post

মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কৌশল

মতিউর রহমান আকন্দ

৩১ জুলাই ২০১৫
কার্যত একটি অনির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে পেশিশক্তিবলে ক্ষমতা দখল করে কখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। শক্তির জোরে জনগণের কণ্ঠ রোধ করে মূলত দেশ চালানো হচ্ছে। এক কথায় এখানে চলছে নৈরাজ্য ও দানবীয়তা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন থাকে। সরকারেরও একটি নৈতিক ভিত্তি থাকে। আন্তর্জাতিক মহল ও উন্নয়নে অংশীদার দেশসমূহ নিশ্চিন্তে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে। দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। ব্যবসা বাণিজ্য, উৎপাদনে গতি সঞ্চার হয়। কর্মসংস্থান বাড়ে। বেকারত্ব লাঘব হয়। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালায়। ফলে দেশে এবং রাজনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করে। এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন দেশের জনগণ যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে, বহির্বিশ্বেও এ নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া আছে। কেউ এ সরকারকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার বলে মনে করে না। ফলে সরকারের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের অনেক মন্ত্রী বলেছিলেন, এটি নিয়মরক্ষা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে তারা তাদের এ বক্তব্য পরিবর্তন করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বপ্নে বিভোর। নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তারা বাধাগ্রস্ত করছে। আওয়ামী সরকার সংবিধান ও নিয়মতান্ত্রিকতার কবর রচনা করে দলীয় শক্তি দিয়ে আজ্ঞাবহ প্রশাসনের মাধ্যমে গোটা দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। গণগ্রেফতার, গণহত্যা, গণনির্যাতন এবং ঘর থেকে ধরে এনে প্রতিপক্ষকে হত্যা করে ক্রসফায়ারের নামে চালিয়ে দিয়ে সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এক বিনাশী তৎপরতায় লিপ্ত আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জুলুম, নির্যাতনে জনগণ আজ অতিষ্ঠ। অনেকেই আওয়ামী দুঃশাসন, জুলুম, নিপীড়ন ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে অর্থবহ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে না ওঠায় হতাশা প্রকাশ করছেন। অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায় আওয়ামী লীগ গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। কোন কোন মহল এ কথাও বলছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এ দেশের একটি সংগ্রামী ইতিহাস আছে। জনগণের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের মোকাবেলায় অতীতে কোন স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারেনি। শক্তিশালী ইংরেজ শাসক প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ দেশের শাসনক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেকেই ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তাদেরকে জনসমর্থন আদায়ের জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন, জনসমর্থন ব্যতীত ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।  অনেক শাসক জনসমর্থন হারিয়ে ক্ষমতার বাইরে ছিটকে পড়েছেন। এ দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনেই বিদ্যমান। নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলকারী সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর চেষ্টা করেও জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নিরাপদ প্রস্থানের আয়োজন করে অত্যন্ত চাতুর্যপনার সাথে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে জনরোষ থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করে। আওয়ামী সরকার মূলত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের এক্সটেনশন। যেসব এজেন্ডা নিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী সরকার সে এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে। এসব এজেন্ডার সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোন সম্পর্ক নেই। ঐসব এজেন্ডার সাথে একটি গোষ্ঠীর ও চক্রের স্বার্থ বিদ্যমান। ফলে সেই গোষ্ঠী ও চক্রের মদদে আওয়ামী লীগ ধরাকে সরা জ্ঞান করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছে। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, জনসমর্থন হারিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বন্দুক ও ক্ষমতার প্রয়োগ ঐক্যবদ্ধ জনতার সামনে হার মানতে বাধ্য। আজ বাংলাদেশে সত্যিকারার্থে আওয়ামী লীগ একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীনতম দলের বিপর্যয় ঘটতে হয়তো সময় লাগছে। বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ মহাবিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী সংগঠনটি আজ পুলিশ-নির্ভর এক সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে, নগরে একই চিত্র বিদ্যমান। সরকার সংবিধানকে পদদলিত করছে। সংবিধানে বর্ণিত নাগরিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। আইন-আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রশাসনে স্বচ্ছ ভূমিকার কোনো বালাই নেই। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজ সরাসরি চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। তাদের নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এমনকি পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নারী পুলিশ ধর্ষিতা হওয়ারও ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এসব আওয়ামী লীগের মহা বিপর্যয়ের পূর্ব লক্ষণ। এক দিকে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র, অপর দিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সীমাহীন ব্যর্থতা আওয়ামী লীগকে চরম দুর্দশায় নিপতিত করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ ভয়াবহ ইমেজ সঙ্কটের সম্মুখীন। আওয়ামী লীগের করুণ অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় প্রাচীন সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার যে মন্তব্য করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের পর এই সাংবাদিক লিখেছিলেন, ‘শেখ হাসিনার পড়ন্ত ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য অসময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন।’ ভারতীয় সাংবাদিকের এ মন্তব্যটি গভীরভাবে মূল্যায়নের দাবি রাখে। দেশের জনগণের হৃদয়-মন থেকে কোনো নেতা বা নেত্রী হারিয়ে গেলে কোন শক্তিই তাকে আর ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারে না। শেখ হাসিনা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাওয়া এক নেত্রী। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতা হারাতে নারাজ। কিন্তু ৫ জানুয়ারির জনগণের অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি নির্বাচনের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচন্ড চাপের সম্মুখীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও আন্তর্জাতিক চাপ কোনো অবস্থাতেই অগ্রাহ্য করতে পারছে না। অনেকটা অপারগ হয়েই আওয়ামী লীগ কৌশলে আগাম নির্বাচনের কথা বলছে। আবার সরকারি দলের তরফ থেকে ২০১৯ সালের আগে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা বারবারই উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের কেউ কেউ পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন, আবার সরকারের একটি মহল মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তাদের এ বক্তব্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের আলোচনাকে মিডিয়ার সামনে মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছে। আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টি যেমন অগ্রাহ্য করতে পারছে না, তেমনি ক্ষমতা স্থায়ী করার লক্ষ্যে কী করতে হবে সেটা নিয়েও নানা অঙ্ক কষতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচনের পর উন্নয়ন সংস্থা ও প্রভাবশালী দেশগুলো এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয়ায় এবং এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকায় আওয়ামী লীগ চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। প্রভাবশালী দেশগুলো বারবার বলছে, ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচনই হয়নি। তারা আরো বলেছে সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই কেবল রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট গত ২ জুলাই বলেছেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলায়নি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হওয়া প্রয়োজন। দলগুলো চাইলে এই আলোচনার উদ্যোগ নিতে রাজি আছে যুক্তরাষ্ট্র।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে এবং বাংলাদেশের মানুষ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করতে পারবে। বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, তৎপরবর্তী উপজেলা নির্বাচন এবং এ বছরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, কেন্দ্রদখল ও নির্বাচনব্যবস্থার নিয়মনীতিকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরকারের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হত্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। ফলে গণতান্ত্রিক বিশ্ব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর অব্যাহত গুরুত্বারোপ করতে থাকে। এ রকম অবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া যায় কি না তা নিয়ে সরকারের ভেতরে স্বল্প পরিসরে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সাথে নানান কৌশল নিয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাদের কৌশলের মূল বিষয় হচ্ছে নির্বাচন হলে আবারো ক্ষমতায় আসা। এ লক্ষ্যে তারা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা হলো : এক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের একটি পরিকল্পনা হচ্ছে ২০ দলীয় জোট ভাঙা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, এমপিগণ প্রকাশ্য বক্তব্যে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কোন কোন ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করছে। বিএনপি এবং জামায়াত আলাদা হলেই ভোটের রাজনীতিতে তাদের জন্য বড় ধরনের সুবিধা রয়েছে। মূলত নির্বাচনী সুবিধা অর্জনের জন্যই আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করার যে কৌশল অবলম্বন করেছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ছলেবলে কৌশলে, নানা ফন্দি-ফিকিরে তারা তাদের এই কৌশল বাস্তবায়ন করতে চায়। HA1 দুই : আন্দোলনের ময়দানে জামায়াত ও ছাত্রশিবির এক পরীক্ষিত শক্তি। এ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েও আওয়ামী লীগ শতভাগ সফলতা পায়নি। উল্টো জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের প্রতি জনগণের সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সমর্থন অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাই সরকারের জন্য এক দুশ্চিন্তার কারণ। জামায়াতের দু’জন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসি দিয়ে যে রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশের সৃষ্টি করেছে তা থেকে পিছু হটে কোনো নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজেকে মোটেই নিরাপদ মনে করতে পারছে না। তাই তারা বিচারের নামে নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখাটাকেই তাদের জন্য অধিকতর নিরাপদ মনে করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না, নিরীহ, নিরপরাধ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থানকে ক্রমেই দুর্বল ও গণবিচ্ছিন্ন করে তুলছে এবং নিজেরা নিজেদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পথ রচনা করছে। তিন : ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে চায় সরকার। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে জেলে পাঠিয়ে বিএনপিকে ভাঙারও স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নিজস্ব রাজনৈতিক সুবিধা ও ক্ষমতায় আসার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে পা বাড়াতে চায়। HA2 অনেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়া না হওয়ার সাথে ভারতের একটি অবস্থান খুঁজে পেতে চান। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী। অতীতে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন বিতর্কিত নির্বাচনে অনেকটা প্রকাশ্যই ভূমিকা পালন করেছে ভারত। নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন শীর্ষ কূটনীতিক সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তিনি নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মিডিয়ার সামনে তা ফাঁস করে দেন। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর ধারণা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ সরকারকে একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। তা এখনো অস্পষ্ট। তবে ভারত সরকার বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সাথে কাজ করে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে ভারত একটি নির্বাচনমুখী গণতন্ত্র অনুশীলনের দেশ। মোদি সরকার সেই দেশের জনগণের ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত। প্রতিবেশী দেশেও জনগণের ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত সরকার থাকলে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উভয় দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে তা উপযোগী বলে ভারতের কাছে বিবেচ্য হতে পারে। আর সরকার জনগণের প্রকৃত ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত কিনা তা প্রমাণিত হয় একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে তেমন একটি নির্বাচন হোক তা ভারত নিজেদের স্বার্থে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ভারত মনে করে, তেমন একটি সরকার ছাড়া যত চুক্তিই করা হোক তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ বিরোধীদের ওপর জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে ও নেতাকর্মীদের মামলার বেড়াজালে আটকিয়ে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কোণঠাসা করে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করতে চায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচন যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ সে পথেই হাঁটতে শুরু করেছে। লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির