post

মিডিয়ার স্বাধীনতা সাংবাদিক নির্যাতন এবং ৫৭ ধারা

সামছুল আরেফীন

০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এই ধারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন প্রভাবশালীরা। এই ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবল বিরোধিতার কারণে এখন মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। ৫৭ ধারায় সর্বশেষ আলোচিত খুলনার সাংবাদিক লতিফ মোড়লের বিরুদ্ধে মামলাটিতে আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে বলে মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরপরই এই নির্দেশনা এলো। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৪টির বেশি মামলা হয়েছে। গত বছর হয় ৩৬টি। গত চার মাসে ১১টি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২১ জন সাংবাদিক। সাইবার অপরাধ-সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারিতে আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে ৪২টি। জুনে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৯। এই ছয় মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৯১টি। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাদের ৩১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এই ৩৯১টি মামলার বাইরে একই সময়ে সাইবার অপরাধের ঘটনায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ৯৩টি এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ৮৫টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ খুলনায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় আবদুল লতিফ মোড়ল নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়। ফেসবুকে একটি ছাগলের মৃত্যুর খবর শেয়ার করায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের মানহানি হয়েছে এই অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদিও আরেক স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত ফৌজদার। এ নিয়ে চলতি বছরে ১৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা হলো। তাদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্থানীয় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের। দেশের সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন ‘নোয়াব’, সম্পাদকদের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় ৫৭ ধারা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত নিবর্তনমূলক এই বিধি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয়েছে সাংবাদিকদের ওপর। ৫৭ ধারার আতঙ্কে সংবাদ প্রকাশে স্বনিয়ন্ত্রণ বা সেল্ফ সেন্সরশিপ বেড়েছে। তা ছাড়া কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত থেকে শুরু করে মানহানি পর্যন্তÍ সব ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে। আইন প্রণয়ন যেভাবে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, যা সংক্ষেপে আইসিটি অ্যাক্ট নামে পরিচিত। এটি বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে প্রণীত হয়। আর এটি ২০১৩ সালে সংশোধিত হলে কার্যত এর ৫৭ নম্বর ধারাটি আরো জোরালো বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই আইনের আওতায় ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালের ২৬ জুলাই ফেসবুক বন্ধ করা এবং ৫৭ ও ৪৬ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করা হয়েছিল। সেখানে এসব ধারাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আইসিটি আইন ২০০৬-এর ৪৬ ও ৫৭ ধারা কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং তথ্য ও যোগাযোগ সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ রুলের নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই আইসিটি আইন সংশোধনীর মাধ্যমে পুলিশকে আরো ক্ষমতাধর করে সন্দেহভাজন যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা দেয়া হয়। সেই সাথে এই আইনের আওতায় অপরাধকে জামিনের অযোগ্য অপরাধ করা হয়। এর মাধ্যমে আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ আরো অবারিত করা হয়। শুধু তাই নয়, এ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০০০ সালে প্রণীত মূল আইনে যেখানে ৫৭ ধারার অধীন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ডের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল, সংশোধনীর মাধ্যমে তা করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনি¤œ সাত বছর। একই সাথে এক কোটি টাকার অর্থদন্ড দেয়ার বিধানও আছে। বললে ভুল হবে না, এই আইনে যেকোনো নাগরিক বা সরকারবিরোধী ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিকে লঘুপাপে গুরুদন্ডে দন্ডিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৩ সালে ২১ আগস্ট এই আইনে সংশোধনী আনা হয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এই আইনে সংশোধনী আনা হয় যাতে এই ধারাটিতে পরিবর্তন এনে কারাদন্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করে অন্যূন সাত বছর এবং অনধিক ১৪ বছর করা হয়। ধারাটি প্রথম থেকেই ছিল অজামিনযোগ্য কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর সকল ধারাই ছিল অ-আমলযোগ্য। যার অর্থ দাঁড়ায়- পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই আইনে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। নতুন সংশোধনীতে এই আইনকে আমলযোগ্য করায় পুলিশের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকল না। পুলিশ চাইলেই যেকোনো সময় যে কাউকে এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গ্রেফতার করতে পারবে। আইনে কী আছে? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, “ইলেকট্রনিক ফর্মে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দন্ড- (১) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে এই কার্য হবে একটি অপরাধ।’ ‘(২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন।’ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এই ৫৭ ধারার একটি বড় সমালোচনা হচ্ছে, এটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। ভারতের আইসিটি আইনে অনুরূপ একটি ধারা ছিল, আইনের ৬৬ নম্বর ধারা। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই ৬৬ নম্বর ধারাকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে বাতিল করে দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধান যেসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে, এর মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অন্যতম। সংবাদপত্রের অধিকারসহ অনেকগুলো ব্যাপারে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা চরম হুমকি হিসেবে কাজ করছে। আশা করি, সরকার জনমতের চাপে আইনটি এবার সংশোধন করবে। আর আমাদের আইনি লড়াইও চলবে। আইসিটি আইনের একটি বড় সমালোচনা হচ্ছে, এটি বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার সুস্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে। সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রথমে বলা আছে- ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হলো।’ দ্বিতীয়ত বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে (ক). প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও তার প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ ৫৭ ধারায় মামলা নিতে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রবল আপত্তির মুখে চলতি মাসেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় কোনো মামলা নেয়ার আগে পুলিশ সদর দফতরের আইনি পরামর্শ নেয়ার নির্দেশনা থানাগুলোকে দিয়েছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। বিতর্কিত এই আইনে মামলা নিয়ে হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দফতর থেকে বাহিনী প্রধানের এই নির্দেশনা সবখানে পাঠানো হয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নিরীহ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে চারটি ধাপ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে থানাগুলোকে। এক. এই আইনের ৫৭ ধারায় সংঘটিত অপরাধসংক্রান্ত মামলা রুজুর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দুই. অভিযোগ সম্পর্কে কোনো রূপ সন্দেহের উদ্রেক হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি নিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। তিন. মামলা রুজুর আগে পুলিশ সদরদফতরের আইন শাখার সঙ্গে আইনগত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চার. কোনো নিরীহ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা যা বলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, প্রচলিত হামলা, হুমকির ও নির্যাতনের সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা এখন সাংবাদিকদের জন্য নতুন আতঙ্ক। আমরা চাই এই আইনটি বাতিল হোক। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ তৈরি হয়েছে। অদৃশ্য চাপ বা প্রভাবশালীদের হুমকির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটা হয়তো সামরিক সরকারের সময়ের মতো সরাসরি হস্তক্ষেপ নয়, তবে এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গত বছর বাংলাদেশ সরকার বিতর্ক ও সমালোচনা ঠেকাতে দমনপীড়ন চালিয়েছে। মিডিয়াকর্মীদের হয়রানি ও কর্মক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি দমনমূলক আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, ৫৭ ধারার সমস্যা দু’টি সমস্যা। প্রথমত সাবসট্যান্স নিয়ে (বিষয়বস্তু) এবং অপরেশনালি যা হচ্ছে সেটার সমস্যা। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ৫৭ ধারায় যে আটটি গ্রাউন্ডের কথা বলা হয়েছে যে এসব বিষয়ে যদি কোনো বক্তব্য হয় তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হবে। ‘কিন্তু এই সিমিলার যেসব গ্রাউন্ডগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো আমাদের অন্যান্য আইনে এর থেকে বেশি প্রটেকশন (সুরক্ষা) দিয়েছে এবং বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দেয়া আছে। ৫৭ ধারায় যখন এসেছে তখন কিন্তু এগুলো সুস্পষ্ট করে সংজ্ঞায়ন হয়নি। আর অপারেশনালি আগের আইনে এসব অপরাধগুলো ননকগনিজেবল ছিল অর্থাৎ পুলিশের আমলে নেয়ার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু ৫৭ ধারায় উল্লিখিত অপরাধ পুলিশ আমলে নিতে পারে। প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রহমান মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খুব বেশি ব্যবহার হওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া এই ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, এই আইন করা হয়েছিল মানুষ যেন নিরাপদে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আইনটি করার সময় প্রণয়নকারীরা অতি আবেগপ্রবণ হয়ে ধারাটিকে জামিন-অযোগ্য করেছেন। অতিরিক্ত রূঢ় হওয়ার জন্য এটির অপব্যবহারও হচ্ছে বেশি। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমি মনে করি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটি পুরোপুরি অসাংবিধানিক। অসাংবিধানিক দু’টি কারণে। একটি হলো, সংবিধানের ৩১, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি অপরাধ স্বচ্ছ ও স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতার বরখেলাপ হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি হলো, ধারাটি সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অযৌক্তিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এ দুটো কারণে ৫৭ ধারা অসাংবিধানিক। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, আমার মতে যত্রতত্র, যখন-তখন ও সুযোগ না দিয়ে এই ধারা প্রয়োগ করা ঠিক নয়। আমি মনে করি, এই আইনটি শিথিল করা দরকার; বিশেষ করে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে। কারও যদি মনে হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদে কারও মানহানি হয়েছে, তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ওই পত্রিকা অফিসে প্রতিবাদ পাঠাবেন। মন্ত্রিসভায় পক্ষে বললেন তথ্যমন্ত্রী ৫৭ ধারা বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের নিবর্তনমূলক ৫৭ ধারা বহাল রাখার পক্ষে আবারও অবস্থান নিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গত ২৪ জুলাই সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে বিষয়টি সম্পর্কে অনির্ধারিত আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী তার এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সরকার তথা মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর অবস্থানের সঙ্গে তারা একমত নন বলে জানা গেছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ৫৭ ধারা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রণীত হয়নি। এটি গণমাধ্যমের বিষয় নয়। সাংবাদিকতার জন্য কারও বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়নি। মামলা হয়েছে সাইবার অপরাধের অভিযোগে, এটা সব নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। লেখক: সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির