post

মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ । ফিরোজ মাহবুব কামাল

১২ নভেম্বর ২০১৯

মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ । ফিরোজ মাহবুব কামালপ্রাবল্য বিবেকহীন মানসিকতার

বাংলাদেশের মূল সঙ্কটটি স্রেফ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়। ব্যর্থতা নিছক গণতন্ত্রেরও নয়। বরং মূল সঙ্কটটি মানবিক। সমস্যা এখানে বিবেকহীনতার। কঠিন রোগ যেমন নানাবিধ সিম্পটম নিয়ে উপস্থিতি জানিয়ে দেয়, বাঙালির বিবেকহীনতাও তেমনি বহুবিধ ব্যর্থতা নিয়ে বিশ্বময় প্রচার পাচ্ছে। দেশটির হাজার হাজার বিবেকহীন সন্ত্রাসী যেমন আনাচে কানাচে মানুষ খুন, টেন্ডার দখল, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, রাস্তার গাছকাটা, নদী দখল, বন দখল, জমি দখলের রাজত্ব কায়েম করেছে, তেমনি সেপাইরা (ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে) হত্যা করেছে ৫৭ জন সামরিক অফিসারকে। এরূপ বিবেকহীনতায় সাধারণ নাগরিকগণও কম নয়। অপরাধ শনাক্ত না করে নিছক সন্দেহের বশে নিরীহ মানুষদের পিটিয়ে হত্যা করছে, যেমন ঢাকার গাবতলীর কাছে আমিনবাজারে কিছুদিন আগে ৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হলো। এরূপ বিবেকহীনতা কোন সভ্যদেশে হয় না, কিন্তু বাংলাদেশে বারবার হয়। দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন অধিকৃত হয়েছে একই রূপ বিবেকহীন ব্যক্তিদের হাতে। ফলে সমগ্র দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সরকারি তহবিল তছরুপ, ঘুষ, ধোঁকাবাজি ও ফাঁকিবাজির রাজত্ব। আবর্জনা নির্মূলে আপস চলে না, আবর্জনা আবর্জনাই। তেমনি আপসহীন হতে হয় অপরাধীদের নির্মূলেও। অপরাধীদের নির্মূলে সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি হলো দেশের বিচার বিভাগ ও পুলিশের। অথচ সে কাজে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে না। বরং সরকারের কাজ হয়েছে, এ দু’টি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে লাঠিয়াল রূপে ব্যবহার করা। পুলিশ এবং বিচার বিভাগ নিয়ে সরকার নেমেছে নিজেদের রাজনৈতিক শত্রু নির্মূলে। ফলে দেশ ও জনগণের প্রকৃত শত্রুদের দিকে নজর দেয়ার সময় তাদের নাই। গদির আয়ু দীর্ঘ করা ছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রায়োরিটি নাই। সরকারের সমালোচনা চিহ্নিত হচ্ছে গুরুতর অপরাধ রূপে, ফলে প্রকৃত অপরাধীরা পেয়েছে মুক্ত ময়দান। সরকারি দল জানে, বিচার ও পুলিশ বিভাগে ভালো লোক বসালে দলীয় স্বার্থে তাদেরকে ব্যবহার করা যাবে না। তাতে ঘনিয়ে আসবে তাদের নিজেদের বিপদ। ফলে এ দু’টি বিভাগে পরিকল্পিতভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় ক্যাডারদের। অপরদিকে দেশের প্রেসিডেন্টের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে আদালতের সাজাপ্রাপ্ত নিজ দলের খুনিদের বাঁচানো। আর আইনমন্ত্রী তুলে নিচ্ছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হাজার হাজার মামলা। ফলে দেশ থেকে অপরাধ নির্মূল না হয়ে বরং দিন দিন সেটি প্রকটতর হচ্ছে। ফলে দেশ দ্রুত বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। আর জনগণের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ? সঙ্কট এক্ষেত্রে এতটাই গুরুতর যে বিপুল সংখ্যক জনগণ শুধু চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের ভোটই দেয় না, বরং আগ্রহভরে তাদের পক্ষে মিছিল করে, লাঠি ধরে এবং তাদের বিজয় নিয়ে উৎসবও করে। বাংলাদেশে যে কোন উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো এই বিবেকহীনতা। যে কোন উন্নয়নকাজে পুঁজি চাই। গাছ যেমন মাটি ছাড়া জন্মায় না, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নও পুঁজি ছাড়া গড়ে ওঠে না। তবে সে পুঁজি স্রেফ অর্থসম্পদ নয়। অর্থসম্পদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো মানবসম্পদ। অর্থনীতির ভাষায় একেই বলা হয় সোস্যাল ক্যাপিটাল বা সামাজিক পুঁজি। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশই প্রাকৃতিক সম্পদে অতি সমৃদ্ধ। কিন্তু সেসব দেশে শিল্প-বিপ্লব আসেনি। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবও আসেনি। বিপুল সম্পদ সত্ত্বেও এশিয়া-আফ্রিকার বহুদেশ এখনও দান-খয়রাত নির্ভর। অথচ বিপ্লব এসেছে প্রাকৃতিক সম্পদে দরিদ্র দেশে। ইংল্যান্ড, জার্মান, জাপান ও কোরিয়া তার উত্তম উদাহরণ। এসব দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের কারণ উন্নত সোস্যাল ক্যাপিটাল তথা মানবিক উন্নয়ন। মানব-উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন আসে না- এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। অথচ বাংলাদেশে সে কাজটিই হয়নি।

সবচেয়ে বড় অপরাধ

প্রতি সমাজেই কিছু রোগাগ্রস্ত মানুষ থাকে। তবে বিপর্যয় ঘটে যখন সে রোগ মহামারী রূপে সর্বস্তরে দেখা দেয়। বাংলাদেশে সে ভয়াবহ মহামারীটা ঘটেছে বিবেকের রাজ্যে। বরং দেশ আজ অধিকৃত হয়েছে অসুস্থ বিবেকের মানুষদের হাতে। শেখ মুজিব ও তাঁর দলের সবচেয়ে বড় অপরাধটি গণতন্ত্র হত্যা ও বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা নয়। বরং সেটি হলো, অমানবিক বা বিবেকহীনতার রাজনীতি। মানুষের বিবেক বা মানবতা অনাহারে মারা যায় না। রোগজীবাণু বা পোকামাকড়ের কামড়েও মারা যায় না। বরং মারা যায় মগজে মিথ্যা বাসা বাঁধাতে। মানবতার সবচেয়ে বড় দুশমনটি হিংস্রপশু বা রোগজীবাণু নয়, বরং সেটি মিথ্যাচার। মিথ্যাচারের কারণে আল্লাহর আজাব নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “সিরু ফিল আরদে, ফানজুর কাইফা কানা আকিবাতুল মোকাজ্জাবিন”। অর্থ: অতঃপর জমিনে ভ্রমণ করো এবং দেখ মিথ্যাবাদীদের কী পরিণাম হয়েছিল। মহান আল্লাহর আজাব নামিয়ে আনার জন্য তাই মূর্তিপূজারি বা নাস্তিক হওয়ার প্রয়োজন নেই। সে জন্য মিথ্যাচর্চাই যথেষ্ট। ঈমানদারদের বড় যুদ্ধটি তাই মিথ্যার বিরুদ্ধে। লড়াই এখানে কোরআনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করায়। অথচ শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল ভিত্তিই ছিল মিথ্যার ওপর, এবং সে মিথ্যাকে তিনি বিপুলভাবে বিজয়ীও করেছেন। কিন্তু কি ছিল শেখ মুজিবের সে মিথ্যা? কোন একক মিথ্যা নয়, শেখ মুজিব বহু মিথ্যার জনক। তার মুখে উচ্চারিত মিথ্যাটি স্রেফ তিরিশ লাখের মৃত্যু ও দুই লাখের ধর্ষণ নয়। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু, পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের উপনিবেশ, পাকিস্তানিরা বাঙালির শত্রু, বাকশালই গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের মুক্তি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজতন্ত্র শুধু এগুলোও নয়। বরং মুজিবের বড় মিথ্যাটি উচ্চারিত হয়েছিল মহান আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে। ইসলামের প্রতিষ্ঠায় আপসহীন অঙ্গীকার ও সে লক্ষ্যে কোরবানিই হলো মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। সে গুণের বলেই মানুষ মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার জান্নাত পায়। অথচ তেমন অঙ্গীকারকে শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িকতা বলেছেন। সে মিথ্যা নিয়ে তিনি মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধেও নেমেছিলেন। সে যুদ্ধের অংশ হিসাবেই শরিয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি বা সে লক্ষ্যে দলগড়াকে তিনিই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে আইন করে নিষিদ্ধ করেছেন। এমন নিষেধাজ্ঞা পাকিস্তান আমলে ছিল না, এমনকি ব্রিটিশ আমলেও ছিল না। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত ছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের কাছে সেটি সহ্য হয়নি। সে সব স্থান থেকে সে আয়াতগুলো তিনি বিলুপ্ত করেছিলেন। বিষ দেহ হত্যা করে, আর মিথ্যা হত্যা করে বিবেককে। আর মুজিব দেশে মিথ্যার প্রবল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে হত্যা করেছেন বাঙালির বিবেককে। আর বিবেকের মৃত্যু হলে সে বিবেক ফিরাউনকে খোদা বলে মেনে নেয়, মূর্তিকে ভগবান বলে এবং মিথ্যুক বলে হযরত মূসা (আ)-এর ন্যায় মহান নবীকে। তখন সে গরু-ছাগল, সাপ-শকুন, পাহাড়-পর্বত, নদনদী এমনকি লিঙ্গকেও পূজা দেয়। মুজিবের কাছে অতি প্রয়োজনীয় ছিল মিথ্যার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। সেটি তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে। তাঁর অনুসারীরা তাই শুধু তিরিশ লাখ নিহত ও দুই লাখ ধর্ষণের বিষয়টিই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং নিজেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ন্যায় আরেক মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। সে সাথে চরিত্র-হনন করেছে দেশের ইসলামপন্থীদের। হেরোইন ব্যবসায়ীরা চায় মানুষ অধিক সংখ্যায় নেশাগ্রস্ত হোক। কারণ তাতে হেরোইনের কাটতে বাড়ে। তেমনি স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তরাও চায় মানুষ বিবেকহীন হোক। তাতে তাদের দুঃশাসনও শ্রেষ্ঠ শাসন রূপে নন্দিত হয়। স্বৈরাচারীদের রাজনীতিতে মিথ্যাচর্চা এবং মিথ্যাচর্চার পথ ধরে জনগণের বিবেক হত্যা তো এ জন্যই এতটা প্রায়োরিটি পায়। মুজিবের স্বৈরাচারী দুঃশাসন আওয়ামী বাকশালীদের কাছে শ্রেষ্ঠ শাসন তো তেমন বিবেকহীনতার কারণেই। কোন দেশ কখনই খরা, প্লাবন, রোগ-ভোগ বা যুদ্ধ-বিগ্রহে তলাহীন হয় না। বাংলাদেশে খরা, প্লাবন ও রোগের মহামারী বহুবার এসেছে। কিন্তু তাতে দেশ কোনকালেই ভিক্ষার ঝুড়ি হয়নি, বিশ্বজোড়া অপমানও জুটেনি- যেমনটি মুজিব আমলে হয়েছে। বহুদেশ বছরের পর বছর যুদ্ধ করেও তলাহীন হয় না। সেটি হলে প্রকাণ্ড দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হতো এবং বহু লক্ষ মানুষ সে দুর্ভিক্ষে মারা যেত। কিন্তু সেটি হয়নি। বরং দেশ তলাহীন হয় বিবেকহীনতায়। তখন পুকুরচুরি হয় অফিসে অফিসে এবং সেটি হয় সমগ্র দেশজুড়ে। নর্দমার কীটগুলো যদি নর্দমার মধ্যেই কিলবিল করে তবে তাতে বিপদ দেখা দেয় না। কিন্তু ড্রেন উপচিয়ে সেগুলো যখন গৃহে প্রবেশ করে তখন মহামারী শুরু হয়। তেমনি বিবেকহীন মানুষগুলো ডাকাতপাড়া, পতিতাপল্লী, বন-জঙ্গল বা কারাগারে সীমাবদ্ধ থাকলে তাতে দেশে বিপর্যয় আসে না। কিন্তু দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও আইন-আদালত যখন তাদের হাতে অধিকৃত হয়, তখন দেশ দ্রুত বিশ্বরেকর্ড গড়ে দুর্বৃত্তিতে। তখন খোদ রাষ্ট্র পরিণত হয় অপরাধের অবাধ ক্ষেত্রে। হিটলারের একার অপরাধ জার্মানির সকল অপরাধীর সম্মিলিত অপরাধের চেয়েও অধিক। কারণ, হিটলার দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, আদালত ও সেনাবাহিনীকে ভয়ানক অপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডকে প্রচণ্ডতর করতে হাজার হাজার খুনির জন্য দরজা খুলে দিয়েছিল। তাদের হাতে ভয়ানক অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল। সমগ্র রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও উপায়-উপকরণ পরিণত হয়েছিল নির্যাতন ও আগ্রাসনের হাতিয়ারে। জাহান্নামের রাস্তা গড়েছিল সমগ্র রাষ্ট্রজুড়ে, এমনকি সেটিকে বর্ধিত করেছিল প্রতিবেশী দেশেও। নমরুদ-ফিরাউন, হালাকু-চেঙ্গিসসহ সকল কাফের শাসকের তো সেটিই মূল অপরাধ। অপর দিকে হযরত মুহাম্মদ সা.-এর একার নেক-আমল কোটি কোটি মানুষের নেক আমলের চেয়েও অধিক। কারণ তিনি জাহান্নামের রাস্তা বন্ধ করে জান্নাতমুখী সিরাতুল মুস্তাকিম গড়েছিলেন রাষ্ট্রের সমগ্র প্রশস্ততা নিয়ে। নির্মূল করেছিলেন দুর্র্বৃত্ত মানুষদের বেড়ে ওঠার ঘাঁটিগুলো। নবীজি সা.-এর নেক আমলের ফলেই অসংখ্য মানুষ যেমন বিগত ১৪ শত বছর অবধি জান্নাতের পথ পেয়েছে, তেমনি অনাগত ভবিষ্যতেও পেতে থাকবে। হযরত মুহাম্মদ সা. তো এ জন্যই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। এত বড় কাজ অন্য কোন নবী বা রাসূলের দ্বারা হয়নি। মুসলমান হওয়ার অর্থ হলো, নবীজির সে আদর্শকে গ্রহণ করা। তার সে মিশনকে নিজের মিশন রূপে গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠতম উম্মত, তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য। তোমরা নির্দেশ দিবে ন্যায়কর্মের এবং ফিরিয়ে রাখবে অন্যায় কর্ম থেকে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১১০) তাই শ্রেষ্ঠতম উম্মত হওয়ার পথটি নিছক নামায-রোযা ও হজ-জাকাতে সীমিত নয়। বরং সেটি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে জিহাদী মিশন নিয়ে বাঁচা। নামায-রোযা, হজ-যাকাত মূলত সেরূপ বাঁচাতে ঈমানী শক্তি জোগায়। তাই নিছক রাজনীতির লক্ষ্যে মুসলমান রাজনীতি করে না। জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ, সেক্যুলারিজম ও অন্য কোনো মতবাদের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও রাজনীতি করে না। বরং মু’মিনের রাজনীতি হলো সমাজকে পবিত্র ও সমৃদ্ধ করার রাজনীতি। এরূপ রাজনীতিকে ইসলামে জিহাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এ রাজনীতিতে প্রাণ গেলে শাহাদত লাভ এবং বিনা বিচারে জান্নাত লাভ ঘটে। এরূপ বিশাল পুরস্কার অন্য কোনো নেক কাজে নেই।

যে ভ্রষ্টতা বাঁচার মিশনে

মানুষ মাত্রই কোন মিশন নিয়ে বাঁচে- হয় সেটি আল্লাহর আনুগত্যের নতুবা বিদ্রোহের। চোর-ডাকাতদের জীবনেও মিশন থাকে-সেটি আল্লাহর অবাধ্যতার তথা পাপের। এ পথ শয়তানের। মহান আল্লাহর নির্দেশিত মিশনটি হলো “আমারু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার” অর্থ: “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ”। মুসলমান সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি স্রেফ এ মিশনাট নিয়ে বাঁচার কারণে। এ মিশন থেকে দূরে সরার অর্থ সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে বিচ্যুত হওয়া এবং ভ্রষ্টতার শয়তানি পথকে বেছে নেয়া। এমন পথভ্রষ্ট ব্যক্তি তখন শয়তানের মিশন নিয়ে অগ্রসর হয়। দেশে এমন পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়লে প্লাবন আসে দুর্বৃত্তির। তাই যে কোন রাষ্ট্র বা সমাজে সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তি হলো সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে অন্যদের দূরে সরানো। সেটি যেমন ব্যক্তির দ্বারা হতে পারে, তেমনি রাষ্ট্রের দ্বারাও হতে পারে। পথভ্রষ্ট করার কাজে রাষ্ট্র জড়িত হলে তখন সে বিদ্রোহের সাথে সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত হয়। তখন রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ লোক-লস্কর সে কাজে নিয়োজিত হয়। রেডিও-টিভি ও পত্র-পত্রিকা তখন শয়তানের কণ্ঠে পরিণত হয়। দেশ তখন দুর্বৃত্তির পথে দ্রুত এগোয়, এমনকি দুর্বৃত্তিতে দ্রুত বিশ্বরেকর্ডও গড়ে। দুর্বৃত্তিতে বাংলাদেশের বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়ার কারণটি এ নয় যে, দুর্বৃত্তরা দেশের মাঠঘাট, গ্রাম-গঞ্জ ও বনজঙ্গল দখলে নিয়েছে। বরং তাদের দখলে গেছে দেশের রাজনীতি, পুলিশ, প্রশাসন, আইন-আদালত, রেডিও-টিভি ও বুদ্ধিবৃত্তি। নামাযের সময় হলে প্রতিটি মুসলমানকে নামায পড়তে হয় এবং রোযার মাস এলে রোযা রাখতে হয়। নইলে সে কাফের হয়। এখানে কোন অস্পষ্টতা বা আপস নেই। তেমনি কোন মুসলমান যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায় তখন তার দায়িত্ব হয় ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ। সেটি না করলে তাকে কি মুসলমান বলা যায়? অথচ শেখ মুজিব ও তাঁর দল করেছে উল্টোটি। গাজী গোলাম মোস্তাফার (মুজিব আমলে ঢাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রসের সভাপতি ছিলেন এবং রিলিফের মাল লুণ্ঠনে তার দুর্নীতি বিশ্বময় প্রচার পেয়েছিল) মত হাজার হাজার দুর্নীতিপরায়ণ অপরাধীর জন্য তিনি রাস্তা অবাধ খুলে দিয়েছেন। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ দূরে থাক, ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়াকেও মুজিব আইন করে নিষিদ্ধ করেছিলেন। দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে তিনি রক্ষিবাহিনী গড়েছিলেন, এবং তাদের হাতে তিনি অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। আর এখন সে মুজিবী নীতির অনুসরণ করছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ও বাকশালীর অনুসারীরা। তবে পার্থক্য হলো, এখন মুজিবের সে রক্ষীবাহিনীটি নেই। সে কাজটি করছে সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারগণ- সেটি যেমন পুলিশ ও র‌্যাবের পোশাকে তেমনি সাদা পোশাকে। ধর্ম পালনে কোন জবরদস্তি নেই। ইচ্ছা করলে কেউ কাফের হতে পারে, মুনাফিকও হতে পারে। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারীদেরও ছিল। কিন্তু অন্যদের ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের মিশন থেকে রুখার কোন অধিকার তার ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেয়ে সে গর্হিত কাজে তিনি বল প্রয়োগ করেছেন। এখানে তিনি যুদ্ধ করেছেন মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে। শরিয়তের বিধানে এটি গুরুতর অপরাধ। মুসলিম রাষ্ট্রে এমন অপরাধ সরকারপ্রধানের দ্বারা হলে তখন দ্রুত নিচে নামে সমগ্র দেশ। মুজিবের সে ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশের অর্জনটি অতি অপমানকর। দেশটির হাজারো বছরের ইতিহাসে এমন ব্যর্থতার নজির নেই। বরং অতীতে শায়েস্তা খানের বাংলাদেশ রেকর্ড গড়েছিল শান্তি ও সমৃদ্ধিতে। অথচ মুজিব দেশটিকে তলাহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছেন। শুধু অর্থনীতিতে নয়, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও। চোর-ডাকাত বাংলাদেশের মাটিতে আজকের ন্যায় শত বছর আগেও ছিল। তাদের হাতে প্রতি বছর বহু শত বাড়ি লুটপাটও হয়েছে। কিন্তু তাতে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ার অপমান জুটেনি। মুজিবের একার অপরাধ এ জন্যই বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল অপরাধীর চেয়েও অধিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকের অপরাধীরা অগ্রসর হয়েছে বস্তুত তাঁর ঐতিহ্য ধরেই। অগ্রসর হচ্ছেন শেখ হাসিনাও। আজকের ব্যর্থতাও মূলত মুজিব আমলের ব্যর্থতারই ধারাবাহিকতা। কথা হলো, এরূপ ব্যর্থতা নিয়ে কোন জাতি কি সভ্যরূপে বাঁচতে পারে? একবার নয়, হাজার বার নির্বাচন হলেও কি এ সমস্যার সমাধান হবে? বিবেকহীনতা ও নীতিহীনতার সমাধান তো নির্বাচন নয়।

বাঙালির ব্যর্থতা ও রবীন্দ্রনাথ

বাঙালির মানুষ রূপে বেড়ে ওঠার ব্যর্থতাটি প্রকটভাবে ধরা পড়েছিল রবীন্দ্রনাথের চোখে। সে ব্যর্থতা নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছিলেন, “হে বিধাতা, সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি।” উপরোক্ত কবিতার চরণে বাঙালির যে পরিচয়টি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল সেটি নিছক প্রাণী রূপে, মানুষ রূপে নয়। বাঙালির ব্যর্থতার জন্য রবীন্দ্রনাথ মহান আল্লাহ রাব্বুল-আলামিনকে দায়ী করেছেন। রবীন্দ্রনাথ অমুসলমান ছিলেন, তাঁর নিজের অপরাধটিও এখানে কম নয়। তাঁর সে অপরাধটি সম্ভবত অজ্ঞতাপ্রসূত। রবীন্দ্রনাথের ন্যায় একজন অমুসলমানের পক্ষে স্রষ্টার মানবসৃষ্টির রহস্য এবং সে সাথে মানবের সামর্থ্য জানা থাকার কথা নয়। সেটি জানতে হলে মহান আল্লাহর নিজের ভাষ্যটি জানা চাই, সে জন্য পবিত্র কোরআনের জ্ঞান চাই। মহান আল্লাহতায়ালা বাঙালিদেরকেও অন্যান্য মানুষের ন্যায় শ্রেষ্ঠ-সৃষ্টি রূপে সৃষ্টি করেছিলেন। মহৎ গুণে মহামানব বা ফেরেশতা-তুল্য হওয়ার সামর্থ্য যেমন তার আছে, তেমনি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হওয়ার স্বাধীনতাও আছে। বাঙালি বেছে নিয়েছে নিচে নামার পথটি। ফলে এ ব্যর্থতার জন্য পরম করুণাময় মহান আল্লাহকে দায়ী করাটি শুধু অজ্ঞতাই নয়, চরম অকৃতজ্ঞতাও। বাঙালির মানুষ হওয়ার ব্যর্থতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ এ রায়টি দিয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় শত বছরের বেশি কাল আগে। যাদের ব্যর্থতা নিয়ে আফসোস করেছিলেন তারা ছিলেন বাঙালি হিন্দু। সেকালে বাঙালি বলতে শুধু বাঙালি হিন্দুদেরই বুঝানো হতো। মুসলমানগণ গণ্য হতো স্রেফ মুসলমান রূপে। হিন্দু মানসের সে চিত্রটি ফুটে উঠেছে এমনকি শরৎচন্দ্রের লেখাতেও। শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন, “আজ আমাদের পাড়ায় বাঙালি ও মুসলমানদের মাঝে খেলা।” শ্রী নীরদ চন্দ্র চৌধুরী বাঙালি হিন্দুদেরকে চিত্রিত করেছেন আত্মঘাতী রূপে। কিন্তু যে বাঙালি হিন্দুদের ব্যর্থতা নিয়ে শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রী নীরদ চন্দ্র চৌধুরী আফসোস করেছেন তাদের সফলতা সেদিন কম ছিল না। তারাই বাংলায় জাগরণ এনেছিলেন। বাংলার হিন্দুদের সে জাগরণ উপমহাদেশের ইতিহাসে “বাঙালি রেনেসাঁ” নামে পরিচিত। সমগ্র ভারতের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ব্যানার্জি, চ্যাটার্জি, বোস, বসু, ঘোষদের ন্যায় বাঙালি হিন্দুর লেখা বই পড়ানো হতো। উপমহাদেশের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ ছিল তাদের তুলনায় শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে অনেক পেছনে। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ তাদের ভারত শাসনের কাজে প্রশাসনের যে লৌহ-কাঠামো গড়ে তুলেছিল তা এই বাঙালি বাবুদের নিয়েই। প্রশ্ন হলো, রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে কী বলতেন? সেদিন আর যাই হোক বাঙালি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্ব রেকর্ড গড়েনি। গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার কায়েম করেনি। কেড়ে নেয়া হয়নি বিরোধীদের কথা বলা বা স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার স্বাধীনতা। পক্ষি-শিকারের ন্যায় বহু হাজার বিরোধীদলীয় কর্মীদের রক্ষীবাহিনীর দ্বারা হত্যা করা হয়নি। হরতালের নামে যাত্রীভর্তি বাসে আগুন দেয়নি বা লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় সেদিন মানুষ খুন হয়নি। নিজ দেশের ৫৭ জন সামরিক অফিসারকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহকে বিকৃত করে পায়খানার ড্রেনেও ফেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ধর্ষণে সেঞ্চুরিই হয়নি- যেমনটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ীমী লীগের অনুগত ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা হয়েছে। সেদিন বিদেশের পতিতাপল্লীতে ও ব্যভিচারীদের গৃহে ভোগ্যপণ্যের ন্যায় ব্যবহারে হাজার হাজার বাঙালি নারী চালানও হয়নি। রবীন্দ্রনাথ সেদিন বাঙালির মানুষ হওয়ার ব্যর্থতা নিয়ে আফসোস করেছেন। মুসলমান না হওয়ার কারণে ব্যর্থ মানুষদের সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের রায়টি কি তা তিনি জানতেন না। মহান আল্লাহতায়ালা এরূপ ব্যর্থ মানুষদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে অতি কঠিন কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, “উলায়িকা কা’আল আনয়াম, বাল হুম আদাল” অর্থ: তারা হলো গবাদি পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বুঝাতে চেয়েছেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যারা বিশ্বাস করে না এবং তাঁর প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকিম বেয়ে যারা পথ চলে না তারা শুধু পশুর ন্যায়ই নয়, ব্যর্থ হয় পশুসুলভ গুণাবলি পেতেও। যারা দুর্বৃত্তির পথে চলায় অন্যসব পাপীষ্ঠকে হারিয়ে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হতে পারে, নিচে নামার সে যাত্রাপথে তাদেরকে আর কে হারাতে পারে? শিকার ধরার পর নিহতের লাশটি কোনো পশুই ড্রেনে ফেলে না। ধর্ষণে পশুরা সেঞ্চুরিও করে না। এক লাশের বদলে বিপক্ষের দশ লাশ ফেলে না। যাত্রীভর্তি বাসে আগুন দেয় না। পশুরা শিকার ধরে শুধু বেঁচে থাকার স্বার্থে, ক্ষুধা মিটে গেলে অন্য শিকার ধরে না। তাই জঙ্গলে গাদাগাদি করে লাশ পড়ে থাকে না। কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াই বাংলাদেশে লাশের ছড়াছড়ি। শেখ মুজিব একাই তার শাসনামলে বহু হাজার লাশ ফেলেছিলেন। শেখ হাসিনা নিজেও লাশ ফেলার রাজনীতি করছেন জোরেশোরে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলার। শত শত লাশ ফেলেছে জাসদ ও তার গণবাহিনী। সর্বহারার রাজনীতির নামে বহু হাজার লাশ ফেলেছে মার্কসবাদী সন্ত্রাসীরা। পিলখানায় ৫৭ জন অফিসারকে লাশ বানিয়েছে সেপাইরা। বারবার লাশ পড়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বহুবার সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক মিছিলে। বহু মানুষ মারা যাচ্ছে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে। পত্রিকায় প্রকাশ, বাংলাদেশে প্রতিদিন লাশ হচ্ছে দশ জনের বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক গ্লানিকর ব্যর্থতা। কিন্তু বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায়, টিভি আলোচনায়, নাটকে ও সিনেমায় বা পাঠ্যপুস্তকে এ ব্যর্থতার কোনো আলোচনা নেই। বরং এসব ব্যর্থতা চেপে রেখে দেশকে যারা তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করলো বা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বানালো তাদেরকে বাংলার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে চিত্রিত করা হচ্ছে। সমাজে যখন দুর্বৃত্ত বা পাপাচারীরা বিজয়ী হয় তখন তাদের দুর্বৃত্তি ও পাপাচারের নিন্দা হয় না, বরং প্রশংসিত হয়। ডাকাতপাড়ায় এ জন্যই ডাকাতি কর্মের নিন্দা হয় না। পতিতাপল্লীতে তেমনি নিন্দিত হয় না ব্যভিচার। পাপাচার-কবলিত সমাজে পাপাচারের নেতা- নেত্রীগণ বরং বীর বা বীরাঙ্গনা রূপে চিত্রিত হয়। নমরুদ, ফেরাউন, আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মত দুর্বৃত্তগণ তো সে কারণেই নিজ নিজ দুর্বৃত্তকবলিত সমাজে নেতা রূপে গৃহীত হয়েছে। একই কারণে বাংলাদেশে নেতৃত্বের আসন পেয়েছে ইসলামবিরোধী দুর্বৃত্ত নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীগণ। শুধু রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানই তাদের দখলে যায়নি, দখলে গেছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলোও। ইতিহাসের পাঠ্য বইগুলোতে তাই দুর্বৃত্ত নেতাদের কুকীর্তিগুলোকে গৌরবময় করে দেখানো হয়।

মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ । ফিরোজ মাহবুব কামালঅরণ্যের অরাজকতা

জঙ্গলে কেউ নিহত হলে খুনির শাস্তি হয় না। সেখানে আদালত নেই। বিচারক, উকিল এবং পুলিশও নেই। এক পশু আরেক পশুকে ধরিয়ে দেয় না, সাক্ষ্যও দেয় না। একই রূপ অরণ্যের অরাজকতা নেমে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বহু শত আদালত আছে। বহু হাজার পুলিশ, হাজার হাজার উকিল এবং বহু শত বিচারকও আছেন। তাদের পালতে রাজস্বের বিশাল অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু তাদের সামর্থ্যটি কোথায়? সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশ, দেশে প্রতিদিন এগারো জন খুন হয়। কিন্তু দেশের আদালতগুলোর সবগুলো মিলে দিনে একজন খুনিরও কি শাস্তি দিতে পারছে? বিচার হচ্ছে রাজনৈতিক প্রয়োজনে। খুনি, চোর-ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা জনগণের শত্রু, কিন্তু তারা সরকারের শত্রু নয়। ফলে তাদের বিচার নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই। পুলিশ এবং আদালত ব্যস্ত সরকারবিরোধীদের দমনে। প্রকৃত খুনিরা তাই অভয়ারণ্য পেয়েছে বাংলাদেশকে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের খুনিদের গ্রেফতারে সরকার ঘটনার দিন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। ফলে দিন-দুপুরে রাজধানীর মধ্য দিয়ে শত শত খুনি অনায়াসে পালিয়ে যেতে পেরেছে, যেন খেলা দেখে ফিরছে। দুষ্টের দমন, ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ আছে এমন কোন দায়িত্বশীল সরকার কী অপরাধীদের গ্রেফতারে এতটা নিস্পৃহ থাকতে পারে? পাশেই ক্যান্টনমেন্ট, সেনাবাহিনীকে বললেও তারা সমগ্র পিলখানা ঘিরে ফিলতে পারতো। সরকার নিজের গদিরক্ষায় সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়, কিন্তু ৫৭ জন সেনা অফিসারদের বাঁচানোর জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়নি। দায়িত্বহীনতা আর কাকে বলে? অথচ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে সরকারের কোন আলসেমি নেই। নানা বাহানায় তাদের জেলে তোলা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলাও দায়ের হচ্ছে। সরকারের বিশেষ আক্রোশ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। একাত্তরে অস্ত্র ধরেছে, কাউকে খুন করেছে বা ধর্ষণ করেছে সে প্রমাণ পুলিশের কাছে নাই এমন ব্যক্তিদের ধরে সরকার কাঠগড়ায় তুলছে। তাদের বিচারে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আদালত গড়ছে এবং বিচারক ও উকিলদের নিয়োগ দিচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন ও বিচারকগণের ব্যস্ততা তাদের ত্বরিত্ব শাস্তি দেয়া নিয়ে। অথচ আজ যারা রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে নামছে, দিন-দুপুরে মানুষ খুন করছে, যাদের ছবি পত্রিকায় ছাপাও হচ্ছে, তাদের গ্রেফতার নিয়ে সরকারের কোনো আগ্রহই নেই। সরকারের প্রায়োরিটি কোথায় সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাকি থাকে? ডাকাতদের দস্যুতায় অনেকের ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাতে জাতি বিপাকে পড়ে না। কিন্তু জাতি সঙ্কটে পড়ে যদি রাষ্ট্র ছিনতাই হয়। অথচ বাংলাদেশ সেরূপ ছিনতাইকারীদের মুখে বারবার পড়ছে। এসব ছিনতাইকারী কখনোবা সেনাবাহিনীর, কখনোবা রাজনৈতিক বাহিনীর লোক। কখনোবা ছিনতাই হয়েছে ভোটের মাধ্যমে, কখনো বা হয়েছে অস্ত্রের মাধ্যমে। যেমন বাকশালী মুজিব এসেছিল ভোটের মাধ্যমে। অপরদিকে স্বৈরাচারী এরশাদ এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে। কিন্তু মানবাধিকার পদদলনে ও গণতন্ত্র হত্যায় উভয়ের সন্ত্রাস ও স্বৈরাচার কি কোন পার্থক্য রাখে? মুজিব কেড়ে নিয়েছিলেন বাকস্বাধীনতা এবং হত্যা করেছিলেন গণতন্ত্র। অথচ মানুষের ন্যূনতম মানবাধিকার শুরুই হয় কথা বলার অধিকার থেকে। সে অধিকারটুকু কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো মানুষকে মানবতাশূন্য করা। তিনি লুণ্ঠন করেছিলেন সভা-সমিতি ও পত্রিকা প্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাকশাল। একই অপরাধ করেছিল এরশাদ। মুজিবের বাকশালী দর্শন এবং এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারী দর্শনে কোনো পার্থক্য নাই বলেই ২০০৮ সালে তারা আবার একাকার হয়ে গেছে। জাসদ ও জাসদের গণবাহিনীর সন্ত্রাসও ভিন্ন ছিল না মুজিব এবং এরশাদের সন্ত্রাস থেকে। পিলখানায় যেরূপ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার চেয়েও ভয়ানক হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল কর্নেল তাহের, হাসানুল হক ইনু, আব্দুর রব, সিরাজুল আলম খান- এসব জাসদ নেতা। সিপাহিদের বিপ্লবের নামে পরিকল্পনা ছিল সেনাবাহিনী নির্মূলের। বহু অফিসারকে তারা হত্যাও করেছিল। গণবাহিনী গঠন করে হত্যা করেছিল বহু হাজার মানুষকে। এত বড় অপরাধের পরও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। বরং এরশাদের আমলে জাসদ গৃহপালিত বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। আর আজ শামিল করে নেয়া হয়েছে সরকারে। এরা সবাই একই ঝাঁকের কৈ, ফলে আজ ঝাঁকের কৈ ঝাঁকে মিশে গেছে।

বেড়েছে মাছি চরিত্রের মানুষ

কোন স্থান কতটা অস্বাস্থ্যকর সেটি পরিমাপের সবচেয়ে সহজ মাপকাঠি হলো, সেখানে আবর্জনা বা মলমূত্র ফেললে কত দ্রুত কতটা মাছি উড়ে এসে বসে তা দেখে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে আবর্জনা ফেললেও তাতে মাছি বসে না। কারণ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশামাছি জন্ম নেয় না। মশামাছি বেড়ে ওঠার স্থানগুলোই নির্মূল করা হয়। অথচ সেগুলো পরিচর্যা পায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। তেমনি দুর্বৃত্তকবলিত সমাজে বিপুলভাবে বেড়ে ওঠে দুর্বৃত্তরা, এবং তারা সারিবদ্ধ হয় দুর্বৃত্ত নেতাদের পেছনে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিণত হয় তাদের অধিকৃত প্রতিষ্ঠানে। অথচ উন্নত সমাজে কঠিন হয়ে পড়ে দুর্বৃত্তদের বেড়ে ওঠা। নির্মূল করা হয় দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠান। ফলে উন্নত সমাজে দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারীগণ ভোট পায় না। সাহাবাদের আমলের ইসলামী রাষ্ট্রে আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মত দুর্বৃত্তরা তাই বাজার পায়নি। বস্তুত একটি রাষ্ট্র কতটা মানবতাশূন্য ও দুর্বৃত্তকবলিত সেটি বুঝার জন্য শুধু পতিতাপল্লি বা ডাকাত পাড়ার দিকে তাকানোর দরকার পড়ে না। প্রেসিডেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রী ভবন বা মন্ত্রিপাড়ার দিকে নজর দিলেই সেটি স্পষ্ট বুঝা যায়। বুঝা যায় প্রশাসনের দিকে তাকালে। সেটি আরো বুঝা যায় নির্বাচনে দুর্বৃত্ত প্রার্থীগণ কতটা ভোট পায় তা দেখে। দেহের তাপমাত্রা মাপার জন্য যেমন থার্মোমিটার, তেমনি একটি দেশের মানুষ মানবিক বা নৈতিক পরিচয়ে কতটা পিছিয়ে আছে সেটি মাপার মাপকাঠি হলো দুর্নীতি। যে দেশ দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয় সে দেশের নৈতিকতার দুরবস্থা বুঝতে কি অন্ধেরও অসুবিধা হয়? বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের সে নৈতিক পরিচয়টি একবার নয় পর পর পাঁচবার বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মূল সমস্যা ভূমি, ভূগোল বা জলবায়ু নয়, বরং মাছিচরিত্রের মানুষ। এদের সংখ্যা বিপুল। দিন দিন সে সংখ্যা আরো দ্রুত বাড়ছে। আবর্জনার দিকে ছুটে যাওয়া থেকে মাছিকে রুখা যায় না, তেমনি মাছিচরিত্রের মানুষদের রুখা যায় না লোভ-লালসা ও স্বার্থশিকার থেকে। এরশাদের মত প্রমাণিত স্বৈরাচারী, দণ্ডিত অপরাধী এবং চরিত্রহীন ব্যক্তি যেভাবে ৫ সিট নির্বাচিত হয় তাতে কি বুঝতে বাকি থাকে বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি কোথায়? প্রশ্ন হলো, আজ যদি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কোন রাসূল কোরআনের শরিয়তি বিধান নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হতেন তবে ক’জন তাঁকে সমর্থন করতো? ক’জন তাঁর দলকে বিজয়ী করতো? ক’জন শরিয়তের পক্ষ নিত? আজ কোন নবী-রাসূল নেই, কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সে কোরআনি শরিয়ত তো রয়ে গেছে। সে শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠাই বা ক’জন সমর্থন করছে? দেশের আদালতে তো বিজয়ী হয়ে আছে ব্রিটিশের কুফরি বিধান। মুসলমান রূপে বাংলাদেশীদের এ কি বিশাল ব্যর্থতা নয়? সে ব্যর্থতা নিয়েই বা হুশ ক’জনের? এ ব্যর্থতা নিয়ে কেউ কি পরকালে সফলতা পাবে? বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, টিভি, গল্প-উপন্যাস ও স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে ভূয়সী প্রশংসা করা হয় একাত্তরের চেতনার ধারকদের। সে চেতনাধারীদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান রূপে জাহির করা হয়। কিন্তু সে বিশেষ চেতনাধারী ব্যক্তিবর্গ কারা? কি তাদের চরিত্র? বাংলাদেশের ইতিহাসে কে প্রথম গণতন্ত্র হত্যাকারী? কে বাকশালী স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠাতা? কে ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি করে? কার আমলে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ নেমে আসে যাতে বহু লক্ষ মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যায়? ৭ই নভেম্বরে সিপাহি বিপ্লবের নামে যারা সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যা শুরু করেছিল তারাই বা কারা? রক্ষীবাহিনী, গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টির নামে হাজার হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে কারা হত্যা করেছে? স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে কারা গৃহপালিত বিরোধী দল সেজে গণতন্ত্রের সাথে মশকারা করেছে? কারা জেনারেল এরশাদ ও জেনারেল মঈনকে সমর্থন করেছে? বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে এগুলো আলোচিত হয়নি। দেশ-বিদেশের ভূগোল, জলবায়ু, জীবজন্তু বা কীটপতঙ্গের জীবনী পড়ানোর চেয়ে এ বিশেষ বাঙালি জীবদের প্রকৃত ইতিহাস পড়ানো কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? সাপকে সাপ, বিষকে বিষ রূপে না চিনলে বাঁচাটি নিরাপদ হয় না। তেমনি জাতির দুর্বৃত্তদের না চিনলে জাতিরও কল্যাণ হয় না। হিটলার, হালাকু, চেঙ্গিস ও মীরজাফরদেরকে মহামানব রূপে চিত্রিত করা শুরু হলে সে জাতির সাধারণ মানুষও তাদেরকে অনুকরণীয় মডেল চরিত্ররূপে গ্রহণ করে। ছাত্ররা তখন তাদের মত হওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনভাবে। দেশের সরকার, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার পক্ষ থেকে বিষাক্ত সাপকে ভগবান রূপে কীর্তন গাওয়া শুরু হলে সাধারণ মানুষ তখন সাপকে পূজা দেয়া শুরু করে। বাংলাদেশে সে কাজটি প্রচণ্ডভাবে হয়েছে। ফলে গণতন্ত্র-হত্যাকারীও জাতির পিতারূপে গৃহীত হয়েছে। এবং বিপুল ভোট পায় তার অনুসারীরা। সমগ্র পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হওয়ার যে অপমানটি বাংলাদেশের জুটেছে, সেটি ভূমি বা জলবায়ুর কারণে নয়। বরং সে জন্য দায়ী দেশবাসীর রুগ্ন চেতনা-চরিত্র ও মূল্যবোধ। সে রুগ্নতাটি এসেছে রুগ্ন চরিত্রের মানুষদের মডেল চরিত্ররূপে গ্রহণ করার কারণে। একাত্তরের চেতনাধারীরা এভাবে জাতির গলায় বিশ্বজোড়া অপমানের মালা পরিয়ে দিয়েছে।

রুগ্নতা সর্বস্তরে

ব্যক্তির রুগ্নতা গোপন থাকে না। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, দুর্বলতা বা পঙ্গুত্ব নিয়ে সেটি সবার সামনে হাজির হয়। জাতির রুগ্নতা তেমনি ধরা পড়ে বিবেকহীনতা, নীতিহীনতা, অপরাধ-প্রবণতা, মিথ্যাচার, স্বৈরাচার, সন্ত্রাস ও নানারূপ দুর্বৃত্তির মধ্য দিয়ে। বাঙালির জীবনে সে রুগ্নতা আজ ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে যেভাবে খুন করা হলো সেটি নিজেই কোন রোগ নয়, বরং বিবেকে বেড়ে ওঠা ভয়ানক অসুস্থতার লক্ষণ। অফিসারগণ কী অপরাধ করেছিল যে তাদেরকে খুন করে এবং দেহকে বিকৃত করে লাশগুলোকে পায়খানার নর্দমাতে ফেলতে হবে? বিগত দুই বিশ্বযুদ্ধে বহু কোটি মানুষেরই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোনো রণাঙ্গনেই এত অফিসারকে একদিনে প্রাণ দিতে হয়নি। কোন শত্রু অফিসারকে লাশ হয়ে পায়খানার ড্রেনেও যেতে হয়নি। শত্রু বাহিনীর অফিসারের লাশের সাথে এমন অবমাননা হিটলারের সৈন্যরাও করেনি। বস্তুত পিলখানায় সেদিন শুধু লাশকে ড্রেনে ফেলা হয়নি, ড্রেনে ফেলা হয়েছে মানবতাকে। আর সেটি কোন দুর্বৃত্ত ডাকাতদের হাতে নয়। বরং তাদের হাতে যারা প্রতিদিন দেশবাসীর রাজস্বের অর্থে প্রশিক্ষণ পেয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে। খুন, রাহাজানি বা সন্ত্রাসের ন্যায় জঘন্য অপরাধ কোন ভদ্র লোকালয়ে হলে বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে। মানুষ খুন, ছিনতাই বা ধর্ষণ গরু-ছাগলের সামনে হলে তাদের ঘাস-পাতা খাওয়ায় ছেদ পড়ে না। উদ্ধারে তারা এগিয়েও আসে না। তেমনি অবস্থা হয়েছিল সেদিন ঢাকায়। রাজধানীর কেন্দ্রে বহু ঘণ্টা ধরে খুন, ধর্ষণ ও লুটতরাজ চললেও কোনো নিরাপত্তা বাহিনীই সেদিন এগিয়ে আসেনি। সরকারও কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং খুনিদের সাথে সরকার নিষ্ফল আলোচনায় বসেছে। এই হলো বাংলাদেশের সরকারের পরিচয়। সরকার তার কুৎসিত চরিত্র সেদিন আড়াল করতে পারেনি। এমন একটি সরকার থেকে জনগণ আর কী আশা করতে পারে?

লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির