post

মতিউর রহমান মল্লিক অন্য উন্মোচন

আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

[শেষ কিস্তি]

সংগঠন যার ধ্যান, জ্ঞান, জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ঠিকানা

মতিউর রহমান মল্লিক নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন আগাগোড়া একজন দায়ী, সংগঠক, সংগ্রামী, প্রত্যয়ী, ত্যাগী ও ধ্যানী মানুষ হিসেবে। তাঁর গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, অনুবাদ সব কিছুতেই ছিল একই তাগিদ, একই আহ্বান, একই চাওয়া পাওয়া। সংগঠনকে এতো নিবিড়ভাবে ভালোবাসার মানুষ খুব কমই দেখেছি জীবনে। এ ক্ষেত্রে তিনি একক ও নজিরবিহীন। তিনি নিজেই তাঁর উপমা। সেই কৈশোর থেকে মতিউর রহমান মল্লিক ছাত্র ইসলামী সংগঠনে সম্পৃক্ত হন। অল্প বয়সেই সংগঠনের শপথের কর্মী হন। বাগেরহাটের দায়িত্বশীল হন। খুলনা জেলার একজন জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু শিল্পী হিসেবে তাঁর সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে থাকে।

গ্রামে থাকতে মায়ের আঁচলের শক্ত বাঁধন আটকাতে পারেনি এ দুরন্ত কিশোরকে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে দিতেন দ্বীনের দাওয়াত। মা জিজ্ঞেস করতেন- কি করেন তিনি, কোথায় থাকেন। আর সে কথার জবাব দিলেন গানে গানে। “আম্মা বলেন ঘর ছেড়ে তুই যাসনে ছেলে আর আমি বলি খোদার পথে হোক এ জীবন পার।”

এ গানে এক স্নেহকাতর মায়ের আকুতি যেমন ঝরে পড়েছে, তেমনি এক অসমসাহসী তরুণের দরদভরা উত্তরও জেগে উঠেছে।

মনটা ভরে যায় যখন মা ছেলের কথায় খুশি হয়ে বলে ওঠেন- “একটু পরে মা কেঁদে কন- হে খোদা নাও ভার।”

মল্লিকের এই গান শত মুজাহিদের মাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আল্লাহর রাহে ছেলে সন্তানকে সাজিয়ে দিয়ে দোয়া করতে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার প্রিয় ঠিকানা। এই কাফেলাকে নিয়ে তার যত গান, যত কবিতা। এ কাফেলার অন্তহীন সফল যাত্রা ও বেঁচে থাকার দোয়া তার গানে। “জেহাদের এই কাফেলা বন্ধু/চিরদিন বেঁচে থাকবে সত্যের পথে মুক্তির পথে/তোমাকে আমাকে ডাকবে। ..... শহীদি খুনের নজরানা এই/হেরার কাফেলা সন্দেহ নেই এই কাফেলারই দৃপ্ত আঘাতে/মৃত জনপদ জাগবে।”

বাংলার শহরে বন্দরে হাটে মাঠে ঘাটে গ্রামে-গঞ্জে- সর্বত্রই এই কাফেলার পদভার শোনা যায়। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরেছিলেন- “এই শিবিরই আগামী দিনের উজ্জ্বল সূর্যের বারতা শিবির শিবির বিশ শতকের বিপ্লবী এক গান বিদ্রোহ সংগ্রাম, বিদ্রোহ সংগ্রাম।”

ঢাকা শহরে এসে বৃহত্তর কলেবরে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার সময়ও মল্লিক একটি বারের জন্য তাঁর গ্রামের রাস্তায় ধুলো মেখে দাওয়াতি কাজের স্মৃতি ভুলেননি। বরং গান বেঁধেছেন এভাবে- “আমাকে দাও সে ঈমান/আল্লাহ মেহেরবান যে ঈমান ফাঁসির মঞ্চে/অসংকোচে/গায় জীবনের গান” .... সেদিন যেমন পেরিয়ে গেছি/সকল বাধাগুলো সকাল সাঁঝে থাকতো লেগে/পায়ে পথের ধুলো আমাকে দাও সে আবেগ/দাও সে ঈমান প্রভু হে রহিম রহমান।”

মতিউর রহমান মল্লিক অনায়াসে গেয়েছেন ঈমান জাগানিয়া গান। “ঈমানের দাবি যদি কোরবানি হয় সে দাবি পূরণে আমি তৈরি থাকি যেনো ওগো দয়াময় আমার/প্রভু দয়াময়। .... ঈমানের উপমা যে অগ্নিশিখা কাজ হলো শুধু তার জ্বলতে থাকা তেমনি করে ওগো নিঃশেষে এই আমি জ¦লে জ¦লে জীবনের দাম যেনো খুঁজে পাই ওগো দয়াময়॥”

কেবল আবেগের বশে জীবন দেয়া নয়, মল্লিক চেয়েছিলেন এদেশের জনতা বুঝে শুনে শ্বাপদ অরণ্যে পা ফেলবেন, তিলে তিলে দ্বীনের পথে লড়াই করবেন। তাই তিনি নিখুঁতভাবে সুস্পষ্ট উচ্চারণে বলেছেন- “হঠাৎ করে জীবন দেয়া খুবই সহজ তুমি জানো কি? কিন্তু তিলে তিলে অসহজ্বালা সয়ে খোদার পথে জীবন দেয়া, নয়তো সহজ তুমি মানো কি?”

আমরা কেবল কবি, শিল্পী, লেখক মল্লিককে জানি কিন্তু আমরা ক’জনে জানি সেই মল্লিককে যিনি দারসুল কোরআনের আসরে মানুষের ঈমান জাগিয়ে দিতেন, চোখের পানিতে সবার গণ্ড ভিজিয়ে দিতেন। তার কথা ও কাজের মিল ছিল অন্য রকম, যেন এ যুগের জীবন্ত সাহাবী তিনি। তিনি ছিলেন সিরাতুল মুস্তাকিমের এক পাগল অনুসারী। তাই তো তিনি উচ্চারণ করতে পারতেন এমন গান- “কথায় কাজে মিল দাও আমার/রাব্বুল আলামীন আল জিহাদ ফি সাবিলিল্লায়/রাখো বিরামহীন। .... পথ পাবার পর আবার যারা/ভ্রান্ত হলো হায় তাদের মত হে দয়াময়/করোনা আমায় চাইনা জীবন বিড়ম্বিত/সান্ত¡না বিলীন।”

দ্বীনের উপর টিকতে গেলে সবচেয়ে বেশি দরকার ধৈর্য কিংবা সবর। রাব্বুল আলামীন তাই সবরকে এতো গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন- “তোমরা সালাত ও সবরের মাধ্যমে সাহায্য কামনা কর।” আল্লাহ আরো বলেছেন- “নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও আমলে সালেহ করেছে। আর যারা পরস্পরকে তাগিদ দেয় সত্যের উপর থাকা ও সবর এখতিয়ার করার জন্য।” মল্লিকের গানে সেই আকুতি আর দোয়া ফুটে উঠেছে বারবার। “ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দাওগো মেহেরবান আমায় দাওগো মেহেরবান বুকের ভেতর ব্যথার নদী বইছে অবিরাম বইছে অবিরাম।”

কি চমৎকারভাবে তিনি মহান রবের কাছে নিজেকে হেদায়াতের উপর টিকিয়ে রাখার আকুতি জানিয়েছেন। এ যেন আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া দোয়ারই পুনঃউচ্চারণ: “হে আমাদের রব, হেদায়াত দেয়ার পর আর আপনি আমাদেরকে গোমরাহিতে নিমজ্জিত করবেন না। এবং আমাদেরকে মজবুতির সাথে আপনার রহমতের রজ্জু শক্তভাবে ধারণ করার শক্তি দিন।” “যখন পথের দিশা দিয়েছো খোদা তখন বিপথে তুমি নিওনা নিওনা নিওনা নিওনা তখন বিপথে তুমি নিও না। .... ঈমানের পথ কাঁটায় ভরা/ফুল বিছানো নয় জেনেছি যখন ধৈর্য তখন/দাওগো দয়াময় এই তো আমার পরম চাওয়া/বাতিলের পথে তবু নিও না।”

হেদায়াতের উপর টিকে থাকার জন্য চাই বিশুদ্ধ নিয়ত ও খুলুসিয়াত। এ বিষয়টিকে গানের উপজীব্য করতে তিনি কার্পণ্য করেননি। তাই তাঁর কথায় উঠে এসেছে- “আমাদের নিয়তে দাও খুলুসিয়াত প্রভু হে দাও আন্তরিকতা সৎ- সরলতা তুলেছি হাত প্রভু হে।”

এরপরও যারা হতাশ হয়, পথ হারায়, ভুল করে চলে যায় বহুদূর তাদের জন্য মল্লিক লিখে গেছেন অনবদ্য আহ্বান। “কি হবে হতাশ হয়ে হারিয়ে গিয়ে কি হবে জীবন থেকে চুপিসারে পালিয়ে গিয়ে” .... কি হবে আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে কি হবে মন মাঝিকে পথের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে” .... হৃদয়ে আঘাত লেগে রক্ত ঝরে সে আঘাত মাড়িয়ে যেও অকাতরে কি হবে দুঃখগুলো নতুন করে ঝালিয়ে নিয়ে কি হবে স্বপ্নগুলো ইচ্ছে মতো জ্বালিয়ে দিয়ে।”

আশাহত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেই থেমে থাকেননি তিনি বরং আশাহত না হয়ে দুস্তর পারাবার পাড়ি দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার সাহস জুগিয়েছেন তিনি। “আশাহত হয়োনাকো তুমি না হয় হলো মন শুকনো কোন মরুভূমি।” .... আরো কিছু পথ চলো মরীচিকা মাড়িয়ে দেখবে সাগর আছে দুটি বাহু বাড়িয়ে বিশাল ঢেউয়ের গান হাওয়ার গতি ভেঙে হাসছে কেমন করে জানবে তুমি।” সাহস আর স্বপ্নের সম্মিলনই কেবল পারে মানুষকে বিজয়ের মঞ্জিলে এগিয়ে নিতে। তাঁর ভাষায়- “সাহসের সাথে কিছু স্বপ্ন জড়াও তারপর পথ চলো নির্ভয়, আঁধারের ভাঁজ কেটে আসবে বিজয় সূর্যের লগ্ন সে নিশ্চয়।”

যে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মল্লিক এতো উদাত্ত আহ্বান জানালেন, যে কাফেলার বিজয় তার একমাত্র তামান্না। যার জন্য সেই কৈশোরে ঘর ছেড়েছেন, মায়ের স্নেহের আঁচল ছেড়েছেন, সেই কাজটি কেবল গান-গজল আর র‌্যালির কাজ নয়। বরং এ জন্য প্রয়োজন সংগঠনের, যার সাথে থাকবে ঈমানের ঈগলের চোখওয়ালা চৌকস নেতৃত্ব, থাকবে টগবগে তারুণ্যের ঢেউ। তাই তিনি সব সময় সংগঠনকেই ভালোবাসতেন। এ ভালোবাসা বুকে ধারণ করে, এ ভালোবাসা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েই তিনি সার্থক করেছেন তাঁর জীবনকে। “সংগঠনকে ভালোবাসি আমি সংগঠনকে ভালোবাসি এই জীবনকে গড়বো বলে বারে বারে তার কাছে আসি। .... সংগঠনকে ভাঙতে যাদের মন কাঁদে না। তার ইতিহাস ভুলতে যাদের যায় আসে না তাদের মতো আমি যেন না হই কখনো সর্বনাশী।”

১৯৮২ সালে বাংলাদেশের ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে একটি বিপর্যয় ঘটে। মতানৈক্য থেকে সংগঠনের মাঝে ভাঙন দেখা দেয়। মল্লিক ভাই এতটাই ক্ষুব্ধ, আশাহত ও ব্যথিত হন যে তাকে বহুদিন এ বিষয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখেছি। এ সময়কে ধারণ করে তাঁর অনেকগুলো গান রয়েছে। তিনি বিভাজনকারীদেরকে লক্ষ্য করে লিখেছেন- “যা কিছু করতে চাও করতে পারো অনুরোধ শুধু ওগো পর হয়ো না। এ বুক ভাঙতে চাও ভাঙতে পারো অনুরোধ শুধু এই ঘর ভেঙোনা।

অনেক রক্ত দিয়ে গড়া এই মসজিদ মুক্তির প্রিয় ঠিকানায় অনেক কান্নাভেজা এই সুবেহ উম্মিদ স্বপ্নের স্বীয় সীমানায় কেমন করে ওগো আগুন দেবে তুমি পাষাণ পাথর হয়োনা।”

মনে আছে তখনকার দিনের অনুষ্ঠানগুলোতে, জনসমাগমে এসব গানের কি চমৎকার প্রভাব পড়তো। মানুষ চোখের জলে সংগঠনের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতো। মতিউর রহমান মল্লিক চাইতেন তাঁর গানের স্বপ্নগুলো জীবনের পরতে পরতে উদ্ভাসিত হোক, বাঙ্ময় হোক আমলের মাঝে। তাই তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলেন- “আমার গানের ভাষা, জীবনের সাথে যেন মিলেমিশে হয় একাকার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি বলতে না পারে কেউ ব্যথা ভরা কথাগুলো তার। জীবন- প্রভাত- বেলা যে শপথ করেছিনু আমি সে শপথ মনে রেখে পথ চলি যেন দিবা যামী স্মৃতির ব্যথা বয়ে/ভ্রান্তির পিছু ডাক অকাতরে করি পরিহার। .... যে পথে চলার নেশা ধরেছিলো একদা আমাকে সে পথের মঞ্জিল আমরণ যেন মোরে ডাকে নতুন দিনের সেই/স্বপ্নমগ্ন মন সক্রিয় থাকে অনিবার।”

আন্দোলন, সংগঠন আর জীবনকে মল্লিক একই সরলরেখায় দেখতেন। তাই তিনি কতো অনায়াসে লিখে, গেয়ে মাতিয়ে গেলেন আমাদের। “আন্দোলন সে তো জীবনের অন্য নাম জীবন মানেই সংগ্রাম।”

যদি মন স্বপ্ন দেখা ভুলে যেত, যদি বেদনার বুকে সুখ মুখ লুকাতো, কিছু হতো না তবে কিছু হতো না জীবনের সন্ধান কেউ পেতো না।”

কতটা সুদৃঢ় ছিল মল্লিকের ঈমান। কতটা সুস্থির হয়ে তিনি সংগঠন ও আন্দোলনের কঠিন পথে পা বাড়িয়েছেন। তার গান সে কথাই বলে দিচ্ছে আমাদের। “আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে কেন বেছে নিলে এই পথ? কেন বেছে নিলে এ বিপদ? জবাবে তখন বলি, মৃদু হেসে যাই চলি, বুকে মোর আছে হিম্মত। .... আলোকের সন্ধানে সন্ধানী কোন মন পেয়ে গেলে আলোকের সন্ধান, ফিরে পেতে চায় কি সে আঁধারের দিকে আর? যদি না সে হয় কভু নিষ্প্রাণ আমি সেই সন্ধানী পেয়ে গেছি সন্ধান যদিও রয়েছে খাড়া জুলুমাত।”

যারা সহসাই দমে যায়, দায়িত্ব এড়ায়, কোরআনের সে আহ্বান থেকে মুখ ফিরায়- “কি হলো তোমাদের? কেন তোমরা লড়াই করছো না আল্লাহর পথে, অথচ নির্যাতিত নারী-পুরুষ আর শিশুরা আর্ত চিৎকার করছে- হে আমাদের রব আমাদেরকে এ জালিম অধ্যুষিত জনপদ থেকে বের করে নাও। আর তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য পাঠাও অভিভাবক ও সাহায্যকারী। বিশ্রামরত মানুষদের লক্ষ্য করে তাই মল্লিকের একান্ত আহ্বান- “এখনো মানুষ মরে পথের পরে এখনো আসেনি সুখ ঘরে ঘরে কি করে তাহলে তুমি নেবে বিশ্রাম? কি করে তাহলে ছেড়ে দেবে সংগ্রাম? .... শান্তির সন্ধানী মানুষের মিছিল ঐ শান্তির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে খোদাহীনতার চোখ ঝলসানো রূপ দেখে সেই দিকে চলে অগোচরে কেউ বুঝি নেই আজ ফেরাবার? কেউ বুঝি নেই আজ পিছু ডাকবার?”

১৯৯২ সালের কথা মনে পড়ছে। সাংস্কৃতিক দায়িত্বশীলদের এক শিক্ষাশিবির চলছিল ঢাকায়। মল্লিক ভাইয়ের আলোচনার পর সবাই বায়না ধরলো উনার কণ্ঠে গান শুনবার জন্য। উনি বললেন, আজ না, কালকে শুনাবো। পরদিন যথারীতি তিনি এলেন। দেখলেন কারা কারা এখন সর্বোচ্চ শপথের কর্মী হতে বাকি। তাদের লক্ষ্য করে তিনি গাইলেন রাত জেগে লেখা ও সুর করা একটি অসাধারণ গান- “গান শোনাতে পারি যদি তুমি কথা দিতে পারো, দ্বীন কায়েমের পথে অগ্রসর অগ্রসর হবে তুমি আরো। .... সারাটি জীবন আমি, গান শুনিয়ে গেলাম। বিনিময়ে তার দ্বীনের কাজে বলো ক’জনকে পেলাম? সব ব্যথা তবু আমি ভুলে যেতে পারি যদি তুমি কথা দিতে পারো দ্বীন কায়েমের পথে অগ্রসর অগ্রসর হবে তুমি আরো।”

সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনগ্রসরমানতা নিয়ে মল্লিক ভাইয়ের অনেক অভিমান ছিলো। সব অভিমান লুকিয়ে রেখে তিনি ঠিকই প্রত্যেককে বুকে টেনে নিতেন। তাঁর সেই পরশ-পাথর ছোঁয়ায় অনেকেই সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে গেছেন। “টিক টিক টিক টিক যে ঘড়িটা বাজে ঠিক ঠিক বাজে কেউ কি জানে সেই ঘড়িটা লাগবে কয়দিন কাজে।”

গানে গানে জীবনের কঠিন বাস্তবতা, দর্শন, ক্ষণস্থায়িত্ব ও ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে গেলেন তিনি। এই আমাদের মল্লিক। এই আমাদের গানের পাখি, ছড়ার রাজপুত্র আর কবিতার মহান রূপকার মতিউর রহমান মল্লিক। এই আমাদের প্রিয় তাফসিরকারক, হাদীস ব্যাখ্যাতা একান্ত সংগঠক মল্লিক ভাই। আজকের এ দিনে তার জন্য দোয়া করি রাব্বুল আলামিন যেন তাঁর প্রিয় বান্দাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকামে স্থান করে দেন। আর আমরা যেন তাঁর প্রিয় ঠিকানা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারি ॥ লেখক : শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির