীয় সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা ২০১১ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সভাপতির বক্তব্য

১০ আগস্ট ২০১১
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শবাদী ছাত্র ইসলামী আন্দোলন। এর লক্ষ্যে-উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহপ্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রশিবির বাংলাদেশকে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে তরুণ ছাত্রসমাজকে সংগঠনের লক্ষ্যে-উদ্দেশ্যের আলোকে সৎ, দ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। যার ফলে সারা দেশের প্রায় সব শিাপ্রতিষ্ঠানেই লাখ লাখ ছাত্র ইসলামী ছাত্রশিবিরের ল্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিজেদের জীবন গড়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐশী বিধানের আলোকে মানবচরিত্র গড়ে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি তরুণ ছাত্রসমাজকে অনৈসলামিক ও অনৈতিকতার পথে টেনে নেয়ার প্রচেষ্টাও সমাজে যুগপৎ বিদ্যমান। যার ফলে এ দেশের ছাত্রদের অনেকেই ইদানীং পড়ালেখা কিংবা আগামীর দেশ পরিচালনার যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ইভটিজিং, মাদকাসক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার পাশাপাশি সমাজসচেতন মানুষেরা শঙ্কিত আমাদের জাতিসত্তার ভবিষ্যৎ নিয়েও। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। কিন্তু নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর অপার সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ আজ চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এদেশে এখন নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বের চরম অভাব। চারদিকে হক-বাতিল, ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব। মূল্যবোধের জন্য, মনুষ্যত্বের জন্য সর্বত্র, সবার মধ্যে এক অসাধারণ আর্তি। ন্যায়বিচারের আশা, সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের কামনা আজ প্রতারণার শিকার। ব্যক্তি ও সমাজ জীবন হতাশায় জর্জরিত। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-দ্বন্দ্ব, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশ করে মানব জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। দেশ কিংবা দেশের বাইরে সর্বত্রই শান্তির জন্য মানুষের চরম হাহাকার। মানবরচিত নানাবিধ মতবাদ কিংবা ধর্মহীন বিভিন্ন মতবাদের দ্বারস্থ হয়েও মানুষ মুক্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে পারছে না। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়েও শান্তি যেন সোনার হরিণ। চীনের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা মাও সেতুংয়ের ভাষ্য মতে- সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬৭ সালে চীন বিপ্লবে ২ কোটি ৭০ লাখ লোক প্রাণ হারায়। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরিচালক জিবিগনিউ ব্রেজেন্সকির মতে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েম ও রার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় ৪ কোটিরও অধিক মানুষকে। আর হাজার হাজার মানুষের জীবনের বিনিময়ে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার স্লোগান বুকে ধারণ করে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবও মানবতার সত্যিকার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে আজ প্রায় ৪০ বছর। কিন্তু সত্যিকার আদর্শ আর নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে না পারায় এ দেশের ১৫ কোটি মানুষের কাছে আজও স্বাধীনতার সুফল পৌঁছানো যায়নি। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা মহান আল্লাহ তায়ালা এই বিশ্বকে শুধুমাত্র সৃষ্টি করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি। পাশাপাশি তাঁর পক্ষ থেকে গাইড লাইনসহ পৃথিবী পরিচালনার জন্য যেসব পথপ্রদর্শক বা নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন তাঁদের মাঝে হযরত মোহাম্মদ (সা) হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। আজ থেকে প্রায় ১৫ শ’ বছর পূর্বে আরবের অবস্থা যখন ইতিহাসের সবচেয়ে সঙ্কটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছিল, অজ্ঞতা-বর্বরতা ও স্বেচ্ছাচারিতার দাপটে মানবতা যখন ভূলুন্ঠিত ঠিক তখনই তাঁর আগমন। তিনি এসেছিলেন অহির বার্তা এবং প্রেমের অথৈই সাগর বুকে ধারণ করে মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে। তাঁর আগমনে সৃষ্টির পরতে পরতে নেমে আসে প্রশান্তির ছোঁয়া। প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে আশাহত শিশু-কিশোর, আলোয় বেরিয়ে আসে অন্ধকারে থাকা নারীসমাজ, বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দাস-দাসী এবং সমাজের অস্পৃশ্য মানবমণ্ডলী। আইয়ামে জাহেলিয়াতের হাত থেকে তৎকালীন সমাজকে মুক্ত করে তিনি তাঁর কালের ও অনাগত ভবিষ্যতের মানবতার জন্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু জীবনব্যবস্থার। তিনি নিজের জীবনে দেশ-জাতি-সমাজ-ধর্ম-অর্থ সকল ক্ষেত্রে নীতির আদর্শ প্রয়োগ করে ছোট-বড়, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সাদা-কালো, নর-নারী সকলের জন্য রেখে গেছেন তাঁর অমোঘ শিক্ষা। তাঁর অতুলনীয় চরিত্রে ঘটেছে যার সম্যক বিকাশ। তাঁর কাছেই আল্লাহ রাব্বুল-আলামিন প্রেরণ করেছিলেন পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল কুরআন। তিনি তাঁর জীবনে আল কুরআনের প্রতিটি বাণী অনুসরণ করে মানবজীবনের প্রতিটি কাজ কিংবা প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাসের শিা দিয়ে গেছেন। তাই তাঁর জীবন-ই আমাদের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। কেননা তাঁর চরিত্রে রয়েছে সর্বগুণের অনুপম সমন্বয়। এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আহজাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেন- “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূল (সা) এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” রাসূল (সা)-এর জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিক লা মার্টিন বলেন- “দার্শনিক, বক্তা, ধর্মপ্রচারক, যোদ্ধা, আইন রচয়িতা, ভাবের বিজেতা, ধর্ম মতের ও প্রতিমাবিহীন ধর্মপদ্ধতির প্রবর্তক, ২০টি পার্থিব রাজ্যের এবং একটি ধর্ম রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সে মোহাম্মদের দিকে তাকাও মহত্ত্বের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে পরিমাপ করলে বিশ্বের কেউ কি তাঁর চেয়ে মহৎ হতে পারে?” আর জর্জ বার্নার্ড শ’ মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে বলেন- “ÒIf all the world was united under one leader then Muhammad would have been the best fitted man to lead the people of various creeds, dogmas and ideas to peace and happiness.” অর্থাৎ যদি গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, আদর্শ ও মতবাদসম্পন্ন মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে একজন একনায়কের শাসনাধীনে আনা হতো, তবে মোহাম্মদ (সা) সর্বাপো যোগ্য নেতা রূপে তাদেরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারতেন। জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক বন্ধুগণ পৃথিবীর ইতিহাসে মহান ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন করতে গেলে দেখা যাবে তাদের অবদান বিশেষ এক কিংবা দু’টি বিষয়ে সীমাবদ্ধ। এক জীবনে মানব জীবনের সকল বিষয়কে ঐক্যবদ্ধ করে সব সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে পেরেছে এমন মহামানব শুধুমাত্র একজনই আর তিনি হচ্ছেন মনুষ্যত্বের ধ্বংসস্তূপের ওপর শান্তির পতাকা হাতে মানবতার কাণ্ডারি হিসেবে প্রেরিত মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সা)। তাই হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনী অধ্যয়ন ও তাঁর জীবন নিঃসৃত শিা-ই অশান্ত এই পৃথিবী কিংবা আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্যারান্টি। তাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ২০১০ সাল থেকে তার নিয়মিত প্রশিণমূলক কার্যক্রম এবং কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি আয়োজন করে আসছে ইতিহাসের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর জীবনী অধ্যয়ন বিষয়ক প্রতিযোগিতা তথা সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতার। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা ২০১১-এর আয়োজন। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জাতীয় সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা ২০১১-এ অংশগ্রহণের জন্য দেশের সকল ছাত্র ভাইদের নিকট অনুরোধ করছি। আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ডা. মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন মানিক কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির